এ যেনো এক অন্য পাওয়া! পনের ঘণ্টা পর মায়ের কোলে মাইশা

ঢাকা টাইমস্‌ রিপোর্ট ॥ মানুষ অনেক কিছুই পাই। কিন্তু রাজধানীর মাইশা নামের এই শিশুটিকে পাওয়া যেনো এক অন্য পাওয়া। ডাকাতি করার পর ছোট্ট শিশুটিকে ডাকাতরা জিম্মি হিসেবে নিয়ে যায় আরও টাকার আশায়। কিন্তু ছোট এই শিশুটিকে নিয়ে ডাকাতরা বেশ সমস্যায় পড়ে। বাধ্য হয়ে তাকে ফেরত দিতে উদ্যোগ নেয়। থানা-পুলিশ হয়ে শেষ পর্যন্ত মায়ের কোলে ফিরে আসে ছোট্ট শিশু মাইশা।

‘আমার বুকের ধন আমার বুকে ফিরে এসেছে। স্বস্তিতে আর আনন্দে আমার বুক ভরে গেছে। সন্তান ফিরে পাওয়ার মতো আনন্দ পৃথিবীতে আর কিছু হয় না।’ টানা ১৫ ঘণ্টা পর অপহূত আট মাসের শিশু মোবাশ্বিরা আলম মায়েশাকে কোলে নিয়ে আদর করতে করতে এসব কথা বলেন মা খালেদা বেগম। ২২ এপ্রিল দুপুরে সন্তানকে ফিরে পেয়ে খিলগাঁও থানায় আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন বাবা শাহ আলম ও মা খালেদা বেগম। মায়ের বুকে আশ্রয় পেয়ে ফুটফুটে শিশুটিও হাত-পা নেড়ে তার আনন্দ প্রকাশ করতে থাকে। শনিবার ২১ এপ্রিল রাত ৮টায় রাজধানীর খিলগাঁওয়ের একটি বাসায় ডাকাতি করে ফুটফুটে শিশুটিকে ডাকাত দল মুক্তিপণের দাবিতে অপহরণ করে নিয়ে যায়। রোববার ২২ এপ্রিল দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে মিরপুর দক্ষিণ পাইকপাড়া থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করে পুলিশ। ডাকাত দলের কাউকে গ্রেফতার করা যায়নি। এ ব্যাপারে মতিঝিল বিভাগের পুলিশের উপকমিশনার আনোয়ার হোসেন বলেন, শিশুটিকে জীবিত এবং সুস্থ উদ্ধার করাই আমাদের মূল লক্ষ্য ছিল। অপহরণকারীরা শিশুটিকে দক্ষিণ পাইকপাড়ায় রাস্তার ওপর রেখে যায়। সেখান থেকে তাকে উদ্ধার করা হয়েছে। অপরাধীদের শনাক্ত করা গেছে। খুব শিগগির তাদের গ্রেফতার করা সম্ভব হবে বলে তিনি আশাবাদী।

যেভাবে পাওয়া যায় শিশুটিকে

খিলগাঁও থানার ওসি সিরাজুল ইসলাম শেখ জানান, মিরপুর দক্ষিণ পাইকপাড়ার ২৭৬/ক/১ নম্বর বাড়ির পাশে রাস্তার ওপর শিশু মায়েশাকে রেখে যায় অপহরণকারীরা। তার পাশে একটি গামছা, ফিডার ও একটি সাদা গেঞ্জিও রেখে দেয়। গেঞ্জিতে কালো মার্কার দিয়ে লেখা ছিল- ‘দয়া করে বাচ্চাটিকে খিলগাঁও থানায় পৌঁছে দেবেন।’ শিশুটির বাবার মোবাইল নম্বরও লেখা ছিল ওই গেঞ্জিতে। ওই বাড়ির নিচতলার মেসের গৃহকর্মী ফজিলা খাতুন শিশু মাইশাকে রাস্তা থেকে উদ্ধার করে। পরে স্থানীয় লোকজন পুলিশকে খবর দেয়। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে শিশু মাইশা ও গৃহকর্মী ফজিলাকে খিলগাঁও থানায় নিয়ে আসে। ফজিলা খাতুন থানায় সাংবাদিকদের জানায়, সে দুপুর ১২টার দিকে ২৭৬/ক/১ নম্বর বাড়ির নিচতলার মেসে রান্না করতে যায়। বাসায় ঢোকার পর সে বাইরে বাচ্চার কান্না শুনতে পায়। এ সময় ওই মেসের একজন ফজিলাকে বলেন, বাইরে কোন বাচ্চা কাঁদছে দেখে আসেন। ফজিলা বাইরে বেরিয়ে দেখে, বাসার গেটের পাশে রাস্তায় শিশুটি কাঁদছে। তার পাশে গামছা, ফিডার ও একটি সাদা গেঞ্জি পড়েছিল। সে শিশুটি কোলে তুলে নিয়ে স্থানীয় লোকজনকে বিষয়টি জানায়। ২৭৬/২ নম্বর বাড়ির চতুর্থ তলার বাসিন্দা আজাহারুল ইসলাম বলেন, প্রথমে মিরপুর থানায় ফোন করে শিশুটির কথা জানাই। এরপর গেঞ্জিতে লেখা মোবাইল নম্বরে ফোন করে বিষয়টি জানানো হয়। ফজিলা খাতুন ২৭৬/২ নম্বর ভবনের তৃতীয় তলার সিদ্দিকুর রহমানের কাছে শিশুটিকে নিয়ে যায়। সিদ্দিকুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, সকালে পত্রিকা পড়ে খিলগাঁওয়ে ডাকাতি ও শিশু অপহরণের কথা আগে থেকেই জেনেছি। ভাবলাম তাহলে এ শিশুটিই হয়তো ওই ঘটনার শিকার। ফজিলা শিশুটি নিয়ে ভয় পাচ্ছিল। তাকে অভয় দিয়ে বলা হয়, পুলিশ ও শিশুটির বাবাকে খবর দেয়া হয়েছে। খিলগাঁও থানার ওসি সিরাজুল ইসলাম শেখ জানান, খবর পেয়ে সাড়ে ১২টার দিকে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ ও খিলগাঁও থান পুলিশ শিশুটিকে সেখান থেকে উদ্ধার করে। সেখান থেকে তাকে মিন্টো রোডে গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে নেয়া হয়। বেলা ১টা ৪০ মিনিটে মায়েশাকে থানায় আনা হয়। এ সময় শিশুটিকে দেখতে জনতা ভিড় জমায়। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ফজিলা খাতুনকে থানায় নেয়া হয়। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে ছেড়ে দেয়া হয়।

