জানা অজানা

মৃত্যুর পরেও যাদের দিতে হচ্ছে লাইন!

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ জীবন থাকতে নানা প্রয়োজনে তাদের লাইন দিতে হয়েছে। আবার এই মহামারী করোনার কারণেও আজ তাদের মৃত্যুর পরেও দিতে হচ্ছে লাইন!

প্রতিদিন কোনো না কোনো হৃদয়বিদারক ঘটনার জন্ম দিচ্ছে করোনায় বিপর্যস্ত ভারত। মাঠ বা পার্ক যেখানে এখন তাদের অস্থায়ী শ্মশান।

অ্যাম্বুলেন্সে গাদাগাদি করে ২২ টি লাশ তোলার কাহিনীর কথা মানুষের মুখে থাকতেই আবারও উঠে এলো মৃত্যুর বিশাল লাইনের বিষয়টি। অক্সিজেনের তীব্র সংকটে চলে যাচ্ছে প্রাণ। সংক্রমণ-মৃত্যুতে প্রতিদিন দেশটি গড়ছে যেনো বিশ্বরেকর্ড। মহরাষ্ট্রের পর এখন ভয়াবহ পরিস্থিতি দিল্লিতেও।

সংবাদ মাধ্যমের খবরে জানা গেছে, চিকিৎসা পেতে প্রথমে হাসপাতালের বাইরে লাইন দিতে হয়েছিল। আবার মৃত্যুর সঙ্গে যখন পাঞ্জা লড়ছেন, ঠিক তখনও হাসপাতালের বাইরে অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন তাদের পরিজনরা। মৃত্যুর পরেও সেই লাইন থেকে নিস্তার পেলেন না দিল্লিতে মহামারি করোনার কবলে পড়ে প্রাণ হারানো ব্যক্তিদের। চিতায় ওঠার জন্যও মাচায় শুয়ে থাকা অবস্থাতেই শ্মশানে লাইন দিতে হচ্ছে তাদের! অতিমারিতে বিধ্বস্ত রাজধানী দিল্লিতে এবার এমনই দৃশ্য চোখের সামনে উঠে এলো।

৪০ ডিগ্রির উপরে হাঁসফাঁস করা গরমের মধ্যে দিল্লির সুভাষনগর শ্মশানে টিনের চালের নিচে সারি সারি চিতা জ্বলছে তো জ্বলছে। মিহি ছাই উড়ে এসে পড়ছে পাশের চাতালে। খাঁ খাঁ রোদে তেতে ওঠা সেই চাতাল ধরেই এগিয়েছে মরদেহের সর্পিল সারি। এক ঝলক তাকালেই মাচার সঙ্গে দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখা ১৫-২০টি দেহ চোখে পড়বে যে কারও।

পাশের উঁচু বাঁধানো জায়গায় ঘি ও প্রয়োজনীয় সামগ্রী নিয়ে বসে রয়েছেন নিকট পরিজনরা। এক দু’ঘণ্টার ব্যাপার নয়, ১৬ হতে ২০ ঘণ্টা বসে রয়েছেন কেও কেও। যেসব প্লাস্টিকের থলিতে মরদেহ মোড়া রয়েছে, তার উপর লেখা রয়েছে নাম, নম্বর লেখা থাকায় হাতছাড়া হওয়ার ভয় অবশ্য নেই। তাই একটানা বসে না থেকে বাইরে থেকে মাঝেমধ্যে পোড়া দেহের গন্ধ এবং ধোঁয়া থেকে বেরিয়ে আসছেন অনেকেই।

আবার বাইরে বেরিয়েও যে প্রাণভরে শ্বাস নেবেন সে উপায় নেই। সেখানেও মরদেহ নিয়ে সারি সারি অ্যাম্বুলেন্স এবং গাড়ি দাঁড়িয়ে রয়েছে। তখনও ধাক্কা সামলে উঠতে না পারা কয়েকজন অজান্তেই ফোঁপাচ্ছেন। কোনখানে দাঁড়াবেন তা বুঝতে পারছেন না। তাতে বাকিরাও রীতিমতো অপ্রস্তুত হয়ে পড়ছেন।

কোনটা নাভি এবং কোনটা বুক, বুঝে উঠতে পারছিলেন না। তাকে ধমক লাগালেন অন্য একজন শ্মশানকর্মী। তাতে ফুঁপিয়ে উঠলেন একজন নারী। কান্না চাপতে চাপতে বললেন, ‘বাবার মুখটা পর্যন্তও দেখতে পাইনি। ’

দিল্লি সরকারের হিসাব মতে, মাস দুয়েক আগেও পরিস্থিতি যথেষ্ট নিয়ন্ত্রণেই ছিল। ৫৭ জন করোনা রোগীর মৃত্যু ঘটেছিলো। মার্চে সংখ্যাটা বেড়ে হয়েছে ১১৭। তবে এপ্রিল মাস এখনও শেষ হয়নি, তাতেই কোভিডে আক্রান্ত হয়ে ৩ হাজার ৬০১ রোগী মারা গেলেন। যারমধ্যে গত ৭ দিনেই মৃত্যু ঘটেছে ২ হাজার ২৬৭ জনের। যদিও সরকারি পরিসংখ্যান নিয়েও গরমিলের অভিযোগ রয়েছে।

