Categories: মতামত

ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ করোনার থেকেও মারাত্মক!

এম. এইচ. সোহেল ॥ বিগত কয়েকমাত যাবত চলছে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ। কিন্তু এই দুটি দেশের যুদ্ধ পুরো বিশ্বকে কাঁপিয়ে দেবে তা কী কেও কখনও ভাবতে পেরেছেন? কিন্তু বাস্তবে তাই ঘটেছে!

বিগত প্রায় তিন বছর হলো করোনার প্রাদুর্ভাব ঘটেছে। পুরো বিশ্ব অচল হয়ে যায় এই করোনার কারণে। বিশ্বের দেশে দেশে লকডাউনের কারণে সবকিছুই স্থবির হয়ে পড়ে। ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ হয়ে যায়। বিমান চলাচল থেমে থাকে। সব মিলিয়ে পুরো বিশ্ব একেবারে থেমে যায় করোনার থাবায়। যে কারণে বিশ্বের অর্থনীতিতে ব্যাপক প্রভাব পড়ে।

কিন্তু সেই করোনা এখন প্রায় স্বাভাবিক। বিশ্বের যোগাযোগ ব্যবস্থা আবারও চালু হয়েছে। ব্যবসা-বাণিজ্য আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এসেছে। অর্থনৈতিক যে স্থবিরতা হয়েছিলো তাও ধীরে ধীরে কাটিয়ে উঠছে বিশ্ববাসী।

Related Post

কিন্তু নতুন এক কারণে আবার অশান্ত হয়ে উঠছে বিশ্ব। আর তা হলো ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ। বিশ্বের মাত্র দুটি দেশের এই যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর অনেকেই বলেছিলেন যুদ্ধের প্রভাব পড়বে বিশ্বে। কিন্তু কেও ভাবেননি এভাবে তাদের মাশুল দিতে হবে। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ পুরো বিশ্বের অর্থনীতিতে প্রভাব পড়েছে। আর সেই প্রভাবের আচ লেগেছে বাংলাদেশেও। তেল, আটাসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম হয়েছে আকাশ ছোঁয়া। এবার জ্বালানির কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদনের এক হযবরল অবস্থায় পৌঁছেছে। সারা দেশ প্রায় অচল। কারণ বিদ্যুতের সঙ্গে সব কিছুই সম্পৃক্ত। বিদ্যুতের কারণে মিল, কল-কারখানা অচল। উৎপাদনে নেমে এসেছে এক স্থবিরতা। অফিস-আদালতে কাজে-কর্মে শিথিলতা দেখা যাচ্ছে। এই অবস্থায় সরকার কৃচ্ছ্বতা সাধনের পরামর্শ দিচ্ছেন।

বিদ্যুতে রেশনিং ব্যবস্থা চালু হয়েছে। পালাক্রমে লোডসেডিং এর ব্যবস্থাও করা হয়েছে। সময় নির্ধারণ করে এক ঘণ্টা কিংবা দুই ঘণ্টা করে লোডসেডিং করার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে গতকাল (মঙ্গলবার) থেকে। তবে প্রথম দিন এক ঘণ্টার কথা বলা হলেও ঘটেছে ব্যতিক্রম। দিনে এক ঘণ্টা করে লোডসেডিং করা হলেও সন্ধ্যা থেকে শুরু হয় দুই বা তিন বারের লোডসেডিং। সন্ধ্যারপর রাত পর্যন্ত দুইবার এক ঘণ্টা করে এবং একবার অল্প সময়ের জন্য চলে এই লোডসেডিং। বিশেষ করে সর্বশেষ রাত ১২ টার পরের লোডসেডিং জনগণকে এই গরমের সময় চরম দুর্ভোগে ফেলে।

সরকার জ্বালানি সাশ্রয়ের জন্য বিদ্যুতের লোডসেডিং শুরু করেছে। বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি কমানোর জন্য এই উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এটি অবশ্য আমাদের জন্য ভালো। কারণ যেভাবে বিদ্যুতের অপচয় করা হয়। জনগণ অন্তত এখন বুঝতে শুরু করেছেন এভাবে অপচয় করা ধর্মীয় রীতিতেও নিষিদ্ধ। যেখানে একটি বাতিতে চলে সেখানে ৫টি বাতি জ্বালিয়ে রাখা হয়। মানুষের মধ্যে এখন সচেতনতা আসতে শুরু করেছে। মানুষ এখন বুঝতে পারছে এভাবে অপচয় করা মোটেও ঠিক নয়।

করোনার কারণে আমাদের দেশের অর্থনীতি যেভাবে সচল ছিলো এই বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে এসে সেই অর্থনীতি কতোখানি সচল রাখা যাবে সেটি ভাববার বিষয়। তবে অফিস-আদালতে কাজের সময় কমিয়ে দেওয়া দরকার। একমাত্র উৎপাদন সেক্টর যেমন গার্মেন্টস ও মিল-কল-কারখানা বাদে সাধারণ অফিসের সময় কিছুটা কমিয়ে দেওয়া যেতেই পারে। কারণ বর্তমান সময়ে আমাদের দেশের অধিকাংশ অফিসে প্রচুর পরিমাণে এসির ব্যবহার রয়েছে। আর এই এসিতে প্রচুর পরিমাণ বিদ্যুৎ ব্যবহার হয়। সেটি রোধ করলে অনেকটা বিদ্যুৎ সাশ্রয় হবে।

