দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা অং সান সু চি বলেছেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বিষয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে আলোচনা চলছে। গতকাল (বৃহস্পতিবার) দেশটির রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টার কার্যালয়ে এক বিবৃতিতে এসব কথা বলা হয়েছে।
মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা অং সান সু চি জানিয়েছেন, রাখাইন হতে পালিয়ে যাওয়া রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন বিষয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে আলোচনা চলছে।
গতকাল (বৃহস্পতিবার) দেশটির রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টার কার্যালয়ে এক বিবৃতিতে এসব কথা বলেন সু চি। ওই বিবৃতির ইংরেজি সংস্করণটি রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টার কার্যালয়ের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে প্রকাশ করা হয়।
সু চি বলেছেন, বাংলাদেশে চলে যাওয়া মানুষদের ফিরিয়ে আনতে আমরা ঢাকা’র সঙ্গে আলোচনা করছি। আমাদের স্বাধীনতার পর হতে এই পর্যন্ত ২ বার এই বিষয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। অতীতের উপর ভিত্তি করে আমরা এবার তৃতীয়বারের মতো আলোচনা করছি।
সু চি আরও বলেছেন, ‘আপনারা সবাই জানেন রাখাইন ইস্যুতে বিশ্বের মনোযোগ ব্যাপক। গত বছর অক্টোবরে পুলিশ ফাঁড়িতে সন্ত্রাসী হামলার মধ্যদিয়ে যার যাত্রা শুরু। চলতি বছর আগস্টে আবারও একই ধরনের হামলার ঘটনা ঘটেছে। এই হামলার পর হতে সংশ্লিষ্ট একাধিক সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। আমাদের দেশের বিরুদ্ধে অনেক রকম সমালোচনা হচ্ছে। আমাদেরকে আন্তর্জাতিক মত বুঝতে হবে। যদিও কারও পক্ষেই আমাদের দেশের পরিস্থিতিটি বুঝতে পারা সম্ভব নয়। আমাদের দেশের শান্তি ও উন্নয়ন আমাদের চেয়ে কেও বেশি চাইতে পারে না। তাই এসব সমস্যাগুলো আমাদের একতার শক্তি দিয়ে মোকাবিলা করতে হবে।’
বিবৃতিতে সু চি আরও বলেন, ‘এই মুহূর্তে আমাদের দেশের উচিত, বা যা করা প্রয়োজন, তা চালিয়ে যাওয়া। অধিকন্তু তা করতে হবে সঠিক, সাহসিকতা এবং কার্যকরভাবে। উন্নতি ও সফলতা অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত আমরা যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছি, তা বাস্তবায়ন করে যাবো। সমালোচনা এবং অভিযোগের জবাব কথায় না দিয়ে আমাদের পদক্ষেপ ও কাজ দিয়ে বিশ্বকে তা দেখিয়ে দেবো।’
রাখাইনে করণীয় বিষয়ে সু চি বলেছেন, ‘রাখাইন রাজ্যে আমাদের অনেক কিছু করতে হবে। আমরা যদি করণীয় বিষয়গুলোর তালিকা তৈরি করি ও অগ্রাধিকার ঠিক করি, তাহলে ৩টি প্রধান করণীয় বিষয় সামনে চলে আসে। আর সেগুলো হলো:
১. বাংলাদেশে যারা চলে গিয়েছে তাদেরকে প্রত্যাবাসন এবং কার্যকরভাবে মানবিক সহায়তা দেওয়া।
২. পুনরায় স্থানান্তর এবং পুনর্বাসন করা।
৩. অঞ্চলটির উন্নয়ন এবং স্থিতিশীল শান্তি প্রতিষ্ঠা নিশ্চিত করা।’
সু চি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ হতে ফিরিয়ে আনা মানুষদের পুনর্বাসন নিয়ে শুধু আমাদের কাজ করলেই হবে না। রাখাইনের বিভিন্ন ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীসহ রাখাইন এবং হিন্দুদের জন্যও কাজ করতে হবে। তারা যাতে স্বাভাবিক হয় সেটি আমরা নিশ্চিত করবো। তাদের জীবন উন্নত করতে আমরা দীর্ঘমেয়াদি এবং টেকসই কর্মসূচি গ্রহণ করবো। অঞ্চলটির উন্নয়নের জন্য দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা এবং আসন্ন দিনগুলোতে সংঘর্ষ এড়াতে স্থায়ী শান্তি স্থাপনের জন্য কাজ করবো।’
উল্লেখ্য, বিবৃতিতে সু চি বাংলাদেশে পালিয়ে আসা মানুষদের রোহিঙ্গা হিসেবে আখ্যায়িত করেননি। জাতিসংঘের জাতিগত নিধনযজ্ঞের অভিযোগের বিষয়েও কিছুই উল্লেখ করেননি। এমনকি রাখাইনে সেনাবাহিনীর অভিযানে হত্যা, অগ্নিসংযোগ এবং ধর্ষণের অভিযোগের বিষয়েও কোনো রকম কথা বলেননি তিনি। ১৯ সেপ্টেম্বর দেওয়া ভাষণে সু চি দাবি করেছিলেন যে, রাখাইনে সেনা অভিযান শেষ হয়েছে। সহিংসতায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হলেও রোহিঙ্গাদের নিয়ে কিছুই বলেননি। শুধু জানিয়েছিলেন, কেনো বাংলাদেশে মুসলমানরা পালিয়ে যাচ্ছে সেটি অনুসন্ধান করতে হবে।
এদিকে সু চির এর বিবৃতির পর বাংলাদেশের বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, সু চি কথায় অনেক কিছুই বলেছেন। কিন্তু সেগুলো পূর্ণ বাস্তবায়ন করবেন কিনা সেটিই দেখার বিষয়। কারণ কথায় বলা আর বাস্তবে কাজ করার বিষয়টি একেবারেই ভিন্ন বিষয়। তবে সময়ই বলে দেবে তিনি শান্তিতে পুরস্কার পেয়ে সেই মর্যাদা অক্ষুন্ন রাখেন কি না।