ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ কথায় আছে, “হাতি মরলেও লাখ টাকা”,আল কায়দা নেতা ওসামা বিন লাদেনও ঠিক তেমনি। লাদেন বিশ্বে এমনই খ্যাতিমানদের কাতারে উঠে এসেছিলেন যে, মৃত্যুর এত সময় পরও লাদেনকে নিয়ে আলোচনা থামেনি। কখনও লাদেনকে সাগরে দাফন করা হয়নি- এমন খবর বের হচ্ছে, আবার কখনওবা তার ব্যক্তি জীবনের নানা কাহিনী উঠে আসছে জনসমক্ষে। আবারও তিনি খবরের শিরোনাম হয়েছেন- তবে এবার তিনি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের কারণে আলোচনায় আসেননি। আলোচনায় এসেছেন তার বিবিদের কারণে। বিবিদের দ্বন্দ্বের কাহিনী তুলে ধরেছেন পাকিস্তানের সাবেক এক সেনা কর্মকর্তা। খবর বিবিসি ও এপি অনলাইনের।
পাকিস্তানের সাবেক সেনা কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার শওকত কাদির জানান, বিবিদের রেষারেষিতে জীবনের শেষ সময়টা লাদেনের কেটেছে উদ্বিগ্নতায়। দুনিয়াজুড়ে ত্রাস সৃষ্টিকারী লাদেন এ সময় নিজের ঘরের কোন্দলেই অতিষ্ঠ হয়ে পড়েন। লাদেনের ছোট স্ত্রীকে আইএসআই কর্মকর্তারা যে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন, তার বিস্তারিত বিবরণ সম্প্রতি দেখার অনুমতি পান শওকত কাদির। আর এভাবেই তিনি জানতে পারেন লাদেনের ঘরের অনেক অজানা তথ্য। শওকত কাদির বর্তমানে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীতে নিরাপত্তা পরামর্শদাতা হিসেবে কাজ করছেন।
শওকত জানান, অ্যাবোটাবাদের বাড়িতে লাদেনের ছিল তিন বিবি। বড় স্ত্রী খাইরিয়াহ সাবের, যাকে লাদেন বিয়ে করেন আশির দশকের শেষের দিকে। দ্বিতীয় স্ত্রী সিহাম সাবের এবং ছোট স্ত্রী আমাল আহমেদ আবদেল ফাতাহ আল সাদা। ১৯৯৯ সালে ইয়েমেনি মেয়ে আমালকে যখন লাদেন বিয়ে করেন, তখন আমালের বয়স ছিল ১৯, লাদেনের জীবনের শেষ বছরগুলোতে আমালই তাকে সবচেয়ে বেশি সঙ্গ দিয়েছেন, সমর্থন জুগিয়েছেন। এ নিয়ে আবার ছোট বউ আর বড় বউয়ের মধ্যে ছিল রেষারেষি। বিশেষ করে ২০১১ সালে বড় বউ খাইরিয়াহ যখন অ্যাবোটাবাদের বাড়িতে চলে আসেন, তখন তাদের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ঘটে। আমালের প্রতি লাদেনের বাড়তি যত্ন যেন খাইরিয়াহর কাছে কাঁটার মতো বিঁধত। অন্যদিকে আমালের সন্দেহ ছিল, লাদেনকে ধরিয়ে দিতেই খাইরিয়াহ অ্যাবোটাবাদে এসেছে। দ্বিতীয় স্ত্রী সিহামের ছেলে খালিদ একদিন খাইরিয়াহকে জিজ্ঞেস করেন, কেন সে এতদিন পর এখানে এসেছে। জবাবে খাইরিয়াহ বলেন, ‘স্বামীর জন্য আমার এখন একটা কাজ করা বাকি আছে। এর পর থেকেই বাড়িতে খাইরিয়াহর ওপর লাদেন পরিবারের সন্দেহ আরও বেড়ে যায়। তবে মার্কিন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, লাদেনকে মারতে তাদের খাইরিয়াহর প্রয়োজন হয়নি। লাদেনের বড় স্ত্রী খাইরিয়াহ ২০০১ সালে আফগানিস্তান ছেড়ে ইরানে পালিয়ে যান। কিন্তু সেখানে তাকেসহ আল কায়দার একাধিক সদস্যকে আটক করে ইরানি পুলিশ। প্রায় দশ বছর আটক ছিলেন তারা। ২০১০ সালে অপহূত কূটনীতিকের মুক্তিপণ হিসেবে তাদের মুক্তি দিতে বাধ্য হয় ইরান কর্তৃপক্ষ। এরপর পাকিস্তানের অ্যাবোটাবাদে চলে আসেন খাইরিয়াহ।
পাকিস্তানের গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের কাছে আমাল জানান, লাদেনের সঙ্গে তিনি দক্ষিণ ওয়াজিরিস্তানের কয়েকটি জায়গায় পালিয়ে বেড়ান। ২০০৪ সালে তারা চলে যান সোয়াত উপত্যকার শাংলাতে। এর কিছুদিন পরই ইসলামাবাদের অদূরে হরিপুরে আশ্রয় নেন তারা। শেষ পর্যন্ত ২০০৫ সালের গ্রীষ্মে তারা চলে আসেন অ্যাবোটাবাদের বাড়িতে। তিন তলা বাড়িতে থাকত ২৮ জন। যাদের মধ্যে ছিলেন লাদেন ছাড়াও তার তিন স্ত্রী ও আট ছেলেমেয়ে।
উল্লেখ্য, ২০১১ সালের ২ মে সেখানেই মার্কিন বাহিনীর অভিযানে লাদেনসহ পাঁচজন নিহত হয়। গ্রেফতার হয় আমালসহ বাকিরা।