দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ যে ইংরেজরা জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চায় ব্যাপক উন্নতি সাধন করে এক সময় প্রায় গোটা বিশ্বকেই শাসন করেছে, তাদেরই দেশে এক সময় চালু ছিল স্ত্রী বিক্রির মতো প্রথা। অনেকটা আশ্চর্যজনক শোনালেও ঊনবিংশ শতাব্দীর মধ্য ভাগেও ইংল্যান্ডে এই প্রথা চালু ছিল।
১৭৮০ থেকে ১৮৫০ সালের মধ্যে ইংল্যান্ডে প্রকাশিত বিভিন্ন সংবাদপত্রে স্ত্রী বিক্রির অনেক ঘটনার কথা উল্লিখিত আছে। এই সময়ে “অ্যাক্ট অফ পার্লামেন্টের” মাধ্যমে আইনগতভাবে স্ত্রীদের ডিভোর্স দিতে ইংরেজদের খরচ করতে হতো কমপক্ষে ৩ হাজার পাউন্ড, যার মূল্য বর্তমান কালের হিসেবে ১৫ হাজার পাউন্ডের সমান।
মূলত এই বিপুল পরিমাণ অর্থের খরচ বাঁচাতে সাধারণ ইংরেজদের অনেকে স্ত্রীদের সরাসরি ডিভোর্স না দিয়ে বিক্রী করে দেওয়ার প্রথা চালু করে। ইংল্যান্ডের দরিদ্র অঞ্চলগুলিতে মহিলাদের অনেকটা ক্রয়-বিক্রয়যোগ্য সম্পত্তির মতোই বিবেচনা করা হতো।
স্ত্রীদের রাখতে ইচ্ছুক নয় এমন স্বামীরা তাদের স্ত্রীদের বাজারে নিয়ে যেতো, এবং তাদের গলায় বা হাতে দঁড়ি বেঁধে নিলাম ডাকা শুরু হতো।অনেক ক্ষেত্রে পত্রিকায় স্ত্রী বিক্রয়ের ঘোষণাও দেয়া হতো। জানা যায়, অনেক নারী দাম্পত্য জীবনের অশান্তি দূর করতে নিজের ইচ্ছাতেই বিক্রী হতে রাজী হতো। কম খরচে বিবাহিত জীবনের সমাপ্তি ঘটানোর জন্য আর কোনো বিকল্প পথ ছিলো না। আইনগতভাবে প্রথাটি তখন অবৈধ হলেও কর্তৃপক্ষ বিষয়টির দিকে খুব বেশি নজর দিতো না।
তৎকালীন নথিপত্র অনুযায়ী, স্ত্রী বিক্রয়ের ঘটনা সর্ব প্রথম ঘটে ১৭৩৩ সালে। বার্মিংহামে সেই বছর স্যামুয়েল হোয়াইটহাউজ নামক এক ব্যক্তি তার স্ত্রী ম্যারি হোয়াইটহাউজকে থমাস গ্রিফিথ নামক এক ক্রেতার কাছে এক পাউন্ডে বিক্রয় করে।
১৮২০ ও ১৮৩০-এর দশকে এই প্রথার চর্চা বেড়ে যেতে থাকে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই সমাজে এর প্রতি বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। এর পর থেকে স্ত্রী বিক্রয়ের ঘটনা ধীরে ধীরে কমে আসে।
অবশেষে ১৮৫৭ সালে ইংল্যান্ডে ডিভোর্স করার আইন শীথিল করা হয়। তবে এর পরেও স্ত্রী বিক্রয়ের ঘটনা একবারে থেমে থাকেনি। ১৯১৩ সালেও এক মহিলা দাবি করেন, তাকে স্বামীর সহকর্মীর কাছে এক পাউন্ডে বিক্রী করে দেওয়া হয়েছে ।