গবেষণা বলছে: দূষণ কমিয়ে দিচ্ছে শুক্রাণুর মান

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ বিয়ের পর দম্পতির ঘর আলো করে আসবে সন্তান এমন প্রত্যাশা থাকে প্রতিটি পরিবারের সবার। তবে বিয়ের কয়েক বছর পেরিয়ে গেলেও সন্তানের মুখ দেখেন না অনেকেই। যে কারণে হতাশায় ভোগেন। এবার গবেষণা বলছে, দূষণই কমিয়ে দিচ্ছে শুক্রাণুর মান। যে কারণে সন্তান জন্ম ব্যাঘাত ঘটছে।

বিয়ের পর দীর্ঘদিন সন্তান না হলে শুরু হয় স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মনোমালিন্য। সেটা ছড়িয়ে যায় বউ-শাশুড়ি পর্যন্ত। পরিবারের অনেকেই তখন স্ত্রীকে খোটা দিতে শুরু করে দেন এবং এক সময় বলতে থাকেন যে, তিনি বন্ধ্যা। তবে কেওই পুরুষের অক্ষমতা নিয়ে প্রশ্নই তোলেন না। এই কারণে দেখা যায়, অনেক সংসারে ভাঙনও ধরে।

সম্প্রতি এমন একটি বিষয় বিজ্ঞানীরা সামনে এনেছেন যা দেখে যে কারও চোখ কপালে ওঠার মতোই অবস্থা হবে। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন যে, পুরো বিশ্বেই পুরুষদের বীর্যে শুক্রাণুর মান দিন দিনই কমে যাচ্ছে। দম্পতিদের সন্তান না হবার পেছনে এটি এমন বাস্তব সত্য একটি কারণ যা নিয়ে আলোচনা হয় খুবই কম। তবে পুরুষদের এই সমস্যা ঠিক কেনো হয় তা বর্তমানে বিজ্ঞানীরা চিহ্নিত করতে শুরু করেছেন। তথ্যসূত্র- বিবিসি বাংলা।

Related Post

ইংল্যান্ডের ইয়র্কশায়ারের বাসিন্দা জেনিফার হ্যানিংটন এবং কিয়ারান। এই দম্পতি দু’বছরের বেশি সময় ধরে সন্তান নেওয়ার চেষ্টা করছেন। তবে তারা পারছেন না। জেনিফারের আগে থেকেই ‘পলিসিস্টিক ওভেরিয়ান সিনড্রোম’ নামে একটি সমস্যা রয়েছে যা তার সন্তান ধারণে প্রভাব ফেলতে পারে বলেও মনে করা হচ্ছিল। তবে চিকিৎসক এমন একটি বিষয় তাদের সামনে আনলো যা শোনার জন্য তারা মোটেও প্রস্তুত ছিলেন না।

চিকিৎসক তাদের জানান যে, শুধু স্ত্রীই নয়, কিয়ারানেরও একটি সমস্যা রয়েছে। পরীক্ষায় দেখা গেছে, কিয়ারানের বীর্যে শুক্রাণুর সংখ্যা অনেকটা কম। যেগুলো রয়েছে সেগুলোরও নড়াচড়া করার ক্ষমতা একেবারেই কম। এর চেয়ে আরও বড় খারাপ খবর হলো, এর চিকিৎসা করা জেনিফারের সমস্যার চাইতেও আরও অনেক কঠিন, হয়তো বলা যায় অসম্ভব। যদিও পরবর্তীতে হ্যানিংটন দম্পতি আইভিএফ পদ্ধতিতে দুটি সন্তানের বাবা-মা হয়েছেন।

পুরুষের শুক্রাণুর মান কমে যাওয়ার কারণ খুঁজতে গিয়ে বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যায় যে, দূষণসহ বিভিন্ন কারণ পুরুষের উর্বরতার ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষ করে বিরূপ প্রতিক্রিয়া হয় বীর্যে শুক্রাণুর মানের ওপরই। গবেষণায় বলা হয়েছে যে, দিন দিন এই সমস্যা আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে।

এই বিষয়ে জেরুজালেমের হিব্রু বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হাজাই লেভিন বলেছেন, এই বিষয়টি (শুক্রাণুর সংখ্যা কমতে থাকা) হচ্ছে পুরুষদের নিম্নগামী স্বাস্থ্যের একটা প্রধান চিহ্ন, হয়তো গোটা মানবজাতির ক্ষেত্রেই এটি ঘটছে। হয়তো আমরা একটা জনস্বাস্থ্য সংকটের সম্মুখীন হয়েছি, যা ঠেকানো সম্ভব কিনা তা আমরা এখনও সেইভাবে জানি না।

