ভ্যাকসিনকে ‘বৈশ্বিক জনস্বার্থ সামগ্রী’ ঘোষণার আহবান জানালেন প্রধানমন্ত্রী

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ হোয়াইট হাউজে অনুষ্ঠিত কোভিড-১৯ সংক্রান্ত শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনকে ‘বৈশ্বিক জনস্বার্থ সামগ্রী’ হিসেবে ঘোষণা করার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেছেন।

ওই অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, কার্যকরভাবে বিশ্বব্যাপী টিকা দেওয়ার কার্যক্রম পরিচালনার জন্য, কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনগুলিকে ‘বৈশ্বিক জনস্বার্থ সামগ্রী’ হিসেবে ঘোষণা করা প্রয়োজন।

প্রধানমন্ত্রী গতকাল (বুধবার) ‘হোয়াইট হাউজ গ্লোবাল কোভিড-১৯ সামিট : এন্ডিং দ্যা প্যানডেমিক এন্ড বিল্ডিং ব্যাক বেটার হেলথ সিকিউরিটি’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে পূর্বে ধারণকৃত এক বক্তব্যে একথা বলেছেন।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন গতকাল (বুধবার) স্থানীয় সময় সকাল ১১টায় ভার্চুয়াল এই শীর্ষ সম্মেলনের আয়োজন করেন।

সম্মেলনের ভাষণে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন কোভিড-১৯ মহামারী অবসানে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে আসার জন্য রাষ্ট্র এবং সরকার প্রধান, আন্তর্জাতিক সংস্থা, ব্যবসায়ী ও বেসরকারি নেতৃবৃন্দের প্রতি আহ্বান জানান।

অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন জার্মান চ্যান্সলর এঞ্জেলা মার্কেল, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকো উইডোডো, আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাপোসা ও জাতিসংঘ মহাসচিব এন্তোনিও গুতেরেস।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর বক্তব্যে বলেন, টিকা লাভের সার্বজনীন অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সক্ষমতা রয়েছে এমন উন্নয়নশীল এবং স্বল্পোন্নত দেশগুলোর মাধ্যমে টিকার স্থানীয় উৎপাদনের সুযোগ দেওয়া উচিত।

হোয়াইট হাউস আমন্ত্রিতদের জানিয়েছে যে, এ বছরের শেষের দিকে ও ২০২২ সালের শুরুতে ফলো-আপ ইভেন্টগুলো অংশগ্রহণকারীদেরকে তাদের প্রতিশ্রুতির জন্য দায়বদ্ধ রাখার উদ্দেশ্যেই আয়োজন করা হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার কোভিড-১৯ মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য তিনধাপ পন্থা অবলম্বন করেছে। ‘প্রথমত, জীবন বাঁচানোর লক্ষ্যে পর্যাপ্ত চিকিৎসা সুবিধা, যন্ত্রপাতি, জীবন রক্ষাকারী ওষুধ ও সম্পদ বরাদ্দ করা হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, এই পদক্ষেপের মধ্যে রয়েছে আমাদের নাগরিকদের, বিশেষ করে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর জীবিকা সুরক্ষায় সহায়তা প্রদান ও যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব অর্থনৈতিক ক্রিয়াকলাপ পুনরুদ্ধার করা।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা প্রথমে উন্নত স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা ও সামাজিক সুরক্ষা নেট কর্মসূচির উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি নীতির দিকেও মনোনিবেশ করছি।’

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, দ্বিতীয়ত সরকার টেকসই অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের জন্য কাজ করছে, যাতে করে উদ্ভাবন, কর্মসংস্থান ও বিনিয়োগের ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে। তৃতীয়ত, তিনি বলেন, জলবায়ু স্থিতিস্থাপকতা ও কম কার্বণ নিঃসরণের দিকে মনোনিবেশ করা হচ্ছে।

কোভিড-১৯ মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সরকারি উদ্যোগ সম্পর্কে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এ পর্যন্ত আমরা ১৫ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলারের প্রণোদনা প্যাকেজ বরাদ্দ করেছি, দরিদ্র, বয়স্ক, বিধবা, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ও অনানুষ্ঠানিক খাতের কর্মীসহ ৪ দশমিক ৪ মিলিয়ন সুবিধাভোগীদের ১৬৬ মিলিয়ন ডলার বিতরণ করেছি।’

শেখ হাসিনা আরও বলেন, এ বছর ১৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৩৫ মিলিয়নের বেশি টিকা দেওয়া হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০২২ সালের আগস্ট মাসের মধ্যে আমাদের জনসংখ্যার ৮০ শতাংশ লোককে টিকা না দেওয়া পর্যন্ত আমরা প্রতিমাসে ২০ মিলিয়ন মানুষকে টিকা দেওয়ার পরিকল্পনা করেছি।’

করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে করণীয়

# সব সময় ঘরে থাকি।
# জরুরি প্রয়োজনে বাইরে বের হলে নিয়মগুলো মানি, মাস্ক ব্যবহার করি।
# তিন লেয়ারের কাপড়ের মাস্ক ইচ্ছে করলে ধুয়েও ব্যবহার করতে পারি।
# বাইরে থেকে ঘরে ফেরার পর পোশাক ধুয়ে ফেলি। কিংবা না ঝেড়ে ঝুলিয়ে রাখি অন্তত চার ঘণ্টা।
# বাইরে থেকে এসেই আগে ভালো করে (অন্তত ২০ সেকেণ্ড ধরে) হাত সাবান বা লিকুইড দিয়ে ধুয়ে ফেলি।
# প্লাস্টিকের তৈরি পিপিই বা চোখ মুখ, মাথা একবার ব্যবহারের পর অবশ্যই ডিটারজেন্ট দিয়ে ভালো করে ধুয়ে শুকিয়ে ব্যবহার করা যেতে পারে।
# কাপড়ের তৈরি পিপিই বা বর্ণিত নিয়মে পরিষ্কার করে পরি।
# চুল সম্পূর্ণ ঢাকে এমন মাথার ক্যাপ ব্যবহার করি।
# হাঁচি কাশি যাদের রয়েছে সরকার হতে প্রচারিত সব নিয়ম মেনে চলি। এছাড়াও খাওয়ার জিনিস, তালা চাবি, সুইচ ধরা, মাউস, রিমোট কন্ট্রোল, মোবাই, ঘড়ি, কম্পিউটার ডেক্স, টিভি ইত্যাদি ধরা ও বাথরুম ব্যবহারের আগে ও পরে নির্দেশিত মতে হাত ধুয়ে নিন। যাদের হাত শুকনো থাকে তারা হাত ধোয়ার পর Moisture ব্যবহার করি। সাবান বা হ্যান্ড লিকুইড ব্যবহার করা যেতে পারে। কেনোনা শুকনো হাতের Crackle (ফাটা অংশ) এর ফাঁকে এই ভাইরাসটি থেকে যেতে পারে। অতি ক্ষারযুক্ত সাবান বা ডিটারজেন্ট ব্যবহার থেকে বিরত থাকাই ভালো।