ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ বোনা আমন ধানের ব্যাপক ফসল হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়ায় কৃষকরা আনন্দে আত্মহারা হওয়ার পথে হঠাৎ করেই চলনবিলের ৯ উপজেলায় বন্যার পানি প্রবেশ করায় কৃষকরা শঙ্কিত হয়ে পড়েছে।
জানা যায়, বর্ষা কম হওয়ায় চলনবিলের কৃষকরা বাম্পার ফসলের আশায় আমন ধান বুনেছে। এতদিন কৃষকদের লালনের পর সেই ধান এখন কৃষকদের আনন্দে আত্মহারা হওয়ার সময় প্রায় সন্নিকটে এসে যায়। কিন্তু কৃষকদের সেই আনন্দের দিন হঠাৎ করেই বিলিন হয়ে যেতে বসেছে। কারণ অসময়ে বন্যার পানি এসব ধানের গাছকে ছাড়িয়ে যেতে বসেছে। চলনবিলের ৯ উপজেলায় বোনা আমন ধানের জমিতে বন্যার পানি প্রবেশ করায় মাঠের পর মাঠ ফসলে সবুজ ঢেউ খেলছে। অসময়ে নতুন করে বন্যা সৃষ্টি হওয়ায় এবং পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় কৃষকের মনে আশার সঞ্চার করলেও ফসল ক্ষতির চিন্তায় এখন তারা উদ্বিগ্ন।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, দেশের বৃহৎ এ বিলে বোনা আমন ধানের জন্য বিখ্যাত চলনবিলের ৯ উপজেলায় এ বছর ৫০ হাজার হেক্টর জমিতে বোনা আমন ধানের আবাদ হয়েছে। তাড়াশ, সিংড়া ও চাটমোহর উপজেলায় অধিক জমিতে বোনা আমন ধানের আবাদ হয়েছে এবং আবাদী জমির পরিমাণ ৩৩ হাজার হেক্টর। দক্ষিণের ফরিদপুর ও ভাঙ্গুড়া উপজেলায় আবাদ হয়েছে সাড়ে ৯ হাজার হেক্টর। গুরুদাসপুর ও আত্রাই উপজেলায় সাড়ে ৭ হাজার হেক্টর এবং উল্লাপাড়া ও শাহজাদপুর উপজেলায় ৪ হাজার হেক্টর।
জানা যায়, মাত্র ১০ থেকে ১২ প্রজাতির ধান চলনবিলের কৃষক এখনও লালন করে আসছে। আর এগুলোই হলো বিলের মানুষের ভাষায় ছোটনা ধান। বন্যার পানির সাথে ছোটনা ধানও প্রতিযোগিতায় বেড়ে উঠে। মাঝারি নিচু অঞ্চলের ক্ষেত-খামারে বোরো ধান কেটে এ সব ছোটনা আমন ধানের আবাদ করে কৃষক যা সম্পূর্ণ বন্যার উপর নির্ভরশীল। বোনা আমন ধানের ৫০ ভাগ আবাদী জমিতে বন্যার পানি প্রবেশ করে আবার নেমে যায়। দ্বিতীয় দফায় আগস্ট মাসে আবার বন্যার পানি বৃদ্ধি পেয়ে ৭০ ভাগ ফসলি জমিতে পানি প্রবেশ করে। কিন্তু পানি দাঁড়িয়ে না থেকে পক্ষকালের মধ্যেই মাঠ থেকে নেমে ধান ক্ষেত শুকিয়ে যায়। বান-বন্যা ও বৃষ্টিহীন অবস্থায় ফসল বিবর্ণ হয়ে পড়ায় ফসল ক্ষতির আশংকায় বিলের কৃষক উৎকণ্ঠিত হয়ে পড়ে। প্রায় ১মাস এভাবে কাটার পর গত ১৬ সেপ্টেম্বর হতে হঠাৎ চলনবিলে বন্যার পানি হু-হু করে বাড়তে থাকে।
যে বছর বেশি বর্ষা হয় সে বছর দেখা যায়, শত শত বিঘা জমিতে শুধু পানি আর পানি। বর্ষায় ওই অঞ্চলে গেলে দেখা যায় এই দৃশ্য। কিন্তু বর্ষা শেষ হলে যদি কম বর্ষা হয় তাহলে কৃষকরা আমনের বীজ বুনে দেয়। আর যদি বন্যা তুলনামূলকভাবে কম হয় তাহলে এ বিলে বাম্পার আমন ধানের ফসল কৃষকরা ঘরে তোলে।
এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ৮দিনের মধ্যে বন্যার পানি দ্বিতীয় দফা বন্যার পর্যায়ে পৌঁছেছে এবং বোনা আমন ধানের অবস্থা পাল্টে গেছে। অসময়ে বন্যার পানি আরো বাড়লে এসব ধান ডুবে যাবে অথবা উপড়ে যাবে বলে কৃষকরা আশংকা প্রকাশ করেছে।