দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ আমরা পৃথিবী নামের যে গ্রহে বাস করি তার প্রায় ৭০% পানি। মোট পানির ২ শতাংশ মিঠা পানি এবং ৯৮ শতাংশ সমুদ্রের পানি যা পুরোটাই লবণাক্ত। কিভাবে এই পানি লবণাক্ত হয়?
পৃথিবীতে ৩২৬ মিলিয়ন ট্রিলিয়ন গ্যালন পানি রয়েছে । কিন্তু এর ২ শতাংশ মিঠা পানির মধ্যে বেশির ভাগ বরফ হয়ে আছে এবং এক শতাংশেরও কম পরিমাণ পানি পান করার যোগ্য । বাকি অংশের ৯৮ শতাংশ লোনাপানি। সাধারনত সমুদ্রের পানি লবণাক্ত।প্রতি লিটার সমুদ্রের পানিতে গড়ে ৩০ গ্রামের মত লবণ থাকে।
ধারণা করা হয় পৃথিবীর মহা সাগর গুলোর মোট লবণের পরিমাণ ৫০ মিলিয়ন বিলিয়ন টন। এই লবণ দিয়ে প্রায় ১৮০ মাইল উচ্চতা এবং ১ মাইল পুরুত্ব বিশিষ্ট একটি লবণের প্রাচীর তৈরি করা সম্ভব যা বিষুবরেখা বরাবর পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করতে পারে।
এত লবণ কিভাবে আসল সমুদ্রের পানিতে?
সমুদ্রের পানিতে লবণের অন্যতম যোগানদাতা হল ভূপৃষ্ঠ। বৃষ্টির পানির ফোটা মাটিতে পড়ার সময় বাতাসের কার্বন ডাই অক্সাইড তাতে মিশে গিয়ে পানিতে এসিডীয় ধর্মের সৃষ্টি করে। এই মৃদু এসিডীয় পানি পৃথিবীপৃষ্ঠের শীলার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার সময় কিছুটা শিলা ক্ষয়ে পানিতে মিশে যায়। ফলে পানিতে বিভিন্ন ধরনের আয়ন তৈরি হয়ে পানিতে কিছুটা লবণ দ্রবীভুত হয়। এই সকল লবণ নদী হয়ে সাগরে গিয়ে পরে। ধারণা করা হয় মিঠা পানির নদী বছরে প্রায় চার বিলিয়ন টন লবণ সাগরে প্রবাহিত করে। সুর্যের তাপে পানি বাষ্প হয়ে উড়ে যায় কিন্তু লবণ সমুদ্রের পানিতে থেকেই থেকে যায়।
অনেকেই বলতে পারেন তাহলে নদীর পানি লবনাক্ত নয় কেন? এই স্বল্প মাত্রার লবণাক্ত পানি নদী প্রতিনিয়ত বয়ে নিয়ে যাচ্ছে সমুদ্রে। যেহেতু নদীর পানি স্থির নয়, তাই নদীর পানি লবণাক্ত মনে হয় না। নদীর পানিতে লবণাক্ততার মাত্রা সমুদ্রের পানির তুলনায় ২০০ ভাগের ১ ভাগেরও কম। তবে কিছু লেক বা হ্রদের পানিও লবণাক্ত হয়। কারণ হ্রদ বা লেকের পানিও বিভিন্ন পাহাড় থেকে বয়ে আসে বা নদী থেকে এসে ওখানে আটকে থাকে। তাই কিছুটা লবণাক্ত হয়।
এছাড়া সমুদ্রের তলদেশে এমন কিছু জায়গা রয়েছে যেখান দিয়ে পানি বিভিন্ন শীলাস্তরের মধ্য দিয়ে সমুদ্রের উত্তপ্ত স্থানে প্রবেশ করে। ফলে সেখান দিয়েও লবণ সমুদ্রে পানিতে মিশে যায়। সমুদ্রের তলদেশে আগ্নেয়গিরির কারণে দ্রবণীয় খনিজ সমুদ্রের পানিতে মিশ্রিত হয়। যা সমুদ্রের পানিতে লবণ দ্রবীভূত করে।
তবে প্রতিনিয়ত নদীগুলো যেভাবে সমুদ্রের পানিতে লবণ বয়ে নিয়ে আসছে তবুও সমুদ্রের পানিতে লবণের মাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে না। তার কারণ হল, সমুদ্রের তলদেশে বিভিন্ন খনিতে প্রতিনিয়ত একই মাত্রায় লবণ জমা হচ্ছে । ফলে তা সমুদ্রের পানির লবণের ভারসাম্য রক্ষা করছে। নদী গুলো যে লবণ বয়ে নিয়ে আসে তার বেশির ভাগই বিভিন্ন সামুদ্রিক প্রাণি বা উদ্ভিদের দেহ গঠনে ব্যবহৃত হয়। শুধু সোডিয়াম ক্লোরাইড বা খাওয়ার লবণ টুকু পানিতে মিশে থাকে।