দিল্লিতে দাঙ্গা: হামলাকারীদের ইট-পাটকেল সরবরাহ করে পুলিশ!

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ আচমকা জ্বলে ওঠা আগুনে জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে সব কিছুই। উত্তর-পূর্ব দিল্লির ভয়াবহ সহিংসতা মোকাবিলায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে বিতর্ক চলছে প্রথম থেকেই। তাতে এবার ঘি ঢেলেছে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদন।

প্রত্যক্ষদর্শীরাই অভিযোগ করেছেন দিল্লি পুলিশের বিরুদ্ধে। তারা বলেছেন, মহল্লায় মহল্লায় হামলাকারীদের তখন মদত দিয়েছিল পুলিশের একাংশ। তবুও ভয়াল হিংসার ছবিকে হারিয়ে সেই দিল্লির বুকেই উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে যেনো আশার আলো।

ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লির আগুন নিভে গেছে আরও আগেই। এখন চোখের পানি মুছতে মুছতেই ক্ষয়ক্ষতির পরিমাপ চলছে সহিংসতায় বিধ্বস্ত বিভিন্ন এলাকা। তেমনই এক জায়গায় পা রাখে বিবিসি হিন্দি।

Related Post

বিবিসির প্রতিবেদনে উঠে এসেছে যে, সেদিনের হিংসার এক ভয়াবহ চিত্র। হামলাকারীদের মতো এক পক্ষের হয়ে আরেক পক্ষের দিকে ইট-পাটকেল ছুড়ছে পোশাকধারী পুলিশের বেশ কিছু সদস্য— এই ছবি সংবাদমাধ্যম এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছিল অনেক আগেই। বিবিসি হিন্দির ওই রিপোর্ট দাবি করছে যে, সেই ঘটনা পুরোপুরিই সত্যি। সেদিনের হামলায় পুলিশকর্মীদের একাংশও অংশগ্রহণ করে। অর্থাৎ রক্ষকই সেদিন হয়ে উঠেছিল ভক্ষক!

কয়েকদিন পূর্বে যে এলাকা হয়ে উঠেছিল সহিংসতার প্রাণকেন্দ্র, সেখানকার বাসিন্দা হিমাংশু রাঠৌর কী বলেছেন অনেক কিছুই। রাঠৌরের অভিযোগ ছিলো, ‘সাধারণ মানুষকে নিরাপদে রাখার জন্য তাদের নিয়োগ করা হয়। তবে সেই পুলিশই হিন্দুদের সঙ্গে মিলে মুসলিমদের ওপর পাথর ছুঁড়েছে। এখানে পাথর ছিলই না। কিছুটা দূরে রাস্তা বেশ খারাপ ছিল। সেখানে তৈরি হচ্ছিল নালা। সেই জায়গা থেকেই এনে দেওয়া হচ্ছিল ইট, পাথর। ইট এনে তারাই হাতে তুলে দিচ্ছিল! আর বলছিল যে, আপনারাও মারুন।’

আনন্দবাজার পত্রিকা বলছে, রাস্তায় আহত অবস্থায় পড়ে ছিল ৫ জন যুবক। তাদের ওপর নৃশংস নিপীড়ন চালিয়ে জাতীয় সঙ্গীত গাইতে বাধ্য করা হয়েছিলো। না গাইলে চুলের মুঠি ধরেও রাস্তায় মাথা ঠুকে দেওয়া হচ্ছিল! স্যোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে পড়েছিল সেই ছবিটিও। ওই ৫ যুবকের মধ্যে মৃত্যু হয় ফয়জান নামে একজনের। অভিযোগ উঠেছে যে তাদের মেরেছিল পুলিশই।

ফয়জানের পরিবার জানিয়েছে যে, আঘাতে আঘাতে নীল হয়ে গিয়েছিল ফয়জানের শরীর। সেদিনের সেই ভয়াবহ স্মৃতি এখনও তাড়া করে ফিরকে রফিক নামে আরেক জনকে। পরিস্থিতি এমন যে চিকিৎসা করাতে যেতেও ভয় পাচ্ছে রফিক।