যুক্তরাজ্যের নটিংহ্যাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রেবেকা ব্ল্যানচার্ড মানুষের ঘরের মধ্যে ব্যবহৃত হয় এমন কিছু রাসায়নিক পদার্থ পুরুষের প্রজনন স্বাস্থ্যের ওপর কী প্রভাব ফেলছে তা নিয়ে গবেষণাও করছিলেন। এর প্রভাব বুঝার জন্য তিনি কাজে লাগিয়েছিলেন গৃহপালিত কুকুরকে। কারণ হলো, গৃহপালিত প্রাণী হিসেবে কুকুর একই বাড়িতে থাকছে ও একই দূষণকারী রাসায়নিক পদার্থের সংস্পর্শেও আসছে।

ওই প্রাপ্ত গবেষণায় দেখা যায়, এইসব রাসায়নিক পদার্থ হর্মোন সিস্টেমকেও বিঘ্নিত করতে পারে এবং মানুষ ও কুকুর উভয়ের ক্ষেত্রেই উর্বরতাও কমিয়ে দিতে পারে।

রেবেকা ব্ল্যানচার্ড আরও বলেন, আমরা মানুষ ও কুকুর উভয়েরই শুক্রাণুর নড়াচড়ার ক্ষমতা কমে যাওয়ার এমন তথ্য পেয়েছি। তাছাড়াও তার ডিএনএ ভেঙে যাওয়ার পরিমাণ বেড়ে যেতে দেখেছি। ডিএনএ ভেঙে যাওয়া বলতে তিনি বোঝাচ্ছেন যে, যেসব জিনগত সামগ্রী দিয়ে শুক্রাণু তৈরি তা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া কিংবা ভেঙে যাওয়া। এর ফলে গর্ভধারণের পরও নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে।

রেবেকা ব্ল্যানচার্ড বলেছেন, ডিএনএ ভেঙে যাওয়ার পরিমাণ যদি বেড়ে যায় তাহলে গর্ভধারণের প্রথম কয়েক মাসের মধ্যেই ‘মিসক্যারেজ’ কিংবা ভ্রুণ নষ্ট হয়ে যাওয়ার ঘটনাও বেড়ে যেতে পারে।

তার এই তথ্যের সঙ্গে অন্যান্য গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্যের মিলও রয়েছে। ওই গবেষণাগুলোতে দেখা যায় যে, প্লাস্টিক, সাধারণ নানা ওষুধ, খাদ্য ও বাতাসে উপস্থিত রাসায়নিক পদার্থ উর্বরতার ক্ষতি ঘটাতে সক্ষম। এগুলো শুধু পুরুষই নয়, নারী এবং শিশুদের দেহেও বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। কার্বন ও কখনই নষ্ট হয় না- এমন কিছু রাসায়নিক পদার্থের অস্তিত্ব এমনকি গর্ভস্থ শিশুর দেহেও পাওয়া যায়।

গবেষকরা মনে করেন, জলবায়ু পরিবর্তনও পুরুষের উর্বরতার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। বেশ কিছু প্রাণীর ওপর চালানো জরিপে আভাস পাওয়া গেছে যে, বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি বিশেষ করে শুক্রাণুর ওপরেও বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। দেখা গেছে যে, তাপপ্রবাহ কীটপতঙ্গ এবং মানুষের শুক্রাণুরও ক্ষতি করে।

২০২২ সালের একটি জরিপে দেখা যায়, বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে গরম পরিবেশে কিংবা উচ্চ তাপমাত্রায় কাজ করলে শুক্রাণুর মানের ওপর নেতিবাচক প্রভাবও পড়ে। তাছাড়াও নিম্নমানের খাদ্য, মানসিক চাপ এবং অ্যালকোহলেও এইসব সমস্যা হতে পারে। বর্তমানে অনেক দম্পতি অপেক্ষাকৃত বেশি বয়সেই সন্তানের পিতামাতা হচ্ছেন।

কিন্তু নারীদেরকে তাদের ‘জীবনের সবচেয়ে উর্বর সময়কাল’ কিংবা ‘বায়োলজিকাল ক্লকের’ কথা যতোটা মনে করিয়ে দেওয়া হয়, তার বিপরীতে ‘পুরুষদের উর্বরতার ক্ষেত্রে বয়স কোনো ব্যাপারই নয়’ এমনটিই আগে মনে করা হতো।

তবে সেই ধারণার বর্তমানে পরিবর্তন হচ্ছে। বেশি বয়সে পিতামাতা হবার ক্ষেত্রে শুক্রাণুর সংখ্যা ও উর্বরতা কমে যাবার সম্পর্ক দেখা গেছে। এখন বলা হচ্ছে যে, পুরুষদের অক্ষমতাকে আরও ভালোভাবে বুঝতে হবে ও এই সমস্যা নিরুপণ, প্রতিরোধ এবং চিকিৎসার ক্ষেত্রে নতুন দৃষ্টিভঙ্গিও আনা দরকার।

