দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ মানুষকে জীবন্ত কবর দেওয়ার কথা মনে হয় আমরা এর আগে শুনিনি। তবে এবার শোনা গেলো তেমনই এক কাহিনী। এক ভয়াবহ উৎসবের রীতি অনুযায়ী মানুষকে জীবন্ত কবর দেওয়া হয়।
এমন একটি খবর দেখে আপাতদৃষ্টিতে মনে হতে পারে, একেবারে খাঁটি খ্রিষ্টান শেষকৃত্য অনুষ্ঠান চলছে। ৪ জনের কাঁধে বাহিত হয়ে এগিয়ে চলেছে একটি কফিন নিয়ে। কফিনের ঢাকনা বন্ধ, শুধু এক দিকের উন্মুক্ত একটি অংশ দিয়ে দেখা যাচ্ছে কফিনের ভিতরে শায়িত মানুষটির মাথা বের করে আছেন। চোখ বোজা অবস্থায় নিথর হয়ে রয়েছে সেই মাথাটি। ওই কফিনের পিছন পিছন চলেছেন কিছু মানুষ। তাদের মধ্যে রয়েছেন কিছু পাকা চুল মাথার বৃদ্ধাও! যারা বুক চাপড়ে হাহাকার করে কাঁদছেন একাধারে! এতে করেই বোঝা যাচ্ছে, মৃত মানুষটির শোকেই তাদের এই আকুতি। তবে আর পাঁচটি অন্তিমযাত্রার সঙ্গে এই শোভাযাত্রার বেশ কিছু ভয়াবহ পার্থক্যও রয়েছে।
প্রথমত: একটু খেয়াল করলেই দেখা যাবে যে, কফিনের পেছনে ক্রন্দনরতা বৃদ্ধাদের সহযাত্রী হিসেবে রয়েছেন আরও বেশ কিছু মানুষ, যাদের চোখে-মুখে শোকের লেশমাত্র নেই! বরং মদের বোতল হাতে নেশায় টাল-মাটাল অবস্থায় হর্ষধ্বনি আর হাততালির মাধ্যমে তাঁরা উজ্জীবিত করে চলেছেন একে অপরকে। তার থেকেও ভয়াবহ তথ্য হলো, কফিনের ভিতরে যিনি শুয়ে রয়েছেন, তিনি আদৌ মৃত নন, বরং জলজ্যান্ত একটি মানুষ!
সংবাদ মাধ্যমের খবরে জানা যায়, কিউবার রাজধানী হাভানা হতে মাত্র ১২ মাইল দূরবর্তী সান্তিয়াগো দে লাস ভেগাস গ্রামে অনুষ্ঠিত ‘ব্যুরিয়াল অফ প্যাচেন্দো’ নামের এক বিচিত্র উৎসবের অংশ হিসেবেই কবর দেওয়া হয় একজন জীবন্ত মানুষকে!
জানা যায়, শত বছরের কোনো নিয়ম নয়, ১৯৮৪ সাল হতে প্রতিবছর ৫ ফেব্রুয়ারি তারিখে পালিত হয়ে আসছে এই উৎসবটি। বছরের গোড়ার দিকেই গ্রামের এক জনকে নির্বাচন করা হয় ‘প্যাচেন্দো’ হিসেবে (জীবিতকে কবর দেওয়ার জন্য) নির্ধারণ করা হয়। তারপর নির্দিষ্ট দিনে কফিনের মধ্যে তাকে শোওয়ানো হয়। তখন শুরু হয় শোভাযাত্রা। শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণকারী অধিকাংশ মানুষই থাকেন নেশার মধ্যে।
তখন চলে হাততালি, গান, উল্লাস। তবে একটি অন্তিমযাত্রায় অংশ নেওয়া সকলেই তো আর আনন্দে উৎরোল হতে পারেন না। তাই শোভাযাত্রায় রেখে দেওয়া হয় কিছু মহিলাকেও, যাদের কাজ হলো ওই ‘প্যাচেন্দো’র বিধবা স্ত্রী হিসেবে শোকবিহ্বলতা (কান্নারত) অভিনয় করা। শোভাযাত্রাসহ কফিন পৌঁছায় উৎসবের জন্যই পৃথকভাবে তৈরি করা কবরস্থানে। খোঁড়া হয় ছ’ফুট গভীর একটি কবরও। উপস্থিত থাকেন ধর্মযাজক স্বয়ং। যথাবিহিত রীতি মেনে মানুষ সমেত কফিনটিকে শোওয়ানো হয় কবরের মধ্যে। তবে ওই পর্যন্তই শেষ। ভূগর্ভে শায়িত কফিনকে ঘিরে কিছুক্ষণ হইহুল্লোড়ের পরেই আবারও জীবন্ত মানুষটি সমেত কফিনটি তুলে আনা হয় উপরে!
এই বিচিত্র উৎসবের তাৎপর্য কী? কে-ই বা এই প্যাচেন্দো হন? স্থানীয় বাসিন্দা অ্যালভেরো হার্নান্দেজ দিলেন সেই প্রশ্নের উত্তরও। তিনি জানালেন, “প্যাচেন্দো একেবারেই কল্পিত একটি চরিত্রমাত্র। আসলে ১৯৮৪ সালে গ্রামবাসীরা একটি স্থানীয় কার্নিভালের অন্তসূচক একটি অনুষ্ঠান পালন করবে বলে স্থির করেছিলো। সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নেয় যে, একটি ছদ্ম-অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার আয়োজন করা হবে ওই অনুষ্ঠানে। সেই সময়ে শহরে একটা নাটক এসেছিলো ‘ব্যুরিয়াল অফ প্যাচেন্দো’ নামে। গ্রামবাসীদের মধ্যে খুব জনপ্রিয় হয়েছিল সেই নাটকটি। হঠাৎ করে কোনও কারণ ছাড়াই আমাদের অনুষ্ঠানের নাম আমরা স্থির করি ‘ব্যুরিয়াল অফ প্যাচেন্দো’ নামে। ৫ ফেব্রুয়ারিকে যে এই বার্ষিক অনুষ্ঠানের জন্য স্থির করা হয়, সেটাও ওই রকম আকস্মিক সিদ্ধান্তেরই ফসল!”