কাশ্মীরের সবচেয়ে বড় মসজিদে ৪ মাস ধরে জুমার নামাজ হয় না

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার জম্মু-কাশ্মীর হতে ৩৭০ ধারা প্রত্যাহার করে নেওয়ার পর সেখানে কঠোরভাবে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। কাশ্মীরের সবচেয়ে বড় ও ঐতিহাসিক জামা মসজিদে টানা ৪ মাসেরও বেশি সময় ধরে জুমার নামাজ হচ্ছে না।

সংবাদ মাধ্যমের খবরে জানা যায়, শুধু নামাজ নিষিদ্ধ তাই নয়, মসজিদটির গায়ে লেখা রয়েছে, ‘কোনো ছবি তুলবেন না। চলে যান। যদি তারা বুঝতে পারেন যে, আপনি সাংবাদিক তাহলে তারা আপনাকেও মারধর করবে।’ এই ‘তারা’ বলতে কাশ্মীরের এই মসজিদের চারপাশে মোতায়েনকৃত আধাসামরিক বাহিনীর সদস্যদের কথা বোঝানো হয়েছে।

আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার এক প্রতিবেদনে এমন একটি তথ্য উঠে এসেছে। ওই সংবাদে বলা হয়েছে, গত ৫ আগস্ট যখন বিতর্কিত এই উপত্যকার বিশেষ মর্যাদা খর্ব করে রাজ্যটিকে দিখণ্ডিত করা হয়, ঠিক তখন থেকেই প্রসিদ্ধ এই মসজিদটি তালাবদ্ধ অবস্থায় রয়েছে। অক্টোবরের শেষে আনুষ্ঠানিকভাবে জম্মু-কাশ্মীরকে দ্বিখণ্ডিত করে দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পরিণত করার আইন কার্যকর করা হয়।

জানা যায়, ভারতের একমাত্র মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এই অঞ্চলটিতে ধর্মীয় জমায়েতও নিষিদ্ধ করা হয়। সেই সঙ্গে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মসজিদে প্রবেশেও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়, যে সব মসজিদে মানুষ ৫ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করতো।

ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয় যে, গত শুক্রবারও মসজিদটির চারপাশে গোটা উপত্যকা হতে হাজার হাজার মানুষ নামাজ আদায় করার জন্য এসে জমায়েত হলেও নিরাপত্তা বাহিনী তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।

জানা যায়, এই মসজিদটির পাশের একটি এলাকা হলো নওহাট্টা। সেখানকার বাসিন্দা খালিদ বশির সংবাদ মাধ্যমটিকে বলেছেন, ‘কর্তৃপক্ষ কাশ্মীরের ধর্মীয় এই জমায়েতকে হুমকি হিসেবে বিবেচনা করেছে। প্রতি মুহূর্তে পরিস্থিতি আরও খারাপই হচ্ছে। বিগত কয়েক মাস ধরে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এই স্থানটির মানুষকে ধর্ম পালনেও বাধা দেওয়া হচ্ছে।’

সৈয়দ আহমেদ নকশাবন্দি নামে জনৈক ব্যক্তি ১৯৬৩ সাল থেকে জামা মসজিদের ইমাম হিসেবে নিয়োজিত রয়েছেন। ৮০ বছর বয়সী এই ইমাম বলেছেন, ‘অবরুদ্ধ করার মাধ্যমে আমাদের এই অঞ্চলে মূলত জুলুম চালানো হচ্ছে। গত ৫ আগস্ট হতে জামা মসজিদ বন্ধ থাকায় সেখান থেকে ৫ কিলোমিটার দূরের এক মসজিদে আমাকে নামাজ আদায় করতে যেতে হচ্ছে।’

ইমাম আহমেদ নকশাবন্দি আরও বলেন যে, ‘জামা মসজিদে নামাজ আদায়ের মধ্যে যে এক ধরনের তৃপ্তি রয়েছে তা অন্য কোথাও পাওয়া অসম্ভব। সেখানে নামাজ আদায় করতে না পেরে আমার খুব খারাপ লাগে। মসজিদে পুলিশ এবং আধাসামরিক বাহিনীর উপস্থিতি মানুষের জন্য হুমকি হয়ে দেখা দিয়েছে।’

জামা মসজিদ পরিচালনা কমিটির সদস্য সৈয়দ রহমান শামস এই বিষয়ে বলেছেন, ‘এবারই প্রথম নয়, এর আগেও অনেকবার আমাদের এখানে নামাজ আদায়ের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার মতো ঘটনা ঘটেছে। ২০১৬ সালে টানা ১৬ শুক্রবার মসজিদে নামাজ আদায় বন্ধ রাখতে তালাবদ্ধ করে রাখে সরকারি কর্তৃপক্ষ। সেই রেকর্ডও এবার ভাঙলো।’

কাশ্মীরভিত্তিক মানবাধিকারকর্মী খুররম পারভিজ ওই সংবাদ মাধ্যম আল জাজিরাকে বলেছেন, ‘এটি আজ নতুন নয়। গত আগস্ট মাস হতেই কাশ্মীরের মানুষ এটি দেখে আসছে।’

খুররম পারভিজ আরও বলেন, ‘ভারতীয় সংবিধান অনুযায়ী প্রত্যেক ব্যক্তির ধর্মীয় আচার পালন তার মৌলিক অধিকার হিসেবেই স্বীকৃত। তবে ১৯৯০ বা তারও আগে থেকে প্রতিনিয়ত কাশ্মীরের মানুষরা এই অধিকার হতে বঞ্চিত হচ্ছেন। জাতিসংঘসহ অন্য আন্তর্জাতিক সংস্থা এর নিন্দা জানালেও তাতে কোনো রকম পার্থক্য তৈরি হয়নি।’