দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ স্বাস্থ্য মানুষের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি সম্পদ। শারীরিক এবং মানসিক সুস্থতা বজায় রাখতে স্বাস্থ্য সচেতন থাকা অপরিহার্য। আধুনিক গবেষণায় দেখা গেছে, সঠিক জীবনযাত্রা অনুসরণ করলে অধিকাংশ রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব। তাই সুস্থ থাকতে হলে প্রতিদিনের জীবনে কিছু নিয়ম মেনে চলা জরুরি।

# সুষম খাদ্য গ্রহণ স্বাস্থ্য সচেতনতার মূলভিত্তি। গবেষণা বলছে, প্রতিদিন যথাযথ পরিমাণে ভিটামিন, খনিজ, প্রোটিন, শর্করা ও চর্বি গ্রহণ করলে শরীর সঠিকভাবে কাজ করে। অতিরিক্ত ভাজাপোড়া ও প্রক্রিয়াজাত খাবার শরীরে চর্বি জমিয়ে হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়। এর পরিবর্তে শাকসবজি, ফলমূল, মাছ, ডাল ও আঁশযুক্ত খাবার খাওয়া উচিত। পর্যাপ্ত পানি পানও শরীরকে সুস্থ রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
# নিয়মিত শরীরচর্চা স্বাস্থ্য সচেতন জীবনের অন্যতম প্রধান উপাদান। গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটা, দৌড়ানো বা হালকা ব্যায়াম হৃদযন্ত্রকে সক্রিয় রাখে এবং মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়ায়। যারা নিয়মিত ব্যায়াম করেন, তাদের মধ্যে স্থূলতা, উচ্চ রক্তচাপ ও বিষণ্নতার ঝুঁকি তুলনামূলকভাবে কম থাকে।
# পর্যাপ্ত ঘুম ও মানসিক প্রশান্তি সুস্থ জীবনের জন্য অপরিহার্য। বিজ্ঞানীরা বলছেন, একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের প্রতিদিন গড়ে ৭-৮ ঘণ্টা ঘুম প্রয়োজন। কম ঘুম শরীরে হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল করে দেয়। এছাড়া ধ্যান, যোগব্যায়াম ও ইতিবাচক চিন্তাভাবনা মানসিক চাপ কমাতে সহায়তা করে।
# অস্বাস্থ্যকর অভ্যাস ত্যাগ করাও স্বাস্থ্য সচেতন হওয়ার গুরুত্বপূর্ণ শর্ত। ধূমপান, মদ্যপান ও মাদকদ্রব্য শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যে জানা যায়, প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ মানুষ ধূমপানের কারণে ক্যানসার, শ্বাসকষ্ট ও হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। তাই এসব অভ্যাস এড়িয়ে চলা জরুরি।
# নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা একজনকে নিজের শারীরিক অবস্থার সঠিক ধারণা দেয়। অনেক সময় রোগের প্রাথমিক লক্ষণ বোঝা যায় না, তবে নিয়মিত চেকআপ করলে রোগ দ্রুত ধরা পড়ে এবং চিকিৎসা সহজ হয়।
তাই বলা যায় যে, স্বাস্থ্য সচেতন হতে হলে সঠিক খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত ব্যায়াম, পর্যাপ্ত ঘুম, মানসিক প্রশান্তি ও ক্ষতিকর অভ্যাস ত্যাগ করা আবশ্যক। গবেষণায় স্পষ্ট যে, সচেতন জীবনযাপন একজন মানুষকে দীর্ঘায়ু, রোগমুক্ত এবং কর্মক্ষম রাখে। তাই আজ থেকেই আমাদের সবার উচিত স্বাস্থ্য সচেতনতার অভ্যাস গড়ে তোলা।
>>>>>>>>>>>>>>
ডেঙ্গু প্রতিরোধ করবেন যেভাবে
মশা বাহিত একপ্রকার ভাইরাস জ্বর হলো ডেঙ্গু। এই জ্বর অন্যান্য ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়াজনিত জ্বর থেকে ভিন্ন। অবশ্য এই জ্বর কোনোভাবেই ছোঁয়াচে নয়। এই ভাইরাস জ্বর এককভাবে বা অন্যান্য ভাইরাস (চিকুনগুনিয়া, ইয়েলো ফিভার, বার্মা ফরেস্ট, ফ্লু, রেসপাইরেটরি সিনসাইটিয়াল) এবং ব্যাকটেরিয়া (নিউমোক্কাস)-এর সঙ্গেও হতে পারে।
লক্ষণ ও জ্বরের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে ডেঙ্গুজ্বরকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে-
১. সাধারণ ডেঙ্গুজ্বর
২. রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বর।
সাধারণ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে চোখে পড়ে মূলত নিচের এই লক্ষণগুলো-
১. হঠাৎ করে তীব্র জ্বর ও তা ২ থেকে ৭ দিন স্থায়ী হওয়া।
২. তীব্র মাথাব্যথা হওয়া।
৩. চোখের পেছনের অংশে ব্যথা হওয়া।
৪. জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে সারা শরীরে লালচে ফুসকুড়ি চোখে পড়া।
৫. সম্পূর্ণ শরীরে তীব্র ব্যথা ও সেইসঙ্গে কোমরে ব্যথা।
৬. বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।
৭. ত্বকে র্যাশ বা লাল দানা দানা দেখা দেওয়া।
রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে :
১. ২ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তীব্র জ্বর সঙ্গে নাক, মুখ বা বমির সঙ্গে রক্ত যাওয়া।
২. জ্বরের পাশাপাশি বুকে বা পেটে পানি জমে যাওয়া।
এইসব লক্ষণের যে কোনো একটি লক্ষণ দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
অপরদিকে
জ্বরের প্রথম ৩ দিন বাড়িতে অপেক্ষা করুন। অপরদিকে সারা শরীর পানি দিয়ে স্পঞ্জ করুন কিছুক্ষণ পরপর। এতে করে জ্বরের মাত্রা কমে আসবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান ও বিশ্রাম নিতে হবে। এরপরেও জ্বর না কমলে বা কিছু সময় পরপর বাড়তে থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় বিষয়:
১. বাড়ির আশপাশ যতোটা সম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে চেষ্টা করুন।
২. ঘরের ভেতরে থাকা ফুলের টব বা ভাঙা প্লাস্টিকের বোতল, ডাবের খোসা, টায়ার অথবা পলিথিন থাকলে তা দ্রুত পরিষ্কার করে ফেলুন ও ফুলের টব থেকে জমে থাকা পানি নিষ্কাশন করুন।
৩. মশা নিধনের জন্য সপ্তাহে অন্তত ৩ বার স্প্রে বা ফগিং করুন।
৪. বাড়ির বাইরে যাওয়ার সময় মশা নিধনে ব্যবহৃত ক্রিম সঙ্গে রাখতে পারেন।
৫. সন্ধ্যার পর বাড়ির ছোট থেকে বড় সদস্যরা মশারি ব্যবহার করুন।
৬. যেখানে-সেখানে জমে থাকা বৃষ্টির পানি পরিষ্কার করে ফেলুন, কারণ এতে এডিস মশা ডিম পেড়ে থাকে এই সময়।
৭. অপরদিকে মশার প্রকোপ থেকে বাঁচতে মশারির সঙ্গে সঙ্গে ম্যাট ব্যবহার করতে পারেন।
৮. এডিস মশা যেহেতু দিনের বেলা কামড়ায় তাই দিনের বেলায় ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি টানিয়ে ঘুমানোর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সূত্র: https://dmpnews.org