সাধারণ

ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামীদের ইতিহাস: ভারতের বিপ্লবী নেতা ছিলেন মাওলানা আজাদ

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামীদের মধ্যে যাদের নাম ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে, তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন মাওলানা আবুল কালাম আজাদ।

মাওলানা আবুল কালাম আজাদ স্বপ্ন দেখতেন একটি অসাম্প্রদায়িক স্বাধীন ভারতের। তিনি একাধারে কবি, লেখক, সাংবাদিক ও রাজনীতিবিদ ছিলেন।

উনার পুরা নাম আবুল কালাম মহিউদ্দিন আহমেদ। তিনি মাওলানা আবুল কালাম আজাদ নামেই অধিক পরিচিত ছিলেন। তিনি ছিলেন স্বাধীন ভারতের প্রথম শিক্ষামন্ত্রী।

Related Post

মাওলানা আজাদ ছিলেন সব ধর্ম, গোত্র এবং সম্প্রদায়ের ঐক্যের ভিত্তিতে গঠিত ভারতীয় জাতীয়তাবাদের একজন প্রবক্তা। তিনি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করতেন যে, পারস্পরিক ধর্মীয় সহাবস্থান নিশ্চিত করে এবং ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার মাধ্যমেই কেবল একটি শক্তিশালী, স্বাধীন ভারত অর্জন করা সম্ভব। তাই তিনি তাঁর পুরো রাজনৈতিক জীবনে এই বিশ্বাসের ভিত্তিতে সংগ্রামও করে গেছেন আজীবন।

মাওলানা আজাদের বাবার মাতামহ মাওলানা মুনাবরউদ্দীন ছিলেন ‘রুকন উল মুদাসরিন’, যা ছিল মূলত শিক্ষাবিষয়ক একটি পদবি। ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহের সময় আজাদের পিতা খায়েরউদ্দীন মক্কায় চলে গিয়েছিলেন এবং সেখানেই বসবাস শুরু করেন। সেখানকার সম্ভ্রান্ত এক মুসলিম পরিবারের মেয়েকে বিয়ে করেন তিনি। ১৮৮৮ সালের ১১ নভেম্বর সেখানেই মাওলানা আজাদের জন্ম হয়। এরপর ১৮৯০ সালে তার পিতা সপরিবারে কোলকাতায় চলে আসেন। খায়েরউদ্দীন কোলকাতায় মৃত্যুবরণ করার পর থেকে আজাদের পরিবার কোলকাতাতেই স্থায়ী হন।

মাওলানা আজাদের পরিবার ছিল ধর্মীয়ভাবে খুব রক্ষণশীল। তাই ছোটবেলায় ধর্মীয় শিক্ষা লাভের মধ্যদিয়ে তাঁর শিক্ষাজীবন শুরু হয়। তখনকার সময় প্রচলিত স্কুল বা মাদ্রাসা শিক্ষায় খায়েরউদ্দীনের খুব একটা আস্থা ছিল না। তাই তিনি বাড়িতেই আজাদের শিক্ষার ব্যবস্থা করেছিলেন। বাড়িতে বসেই মাওলানা আজাদ আরবি ভাষায় গণিত, জ্যামিতি, দর্শন প্রভৃতি শিক্ষালাভ করেছিলেন। একসময় তিনি আধুনিক শিক্ষার গুরুত্বও উপলব্ধি করতে পারেন। তাই ইংরেজি শিক্ষায় তিনি ব্রতী হন এবং অল্প সময়ের মধ্যেই নিজ প্রচেষ্টায় দক্ষতা অর্জন করেন। এই সময় তিনি নিজের নামের শেষে ‘আজাদ’ যুক্ত করেন, যার অর্থ হলো মুক্ত।

মাওলানা আজাদ যখন বিপ্লবী চিন্তাধারায় একটু একটু আকর্ষণ অনুভব করছেন, ঠিক তখন তিনি শ্রী অরবিন্দ ঘোষ এবং শ্যামসুন্দর চক্রবর্তীর মতো বিপ্লবী নেতাদের সংস্পর্শে চলে আসেন এবং তাদের মাধ্যমে তিনি বিপ্লবী রাজনীতিতেও প্রবেশ করেন।

এর কিছুদিন পর তিনি মিশর, তুরস্ক, সিরিয়া, ইরাক প্রভৃতি দেশ ভ্রমণ করেন এবং সেই সব দেশের বিপ্লবীদের সঙ্গে সাক্ষাৎও করেন। তাদের সঙ্গে কথা বলে তিনি বুঝতে পারেন যে, ভারতবর্ষের স্বাধীনতার জন্য বিপ্লব করতেই হবে। তাই দেশে ফেরার পর তিনি দেশের মানুষকে স্বাধীনতায় উদ্বুদ্ধ করার লক্ষ্যে ‘আল হিলাল’ নামে উর্দুতে একটি পত্রিকা প্রকাশ করেন। এই পত্রিকা ব্রিটিশদের সমালোচনা করে এবং মানুষের মাঝে বিপ্লব ছড়িয়ে দিয়ে ব্রিটিশবিরোধী মনোভাব জাগিয়ে তুলতে সাহায্য করে।