বেলা ২টার দিকে পুলিশের উপকমিশনার আনোয়ার হোসেন মায়েশাকে তার মা ও বাবার কাছে হস্তান্তর করেন। এ সময় থানায় উপস্থিত জনতা আনন্দে হাততালি দিয়ে ওঠে। মায়েশার মা খালেদা বেগম আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন। সন্তানকে বুকে জড়িয়ে আদর করতে থাকেন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আমার বুকের ধন আমি ফিরে পেলাম। কি আনন্দ হচ্ছে তা বোঝাতে পারব না। বাবা শাহ আলম পুলিশ ও সাংবাদিকদের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, ঘটনার পর থেকেই পুলিশ ও গোয়েন্দা পুলিশ অভিযান অব্যাহত রেখেছিল। সাংবাদিকরাও টেলিভিশন ও পত্রিকায় খবর প্রকাশ করেন। রাতে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত থানায় কোন মামলা হয়নি।

ঘটনার সঙ্গে জড়িত কাউকে শনাক্ত করা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে উপকমিশনার আনোয়ার হোসেন বলেন, শনাক্ত হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে ৫-৬ জন অপরাধী জড়িত। তবে গ্রেফতারের আগে এর বেশি কিছু বলা যাবে না। মামলা বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, শিশুটির পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা করা না হলে পুলিশ বাদী হয়ে ডাকাতি ও অপহরণের মামলা করবে।

খিলগাঁওয়ের সি ব্লকের ২২৭ নম্বর বাড়ির চতুর্থ তলায় বসবাস করেন অগ্রণী ব্যাংকের শ্যামলী শাখার কর্মকর্তা মোঃ শাহ আলম। ওই বাসায় তার বোনের পরিবারও থাকে। শাহ আলমের বড় বোন শামসুন্নাহার বলেন, রাত আটটার দিকে বাইরে যখন ঝড়বৃষ্টি হচ্ছিল, তখন বাইরে থেকে দরজায় করাঘাতের শব্দ শুনে দরজা খুলে দেয়া হয়। ৫-৬ জন অজ্ঞাত লোক ভেতরে ঢুকে বলে তাদের পুলিশে তাড়া করেছে। একটু আশ্রয় চায় তারা। এ সময় শাহ আলম বাসায় ছিলেন না। এরপর পরিবারের সবাইকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে হাত-পা বেঁধে ফেলে। আলমারি ও ওয়াড্রব খুলে ২০ ভরি স্বর্ণালংকার ও দেড় লাখ টাকা এবং দুটি মোবাইল ফোন লুটে নেয়। এরপর তারা শিশু মায়েশাকে নিয়ে দ্রুত বেরিয়ে যায়। দুটি মোবাইল ফোন নম্বর দিয়ে বলে যায়, এ নম্বরে যোগাযোগ করে ২০ লাখ টাকা দিলে শিশুটিকে ফেরত দেয়া হবে।

Related Post

This post was last modified on এপ্রিল ২৩, ২০১২ 2:41 অপরাহ্ন

স্টাফ রিপোর্টার

Recent Posts

এক ব্যতিক্রমি সিনেমা ‘লাপাতা লেডিস’

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ পরিচালক কিরণ রাওয়ের আলোচিত সিনেমা ‘লাপাতা লেডিস’ অবশেষে মুক্তি পেলো…

% দিন আগে

এপ্রিল মাসে ভারতে রেকর্ড গরমে ৯ জনের মৃত্যু

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ মার্চ মাস থেকেই গরমের আভাস দেওয়া হয়েছিলো ভারতে। তবে এপ্রিলের…

% দিন আগে

এবার গাজর দিয়ে তৈরি হলো বাঁশি!

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ আমরা এতোদিন দেখে আসছি বাঁশ দিয়ে বাঁশি বানানো হয়। আর…

% দিন আগে

কুষ্টিয়ার ঐতিহাসিক ঝাউদিয়া শাহী মসজিদ

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ শুভ সকাল। শুক্রবার, ৩ মে ২০২৪ খৃস্টাব্দ, ২০ বৈশাখ ১৪৩১…

% দিন আগে

ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা কমাতে ওষুধের পাশাপাশি জীবন যাত্রায় কিছু বদল আনতে হবে

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ রক্তে ইউরিক অ্যাসিড বেশি থাকলে খাওয়া-দাওয়ায় রাশ টানতে হবে। তবে…

% দিন আগে

প্রবৃদ্ধিশীল ফ্রিল্যান্সিং খাতে গুরুত্বারোপ: কুমিল্লায় ফ্রিল্যান্সার মিটআপ

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ ফ্রিল্যান্সিং খাতের প্রবৃদ্ধির ওপর আলোকপাত করে সম্প্রতি ফ্রিল্যান্সার নিয়ে এক…

% দিন আগে