দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ বাস্তব জীবনে মাঝে-মধ্যে এমন কিছু ঘটনা ঘটে যেগুলো সিনেমার কাহিনীকেও হার মানায়। ঠিক এমনই এক কাহিনী উঠে এসেছে সংবাদ মাধ্যমে। যা সকলকে নাড়া দিয়েছে!
সদ্য জন্ম নেওয়া ফুটফুটে এক শিশু। ধীরে ধীরে বেড়ে উঠলো সে। তরুণ বয়সে জানতে পারলো তার জীবনের কঠিন এক বাস্তবতার গল্প যা পাষন্ড মনকেও শীতল করে দিবে। তার জীবনের এমন বাস্তবতা যে সিনেমার গল্প ও নাটককেও হার মানিয়েছে।
আজকের কথা নয়। সেই সময়টি ছিল ১৯৮৯ এর ২১ নভেম্বরের কথা। ক্যালিফোর্নিয়ার এক পুলিশ অফিসার মাইকেল বুয়েলনা এক অপরাধকাণ্ডের তদন্তে গিয়েছিলেন। হঠাৎ করেই পাশের ময়লার ভাগাড় থেকে বাচ্চা বিড়ালের ম্যাও ম্যাও এর মতো আওয়াজ শুনতে পেলেন তিনি। কী যেনো তার মনে হলো, আওয়াজ লক্ষ্য করে এগিয়ে গেলেন তিনি। সেখানে ফুটফুটে এক শিশু পড়ে থাকতে দেখে হতভম্ব হয়ে পড়েন এই পুলিশ অফিসার। জন্মের পর ওই শিশুটির নাড়ীটাও কাটা হয়নি।
হতভাগাকে নিশ্চয়ই কেও ফেলে চলে গেছে; তার বাবা-মা কিংবা অন্য কেও। শিশুটির দম যায় যায় অবস্থা। কান্নার শক্তিও নেই বললেই চলে। শিশুটিকে কোলে তুলে নিলেন অফিসার। ভাবলেন একে কেও ফেলে রেখে যেতে পারে! বাচ্চাটিকে কাছের এক হাসপাতালে নিলেন পুলিশ অফিসার বুয়েলনা। শিশুটির জীবন বেঁচে গেলো। তিনি নাম রাখলেন অ্যাডাম।
অরেঞ্জ কাউন্টি রেজিস্টারে অ্যাডামের নাম উঠানো হলো এতিমদের খাতায়। বুয়েলনা নিজেই শিশুটিকে দত্তক নিতে চেয়েছিলেন। তবে কাগজপত্র সময়মতো প্রস্তুত করতে পারেননি তিনি। অরেঞ্জ কাউন্টির এলিজাবেথ বার্টন ও ড্যানিয়েল দম্পতি অ্যাডামকে তাদের ছেলে হিসাবে নিয়ে যান। এই দম্পতি অ্যাডামের নাম বদলে রাখলেন রবিন। বার্টন দম্পতি শিশুটিকে অন্য শিশুদের মতোই পালতে লাগলেন। বাবা-মা ও সুন্দর একটা বাড়ি রয়েছে তার। তবে সবই অন্যরকম হয়ে গেলো যখন রবিন তার জীবনের সেই দুঃস্বপ্নের কাহিনী জানলেন।
বর্তমানে ২৪ বছর বয়সের হ্যান্ডসাম এক তরুণ রবিন। জানতে পারলেন, নাড়ী ছেঁড়ার আগেই তার স্থান হয়েছিল ময়লার ভাগাড়ে। সেখানে মরেই যেতেন তিনি। তবে এক পুলিশ অফিসার পরম আদরে তাকে কোলে তুলে নেন এবং জীবন বাঁচান। সেই পুলিশ অফিসার মহামানবটিকে দেখার জন্য পাগল হয়ে গেলেন রবিন।
পুলিশ অফিসার মাইকেল বুয়েলনা তখন অবসর নিয়েছেন। বয়স ৫০ এর মতো হবে। অরেঞ্জ কাউন্টির নিজের বাড়িতেই শান্তিতে জীবন কাটাচ্ছেন তিনি। তিনিও কখনও ভাবেননি, কবে যে শিশুটিকে তিনি বাঁচিয়েছিলেন তাকে আবার কখনও দেখতে পারবেন। ২৫ বছর বয়সের যুবক রবিন হাজির হলেন বুয়েলনার সামনে। সাবেক অফিসার বিস্ময়ভরা চোখে দেখলেন সেই অ্যাডামকে!
