দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ টারজান চরিত্র সম্পর্কে আমাদের অনেক কিছুই জানা আছে। কারণ সিনেমা টিভিতে টারজান চরিত্র সম্পর্কে আমরা সবই জানি। তবে এবার রয়েছে বাস্তব জীবনের এক টারজান নিয়ে গল্প।
আমরা জানি টারজান নামক সেই মানুষটি বড় হয়েছিল জঙ্গলে। তারপর ফিরে এসেছিল সভ্য জগতের জীবনে। সেই সিনেমা কাহিনী যেমন বাস্তব জীবনেও এমন এক গল্পের কাহিনী উঠে এসেছে। বাস্তবেও টারজানের মতোই জীবনযাপন করেছেন ভিয়েতনামের হো ভ্যান থান ও হো ভ্যান ল্যাং নামক দুই ব্যক্তি। এরা দুজন সম্পর্কে বাবা-ছেলে।
সংবাদ মাধ্যমের তাদের কাহিনী বিশ্ব মিডিয়ায় উঠে এসেছে। সভ্যজগতের নিষ্ঠুরতায় ভীত হয়ে ভিয়েতনামের এক গভীর জঙ্গলে টানা ৪০ বছর জীবনযাপন করেছেন তারা। সভ্যজগতের তুলনায় জঙ্গলকেই নিরাপদ হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন আপনভাবে। এই ৪০ বছরে তারা প্রায় ভুলেই গিয়েছিলেন সভ্য মানুষের চালচলন!
দীর্ঘ চার দশক পূর্বে ভিয়েতনামের ছোট্ট গ্রাম ‘ত্রা কেম’-এ ৩ ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে সুখের সংসার ছিল হো ভ্যান থানের। তবে ভিয়েতনামে সে সময় শুরু হওয়া যুদ্ধে চোখের সামনে বোমা বিস্ফোরণে স্ত্রী ও দুই ছেলেকে নারকীয়ভাবে মরতে দেখেছেন থান। থানের কনিষ্ঠ সন্তান ল্যাংয়ের বয়স ছিলো তখন মাত্র ২ বছর। ২ বছর বয়ষ্ক ওই শিশুকে নিয়েই সমাজ ছেড়ে গহীন জঙ্গলে চলে গিয়েছিলেন থান। কখনও আর ফিরে আসার কথা ভাবেননি তিনি।
২০১৩ সালের কথা। কাঠের খোঁজে কুয়াং গাই প্রদেশের তে ত্রা জেলার গভীর জঙ্গলে ঢুকে পড়েন কাঠুরেরা। সেসময় তারা দেখেন যে, আকার প্রকারে মানুষের মতোই দেখতে দু’জন জঙ্গল দাপিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর ৪০ বছর পেরিয়ে গেলেও স্থানীয় প্রশাসন তাদের জঙ্গলের জীবনে ছেদ টেনে জোর করে নিয়ে আসে মানব সভ্যতায়।
ব্যাপারটা আসলে মজার। চার দশক পূর্বে তাদেরকে প্রাণ বাঁচানোর আশ্রয়টুকুও দিতে পারেনি যে সমাজ, বাধ্য হয়ে আশ্রয় দিয়েছিল সবুজ জঙ্গলে, সেই জঙ্গলের সুখী জীবন হতে বর্তমানে ৮০ বছর বয়সী হো ভ্যান থান ও তার ছেলে ৪২ বছর বয়সী হো ভ্যান ল্যাংকে জোর করে নিয়ে আসে সেই সমাজ।
৪০ বছর ধরে কীভাবে জঙ্গলে তারা জীবন কাটিয়েছেন, কী খেয়েছেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যেও বেচেঁছেন কীভাবে, অসুস্থতার সময়ও তা কীভাবে মোকাবেলা করেছেন- সেসময়কার এসব বিস্ময় বিশেষজ্ঞরা জানতে পারেননি। সময়ের ব্যবধানের কারণে তাদের ভাষা ব্যবহারের ক্ষমতাও কমে গিয়েছিল। থান যদিওবা অল্পস্বল্প কিছু বলতে পারেন, ল্যাংয়ের সম্বল মাত্র কয়েকটা শব্দ।
সে কারণে শারীরিক, মানসিক, সামাজিকতা ফেরাতে শুরু হয়েছে তাদের ‘রিহ্যাবিলিটেশন’। যে সমাজ হতে একদিন হারিয়ে গিয়েছিলেন তারা, সে সমাজেই ফেরার জন্য নতুন করে সব কিছু শিখতে বাধ্য করা হচ্ছে তাদের। বর্তমানে আবার সমাজকে মানিয়ে নিয়েছেন তারা।
তবে সম্প্রতি বিখ্যাত ফটোগ্রাফার অ্যালভারো সেরেজোর উদ্যোগে ৩ বছর পর আবার সেই জঙ্গলে গিয়েছিলেন হো ভ্যান ল্যাং। যে জঙ্গলে হো ভ্যান ল্যাং জীবনের একটি দুটি নয়, ৪০টি বছর কাটিয়েছেন, সেই জঙ্গলে পুরো একটি দিন কাটিয়ে অতীত উপভোগ করেছেন হো ভ্যান ল্যাং। ফিরে দেখা অনুভূতিতে হো ভ্যান ল্যাং যেনো হারিয়ে যান তার ফেলে আসা সেই দিনগুলোতে। টারজানের মতো গাছের ছাল পরে যেখানে কাটিয়েছেন এই চল্লিশটি বছর।
দেখুন ভিডিওটি