ঢাকা টাইমস্ রিপোর্ট ॥ ১২ মার্চ বিএনপির মহাসমাবেশ ঘিরে ঢাকা অবরুদ্ধ থাকায় এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে দেশের অর্থনীতিতে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের সঙ্গে রাজধানী ঢাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ থাকায় চাউল থেকে শুরু করে কাঁচা তরি-তরকারি এবং নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। বলা যায়, ব্যবসা-বাণিজ্যে মন্দাবস্থা দেখা গেছে। ফুটপাতের ব্যবসা থেকে শুরু করে ব্যাংক ও বীমা প্রতিষ্ঠানগুলোতে লেনদেন কমে গেছে।
ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, যানবাহন ও হোটেল ব্যবসায়ীদের কোটি কোটি টাকা লোকসান হয়েছে। রাজধানীর ভেতরে ও দূরপাল্লার বিভিন্ন ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় শুধু ১২ মার্চ বাস ও লঞ্চ ব্যবসায়ীদের ৬০ থেকে ৭০ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া এর আগের দু’দিনে আরও কয়েক কোটি টাকা লোকসান গুনতে হয়েছে। সূত্র জানায়, রাজধানীতে দৈনিক প্রায় ৭০ হাজার বিভিন্ন ধরনের যান চলাচল করে। একইভাবে রাজধানীর বাইরে থেকেও কয়েক হাজার যানবাহন রাজধানীতে আসে প্রতিদিন। এছাড়া রাজধানীর সহস াধিক হোটেল ও রেস্তোরাঁ বন্ধ থাকায় কয়েক কোটি টাকা লোকসান গুনতে হয়েছে হোটেল মালিকদের। নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে ব্যাংক বীমা ব্যবসাতেও। একইভাবে বিপাকে পড়েছেন রাজধানীর স্বল্প আয়ের মানুষ। বিশেষ করে যারা সড়কের পাশে ফুটপাতে ব্যবসা করেন তাদের বেচাকেনা প্রায়ই বন্ধ হয়ে গেছে। মতিঝিল এলাকার কয়েক হাজার ক্ষুদে ব্যবসায়ী দোকান খুলতেই পারেনি। শুধু মতিঝিল এলাকায়ই নয়, সারা ঢাকার ফুটপাতের ব্যবসায়ীদের দোকান খুলতে দেয়নি পুলিশ। তবে দু’একজন দোকান বিছালেও ক্রেতা ছিল না বললেই চলে। মতিঝিল এলাকার ফুটপাতের ব্যবসায়ী রকিবুল জানান, সকাল থেকে মাত্র একটি গেঞ্জি বিক্রি করেছেন।
দেখা গেছে, যারা ফুটপাতে চায়ের দোকান, হোটেল বা ছোট পরিসরে খাবারের দোকান দিয়ে থাকেন তারা পড়েছেন সবচেয়ে বেশি সমস্যায়। ১২ মার্চ মহাসমাবেশের কারণে সকাল থেকেই মতিঝিল এলাকার বিভিন্ন সড়কের পাশের ওইসব দোকান বন্ধ করে দেয়া হয়। দু-একটি চায়ের বা খাবারের দোকান খুললেও কেনাবেচা নেই বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এদিকে রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারি সব ধরনের ব্যাংকে লেনদেন হয়েছে স্বল্প পরিসরে। গ্রাহকদের উপস্থিতি অন্য যে কোনো দিনের তুলনায় কম। রাজধানীর ব্যাংকপাড়া মতিঝিলে প্রতিদিনের মতো প্রাইভেটকার ও পাবলিক বাসের চাপ ছিল না। বড়-ছোট সড়কগুলো প্রায় যানশূন্য।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংকসহ বিভিন্ন ব্যাংকে যথাসময়ে কার্যক্রম শুরু করলেও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপস্থিতি ছিল কম। লেনদেনও হয়েছে কম। নিরাপত্তার স্বার্থে ব্যাপকসংখ্যক র্যাব, পুলিশ ও বিজিবির সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক এএসএম আসাদুজ্জামান বলেন, ‘সকাল ১০টায় তারা কার্যক্রম শুরু করেছেন। ক্যাশ কাউন্টারসহ অন্যসব বিভাগে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপস্থিতি স্বাভাবিক ছিল। এদিকে সোনালী ব্যাংক লিমিটেডের উপ-মহাব্যবস্থাপক প্রদীপ কুমার শর্মা জানান, সকাল ১০টায় লেনদেন শুরু হয়েছে। তবে যানবাহন সংকটের কারণে লোকজন আসতে পারছে না। তাই গ্রাহক সংখ্যাও কম। এভাবে পুরো ঢাকা শহর হয়ে পড়ে স্থবির। তরি-তরকারির দামও তুলনামূলকভাবে অন্য সময়ের তুলনায় বেশি। ব্যবসা বাণিজ্যে এই স্থবিরতার জন্য দেশের অর্থনীতিতেও এর প্রভাব পড়বে বলে অর্থনীতিবিদরা জানিয়েছেন।