পৃথিবীর অর্ধেক অঞ্চল পুড়ছে ভয়াবহ দাবদাহ-দাবানলে

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ প্রচণ্ড তাপপ্রবাহে অতিষ্ঠ বাংলাদেশসহ বিশ্বের অন্য অঞ্চলসমূহ। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল যেনো এক কারখানার বয়লার চেম্বারের মতো উত্তপ্ত হয়ে উঠছে পুরো বিশ্ব।

গত টানা দুই সপ্তাহ ধরে তীব্র দাবদাহ, দাবানল এবং খরায় পুড়ছে পৃথিবীর অর্ধেকের বেশি অঞ্চল। আটলান্টিক হতে প্রশান্ত মহাসাগর হয়ে ভারত মহাসাগর অবধি আবহাওয়ার ওই অস্বাভাবিক অসহনীয় উষ্ণ আচরণে বিপন্ন হয়ে পড়েছে পুরো প্রাণীজগৎ। যার বিরূপ প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশেও। বাংলাদেশে গত তিনদিনে স্বাভাবিকের চেয়ে ৬ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা বেশি ছিলো। ১৯৪৮ সাল থেকে ২০২২ সালের আবহাওয়ার সকল তথ্য বিশ্লেষণ করলে ৭০-৭৪ বছরের ইতিহাসে চলতি মাস অর্থাৎ জুলাই মাসে সবো‌র্চ্চ তাপমাত্রা উঠেছে ৪০ ডিগ্রী সেলসিয়াস।

বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়, ইউরোপ জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে তীব্র তাপদাহ ও দাবানল। পুড়ছে ইউরোপ, ভূমধ্যসাগর পেরিয়ে মরক্কোতেও দাবানলের আগুন ছড়িয়ে পড়েছে ব্যাপকভাবে। তীব্র দাবদাহে গত এক সপ্তাহে ইউরোপে মৃত্যু ঘটেছে ৩৬০ জনের বেশি মানুষের। বিশ্বের আবহাওয়াবিষয়ক সংস্থাগুলো বলছে যে, বিশ্বের অর্ধেকের বেশি এলাকাজুড়ে বর্তমানে তীব্র দাবদাহ বইছে। ইউরোপ থেকে শুরু করে চীন, মধ্যপ্রাচ্য, ইরান, ভারত, পাকিস্তান এবং মধ্য এশিয়াজুড়ে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০ থেকে ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠে গেছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ‘নাসা’ ১৫ জুলাই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তাপপ্রবাহের একটি মাত্রচিত্র প্রকাশ করে। তাতে দেখা যায়, স্পেনের সেভেলি শহরের তাপমাত্রা উঠেছে ৪২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস; ইরানের আহভাজ শহরের তাপমাত্রা উঠেছে ৪৬ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও চীনের সাংহাই শহরের তাপমাত্রা উঠেছে ৩৭ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। অপরদিকে মধ্যপ্রাচ্যের বেশির ভাগ বড় শহরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪৫ থেকে ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠেছে।

তীব্র তাপদাহে ব্রিটেনে ইতিমধ্যেই জাতীয় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে দেশটির সরকার। তাপ বৃদ্ধির কারণে এবারই প্রথম ব্রিটেনে ন্যাশনাল ইমার্জেন্সি ঘোষণা করা হলো। তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছাতে পারে এমন পূর্বাভাসের পর এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।

অপরদিকে, ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশে প্রবল বাতাস ও চরম শুষ্ক আবহাওয়ার কারণে দাবানল ছড়িয়ে পড়েছে। সেখানে জনজীবন বিপন্ন হয়ে পড়েছে। ফ্রান্সের অনেক স্থানীয় বাসিন্দা বিভিন্ন শহর এবং গ্রাম ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হয়েছে। গত কয়েক দিনে ১০ হাজারেরও বেশি লোক ফ্রান্সের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জিহঁদ অঞ্চল ছেড়ে চলে গেছে। ফ্রান্স,পর্তুগাল ও স্পেনের বেশ কয়েকটি জায়গার দাবানল নিয়ন্ত্রণেই আনা যাচ্ছে না। সেখানে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে উঠেছে। তাপপ্রবাহে পর্তুগাল ও স্পেনে অন্তত ২৮১ জনের মৃত্যু ঘটেেছে। পশ্চিম স্পেনের বেশ কয়েকটি শহরের মানুষকে ইতিমধ্যেই সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। স্পেনে অস্বাভাবিকভাবে উচ্চ তাপমাত্রা ৪৫.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছেছে। পর্তুগালের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে গেছে। উত্তরের পিনহাওতে তাপমাত্রা ৪৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়। এটি পর্তুগালের মূল ভূখণ্ডে জুলাই মাসের জন্য সর্বোচ্চ তাপের রেকর্ড হয়েছে। অপরদিকে চীনসহ বিশ্বের আরও বেশ কয়েকটি দেশেও একই অবস্থা। চীনের পূর্বাঞ্চলীয় সাংহাই, নানজিং এবং ঝিজিয়াংসহ বেশ কয়েকটি শহরে চলছে প্রচণ্ড দাবদাহ।

