দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ পৃথিবীতে ধর্ম নিয়ে সংঘাত ঘটে আসছে অনেক আগে থেকেই। কিন্তু কিছু কিছু ব্যক্তি থাকেন যারা বারবার প্রমাণ করেন, ধর্মান্ধতা কখনো মুক্তি আনতে পারে না, বরং ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে মানুষকে সাহায্য করাই ধর্মের মূল শিক্ষা। এমনই একজন ব্যক্তি সি কাদ্দোউর বেংহাব্রিট।
বেংহাব্রিট ১৮৬৮ সালে আলজেরিয়ায় এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি পড়াশুনা করেন মাদরাসা অফ আলজিয়ার্স ও ইউনিভার্সিটি অফ আল-কারাউনে। তাঁর পেশাগত জীবন শুরু হয় আলজিয়ার্সে। পরবর্তীতে তিনি উত্তর আফ্রিকার প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও ফ্রান্সের বিদেশ মন্ত্রণালয়ের ভিতর মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করতে থাকেন।
পরবর্তীতে তিনি সোসাইটি অফ হাবাউস অ্যান্ড দি হলি প্লেসেস অফ ইসলামের সাথে সংযুক্ত হন। মূলত তাঁর প্রচেষ্টা এবং উক্ত প্রতিষ্ঠানটির সহযোগিতায় ১৯২০ সালের প্রথম দিকে প্যারিসে একটি মসজিদ স্থাপন করার উদ্যোগ নেওয়া হয় । ফ্রান্স ও ইসলামের সুসম্পর্কের একটি প্রতীক হিসেবে নির্মিত হয় এই মসজিদটি।
প্যারিস মসজিদের নির্মাণ কাজ শেষ হয় ১৯২৬ সালে। মসজিদটি ধীরে ধীরে ফ্রান্সে বসবাসরত মুসলিমদের কাছে অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠান হয়ে ওঠে। এর ফলস্বরূপ বেংহাব্রিটও জনপ্রিয় হয়ে উঠতে থাকেন ফ্রান্সে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে বেংহাব্রিটের ভূমিকা
বেংহাব্রিটের নাম ইতিহাসে উজ্জ্বল অক্ষরে লেখা থাকবে মূলত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে তাঁর ভূমিকার জন্য। যুদ্ধের সময় অক্ষ বাহিনীর কাছে ফ্রান্সের পতন হলে চরম সঙ্কটে পড়ে ফ্রান্সে বসবাসরত সব শ্রেণীর মানুষ। সেই ক্রান্তিকালে তাদের সাহায্যার্থে এগিয়ে আসেন বেংহাব্রিট। তবে তিনি শুধু মুসলিমদেরই সাহায্য করেননি, সাহায্য করেছেন ফ্রান্সে বসবাসরত ইহুদিদেরও।
ইহুদিদের জীবন রক্ষার্থে তাদের আশ্রয় দেওয়া হয় প্যারিসের সেই মসজিদে। শত্রুদের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য মসজিদের নিচের টানেলেও রাখা হয় অনেক ইহুদি পরিবারের সদস্যকে। এরপর তাদেরকে নকল কাগজপত্র দিয়ে ভূমধ্যসাগর পার করে মাগরেবে পাঠানো হতো।
এই প্রক্রিয়া ছাড়া সেই সময় ফ্রান্সের ইহুদিদের রক্ষা করার আর বিশেষ কোনো পথ ছিলো না। আর এই উদ্ধার করার সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটি তত্ত্বাবধান করেন বেংহাব্রিট। তাঁর আন্তরিকতা ও প্রচেষ্টার কারণেই জীবন ফিরে পায় শত শত ইহুদি। ধারণা করা হয়, প্রায় ১৬০০ ইহুদির জীবন রক্ষা করেছিলেন বেংহাব্রিট।