দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ আমেরিকা ও ব্রিটিশ বিজ্ঞানীরা ক্যান্সারের প্রাথমিক বৈশিষ্ট্য খুঁজে বের করতে এক সঙ্গে কাজ শুরু করেছেন। ক্যান্সার হওয়ার আগেই যাতে উপসর্গ সনাক্ত করার মাধ্যমে আক্রান্ত ব্যক্তিকে চিকিৎসার আওতায় আনা যায় সেটিই এই গবেষণার মূল লক্ষ্য।
বিবিসি বাংলার এক খবরে বলা হয়েছে, ল্যাবরেটরিতে ক্যান্সার ‘জন্ম দেওয়ার’ পরিকল্পনা করছেন গবেষকরা। ক্যান্সার হওয়ার সময় প্রথমদিন কি অবস্থা হয় সেটি তারা দেখতে চান এই গবেষণার মাধ্যমে। এটি ক্যান্সার প্রাথমিক অবস্থায় সনাক্তকরণের জন্য নতুন আন্তর্জাতিক জোটের গবেষণা উদ্দেশ্যগুলির মধ্যে অন্যতম একটি।
বলা হয়েছে যে, ক্যান্সারের উপসর্গ প্রাথমিক অবস্থায় সনাক্তকরণে এক সঙ্গে কাজ করার অর্থই হলো, রোগীরা যাতে আরও দ্রুত এর থেকে লাভবান হতে পারেন।
এই বিষয়ে ধারণা হবে যে, প্রযুক্তি ও দক্ষতা বিনিময়ের ক্ষেত্রে যুক্তরাজ্যের চ্যারিটি ক্যান্সার রিসার্চ ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়, ম্যানচেস্টার, ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যানফোর্ড এবং ওরেগনের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির সঙ্গে এক জোট গঠন করেছে।
বিজ্ঞানীরা যৌথভাবে গবেষণা করছেন যে, উচ্চ মাত্রায় ঝুঁকিতে থাকা রোগীদের তুলনামূলক খুব কম জটিল পরীক্ষা যেমন রক্ত, শ্বাস ও মূত্র পরীক্ষার মাধ্যমে নজরদারিতে রাখা, ইমেজিং কৌশল ব্যবহার করে প্রাথমিক অবস্থায় ক্যান্সার সনাক্ত কিংবা সনাক্ত করা যায় না এমন লক্ষণও যাতে ধরা পড়ে এমন একটি কৌশল আবিষ্কারের চেষ্টা করছেন গবেষকরা।
তবে তারা এও বলছেন যে, এই চেষ্টা অনেকটা ‘খরের গাদায় সুঁই খোঁজা’র মতোই। তবে এর জন্য ৩০ বছরও সময় লাগতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন গবেষকরা।
যুক্তরাজ্যের ক্যান্সার গবেষণা ইন্সটিটিউটের প্রাথমিক সনাক্তকরণ গবেষণা দলের প্রধান ডা. ডেভিড ক্রসবি বলেন, সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো আমরা কখনও মানুষের শরীরে ক্যান্সার জন্মাতে দেখতেই পারিনি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এটি সম্ভব হয়েছে এবং এটি প্রতিষ্ঠিতও বটে।
যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টারের গবেষকরা উদাহরণ হিসেবে দেখিয়েছেন যে, তারা ল্যাবে কৃত্রিম প্রতিরোধক কোষ হতে মানুষের স্তনের টিস্যু জন্মানোর চেষ্টা করছেন যাতে করে খুব প্রাথমিক অবস্থাতেই ক্যান্সার সৃষ্টির সূক্ষ্ম পরিবর্তন সনাক্ত করা সম্ভব হয়।
অধ্যাপক রব ব্রিস্টো এই বিষয়ে বলেছেন, এটি রোগীর দেহের বাইরে জীবন্ত কোষ ব্যাংকের মতোই। তবে ওভার-ডায়াগনোসিসের একটা ঝুঁকি সব সময়ই থেকেই যায়। এর কারণ হলো প্রাথমিক অবস্থায় থাকা সব কোষই শেষ পর্যন্ত ক্যান্সারে রূপান্তরিত হয় না।
তাই মানুষের মধ্যে বিভিন্ন ধরণের ক্যান্সারের ঝুঁকি জানতে হলে ক্যান্সার গবেষকদের আরও কিছু সুনির্দিষ্ট তথ্য পেতে হবে, মানুষ যে জিন নিয়ে জন্মগ্রহণ করে সেটির বিষয়ে জানতে হবে ও যে পরিবেশে তারা বেড়ে ওঠে সেটিও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বলে মনে করছেন গবেষকরা। আর তা হলেই কেবলমাত্র তারা বুঝতে পারবেন যে কখন ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
বিজ্ঞানীরা বলেছেন যে, প্রাথমিক অবস্থায় ক্যান্সার সনাক্ত করার যে গবেষণা সেটি এখনও ছোট মাত্রায় এবং সংযোগহীন অবস্থায় রয়েছে। তাছাড়া বড় আকারের মানুষের মধ্যে পরীক্ষা করার কোনো সুযোগও নেই।
এই বিষয়ে ডা. ক্রসবি বলেন, এই সমন্বয় ‘আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় সাগর সমান পরিবর্তন আনবে তাতে সন্দেহ নেই, শেষ পর্যায়ে ক্যান্সার সনাক্তের পর তার চিকিৎসায় ব্যয়বহুল লড়াইয়ের পরিবর্তে প্রাথমিক পর্যায়ে সনাক্ত ও এর চিকিৎসা আরও বেশি সস্তা করা সম্ভব হবে।’
