দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ মুখের ব্রণ কিংবা একনে (Acne) একটি খুব সাধারণ ত্বকের সমস্যা, যা মূলত কিশোর-কিশোরী এবং তরুণদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। তবে প্রাপ্তবয়স্কদেরও এই সমস্যা হতে পারে।

এটি সাধারণত ত্বকের অতিরিক্ত তেল নিঃসরণ, ধুলাবালি, ব্যাকটেরিয়া, হরমোনের পরিবর্তন এবং অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের কারণে হয়ে থাকে। যদিও ব্রণ গুরুতর রোগ নয়, তবে এটি ত্বকের সৌন্দর্য নষ্ট করে এবং আত্মবিশ্বাসে প্রভাব ফেলে। সঠিক যত্ন এবং জীবনধারার পরিবর্তনের মাধ্যমে মুখের ব্রণ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
# ত্বক পরিষ্কার রাখা সবচেয়ে জরুরি। দিনে অন্তত দুইবার হালকা গরম পানি এবং মাইল্ড ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ ধুতে হবে। বাইরে থেকে এসে মুখ ধুলে ধুলাবালি এবং অতিরিক্ত তেল দূর হয়, ফলে ছিদ্র বন্ধ হওয়ার ঝুঁকি কমে। তবে অতিরিক্ত মুখ ধোয়া বা শক্ত সাবান ব্যবহার করা ঠিক নয়, কারণ এতে ত্বক শুষ্ক হয়ে আরও বেশি তেল উৎপাদন করতে শুরু করে।
# ব্রণ চেপে ধরা বা খোঁচানো একেবারেই নিষিদ্ধ। এতে ইনফেকশন ছড়িয়ে ত্বকে দাগ বা স্থায়ী ক্ষত তৈরি হতে পারে। বরং ব্রণ শুকিয়ে যেতে দিতে হবে বা প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ ব্যবহার করতে হবে।
# খাদ্যাভ্যাসে সচেতনতা খুব গুরুত্বপূর্ণ। অতিরিক্ত তেল, ভাজাপোড়া, চকলেট, দুধজাত খাবার এবং ফাস্টফুড ব্রণ বাড়াতে পারে। এর পরিবর্তে প্রচুর পানি, ফলমূল, শাকসবজি, বাদাম ও আঁশযুক্ত খাবার খেতে হবে। ভিটামিন এ, সি, ই এবং জিঙ্কসমৃদ্ধ খাবার ত্বকের জন্য বিশেষ উপকারী।
# মানসিক চাপ এবং ঘুমের অভাব ব্রণ বাড়াতে পারে। পর্যাপ্ত ঘুম (প্রতিদিন ৭–৮ ঘণ্টা) এবং মানসিক প্রশান্তি ত্বকের সুস্থতায় ভূমিকা রাখে। নিয়মিত ব্যায়াম করলে রক্ত চলাচল বাড়ে ও ত্বক উজ্জ্বল হয়, তবে ব্যায়ামের পর ঘাম ঝরানো ত্বক ভালোভাবে পরিষ্কার করতে হবে।
# প্রাকৃতিক উপায়েও ব্রণ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। অ্যালোভেরা জেল, নিমপাতা বাটা, মধু, গোলাপজল বা টক দই মুখে লাগালে প্রদাহ এবং তেল নিঃসরণ কমে যায়। এগুলো ত্বক ঠান্ডা রাখে ও দাগ হালকা করে।
যদি ব্রণ দীর্ঘস্থায়ী কিংবা তীব্র আকারে দেখা দেয়, তাহলে অবশ্যই একজন ত্বক বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে। কখনও কখনও হরমোন বা ইনফেকশনজনিত কারণেও ব্রণ হয়, যা চিকিৎসা ছাড়া সেরে ওঠে না।
তাই এটি বলা যায়, মুখের ব্রণ প্রতিরোধের মূল চাবিকাঠি হলো ত্বক পরিষ্কার রাখা, সঠিক খাদ্যাভ্যাস এবং মানসিক প্রশান্তি বজায় রাখা। নিয়মিত যত্ন নিলে ব্রণ থেকে মুক্ত থাকা সম্ভব এবং ত্বক ফিরে পেতে পারে তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য।
>>>>>>>>>>>>>>
ডেঙ্গু প্রতিরোধ করবেন যেভাবে