২৩ ফেব্রুয়ারি চাল কিনতে বাজারে গিয়েছিল বছর ১৫ বয়সের ধর্মেন্দ্র সহায়। চাঁদবাগ থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বেই তার বাড়ি। তবে ১০ দিন পেরিয়ে গেলেও সে এখনও বাড়ি ফেরেনি। ধর্মেন্দ্রর মা কমলেশ একজন শারীরিক প্রতিবন্ধী। ছেলে নিখোঁজ শুনে খাওয়া দাওয়া ছেড়ে দিয়েছেন তিনি। বলেছেন, ‘কেও ওকে হয়তো আটকে রেখেছে। ধর্মেন্দ্র ঠিকই ফিরে আসবে।’ এদিকে আজ-কাল করে দিন কেটে যাচ্ছে ক্রমেই। সেই সঙ্গে আশঙ্কাও বাড়ছে। ছেলের খোঁজে হাসপাতালে হাসপাতালে ঘুরে বেড়াচ্ছেন ধর্মেন্দ্রর বাবা বীর সহায়। বীরের দৃঢ় বিশ্বাস, ‘ছেলে আজ না হোক কাল ফিরবেনই।’

গত কয়েকদিন ধরেই সহিংসতার নানা রকম ছবি ফাটল তৈরি করেছে। আর দূরত্ব বাড়িয়েছে কয়েক যোজন। তবে এই বিপদের দিনেই মানুষে মানুষে সেতু নির্মাণের কাজটাও সেরে ফেলেছেন মহিন্দর সিংহ। তখন চারদিক জ্বলছে যেনো হিংসার আগুনে। হাতের সামনে যা কিছু পাচ্ছে তাই পুড়িয়ে শেষ করে দিচ্ছে সেইসব গনগনে আঁচ। এর মাঝেই যেনো প্রাচীর হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন বৃদ্ধ মহিন্দর নামক এক ব্যক্তি। বুকে জড়িয়ে ধরে সেদিন বাঁচিয়েছেন মুসলিম প্রতিবেশীদের। মহিন্দরে মুগ্ধ তার প্রতিবেশীরা বলেছেন,‘আর কেও হিম্মত করেনি। এগিয়ে এসেছেন সর্দারজি ও তার ছেলে।’

মহিন্দর এখন কী বলছেন? বৃদ্ধের কথা হলো, ‘১৯৮৪ সালে আমি দাঙ্গা দেখেছি। সেদিন যেনো সেই স্মৃতিই আমার সামনে ফুটে উঠলো। আমি কারও ধর্ম দেখিনি, মানুষকে বাঁচাতে এগিয়ে গিয়েছি অকাতরে।’

This post was last modified on মার্চ ৫, ২০২০ 1:27 অপরাহ্ন

স্টাফ রিপোর্টার

Recent Posts

ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে পরামর্শের পরই গাজায় ইসরায়েলের ব্যাপক হামলায় নিহত ২০০

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজায় আবারও ভয়াবহ হামলা…

% দিন আগে

বাবাকে দেখেই আদর খেতে ছুটরো আহ্লাদি সিংহশাবক: কিন্তু খেলো এক চড়!

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ বাবাকে দেখেই আদর খেতে ছুটরো আহ্লাদি সিংহশাবক। কিন্তু সিংহশাবকের মাথায়…

% দিন আগে

বনের মধ্যেদিয়ে চলে গেছে রেলপথ

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ শুভ সকাল। মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ ২০২৫ খৃস্টাব্দ, ৪ চৈত্র ১৪৩১…

% দিন আগে

বিশেষ একটি ফল ঋতুস্রাবজনিত শারীরিক অস্বস্তি নিয়ন্ত্রণে রাখবে!

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ আমরা সবাই জানি ঋতুস্রাব চলাকালীন অতিরিক্ত রক্তপাত, পেটে যন্ত্রণা, পেটফাঁপা,…

% দিন আগে

ইউটিউব এবার কন্টেন্ট ক্রিয়েটরদের দুঃসংবাদ দিলো

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ মানহীন কন্টেন্ট ক্রিয়েটরদের জন্য দুঃসংবাদ দিলো ইউটিউব। এই ধরনের ভিডিওর…

% দিন আগে

পুরাতনী টোটকায় ফিরতে পারে চোখের জ্যোতি!

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ একবার চশমা চোখে উঠলেই আর রক্ষে নেই- সেটি সারাজীবনের সঙ্গী।…

% দিন আগে