ঢাকা টাইমস্ রিপোর্ট ॥ নতুন নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়েছে ইতিমধ্যেই। তারা দায়িত্ব নেওয়ার পর বেশ কয়েকটি বৈঠক করেছেন। আলাপ আলোচনা অব্যাহত রেখেছেন। কিন’ অনেক ক্ষেত্রেই এখনও তারা উল্লেখযোগ্য কোন অগ্রগতি সাধন করতে পারেননি।
নির্বাচন কমিশনের একটি সূত্র বলেছে, গুর”ত্বপূর্ণ কোন ইস্যুতে ঐকমত্যে আসতে পারছে না ৫ সদস্যের নির্বাচন কমিশন। কোন সিদ্ধান- নেয়ার ক্ষেত্রে এক একজন দি”েছন এক এক রকম মত। এতে সৃষ্টি হয়েছে স’বিরতার। নতুন কমিশন গঠনের এক মাস পার হতে চললেও এখনও পর্যন- তারা কোন সিদ্ধানে- আসতে পারেননি।
ভোটার তালিকা হালনাগাদ, জাতীয় নির্বাচনে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন ব্যবহার, ঢাকা সিটি নির্বাচনে (ডিসিসি) ইভিএম ব্যবহারে ব্যাটারি ক্রয়, রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ অনুষ্ঠানসহ সব বিষয়ে সিইসির সঙ্গে নির্বাচন কমিশনারদের দ্বিমত রয়েছে। বিদায়ী কমিশনের রেখে যাওয়া অসম্পন্ন কিছু কাজের দেখভাল করেই সময় কাটা”েছন কমিশনের কর্মকর্তারা। কমিশনারদের কোন সিদ্ধান- নেয়ার ক্ষেত্রে এ ধরনের পরস্পর বিরোধী অবস’ান আগামীতে আরও বড় সমস্যার সৃষ্টি করবে কিনা তা নিয়ে দেখা দিয়েছে প্রশ্ন।
কমিশনারদের মধ্যে ব্যাপক মতবিরোধের সৃষ্টি
ইসির একটি সূত্র জানায়, ইভিএমের ব্যাটারি ক্রয় নিয়ে সম্প্রতি কমিশনারদের মধ্যে ব্যাপক মতবিরোধের সৃষ্টি হয়। ডিসিসি নির্বাচনে ১ হাজার ইভিএম ব্যবহার হওয়ার কথা। ১৪ লাখ টাকা চেয়ে বুয়েট এ ইভিএমের ব্যাটারির জন্য ইসিকে চিঠি দেয়। আগে প্রতিটি ব্যাটারি কেনা হয় ৮শ’ টাকায়। বর্তমানে এর দাম বেড়ে ১২ থেকে ১৪শ’ টাকা পর্যন- হয়েছে বলে জানায় বুয়েট। গত কমিশন বৈঠকে ইভিএমের ব্যাটারি ক্রয়ে সিইসিসহ চার কমিশনার একমত হন। কিন’ কমিশনার আবদুল মোবারক বৈঠকে বলেন, আমি বেশি দামে ব্যাটারি কিনতে রাজি নই। এ ধরনের সিদ্ধান- হলে আমি নোট অব ডিসেন্ট দেব। এ অবস’ায় বৈঠকে ব্যাটারি ক্রয়ে সিদ্ধান- নেয়া সম্ভব হয়নি। অথচ এ ব্যাটারি আনতে হবে চীন থেকে। মে’তে দুই ডিসিসি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ব্যাটারি ক্রয়ের সিদ্ধান- ঝুলে যাওয়ায় ডিসিসি নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার নিয়ে সংশয় আরও বেড়ে গেছে।
ভোটার তালিকা হালনাগাদ কাজ শুর” হ”েছ
১০ মার্চ থেকে ৬৪ জেলায় ভোটার তালিকা হালনাগাদ কাজ শুর” হ”েছ। ভোটার তালিকা হালনাগাদ কবে সংশোধন হবে তা নিয়ে এক এক কমিশনার দি”েছন এক এক মত। ১০ মার্চ হালনাগাদ কাজ শুর” নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশনার আবদুল মোবারক বলেছেন, আইনে হালনাগাদ করার কথা ২ থেকে ৩১ জানুয়ারি। মার্চে কাজ শুর” হলে তাকে হালনাগাদ না বলে সংশোধন কার্যক্রম বলতে হবে। আবার ৭ মার্চ অপর নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) জাবেদ আলী বলেন, হালনাগাদ শুর” হ”েছ বলা যাবে না। বলতে হবে হালনাগাদের লক্ষ্যে কার্যক্রম শুর” হ”েছ।
রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে বসা এবং..