গবেষকদের প্রশ্ন করা হয়, শুক্রাণুর মান বৃদ্ধির জন্য তাহলে পুরুষরা ব্যক্তিগতভাবে কী কী করতে পারেন? এই বিষয়ে রেবেকা ব্ল্যানচার্ডের বক্তব্য হলো, স্বাস্থ্যসম্মত খাবার ও ব্যায়াম দিয়ে শুরু করাটায় সবথেকে ভালো, কারণ এর সঙ্গে শুক্রাণুর মান উন্নত হবার সম্পর্কও দেখা যায়। তাছাড়াও অরগ্যানিক খাবার খাওয়া ও বাইফেনল-এ বা বিপিএ-বিহীন প্লাস্টিক ব্যবহার করতে হবে। এই বিপিএর সঙ্গে নারী এবং পুরুষ উভয়েরই অনুর্বরতার সম্পর্কও রয়েছে।

করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে করণীয়

# সব সময় ঘরে থাকার চেষ্টা করি।
# জরুরি প্রয়োজনে বাইরে বের হলে নিয়মগুলো মানি, মাস্ক ব্যবহার করি।
# তিন লেয়ারের কাপড়ের মাস্ক ইচ্ছে করলে ধুয়েও ব্যবহার করতে পারি।
# বাইরে থেকে ঘরে ফেরার পর পোশাক ধুয়ে ফেলি। কিংবা না ঝেড়ে ঝুলিয়ে রাখি অন্তত চার ঘণ্টা।
# বাইরে থেকে এসেই আগে ভালো করে (অন্তত ২০ সেকেণ্ড ধরে) হাত সাবান বা লিকুইড দিয়ে ধুয়ে ফেলি।
# প্লাস্টিকের তৈরি পিপিই বা চোখ মুখ, মাথা একবার ব্যবহারের পর অবশ্যই ডিটারজেন্ট দিয়ে ভালো করে ধুয়ে শুকিয়ে ব্যবহার করা যেতে পারে।
# কাপড়ের তৈরি পিপিই বা বর্ণিত নিয়মে পরিষ্কার করে পরি।
# চুল সম্পূর্ণ ঢাকে এমন মাথার ক্যাপ ব্যবহার করি।
# হাঁচি কাশি যাদের রয়েছে সরকার হতে প্রচারিত সব নিয়ম মেনে চলি। এছাড়াও খাওয়ার জিনিস, তালা চাবি, সুইচ ধরা, মাউস, রিমোট কন্ট্রোল, মোবাই, ঘড়ি, কম্পিউটার ডেক্স, টিভি ইত্যাদি ধরা ও বাথরুম ব্যবহারের আগে ও পরে নির্দেশিত মতে হাত ধুয়ে নিন। যাদের হাত শুকনো থাকে তারা হাত ধোয়ার পর Moisture ব্যবহার করি। সাবান বা হ্যান্ড লিকুইড ব্যবহার করা যেতে পারে। কেনোনা শুকনো হাতের Crackle (ফাটা অংশ) এর ফাঁকে এই ভাইরাসটি থেকে যেতে পারে। অতি ক্ষারযুক্ত সাবান বা ডিটারজেন্ট ব্যবহার থেকে বিরত থাকাই ভালো।

This post was last modified on মে ১০, ২০২৩ 12:10 অপরাহ্ন

স্টাফ রিপোর্টার

Recent Posts

আবারও বিয়ের পিড়িতে বসলেন সানি লিওন

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ বলিউড অভিনেত্রী ও মডেল সানি লিওন আবারও বিয়ের পিড়িতে বসলেন।…

% দিন আগে

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আজ প্রেসিডেন্ট নির্বাচন

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ আজ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর)…

% দিন আগে

ব্র্যাক ব্যাংক এর সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর বেসিসের

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস) সদস্যদের জন্য…

% দিন আগে

৩ স্ত্রী, ২ বান্ধবী, ১০ সন্তানকে নিয়ে সংসার বেকার যুবকের!

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ ৩ স্ত্রী, ২ বান্ধবী, ১০ সন্তানকে নিয়ে সংসার বেকার যুবকের!…

% দিন আগে

অবার এক প্রাকৃতিক সৌন্দর্য

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ শুভ সকাল। মঙ্গলবার, ৫ নভেম্বর ২০২৪ খৃস্টাব্দ, ২০ কার্তিক ১৪৩১…

% দিন আগে

পিরিয়ডকালীন কী ধরনের খাবার খেলে রক্তাল্পতার ঝুঁকি এড়ানো যাবে?

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ সাধারণতভাবে দেখা যায়, বেশিরভাগ মহিলা রক্তাল্পতার ঝুঁকিতেই ভোগেন। পিরিয়ডের সময়…

% দিন আগে