মূলত মানুষের তৈরি জলবায়ু পরিবর্তনের কারণেই বিশ্বজুড়ে তাপপ্রবাহ আরও ঘন ঘন, আরও তীব্র ও দীর্ঘস্থায়ী হয়ে উঠেছে। শিল্প যুগ শুরু হওয়ার পর হতে পুথিবীর গড় তাপমাত্রা ইতিমধ্যেই প্রায় ১ দশমিক ১ সেলসিয়াস বেড়ে যায়। বিশ্বে উষ্ণতা বৃদ্ধির জন্য দায়ীই হলো গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ। এটি দ্রুত হ্রাস করতে না পারলে তাপমাত্রা দিনকে দিন এভাবেই বাড়তে থাকবে। তাই বিশ্ববাসীকে এখনই বাস্তবধর্মী উদ্যোগ নিতে হবে।

করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে করণীয়

# সব সময় ঘরে থাকার চেষ্টা করি।
# জরুরি প্রয়োজনে বাইরে বের হলে নিয়মগুলো মানি, মাস্ক ব্যবহার করি।
# তিন লেয়ারের কাপড়ের মাস্ক ইচ্ছে করলে ধুয়েও ব্যবহার করতে পারি।
# বাইরে থেকে ঘরে ফেরার পর পোশাক ধুয়ে ফেলি। কিংবা না ঝেড়ে ঝুলিয়ে রাখি অন্তত চার ঘণ্টা।
# বাইরে থেকে এসেই আগে ভালো করে (অন্তত ২০ সেকেণ্ড ধরে) হাত সাবান বা লিকুইড দিয়ে ধুয়ে ফেলি।
# প্লাস্টিকের তৈরি পিপিই বা চোখ মুখ, মাথা একবার ব্যবহারের পর অবশ্যই ডিটারজেন্ট দিয়ে ভালো করে ধুয়ে শুকিয়ে ব্যবহার করা যেতে পারে।
# কাপড়ের তৈরি পিপিই বা বর্ণিত নিয়মে পরিষ্কার করে পরি।
# চুল সম্পূর্ণ ঢাকে এমন মাথার ক্যাপ ব্যবহার করি।
# হাঁচি কাশি যাদের রয়েছে সরকার হতে প্রচারিত সব নিয়ম মেনে চলি। এছাড়াও খাওয়ার জিনিস, তালা চাবি, সুইচ ধরা, মাউস, রিমোট কন্ট্রোল, মোবাই, ঘড়ি, কম্পিউটার ডেক্স, টিভি ইত্যাদি ধরা ও বাথরুম ব্যবহারের আগে ও পরে নির্দেশিত মতে হাত ধুয়ে নিন। যাদের হাত শুকনো থাকে তারা হাত ধোয়ার পর Moisture ব্যবহার করি। সাবান বা হ্যান্ড লিকুইড ব্যবহার করা যেতে পারে। কেনোনা শুকনো হাতের Crackle (ফাটা অংশ) এর ফাঁকে এই ভাইরাসটি থেকে যেতে পারে। অতি ক্ষারযুক্ত সাবান বা ডিটারজেন্ট ব্যবহার থেকে বিরত থাকাই ভালো।

This post was last modified on জুলাই ১৮, ২০২২ 9:47 পূর্বাহ্ন

স্টাফ রিপোর্টার

Recent Posts

বিয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছেন শাকিব খান!

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ ঢাকাই সিনেমার জনপ্রিয় অভিনেতা শাকিব খান। অপু বিশ্বাস ও বুবলীকে…

% দিন আগে

৬ মাসে ইসরায়েলি বর্বরতায় গাজায় নিহত ১৩ হাজার শিশু

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ গাজা উপত্যকায় গত ৬ মাসে নিহত শিশুদের সংখ্যা আঁতকে উঠার…

% দিন আগে

আপনার চরিত্র কেমন তা আপনার আঙুলের আকৃতিই বলে দেবে!

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ আপনার ব্যক্তিত্ব কীরকম তা বলে দিতে পারে আপনার আঙুলের আকৃতি!…

% দিন আগে

সিলেটের মালিনিছড়া চা বাগানের দৃশ্য

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ শুভ সকাল। রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪ খৃস্টাব্দ, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১…

% দিন আগে

খালি পেটে পাকা পেঁপে খাওয়া কী আদৌ শরীরের জন্য ভালো?

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ পেঁপেতে উপস্থিত ‘পেপসিন’ ও ‘প্যাপাইন’ নামক উৎসেচকগুলো পরিপাকে বিশেষ সহায়ক।…

% দিন আগে

আইফোনের নতুন গেম ইমুলেটর ডেলটা

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ সম্প্রতি ডেলটা নামে আইফোনের একটি নতুন ইমুলেটর অ্যাপ তৈরি হয়েছে।…

% দিন আগে