সিইসির রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে বসা নিয়েও সিইসিসহ ৫ কমিশনারের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে মতানৈক্য। কেউ বলছেন, সংলাপ এখন হোক আবার কেউ বলছেন, সংলাপ আরও পরে। এ দোটানার মধ্যে সম্প্রতি সিইসি বলেছেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে বসে জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার প্রশ্নে সিদ্ধান- নেয়া হবে। গত কমিশন বিদায়ের আগে ইভিএম প্রশ্নে সব দলের সঙ্গে সংলাপ করেন। সংলাপে প্রাপ্ত মতামত ইতোমধ্যে সরকারের কাছে পৌঁছে দেয়া হয়েছে। এ অবস’ায় একই ইস্যুতে আবার সংলাপ কেন তা নিয়ে কমিশনারদের মধ্যে মত-দ্বন্দ্ব চরমে।
আগামী নির্বাচনের আগে ইভিএম প্রস’ত থাকবে
সিইসি সম্প্রতি বলেছেন, আগামী নির্বাচনের আগে ইভিএম প্রস’ত থাকবে। কিন’ এখনও পর্যন- বিদায়ী কমিশনের ইভিএম নিয়ে নানা কার্যক্রম ছাড়া কোন ধরনের কাজ শুর”ই করতে পারেনি ইসি। এমনকি প্রটোটাইপ ইভিএম তৈরিতে বুয়েটের সঙ্গে যে চুক্তি হওয়ার কথা ছিল গত এক মাসে তাও করতে পারেনি ইসি। এতে আগামী নির্বাচনের আগে ইভিএম কিভাবে তৈরি হবে তা নিয়ে সন্দিহান বুয়েটেও। শুধু প্রটোটাইপ মেশিনের মডেল তৈরিতেই বুয়েট সময় চেয়েছে ৬ মাস। এখনও এ মেশিন তৈরির চুক্তির বিষয়টি স’বির অবস’ায় পড়ে আছে।
এভাবে নির্বাচনে যোগ্য প্রার্থী প্রচারণায় এনজিওকে টাকা প্রদান, হালনাগাদে তথ্য সংগ্রহকারীদের জন্য ব্যাগ ক্রয়, ডিসিসির রিটার্নিং কর্মকর্তা কমিশনের নিজস্ব কর্মকর্তারা হবেন নাকি সরকারের প্রশাসনিক কর্মকর্তারা হবেন- এ রকম বেশকিছু বিষয়ে সিদ্ধান- নিতে পারেনি কমিশন। ৫ সদস্যের কমিশন গঠিত হওয়ায় ‘নানা মুনির নানা মত’ নিয়ে বেশ বিপাকে আছেন নতুন সিইসি। তাছাড়া সিইসি গঠন প্রক্রিয়া নিয়ে যেহেতু বিরোধী দল বিএনপি প্রথম থেকেই মেনে নেয়নি তাই কমিশনের বিতর্কিত বা একমত না হওয়া নিয়ে বেশ সমস্যা তৈরি হতে পারে। তবে সবকিছু নির্ভর করছে তাদের গঠনমূলক কর্মকাণ্ডের উপর।