দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ প্যাঁচা। এই পাখিটিকে আমরা কম বেশি সকলেই চিনি। নিশাচর শিকারী এই পাখিটি কারও করও কাছে অশুভ হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে। আজ রয়েছে এই নিশাচর শিকারি প্যাঁচার কাহিনী!
প্যাঁচার অদ্ভুত রকমের ডাক ও নিশাচর স্বভাব একে নানা কুসংস্কার ও অলৌকিক চিন্তার সঙ্গে যুক্ত করেছে। যেমন কেনিয়ার কিকুয়ু উপজাতিগোষ্ঠী বিশ্বাস করেন যে, প্যাঁচা নাকি মৃত্যুর আগমনের কথা জানিয়ে দেয়। যদি কেও একটি প্যাঁচা দেখে বা তার আওয়াজ শোনে তাহলে সে মৃত্যুমুখে পতিত হবেন। তাই প্রচলিত বিশ্বাসবোধে প্যাঁচাকে মন্দ ভাগ্য, শারীরিক অসুস্থতা বা মৃত্যুর প্রতিচ্ছবি হিসেবেও গণ্য করা হয়ে থাকে। প্রাচীনকাল থেকেই এই বিশ্বাস অদ্যাবধিও প্রচলিত রয়েছে।
তবে বিজ্ঞানীরা পেঁচাকে শুভ বা অশুভ কোনোটিই মানতে নারাজ। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, প্যাঁচা অন্য সবার মতোই প্রাণিজগতের একজন সাধারণ সদস্য।
স্ট্রিজিফর্মিস বর্গভূক্ত এই পাখিটির বিভিন্ন প্রজাতিও রয়েছে। তবে এ পর্যন্ত প্রায় ২০০টি প্রজাতি টিকে রয়েছে। এ পর্যন্ত যেসব প্যাঁচার দেখা পাওয়া যায় তাদেরকে দুটো গোত্রে ভাগ করা হয়ে তাকে- সাধারণ প্যাঁচা কিংবা স্ট্রিগিডি ও লক্ষ্মীপ্যাঁচা কিংবা টাইটোনিডি।
ভিন্ন প্রজাতির প্যাঁচার ডাক ভিন্ন রকম হয়ে থাকে। ডাকের ভিন্নতা অনুযায়ী বাংলায় বিভিন্ন প্যাঁচার বিভিন্ন নামকরণও করা হয়েছে। যেমন: হুতুম প্যাঁচা (Bubo bengalensis), ভূতুম প্যাঁচা (Ketupa zeylonensis), লক্ষ্মীপ্যাঁচা (Tyto alba), খুঁড়ুলে প্যাঁচা (Athene brama), কুপোখ (Ninox scutulata) এবং নিমপোখ (Otus lepiji) ইত্যাদি।
বেশীরভাগ প্যাঁচা ছোট ছোট স্তন্যপায়ী প্রাণী যেমন ইঁদুর ও কীটপতঙ্গ শিকার করে, তবে কিছু প্রজাতি আবার মাছও ধরে। প্যাঁচা উপর হতে ছোঁ মেরে শিকার ধরতেই অভ্যস্ত। শিকার করা এবং শিকার ধরে রাখতে এরা বাঁকানো ঠোঁট বা চঞ্চু ও নখ ব্যবহার করে।
কুমেরু, গ্রীনল্যান্ড ও কিছু নিঃসঙ্গ দ্বীপ ছাড়া পৃথিবীর সবখানেই প্যাঁচা দেখা যায়। বাংলাদেশে ১৭টি প্রজাতির (মতান্তরে ৮ গণে ১৫ প্রজাতি) প্যাঁচা দেখা যায়। যারমধ্যে ২৫টি স্থায়ী ও ২টি পরিযায়ী। প্যাঁচা মূলত নিঃসঙ্গচর প্রাণী। এরা গাছের কোটর, পাহাড় কিংবা পাথরের গর্ত অথবা পুরনো দালানেও থাকে।
প্যাঁচার মাথা বড়, মুখমন্ডল চ্যাপ্টা ও মাথার সম্মুখদিকে চোখ। প্যাঁচার চোখের চারিদিকে সাধারণত বৃত্তাকারে পালক সাজানো থাকে যাকে ফেসিয়াল ডিস্কও বলে। এদের অক্ষিগোলক সামনের দিকে অগ্রসর থাকায় এরা দ্বিনেত্র দৃষ্টির অধিকারী হয়ে থাকে।
প্যাঁচার দূরবদ্ধদৃষ্টি রয়েছে যে কারণে এরা চোখের কয়েক ইঞ্চির মধ্যেও অবস্থিত কোনো বস্তু পরিষ্কারভাবে দেখতে পায় না। এরা এদের ধরা শিকারকে চক্ষু এবং নখরে অবস্থিত বিশেষ এক ধরনের পালক দ্বারা অনুভব করতে পারে। প্যাঁচা তার মাথাকে একদিকে ১৩৫ ডিগ্রী কোণেও ঘোরাতে পারে। তাই দুই দিক মিলেই এদের দৃষ্টিসীমা ২৭০ ডিগ্রী। যে কারণে এরা নিজের কাঁধের উপর দিয়েই পেছনে দেখতে পায়।