যে কারণে খুব অল্পদিনেই পত্রিকাটি ব্যাপক জনপ্রিয় পত্রিকা হয়ে ওঠে এবং উর্দু সাংবাদিকতার ইতিহাসে এক মাইলফলক সৃষ্টি করেছিলো সেই সময়। জনপ্রিয়তা দেখে ব্রিটিশ সরকার তার ওই পত্রিকাটি বাজেয়াপ্ত করে। পরবর্তীকালে মাওলানা আজাদ ‘আল বালাঘ’ নামে আরও একটি পত্রিকা চালু করলে ব্রিটিশ সরকার সেটিও বাজেয়াপ্ত করে দেয়। ব্রিটিশ সরকার উপায়ান্তর না দেখে শেষ পর্যন্ত তাকে কোলকাতা থেকে বহিষ্কার করে। তখন মাওলানা আজাদ বিহারে চলে যান। তবে সেখানেও মাওলানা আজাদকে গৃহবন্দি করে রাখা হয়। ১৯২০ সালের ১লা জানুয়ারি তিনি মুক্তি পান এবং আবার কোলকাতায় চলে আসেন।

কোলকাতায় এসে তিনি খিলাফত আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হন। ততোদিনে মহাত্মা গান্ধী অসহযোগ আন্দোলন শুরু করেন। খিলাফত আন্দোলন ও অসহযোগ আন্দোলন একসঙ্গে চলার কারণে তিনি গান্ধীর সংস্পর্শে চলে আসেন।

আন্দোলনের কারণে ব্রিটিশ সরকার সারা ভারতে ধরপাকড় শুরু করলে তিনি অন্যান্য কংগ্রেস নেতাদের সঙ্গে গ্রেফতার হন এবং দু’বছর কারাবাস শেষে তিনি মুক্তি পান। এই সময় তিনি শীর্ষ কংগ্রেস নেতাদের একজন হয়ে ওঠেন এবং ১৯২৩ সালে তিনি মাত্র ৩৫ বছর বয়সে কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচিত হন।

মাওলানা আজাদ ৬৯ বছর বয়সে ১৯৫৮ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন।

এক সময় যে ভারতে হিন্দু-মুসলিমদের মধ্যে কোনো পার্থক্য ছিলো না, আজকের এই সময় এসে সেটি যেনো ধুলিস্মাৎ হতে চলেছে। কাশ্মীর ইস্যু নিয়ে ভারতের বর্তমান ক্ষমতাসীনরা মুসলমানদের উপর অত্যাচার-নির্যাতন করে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করছে। আসামে বাঙালিদের বেওয়ারিশ করে ফেলা হচ্ছে। ভারতের অনেক রাজ্যে মুসলিম জনগোষ্ঠির উপর অত্যাচার-নির্যাতন করা হয়। অথচ সেই সময় ভারতে এমন মুসলিম নেতা ছিলেন যারা সব ধর্মকেই সমানভাবে প্রাধান্য দিয়েছেন। বিষয়গুলো ভাবলে সত্যিই কষ্ট লাগে।

This post was last modified on সেপ্টেম্বর ২৪, ২০১৯ 5:04 অপরাহ্ন

স্টাফ রিপোর্টার

Recent Posts

কোন কাজ নিয়মিত করলে লিভারের রোগে আক্রান্ত হতে পারেন

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ জীবন-যাপনে কিছু নিয়ম করে চলা উচিত। কারণ নিয়ম করে না…

% দিন আগে

পাসওয়ার্ডে এই ছোট্ট পরিবর্তন আনলে কখনও হ্যাক হবে না অ্যাকাউন্ট

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ অনলাইনে যে কোনো অ্যাকাউন্ট সুরক্ষিত রাখার জন্য প্রয়োজন হয় পাসওয়ার্ড।…

% দিন আগে

ওটিটিতে আসছে মস্কোজয়ী সিনেমা ‘আদিম’

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ ৪৪তম মস্কো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের প্রতিযোগিতা বিভাগে জায়গা নিয়ে আলোচনায়…

% দিন আগে

টাইটানিকের সবচেয়ে ধনী যাত্রীর সেই স্বর্ণের পকেট ঘড়িটি রেকর্ড দাম ১৬ কোটি টাকায় বিক্রি!

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ আটলান্টিক মহাসাগরে ডুবে ধ্বংস হয়ে যাওয়া ঐতিহাসিক টাইটানিক জাহাজ ট্রাজেডির…

% দিন আগে

আজ মহান মে দিবস: শ্রমিকদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার দিন

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ আজ ১লা মে, মহান মে দিবস। বঞ্চনা, নির্যাতন ও বৈষম্যের…

% দিন আগে

নদীমাতৃক বাংলাদেশের এক চিরাচরিত দৃশ্য

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ শুভ সকাল। বুধবার, ১ মে ২০২৪ খৃস্টাব্দ, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১…

% দিন আগে