সুভাষনগর শ্মশানে কোভিডে মারা যাওয়া বাবার দেহ নিয়ে গিয়েছিলেন চল্লিশ বছর বয়সী মনমীত সিংহ। সংবাদ মাধ্যমকে তিনি জানিয়েছেন, অ্যাম্বুলেন্স, গাড়ির ভিড় কাটিয়ে শ্মশানে ঢুকতে যাবেন, এমন সময় তার আগেই রাস্তা আটকান একজন কর্মী। জানিয়ে দেন যে, আর দেহ নেওয়া যাবে না শ্মশানে। কারণ এতো দেহ লাইনে রয়েছে যে, সব ক’টি দেহ দাহ করার কোনো জায়গা ও কাঠও নেই। সিএনজি চুল্লিতে একসঙ্গে দু’টোর বেশি দেহ দাহ করা যায় না। তাতেও একেকটি দেহের পিছনে কমপক্ষে ৯০ মিনিটের মতো সময় লাগে। ইতিমধ্যেই ওই রয়েছে লাইনে ২৪টি দেহ। তাই অন্য কোথাও নিয়ে যেতে হবে তাকে।

শুধু সুভাষনগর নয়, দিল্লির প্রত্যেক শ্মশানেরই একই অবস্থা বলে অভিযোগ রয়েছে। তাতে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ সামাল দেওয়া নিয়ে কেন্দ্রের পাশাপাশি অরবিন্দ কেজরিওয়াল সরকারের প্রস্তুতি নিয়েও নানা প্রশ্ন উঠছে। যদিও স্বাস্থ্যক্ষেত্রে এই বিপর্যয়ের কথা তিনি অপকটে মেনেই নিয়েছেন।

তবে শেষ কথা হলো পৃথিবীতে জন্ম নেওয়া মানুষগুলো যাদের একদিন না একদিন এই পৃথিবী থেকে যেতেই হতো। কিন্তু তাই বলে এভাবে?

করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে করণীয়

# সব সময় ঘরে থাকি।
# জরুরি প্রয়োজনে বাইরে বের হলে নিয়মগুলো মানি, মাস্ক ব্যবহার করি।
# তিন লেয়ারের সার্জিক্যাল মাস্ক ইচ্ছে করলে ধুয়েও ব্যবহার করতে পারি।
# বাইরে থেকে ঘরে ফেরার পর পোশাক ধুয়ে ফেলি। কিংবা না ঝেড়ে ঝুলিয়ে রাখি অন্তত চার ঘণ্টা।
# বাইরে থেকে এসেই আগে ভালো করে (অন্তত ২০ সেকেণ্ড ধরে) হাত সাবান বা লিকুইড দিয়ে ধুয়ে ফেলি।
# প্লাস্টিকের তৈরি পিপিই বা চোখ মুখ, মাথা একবার ব্যবহারের পর

অবশ্যই ডিটারজেন্ট দিয়ে ভালো করে ধুয়ে শুকিয়ে ব্যবহার করা যেতে পারে।
# কাপড়ের তৈরি পিপিই বা বর্ণিত নিয়মে পরিষ্কার করে পরি।
# চুল সম্পূর্ণ ঢাকে এমন মাথার ক্যাপ ব্যবহার করি।
# হাঁচি কাশি যাদের রয়েছে সরকার হতে প্রচারিত সব নিয়ম মেনে চলি। এছাড়াও খাওয়ার জিনিস, তালা চাবি, সুইচ ধরা, মাউস, রিমোট কন্ট্রোল, মোবাই, ঘড়ি, কম্পিউটার ডেক্স, টিভি ইত্যাদি ধরা ও বাথরুম ব্যবহারের আগে ও পরে নির্দেশিত মতে হাত ধুয়ে নিন। যাদের হাত শুকনো থাকে তারা হাত ধোয়ার পর Moisture ব্যবহার করি। সাবান বা হ্যান্ড লিকুইড ব্যবহার করা যেতে পারে। কেনোনা শুকনো হাতের Crackle (ফাটা অংশ) এর ফাঁকে এই ভাইরাসটি থেকে যেতে পারে। অতি ক্ষারযুক্ত সাবান বা ডিটারজেন্ট ব্যবহার থেকে বিরত থাকাই ভালো।

This post was last modified on এপ্রিল ২৯, ২০২১ 10:17 পূর্বাহ্ন

স্টাফ রিপোর্টার

Recent Posts

এসসিবি-চ্যানেল আই অ্যাগ্রো অ্যাওয়ার্ড ২০২৩: ‘সেরা কৃষি প্রতিষ্ঠান’ স্বীকৃতি পেলো আইফার্মার

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক অ্যান্ড চ্যানেল আই অ্যাগ্রো অ্যাওয়ার্ড ২০২৩- এর…

% দিন আগে

দেশের জনপ্রিয় অভিনেত্রীর ছোটবেলার ছবি: বলুনতো এটি কে?

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ যে ছবিটি আপনারা দেখছেন সেটি দেশের জনপ্রিয় একজন অভিনেত্রীর ছোটবেলার…

% দিন আগে

ওয়ারেন্ট ঠেকাতে মরিয়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র: গ্রেফতার আতঙ্কে নেতানিয়াহু!

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় গণহত্যা ও আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে ইসরায়েলের…

% দিন আগে

ছবিতে লুকিয়ে রয়েছে একটি কাঁচি: কেবলমাত্র বুদ্ধিমানেরাই ৩০ সেকেন্ডে খুঁজে বের করতে পারবেন!

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ ছবিতে লুকিয়ে রয়েছে একটি কাঁচি। তবে এই কাঁচির প্রতিকৃতিটি এই…

% দিন আগে

মাছ ধরার এক অসাধারণ দৃশ্য

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ শুভ সকাল। সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪ খৃস্টাব্দ, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১…

% দিন আগে

ডায়াবেটিস রোগিরা ‘ইনস্ট্যান্ট নুডলস’ খেলে কি রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যেতে পারে?

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ ‘ইনস্ট্যান্ট নুডলস’ স্বাদে মিষ্টি না হলেও এই ধরনের খাবারে শর্করার…

% দিন আগে