যে দেশে কারাগারেই সংসার করেন কয়েদিরা!

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ প্রচলিত অর্থে কারাগার অর্থই হলো অপরাধীদের শাস্তির স্থান। যাকে সভ্য ভাষায় বলা হয়, সংশোধনাগারও। কারাগার মানেই বাইরের দুনিয়া থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকা। তবে এমন এক দেশ রয়েছে যে দেশে কারাগারেই সংসার করেন কয়েদিরা!

কারাগারে দিনের পর দিন চার দেওয়ালের মাঝে আটকে থাকা লাগে কয়েদিদের। তবে কারাগারেও অপরাধীদের খাওয়া, পরা ও চিকিৎসার দায়িত্ব থাকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। বাইরের আয়েশি জীবন ছেড়ে কষ্টে দিনাপাতি করতে হয় একজন কয়েদিকে। সেখানে পরে থাকতে হয় কারাগারের নির্ধারিত কয়েদির পোশাক।

চাইলেই ইচ্ছে মতো প্রতিদিন কারাগার থেকে বের হয়ে যাওয়া যেতো, কিংবা বিয়ে করে কারাগারেই সংসার পাতা যেতো, সেখানে কিনে রাখা যেতো টিভি, ফ্রিজ কিংবা গাড়ির মতো নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য- তাহলে নিশ্চয়ই ভালোই হতো! এটি আসলে অবাস্তব মনে হলেও এরকম একটি কারাগার বাস্তবেও রয়েছে। সেটা আমাদের কাছের প্রতিবেশী দেশ ভারতের রাজস্থানে!

Related Post

রাজস্থানের স্যানগানার নামে একটি কারাগার হতে কয়েদিরা প্রতিদিন সকাল হলেই কাজের সন্ধানে বেরিয়ে পড়েন! তাদের কেও দিনমজুর, কেওবা কারখানার শ্রমিক, গাড়িচালক আবার কেও রয়েছেন ইয়োগার শিক্ষক। এদের মধ্যে বিয়ে করে সংসার করছেন রামচন্দ ও সাগনা নামে দুজন কয়েদি। এই দুজনেই হত্যা মামলার আসামী!

রামচন্দ একটি স্কুলের বাস চালান ও সাগনা একটি গার্মেন্টসে চাকরি করেন। প্রতিদিন সকাল হলেই কারাগার হতে বেরিয়ে পড়েন তারা। এখানেই রয়েছে তাদের লোহার ছাদের ঘর। টিভি, ফ্রিজ, আসবাবসহ সকল ধরনের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রও রয়েছে। এদের মধ্যে রামচান্দ একা ছিলেন অপরদিকে সাগনার পরিবার তাকে ত্যাগ করেছে। যে কারণে তাদের প্রতিবেশীরা তাদের বিয়ে দিয়ে দিয়েছেন। যাতে করে তাদের একা থাকতে না হয়। বিয়ের পর থেকেই এই স্যানগানার কারাগারে তারা সংসার করে আসছেন।

প্রকৃতপক্ষে স্যানগানার হলো একটি উন্মুক্ত কারাগার। ভারতের পশ্চিঞ্চালীয় রাজ্য রাজস্থানের রাজধানী জয়পুরের কারাগার এটি। এই কারাগারের চারপাশে কোনো দেওয়ালও নেই, কয়েদিদের দেখার জন্য নেই কোনো নিরাপত্তারক্ষী! এমনকি কয়েদিদের বাইরে যাওয়ার জন্য উৎসাহ দেওয়া হয়ে থাকে। তাদেরকে কাজের সন্ধানে শহরে যেতে বলা হয়। কারণ এই কারাগারে থাকতে দিলেও আসামীদের খাওয়া, পরা কিংবা চিকিৎসা খরচ নিজেদেরকেই বহন করতে হয়। এই কারাগারে রামচন্দ এবং সাগনার মতো এমন ৪৫০ জন বন্দি রয়েছেন। যারা মূলত স্বাধীনভাবে জীবিকা নির্বাহ করছেন। তবে শুধু স্যানগানাই নন, রাজস্থানে এমন আরও ৩০টি উন্মুক্ত কারাগার রয়েছে!

এসব কারাগারুগুলোতে যে কেও চাইলেই প্রবেশ করতে পারেন। এই কারাগারের যারা হত্যা মামলার আসামী, তারা এখানে সুখেই রয়েছেন বলে জানিয়েছেন। হত্যা মামলার আসামীদের বক্তব্য হলো, এই কারাগার হলো একটি উন্মুক্ত ক্ষেত্র। সেজন্য তারা এখানে সুখেই রয়েছেন।

তবে এই উন্মুক্ত কারাগারে আসতে হলে একজন কয়েদির মোট সাজার দুই-তৃতীয়াংশ সময় অন্যান্য কারাগারের চার দেওয়ালের মধ্যেই কাটিয়ে তারপর আসতে হবে। অনেক সময় আবদ্ধ কারাগার হতে এই উন্মুক্ত কারাগারে এসে অনেক আসামীই আর যেতেই চান না! তাদের অনেকেই এখানে স্থায়ীভাবে চাকরি করছেন, বিয়ে করে সংসার করছেন অনেকেই, ছেলে-মেয়েদের পার্শ্ববর্তী স্কুলে ভর্তিও করিয়েছেন। যে কারণে সাজা শেষ হলেও তারা এখানেই থেকে যেতে চান। সে কারণে সরকারকে মাঝে মধ্যেই তাদেরকে উচ্ছেদ করতে অভিযান চালাতে হয়! তথ্য: বিবিসি’র।

This post was last modified on ফেব্রুয়ারী ৮, ২০১৯ 7:52 অপরাহ্ন

স্টাফ রিপোর্টার

Recent Posts

নখ দেখেই বোঝা যাবে রোগ হয়েছে কি না!

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ বয়স বৃদ্ধির পর নখ কিছুটা হলেও ভঙ্গুর হতেই পারে। আবার…

% দিন আগে

তরুণ প্রজন্মকে কৃষি উদ্যোক্তা হিসেবে এগিয়ে আসতে হবে- মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী সিমিন হোসেন

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ “কৃষি-উদ্যোক্তাদের সর্বাত্মক সহায়তা প্রদান করার পাশাপাশি সরকার তাদের বিকাশে সকল…

% দিন আগে

বিস্ময়কর এক রোবট অ্যাটলাসের গল্প

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ মানুষের চেয়ে ভালোভাবে তো একটি রোবট শরীরকে কখনই নিয়ন্ত্রণ করতে…

% দিন আগে

প্রথম পারিশ্রমিক ছিলো ৫০ রুপি: বর্তমানে প্রতি ছবিতে নেন ২০ কোটি!

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ বর্তমান সময়ে দক্ষিণী চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় একজন অভিনেতা যশ। যিনি সবার…

% দিন আগে

গাজার যুদ্ধ বন্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কথা শুনছে না ইসরায়েল!

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ ফিলিস্তিনের সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি এবং জিম্মি চুক্তি করতে…

% দিন আগে

ভারতে গাধার দুধ বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ৬ হাজার টাকা লিটার!

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ আমাদের সমাজে গাধা নামক প্রাণীটি কঠোর পরিশ্রমের রূপক হিসেবে প্রচলিত।…

% দিন আগে