দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মংডু এলাকায় এখনও অনেক মুসলিম রোহিঙ্গা বন জঙ্গলে পালিয়ে রয়েেছেন। পালিয়ে থাকা নির্যাতিত এক রোহিঙ্গার সাক্ষাৎকারে উঠে এসেছে গণহত্যার নির্মম চিত্র!
পালিয়ে থাকা রোহিঙ্গারা লোকালয়ে যেতে পারেন না। তাদের ছেলে-মেয়ে, ভাইবোন কোথায় কিভাবে রয়েছেন তাও তারা জানেন না।
মিয়ানমারের মংডুর চালিপাড়াং এলাকায় বন ও টিলার মাঝে লুকিয়ে রয়েছেন এমনই একজন রোহিঙ্গা নূর মোহাম্মদ।
এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, ‘মংডুর এলাকার বন ও টিলার মধ্যে তারা কয়েকজন লুকিয়ে রয়েছেন। তাদের বাড়িও ওই এলাকাতেই। গত অক্টোবরে তাদের এলাকায় হামলা চালিয়ে ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়। হেলিকপ্টার হতেও হামলা চালানো হয়। ওই হামলায় বহু লোক মারা গেছে। আবার কেও কেও পালিয়ে বেঁচেছেন।’
তিনি আরও জানান, হামলাকারীরা নারীদের ওপরও অত্যাচার-নির্যাতন করেছে। অনেককেই তারা ধরে নিয়ে গেছে।
এখন পরিস্থিতি কেমন? জানতে চাইলে নূর মোহাম্মদ বলেন, ‘যখন মিলিটারী থাকেনা, তখন আমরা গ্রামে যাই। সৌরবিদ্যুতে, ব্যাটারির মাধ্যমে মোবাইল চার্জ দিয়ে আবার ফিরে আসি। আমরা কয়েকজন মিলে মোবাইল ফোন চার্জের ব্যবসাও করতাম। কেও কেও রয়েছেন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। আমরা মাঝে মাঝে খাবারের খোঁজেও বের হই। তবে আমরা আবার বনে ফিরে আসি।’
এভাবে কী বাঁচা সম্ভব? এমন এক প্রশ্নের উত্তরে নূর মোহাম্মদ বলেন, ‘খাবার নেই, পানি নেই। এমনও আছে যে, তিনদিনও না খেয়ে থেকেছি। তারপরও আমরা বাঁচার চেষ্টা করছি। আপনারা যদি পারেন আমাদের জন্য কিছু একটা করেন।’
নূর মোহাম্মদ আরও জানান, ‘আমাদের গ্রামে ৭ হাজারের মতো বাসিন্দা, দেড় হাজারের মতো পরিবার ছিলো। তাদের সব কিছুই শেষ হয়ে গেছে। কোনো ঘর-বাড়িই এখন আর অক্ষত নেই।’
তিনি বলেছেন, ‘আমার ৬ বোন, বাবা-মা নেই। ২ বোনকে বিয়ে দিয়েছি। ৪ বোন হামলার দিন আমার সঙ্গে বাড়িতে ছিলো। ২ বোন পালিয়ে কক্সবাজারের কুতুপালং গেছে বলে জানতে পেরেছি। বাকি ২ বোন কোথায় রয়েছে এখনও জানিনা।’
বাংলাদেশ সংলগ্ন মিয়ানমারের সীমান্ত এলাকায় বাংলাদেশের মোবাইল ফোন কোম্পনিগুলোর নেটওয়ার্ক কাজ করে। ওইসব এলাকায় বাংলাদেশের মোবাইল ফোন কোম্পানির সিম ব্যবহার হয়ে থাকে। নূর মোহাম্মদের সঙ্গে চার দফা কথা হয় এই প্রতিবেদকের সঙ্গে। অবশ্য তাকে সব সময় মোবাইল ফোনে পাওয়াও যায়নি। মাঝে মাঝে তাকে পাওয়া গেছে। কারণ সেখানে ‘মাঝে মাঝে মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্ক ডাউন হয়ে যায়।’
নূর মোহাম্মদ বলেন, ‘আমি বাংলাদেশে আশ্রয়ে আসার চেষ্টা করছি। ওখানে আমার আত্মীয়-স্বজন রয়েছে। তবে আসতে পারবো কিনা জানিনা।’
উল্লেখ্য, জাতিসংঘের প্রকাশিত সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ‘গত ৬ সপ্তাহে ২২ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে। শুক্রবার এক বিবৃতিতে জাতিসংঘ জানিয়েছে, ৯ অক্টোবর হতে রাখাইনে শুরু হওয়া মিয়ানমার সেনাবাহিনীর দমন-অভিযানে অন্তত ৮৬ জন নিহত হয়েছেন। ঘর হারিয়েছেন অন্তত ৩০ হাজার মানুষ। নির্যাতন হতে বাঁচার জন্য রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের কক্সবাজার সীমান্তে ছুটে আসছে।