প্যাঁচার শ্রবণশক্তি খুবই প্রখর। শুধু শব্দ দ্বারা চালিত হয়ে এরা নিরেট অন্ধকারেও শিকার ধরতে পারে। সামান্য মাথা ঘুরালেই প্যাঁচা অনুচ্চ শব্দ যেমন ইঁদুরের শষ্যদানা চিবানোর আওয়াজও এরা শুনতে পায়, এর কারণ হলো মাথার গড়ন রূপান্তরিত হওয়ার জন্য প্যাঁচার দুই কানে সামান্য আগে পরে শব্দ পৌঁছায়। এরা বাতাসে উড়ার সময় কোনো রকম শব্দই করে না। প্যাঁচার ফেসিয়াল ডিস্ক শিকারের করা শব্দকে শ্রবণে সহায়তা করে। অনেক প্রজাতির প্যাঁচার ফেসিয়াল ডিস্ক অসমভাবে সাজানো থাকে যাতে করে শিকারের অবস্থান নির্ণয় করা সহজ হয়।
আমাদের দেশে নানা ধরনের পেঁচা দেখা যায়। যার মধ্যে- লক্ষ্মী পেঁচা, নিম পেঁচা, কোটরে পেঁচা, কুপোখ কিংবা কাল পেঁচা, ভুতম পেঁচা, পাহাড়ী পেঁচা, ভুমা পেঁচা, বন্ধনীযুক্ত নিমপোখ পেঁচা, ঘাসবনের পেঁচা ও বনের বড় পেঁচা অন্যতম।
প্যাঁচার কিছু অদ্ভুত বৈশিষ্ট্যসমূহ
# গ্রেট হর্ন্ড প্যাঁচাসহ কিছু প্রজাতির প্যাঁচারা পানিতে সাঁতার কাটতে পারে। শিকার ধরতে প্রায়ই প্যাঁচাকে জলাশয়ে যেতে হয় এবং পালক ভিজে যাওয়ার সম্ভাবনাও থাকে। তবে প্যাঁচার মতো ভারি পালকের পাখির পক্ষে ভেজা পালক নিয়ে ওড়া সম্ভব হয় না। তখন এরা মূলত ডানার সাহায্যে সাঁতরে তীরে পৌঁছায়।
# প্যাঁচার ঘাড়ের বৈশিষ্ট্য বিস্ময়কর। এদের ঘাড়ে সাধারণত ১৪টি অস্থিসন্ধি থাকে। অথচ মানুষের ঘাড়ে থাকে এর অর্ধেক। এ অনন্য দেহ বৈশিষ্ট্যের জন্য প্যাঁচার ঘাড় ২৭০ ডিগ্রি পর্যন্ত ঘুরে যেতে পারে। এই দক্ষতা প্যাঁচাকে টিকে থাকতে সাহায্য করে। এরা সহজেই চোখ নাড়াতে পারে না। যে কারণে ঘাড় ঘুরিয়ে চারপাশের উপর নজর রাখতে হয় প্যাঁচাদের।
# প্যাঁচাকে সাধারণত নিশাচর পাখি হিসেবেই দেখা হয়। তবে সব প্যাঁচা নিশাচর না। গ্রেট গ্রে, নর্দান হক্, নর্দান পিগমিসহ প্যাঁচার আরও কয়েকটি প্রজাতি রয়েছে যারা দিনের বেলাতে শিকার করে। তবে এদের নিশাচর না হওয়ার জন্য দায়ী হলো বিবর্তন। কারণ হলো এরা যেসব অঞ্চলে বসবাস করে সেখানে রাতের বেলা তেমন কোনো শিকারই পাওয়া যায় না।
# মধ্যপ্রাচ্যের অর্থনীতিতে প্যাঁচা অনেক উপকারী ভূমিকা পালন করে থাকে। এসব অঞ্চলের প্যাঁচাদের প্রধান শিকারই হলো ইঁদুর। এই ইঁদুর হলো ফসলের শত্রু। ইসরায়েল, জর্ডান এবং প্যালেস্টাইন অঞ্চলে কৃষিজমির আশপাশ দিয়ে প্যাঁচার জন্য বাসা বানিয়ে রাখা হয়। এক জোড়া প্যাঁচা বছরে গড়ে ৬ হাজার ইঁদুর শিকার করে থাকে।
# কিউবার ‘জায়ান্ট আউল’ হলো পৃথিবীর সবচেয়ে বড় আকৃতির প্যাঁচা। এদের উচ্চতা প্রায় সাড়ে ৩ ফুট। তবে এরা অনেক আগেই বিলুপ্ত হয়ে গেছে। গবেষকরা নিশ্চিত না যে এরা আসলে উড়তে পারতো কিনা। যদি এদের ওড়ার ক্ষমতা থাকতো, তাহলে এদেরকেই বলা যেতো উড়তে জানা পৃথিবীর সবচেয়ে বড় পাখি এরা। কিউবার বনাঞ্চলে এদের দেহাবশেষও আবিষ্কার করেন গবেষকরা।