তখন দুজনের চোখ বেয়ে কেবল অশ্রু ঝরতে লাগলো। দত্তক নেওয়া বাবা-মায়ের বদৌলতে বুয়েলনাকে একবার হলেও দেখার সৌভাগ্য হলো রবিনের। একসঙ্গে অনেক সময় কাটালেন তারা দুজন। প্রাণখুলে কথা বললেন একে অপরের সঙ্গে। জীবন বাঁচানোর জন্য বুয়েলনারের প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলেন রবিন। অপরদিকে বার্টন দম্পতিও বুয়েলনাকে পেয়ে দারুণ খুশি। এই মানুষটির জন্যেই তো রবিনকে পেয়েছিলেন তারা।
তবে এখানেই কাহিনীর শেষ নয়। রবিনের মনে প্রশ্ন রয়ে যায়- তার আসল বাবা-মা কোথায়? সূত্র ধরে অজানা-অচেনা মানুষকে খুঁজতে পারে দক্ষ পুলিশরা। কাজেই এক্ষেত্রে রবিনকে একমাত্র সহায়তা করতে পারেন বুয়েলনা। প্রস্তাব দিতেই রাজি হলেন সাবেক এই পুলিশ অফিসার। এরপর কেটে গেলো কয়েক মাস। তারপরই আসলো সেই মাহেন্দ্রক্ষণ।
হারিয়ে যাওয়া রবিন সত্যিই খুঁজে পেলেন তার মাকে, তার মায়ের নাম সাবরিনা ডিয়াজ। এই নারীই হলেন তার জন্মদাত্রী, এই জননীই একদিন তার নাড়ী ছেঁড়া ধনকে ডাস্টবিনে ফেলে দেন।
পরে জানা গেল, সেই সময় সাবরিনার জীবনে কাটছিল অন্ধকার সময়। বেশ কয়েক বছর জেলেও ছিলেন সাবরিনা। হত্যা চেষ্টার অভিযোগ ছিল সাবরিনার বিরুদ্ধে। এখন ক্ষমা চাওয়া ও অনুতাপ করা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই তার। ১৯ বছর বয়সে তিন বছর জেল খেটে ম্যাক্সিকো চলে যান সাবরিনা। তবে তার জীবনের এসব ঘটনা রবিনের বেড়ে ওঠা ঠেকাতে পারেনি। ছেলের কথা শুনে সাবরিনা তাকে একনজর দেখার জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠলেন।
অবশেষে মুখোমুখি হলেন মা ও ছেলে। সাবরিনা কিছু সময়ের জন্য ফিরে গেলেন অতীতে। এই ছেলেই সেদিন তার কোলে কাঁদছিল! যে শিশুটির মৃত্যু প্রায় নিশ্চিত ছিলো, সে আজ কতো সুন্দর হয়েছে। আজ সেই ছেলেটি তার মাকে খুঁজে বের করেছে!
তবে এতোকিছুর পরও রবিনের কোনো অভিযোগ নেই। সে তার আসল পরিবারকে পেয়ে খুব খুশি। তার পরিবারে আরও ৫টি বোন রয়েছে। সিনেমাকেও হার মানাবে এই বাস্তব ঘটনার সুখকর সমাপ্তি ঘটনাটি।
আমাদের সমাজে এখনও প্রতিবছর এমন অনেক শিশুর স্থান হচ্ছে ময়লার ভাগাড়ে। মায়ের অপরিকল্পিত গর্ভধারণসহ অন্যান্য আর্থ-সামাজিক কারণে এমন মর্মস্পর্শী ঘটনা আমাদের মাঝে-মধ্যেই দেখতে হয়। তবে এই মর্মস্পর্ষি ঘটনা সকলকে নাড়া দিয়েছে। সকলেই মনে করে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি যেনো আর কখনও না ঘটে। আর যেনো কোনো শিশুর স্থান ডাস্টবিনে না হয় সেই প্রত্যাশা সকলের।