আমরা এখন অবস্থাদৃষ্টে যা দেখছি তা হলো, কোভিড অর্থাৎ করোনা মহামারি আমাদের যতোখানি পিছিয়ে দিয়েছে, তার থেকেও বেশি প্রভাব বিস্তার করেছে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ। দেশে দেশে এই যুদ্ধের প্রভাবে অর্থনীতিতে এক বিরূপ প্রভাব পড়েছে। আর তাই মনে হচ্ছে করোনার থেকেও মারাত্মক আকার ধারণ করেছে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ।

আমরা জানি যুদ্ধ কখনও কোনো মঙ্গল বয়ে আনতে পারে না। যুদ্ধ কেবলমাত্র ধ্বংস ডেকে আনতে পারে। অশান্তির এই বেড়াজাল থেকে বেরিয়ে আসতে না পারলে কখনও মঙ্গল হবে না বিশ্ববাসীর। তাই সবার প্রত্যাশা- আসুন এই যুদ্ধ থেকে আমরা বেরিয়ে আসি। শান্তি প্রতিষ্ঠা করি পুরো বিশ্বময়। যার সুফল ভোগ করবো আমরা বিশ্ববাসী ও আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম।

# লেখক: সম্পাদক, দি ঢাকা টাইমস্ এবং সম্পাদক ও প্রকাশক, মাসিক উন্নয়ন অর্থনীতি।

করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে করণীয়

# সব সময় ঘরে থাকার চেষ্টা করি।
# জরুরি প্রয়োজনে বাইরে বের হলে নিয়মগুলো মানি, মাস্ক ব্যবহার করি।
# তিন লেয়ারের কাপড়ের মাস্ক ইচ্ছে করলে ধুয়েও ব্যবহার করতে পারি।
# বাইরে থেকে ঘরে ফেরার পর পোশাক ধুয়ে ফেলি। কিংবা না ঝেড়ে ঝুলিয়ে রাখি অন্তত চার ঘণ্টা।
# বাইরে থেকে এসেই আগে ভালো করে (অন্তত ২০ সেকেণ্ড ধরে) হাত সাবান বা লিকুইড দিয়ে ধুয়ে ফেলি।
# প্লাস্টিকের তৈরি পিপিই বা চোখ মুখ, মাথা একবার ব্যবহারের পর অবশ্যই ডিটারজেন্ট দিয়ে ভালো করে ধুয়ে শুকিয়ে ব্যবহার করা যেতে পারে।
# কাপড়ের তৈরি পিপিই বা বর্ণিত নিয়মে পরিষ্কার করে পরি।
# চুল সম্পূর্ণ ঢাকে এমন মাথার ক্যাপ ব্যবহার করি।
# হাঁচি কাশি যাদের রয়েছে সরকার হতে প্রচারিত সব নিয়ম মেনে চলি। এছাড়াও খাওয়ার জিনিস, তালা চাবি, সুইচ ধরা, মাউস, রিমোট কন্ট্রোল, মোবাই, ঘড়ি, কম্পিউটার ডেক্স, টিভি ইত্যাদি ধরা ও বাথরুম ব্যবহারের আগে ও পরে নির্দেশিত মতে হাত ধুয়ে নিন। যাদের হাত শুকনো থাকে তারা হাত ধোয়ার পর Moisture ব্যবহার করি। সাবান বা হ্যান্ড লিকুইড ব্যবহার করা যেতে পারে। কেনোনা শুকনো হাতের Crackle (ফাটা অংশ) এর ফাঁকে এই ভাইরাসটি থেকে যেতে পারে। অতি ক্ষারযুক্ত সাবান বা ডিটারজেন্ট ব্যবহার থেকে বিরত থাকাই ভালো।

This post was last modified on জুলাই ২০, ২০২২ 11:24 পূর্বাহ্ন

স্টাফ রিপোর্টার

Recent Posts

হৃদয় জুড়িয়ে যাওয়া মতো এক প্রকৃতি

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ শুভ সকাল। বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪ খৃস্টাব্দ, ২৯ কার্তিক ১৪৩১…

% দিন আগে

হার্টের জন্য অত্যন্ত উপকারী কাঁচকলা: কেনো খাবেন?

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ যদি আপনি হৃদরোগের থেকে দূরে থাকতে চান তাহলে ভরসা রাখতে…

% দিন আগে

শিক্ষার্থীদের অসামান্য অর্জনের স্বীকৃতি দিলো ব্রিটিশ কাউন্সিল

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ ব্রিটিশ কাউন্সিলের আয়োজনে রাজধানী ঢাকার রেডিসন ব্লু ওয়াটার গার্ডেনে গতকাল…

% দিন আগে

মিডরেঞ্জের সেরা পারফর্মিং স্মার্টফোন অনার এক্স৭সি বর্তমানে বাংলাদেশের বাজারে

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ সাশ্রয়ী দামে শক্তিশালী ব্যাটারি, দ্রুত চার্জিং সুবিধা; সাথে দৃঢ়তা ও…

% দিন আগে

ক্যান্সার আক্রান্ত হিনার পোস্ট নিয়ে তোলপাড়

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ মারণব্যধি ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই করছেন ভারতীয় জনপ্রিয় অভিনেত্রী হিনা খান।…

% দিন আগে

দীর্ঘ ৭৪ বছর পর একসঙ্গে ভয়ঙ্কর ৪ ঘূর্ণিঝড়

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ দীর্ঘ ৭৪ বছরের মধ্যে এবারই প্রথমবারের মতো নভেম্বর মাসে চারটি…

% দিন আগে