# কিছু কিছু প্যাঁচার নকল চোখ থাকে, যেমন- নর্দান পিগমি আউল। এদের চোখের রং উজ্জ্বল হলুদ ধরনের। তবে এদের মাথার পেছনে কালো রঙের কিছু পালকও রয়েছে যা দেখলে অবিকল চোখ বলেই মনে হবে। শিকারি প্রাণীকে বিভ্রান্ত করে থাকে এই নকল চোখ।
# প্যাঁচারা কোনো বাসা তৈরি করতে পারে না। এরা বেশিরভাগ সময় গাছের কোটরে কোনো রকমে বসবাস করে। অন্য প্যাঁচার পরিত্যক্ত গাছের কোটরই বেছে নেওয়াকে পছন্দ প্যাঁচারা।
# আর্কটিকে বসবাসকারী তুষার প্যাঁচারা শীতের মৌসুমে দক্ষিণ দিকে ৩ হাজার মাইল পর্যন্ত ভ্রমণ করে থাকে।
# প্যাঁচা সাধারণত দুই কানে দুই রকম শব্দতরঙ্গ শনাক্ত করতে পারে।
# নারী প্যাঁচারা আকৃতিতে পুরুষ প্যাঁচার চেয়েও বড়।
# সব সময় ঘরে থাকি।
# জরুরি প্রয়োজনে বাইরে বের হলে নিয়মগুলো মানি, মাস্ক ব্যবহার করি।
# তিন লেয়ারের সার্জিক্যাল মাস্ক ইচ্ছে করলে ধুয়েও ব্যবহার করতে পারি।
# বাইরে থেকে ঘরে ফেরার পর পোশাক ধুয়ে ফেলি। কিংবা না ঝেড়ে ঝুলিয়ে রাখি অন্তত চার ঘণ্টা।
# বাইরে থেকে এসেই আগে ভালো করে (অন্তত ২০ সেকেণ্ড ধরে) হাত সাবান বা লিকুইড দিয়ে ধুয়ে ফেলি।
# প্লাস্টিকের তৈরি পিপিই বা চোখ মুখ, মাথা একবার ব্যবহারের পর অবশ্যই ডিটারজেন্ট দিয়ে ভালো করে ধুয়ে শুকিয়ে ব্যবহার করা যেতে পারে।
# কাপড়ের তৈরি পিপিই বা বর্ণিত নিয়মে পরিষ্কার করে পরি।
# চুল সম্পূর্ণ ঢাকে এমন মাথার ক্যাপ ব্যবহার করি।
# হাঁচি কাশি যাদের রয়েছে সরকার হতে প্রচারিত সব নিয়ম মেনে চলি। এছাড়াও খাওয়ার জিনিস, তালা চাবি, সুইচ ধরা, মাউস, রিমোট কন্ট্রোল, মোবাই, ঘড়ি, কম্পিউটার ডেক্স, টিভি ইত্যাদি ধরা ও বাথরুম ব্যবহারের আগে ও পরে নির্দেশিত মতে হাত ধুয়ে নিন। যাদের হাত শুকনো থাকে তারা হাত ধোয়ার পর Moisture ব্যবহার করি। সাবান বা হ্যান্ড লিকুইড ব্যবহার করা যেতে পারে। কেনোনা শুকনো হাতের Crackle (ফাটা অংশ) এর ফাঁকে এই ভাইরাসটি থেকে যেতে পারে। অতি ক্ষারযুক্ত সাবান বা ডিটারজেন্ট ব্যবহার থেকে বিরত থাকাই ভালো।
This post was last modified on জুন ২৭, ২০২১ 5:18 অপরাহ্ন
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ প্রথমবারের মতো প্যান ইন্ডিয়ান চলচ্চিত্র বানিয়েছেন নির্মাতা অনন্য মামুন। ঢালিউড…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ আপনার যদি প্রতিদিন চিকেন খাওয়ার অভ্যাস থাকে, তাহলে জেনে রাখুন,…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ কোটা সংস্কার আন্দোলনের সংগঠন ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’- এর অন্যতম সমন্বয়ক…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নবনিযুক্ত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচনী প্রচারণায় প্রতিশ্রুতি দেন…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ অবশেষে গত ৩১ বছর ধরে চলা ‘গোল্ডেন আউল’ বিতর্কের অবসান…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ শুভ সকাল। বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪ খৃস্টাব্দ, ২৯ কার্তিক ১৪৩১…