মশা বাহিত একপ্রকার ভাইরাস জ্বর হলো ডেঙ্গু। এই জ্বর অন্যান্য ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়াজনিত জ্বর থেকে ভিন্ন। অবশ্য এই জ্বর কোনোভাবেই ছোঁয়াচে নয়। এই ভাইরাস জ্বর এককভাবে বা অন্যান্য ভাইরাস (চিকুনগুনিয়া, ইয়েলো ফিভার, বার্মা ফরেস্ট, ফ্লু, রেসপাইরেটরি সিনসাইটিয়াল) এবং ব্যাকটেরিয়া (নিউমোক্কাস)-এর সঙ্গেও হতে পারে।
লক্ষণ ও জ্বরের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে ডেঙ্গুজ্বরকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে-
১. সাধারণ ডেঙ্গুজ্বর
২. রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বর।
সাধারণ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে চোখে পড়ে মূলত নিচের এই লক্ষণগুলো-
১. হঠাৎ করে তীব্র জ্বর ও তা ২ থেকে ৭ দিন স্থায়ী হওয়া।
২. তীব্র মাথাব্যথা হওয়া।
৩. চোখের পেছনের অংশে ব্যথা হওয়া।
৪. জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে সারা শরীরে লালচে ফুসকুড়ি চোখে পড়া।
৫. সম্পূর্ণ শরীরে তীব্র ব্যথা ও সেইসঙ্গে কোমরে ব্যথা।
৬. বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।
৭. ত্বকে র্যাশ বা লাল দানা দানা দেখা দেওয়া।
রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে :
১. ২ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তীব্র জ্বর সঙ্গে নাক, মুখ বা বমির সঙ্গে রক্ত যাওয়া।
২. জ্বরের পাশাপাশি বুকে বা পেটে পানি জমে যাওয়া।
এইসব লক্ষণের যে কোনো একটি লক্ষণ দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
অপরদিকে
জ্বরের প্রথম ৩ দিন বাড়িতে অপেক্ষা করুন। অপরদিকে সারা শরীর পানি দিয়ে স্পঞ্জ করুন কিছুক্ষণ পরপর। এতে করে জ্বরের মাত্রা কমে আসবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান ও বিশ্রাম নিতে হবে। এরপরেও জ্বর না কমলে বা কিছু সময় পরপর বাড়তে থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় বিষয়:
১. বাড়ির আশপাশ যতোটা সম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে চেষ্টা করুন।
২. ঘরের ভেতরে থাকা ফুলের টব বা ভাঙা প্লাস্টিকের বোতল, ডাবের খোসা, টায়ার অথবা পলিথিন থাকলে তা দ্রুত পরিষ্কার করে ফেলুন ও ফুলের টব থেকে জমে থাকা পানি নিষ্কাশন করুন।
৩. মশা নিধনের জন্য সপ্তাহে অন্তত ৩ বার স্প্রে বা ফগিং করুন।
৪. বাড়ির বাইরে যাওয়ার সময় মশা নিধনে ব্যবহৃত ক্রিম সঙ্গে রাখতে পারেন।
৫. সন্ধ্যার পর বাড়ির ছোট থেকে বড় সদস্যরা মশারি ব্যবহার করুন।
৬. যেখানে-সেখানে জমে থাকা বৃষ্টির পানি পরিষ্কার করে ফেলুন, কারণ এতে এডিস মশা ডিম পেড়ে থাকে এই সময়।
৭. অপরদিকে মশার প্রকোপ থেকে বাঁচতে মশারির সঙ্গে সঙ্গে ম্যাট ব্যবহার করতে পারেন।
৮. এডিস মশা যেহেতু দিনের বেলা কামড়ায় তাই দিনের বেলায় ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি টানিয়ে ঘুমানোর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সূত্র: https://dmpnews.org