এক জরিপ বলছে যে, প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়লে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত ৯৮ শতাংশ রোগী চিকিৎসার পর কমপক্ষে ৫ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারবেন।
৪র্থ ধাপে বা শেষ পর্যায়ে আক্রান্ত হলে এই হার হয়ে থাকে মাত্র ২৬ শতাংশ। তবে বর্তমানে, স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত মাত্র ৪৪ শতাংশ রোগী প্রাথমিক পর্যায়ে সনাক্ত হওয়ার পরই চিকিৎসা নিয়ে থাকেন।
অবশ্য যুক্তরাজ্যে একটি নির্দিষ্ট বয়সের পর মানুষের স্তন, অন্ত্র ও জরায়ুর ক্যান্সার রয়েছে কিনা তা পরীক্ষা করার সুযোগ রয়েছে। তবে আমাদের দেশে এই বিষয়টি একেবারেই প্রচলন নয়। রোগ না হলে পরীক্ষার মন মানষিকতা বাঙালিদের মধ্যে নেই। যে কারণে অনেক বড় বড় সমস্যা তৈরি হয়।
অন্যান্য ক্যান্সার যেমন অগ্ন্যাশয়, যকৃত, ফুসফুস ও প্রোস্টেট ক্যান্সার সনাক্তের জন্য নির্ভরযোগ্য কোনো পদ্ধতিই নেই, যার মানেই হচ্ছে এসব ক্যান্সারে আক্রান্ত হলে বেঁচে থাকার সম্ভাবনা আরও কম।
সংবাদ মাধ্যমকে ইউসিএল এর অধ্যাপক মার্ক এমবার্টন বলেন, ইমেজিং এর উন্নয়ন যেমনিভাবে এমআরআই ছিল “নীরব বিপ্লব” যা বায়োপসির জন্য ব্যবহৃত সুচকে প্রতিস্থাপন করেছে আবার যা প্রোস্টেট ক্যান্সারের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হতো।
তিনি বলেন, ‘ইমেজিংয়ে শুধু আগ্রাসী কোষগুলোকেই দেখা যায়, তবে চিকিৎসায় দরকারি নয় এমন অন্য অনেক বিষয় এটি এড়িয়ে যায়’। তবে এটি অত্যন্ত ব্যয়বহুল এবং সময় সাপেক্ষ ব্যাপার এবং ‘এটি এখনও প্রাইম টাইমে আসার মতোই হয়নি।’
ইমেজিং এখন আরও বেশি উন্নত হয়েছে, আরও সুনির্দিষ্ট হাইপার-পোলারাইজ এমআরআই স্ক্যান ও ছবি যেখানে টিউমারে লেজার লাইট পরিচালনা করে শব্দ তরঙ্গ সৃষ্টি করা হয় ও পরবর্তীতে এগুলো বিশ্লেষণ করে নতুন ইমেজ তৈরি করা হয়ে থাকে।
অধ্যাপক মার্ক এমবার্টন বলেন, পরবর্তী ধাপ ছিলো এটা দেখা, যে কোন ধরণের ক্যান্সার এই ইমেজিংয়ে যাতে ধরা পড়ে।
কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রেবেকা ফিৎজারেল্ড, খাদ্য নালী ও কোলনে প্রাক-ক্যান্সারজনিত ক্ষত সনাক্ত করতে নতুন এক ধরণের একটি এন্ডোস্কোপ তৈরি করছেন।
তিনি আরও বলেন, প্রাথমিক অবস্থায় সনাক্ত করার বিষয়ে তেমন মনোযোগ দেওয়া হয়নি এতোদিন এবং ক্যান্সার সনাক্তে কিছু পরীক্ষা খুবই সাধারণ ও সস্তাও হতে পারে।
এই বিষয়ে অধ্যাপক ফিৎজারেল্ড বলেন, আন্তর্জাতিক সহকর্মীদের সঙ্গে কাজ করার জন্য মুখিয়ে রয়েছেন তিনি এবং ‘তিনি সম্ভাব্য সব ধরণের উপায় খতিয়েও দেখতে চান।’
যুক্তরাজ্যের এই ক্যান্সার গবেষণা প্রাথমিক সনাক্তকরণের গবেষণায় আন্তর্জাতিক যৌথ প্রকল্পে ৫০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে।
যেখানে স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির কানারি সেন্টার ও ওরেগনের ওএইচএসইউ নাইট সেন্টার ইন্সটিটিউট যৌথভাবে ২০ মিলিয়নে দেওয়ার কথাও জানিয়েছে সংবাদ সংস্থাকে।
This post was last modified on অক্টোবর ২৩, ২০১৯ 12:55 অপরাহ্ন
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ অবশেষে গত ৩১ বছর ধরে চলা ‘গোল্ডেন আউল’ বিতর্কের অবসান…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ শুভ সকাল। বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪ খৃস্টাব্দ, ২৯ কার্তিক ১৪৩১…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ যদি আপনি হৃদরোগের থেকে দূরে থাকতে চান তাহলে ভরসা রাখতে…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ ব্রিটিশ কাউন্সিলের আয়োজনে রাজধানী ঢাকার রেডিসন ব্লু ওয়াটার গার্ডেনে গতকাল…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ সাশ্রয়ী দামে শক্তিশালী ব্যাটারি, দ্রুত চার্জিং সুবিধা; সাথে দৃঢ়তা ও…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ মারণব্যধি ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই করছেন ভারতীয় জনপ্রিয় অভিনেত্রী হিনা খান।…