ঢাকা টাইমস্ রিপোর্ট ॥ সুন্দরবনের প্রধান আকর্ষণ হরিণ। অথচ এই হরিণ শিকারীদের শিকার হতে হতে প্রায় বিলুপ্ত হতে চলেছে। যেন কোন কিছুতেই থামানো যাচ্ছে না শিকারীদের।
খবরে প্রকাশ, কোনক্রমেই বন্ধ করা যাচ্ছে না সুন্দরবনে হরিণ শিকারীদের তৎপরতা। শিকারী চক্রের কৌশলের কাছে বনরক্ষীরা যেন অসহায় হয়ে পড়েছে। ফলে বিশ্বের বৃহত্তম এ ম্যানগ্রোভ বনে হিংস্র বাঘ আর রাক্ষুসে কুমিরের থাবা থেকে রক্ষা পেলেও শিকারীর হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছে না হরিণ। শিকারীদের কালো থাবায় অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত প্রায় সুন্দরবনের মায়াবী হরিণ। বনবিভাগ আর স্থানীয় প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা জেলার বিভিন্ন হাটবাজারে বিকিকিনি হচ্ছে হরিণের মাংস। জানা গেছে, সাতক্ষীরার শ্যাম নগরে প্রায় প্রকাশ্যে এসব হরিণের মাংস বিক্রি হয়।
সম্প্রতি মংলায় পুলিশ ও বনবিভাগ পৃথক অভিযান চালিয়ে দু’টি হরিণের শুকানো চামড়া, একটি তাজা হরিণ ও মাংসসহ তিন শিকারীকে আটক করেছে। এ নিয়ে গত দু’মাসে সুন্দরবনের পূর্ব বিভাগের চাঁদপাই ও শরণখোলা রেঞ্জ এলাকা থেকে শিকারীদের কবল থেকে ১৬টি হরিণের মাংস ও চামড়া উদ্ধার হয়। এ ছাড়া গত তিন বছরের ব্যবধানে শুধুমাত্র দুবলার চরের রাশ মেলাকে ঘিরেই চোরাই শিকারীদের হাতে অন্তত ৩ হাজার ৭০০ হরিণ ধরা পড়েছে। এছাড়া প্রতি মাসে গড়ে শিকারীরা বন থেকে অন্তত ১৮০-২০০ হরিণ শিকার করছে। বর্তমানে সুন্দরবনের পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলোতে প্রকাশ্যে ২০০ থেকে সাড়ে ৪০০ টাকায় প্রতি কেজি হরিণের মাংস বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া পাচার হওয়া হরিণের চামড়া শোভাবর্ধন করছে কিছু অসাধু প্রভাবশালীর ড্রইং রুমে। বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগসহ বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়, ২০০১ সালের সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী সুন্দরবনের হরিণের সংখ্যা ছিল দেড় থেকে দুই লাখ। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, হরিণ প্রতি বছর দু’বার বাচ্চা দেয়। সে হিসেবে গত ৮ বছরে ৫০ থেকে ৮০ হাজার হরিণ বৃদ্ধির কথা ছিল বলে একটি গবেষণায় মতামত প্রকাশ করা হয়। তবে সূত্রের দাবি, ৮ থেকে ১০ বছরের ব্যবধানে সুন্দরবনে মাত্র ৪০ থেকে ৫০ হাজার হরিণ বৃদ্ধি পেয়েছে। সুন্দরবনের ২২ প্রজাতির উভয়চর, ১৪৩ প্রজাতির সরীসৃপ ও ১১৬ প্রজাতির স্তন্যপায়ীর মধ্যে সবচেয়ে আকর্ষণীয় প্রাণী হল মায়াবী চিত্রল হরিণ। মায়াবী চিত্রল হরিণের চোখ ধাঁধানো চাহনীর কারণে সুন্দরবনে ভ্রমণে আসা দেশী বিদেশী পর্যটকদের আকর্ষণ করলেও গহিন বনের নির্জনেও নিরাপদ নয় চঞ্চল এ প্রাণীটি। অভিযোগ রয়েছে, বন বিভাগের দায়িত্বে অবহেলার কারণে প্রতিদিন শিকারীদের গুলিতে শিকার হচ্ছে অসংখ্য হরিণ। বনে খাদ্য সংকট, প্রতিনিয়ত কুমির-বাঘের আক্রমণ। এছাড়া আইলা সিডরসহ বিভিন্ন সময় সুন্দরবনের ওপড় দিয়ে বয়ে যাওয়া ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসসহ বিভিন্ন কারণে সুন্দরবনের এই মায়াবী চিত্রল হরিণ দিন দিন কমে যাচ্ছে। জানা গেছে, সুন্দরবনের কটকা, কচিখালী, দুবলার চর, করমজল, তালপট্টি, চড়খালী, চান্দেশ্বর, সুপতী, হিরণপয়েন্টসহ এর আশপাশ এলাকায় বেশির ভাগ সময় হরিণ বিচরণ করে। বাগেরহাট, খুলনা ও সাতক্ষীরা জেলার বিভিন্ন উপজেলার কয়েকটি চক্র নির্দিষ্ট স্থানগুলোসহ বিভিন্ন পয়েন্টে হরিণ শিকার করে যাচ্ছে নির্ভয়ে। বন বিভাগের বিভিন্ন স্টেশন থেকে মৎস্য আহরণের পাস নিয়ে শিকারীচক্র বনের মধ্যে প্রবেশ করে থাকে। এরপর শুরু হয় অভিনব কায়দায় শিকারযজ্ঞের প্রক্রিয়া। এসব শিকারীরা বনের মধ্যে ফাঁদ পেতে কিংবা গুলি করে হরিণ শিকার করে।
অবস্থা দৃষ্টে মনে হয়, কেও যেনো দেখার নেই, কারো যেনো কিছুই করার নেই। অভিজ্ঞ মহলের ধারনা, এই অবস্থা চলতে থাকলে সুন্দরবনের প্রধান সুন্দরতম এই হরিণের অস্থিত্ব থাকবে না। তাই সময় থাকতে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।