দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ স্থুলতা থেকেও ঘাড় ও কোমর ব্যথা হতে পারে। তাই স্থুলতা কমানোর বিকল্প নেই। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের পরামর্শ মতোই এ স্থুলতা কমানোর পদ্ধতি জানা দরকার।
আমাদের দেহে ভূঁড়ি ও ওজনাধিক্য দেহের কিছু পরিবর্তন আনে। ভূঁড়ির ভারে দেহের কোমর ভেতরের দিকে এবং বুক পেছনের দিকে যেতে থাকে। এতে ঘাড়েও অতিরিক্ত চাপ পড়ে । যখন ঘাড়ের ও কোমরের পেছনের মাংসপেশিতে অতিরিক্ত চাপ পড়ে তখন মাংসপেশিগুলো ক্লান্ত হয়ে পড়ে, ফলে ঘাড়ে ও কোমরে ব্যথা শুরু হয়। এ অবস্থা চলতে থাকলে মেরুদণ্ডের দুই পাশে যে সরু চিকন রাস্তা থাকে (স্পাইনাল ক্যানেল) দিন দিন চিকন হয়ে যায়। স্নায়ুর ওপর চাপ পড়ে, ফলে ব্যথা হাতে বা পায়ে চলে যায়। এক সময় হাত বা পা দুর্বল হয়ে পড়ে একে বলা হয় মায়োলোপেথি। আপনারা হয়তো মনে করতে পারেন, সামান্য ভূঁড়ি বা স্বাস্থ্য বেশি হওয়ার জন্য এত সমস্যা কি হতে পারে? এ কারণে আপনি কোমর ও হাঁটুসহ বিভিন্ন জয়েন্টের ব্যথায় ভুগতে পারেন, সমস্যা হতে পারে হূৎপিণ্ড ও কিডনীতে, অ্যাজমা জাতীয় সমস্যা।
বিশ বছরের পর মানুষের আর সাধারণ বৃদ্ধি হয় না, ফলে খাবারের সারবস্তু অধিকাংশই জমা হয় পেটে। ফলে দেহের ওজন বেড়ে যায়। একজন গর্ভবতী মায়ের কোমর ব্যথার কারণ একই সমস্যা হতে পারে। গর্ভাবাস্থায় দীর্ঘসময় মেরুদণ্ডের ওপর যে চাপ পড়ে তাতে অনেকেরই ব্যথা হয় এবং এই ব্যথা একজন মা পরবর্তী জীবনে ও দীর্ঘদিন ভুগতে থাকে। অনেক সময় মহিলাদের অপারেশনের আগে যে ইনজেকশন দেয়া হয় তার জন্যও কোমর বা ঘাড় ব্যথা হতে পারে। গর্ভাবস্থায় হয়ত এ ব্যথার উৎপত্তি। যে সব মহিলার এরকম ব্যথা হয় তাদের বাচ্চা প্রসবের ৩-৬ মাস পরই একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত। অনেকেই বচ্চা প্রসবের পরবর্তী দীর্ঘ সময় পরও ঢিলেঢালা পেটটাকে টাইট করতে পারেন না, এতে তাদের কোমর ব্যথা বেশি হতে পারে।
ওজন যদি বেশি হয় তাহলে আজকেই ওজন কমানোর চেষ্টা করুন। প্রতিদিন সকালে নিয়মিত অন্তত ৩০-৪০ মিনিট হাঁটুন, শর্করা বা কার্বোহাইড্রেট কম খান, তরল খাবার বেশি খেলেও অসুবিধা নেই। চর্বি জাতীয় খাবার কম খাবেন। এতে হূদরোগ হবে না। তবে খাবার একেবারে কমাবেন না।
নিম্ন উল্লিখিত সমস্যা দেখা দিলে যত তাড়তাড়ি সম্ভব বিশেষজ্ঞ ফিজিওথেরাপি পরামর্শ নিন-
# ভারি জিনিস উত্তোলন করতে বা হাচি অথবা কাঁশি দিতে গিয়ে কোমরে শব্দ হয়েছে বা টান লাগছে।
# কোমরে অসহ্য ব্যথা হয় এবং পায়ে ছড়িয়ে যায় এবং অনেক সময় শুধু ব্যথা পায়েই অনুভূত হয়; কোমরে ব্যথা নাও হতে পারে।
# হাঁটলে বা কাজ করলে ব্যথা বেশ বেড়ে যায়, রাতে ঘুমেরও ব্যাঘাত হতে পারে।
# অনেক সময় রোগী পায়ে ঝিনঝিন, অবসভাব ও দুর্বলতা অনুভব করেন।
# রোগীর কোমর একদিকে বেকে যায় এবং চিত হয়ে শুয়ে পা উঁচু করতে ব্যথা অনুভব হবে।
# সকালবেলায় আর ডান-বাম ঘাড় নাড়াতে পারছেন না সঙ্গে প্রচুর ব্যথা।
# কনুইয়ের উপরের অংশে অথবা হাতের কব্জি ও আঙুল পর্যন্ত ব্যথা হতে পারে।
# হাতের আঙুল ঝিনঝিন এবং হাতের বোধশক্তি কমে যায়।
# রোগী মনে করেন, তার হাতের ওপর আরও একটি স্তর আছে।
# কারও কারও হাত দুর্বল হয়ে যায় ।
# ডা. মোঃ শাহাদৎ হোসেন
প্রেসিডেন্ট অ্যান্ড কন্সালটেন্ট, ফিজিওথেরাপি
ফাউন্ডেশন।
সৌজন্যে: দৈনিক যুগান্তর