শিক্ষকদের সম্মান করার বিষয়টি কী আমাদের সমাজ থেকে উঠে যাচ্ছে?

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ আমরা সবাই জানি শিক্ষক সমাজ দীর্ঘদিন ধরে জ্ঞান, নৈতিকতা ও মানবিকতার আলো ছড়ানোর এক অনন্য মাধ্যম হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে।

“গুরুজনের সম্মান” ছিল আমাদের সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য একটি অংশ। একসময় ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ককে বাবা-মা ও সন্তানের সম্পর্কের মতো গুরুত্ব দেওয়া হতো। কিন্তু সময়ের পরিবর্তন ও সমাজে নানা চ্যালেঞ্জের কারণে প্রশ্ন উঠছে—শিক্ষকদের প্রতি সেই প্রাপ্য সম্মান কি ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে?

দেখা যায়, সমাজে মূল্যবোধের পরিবর্তন শিক্ষকদের মর্যাদাকে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত করছে। একসময় শিক্ষককে শুধু পাঠদাতা নয়, বরং নৈতিকতার দিশারি হিসেবে দেখা হতো। বর্তমানে তথ্যপ্রযুক্তির প্রসার, ভোগবাদী মানসিকতা এবং দ্রুত সাফল্যের প্রতিযোগিতায় অনেক শিক্ষার্থী ও অভিভাবক শিক্ষকদের ভূমিকার মূল্যায়ন যথাযথভাবে করছেন না। এর ফলে শিক্ষক-শিক্ষার্থী সম্পর্কের উষ্ণতা অনেকাংশে ক্ষীণ হয়ে যাচ্ছে।

Related Post

অর্থনৈতিক দিক থেকেও শিক্ষকদের সম্মান কমে যাওয়ার একটি বাস্তবতা রয়েছে। বাংলাদেশে এখনও বহু শিক্ষক ন্যায্য সম্মানী থেকে বঞ্চিত। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকেরা প্রায়ই কম বেতন, অনিশ্চিত চাকরি ও প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা না পেয়ে কষ্টের জীবনযাপন করেন। সমাজ যখন দেখে শিক্ষকরা নিজেই আর্থিক নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন, তখন তাঁদের সামাজিক মর্যাদাও প্রশ্নবিদ্ধ হয়। ফলে সম্মানের জায়গাটি দুর্বল হয়ে পড়ে।

এছাড়াও, বর্তমান সময়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শিক্ষকদের নিয়ে অনাকাঙ্ক্ষিত সমালোচনা, অপমান বা আক্রমণাত্মক আচরণও বৃদ্ধি পাচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, ছোটখাটো বিষয়েও শিক্ষককে হেয়প্রতিপন্ন করা হয়। আবার অভিভাবকেরা অনেক সময় সন্তানের ভুল আচরণকে প্রশ্রয় দিয়ে শিক্ষককে দোষারোপ করেন। এতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে শিক্ষকের প্রতি শ্রদ্ধা কমে যায়।

তবে কিছু ইতিবাচক দিকও রয়েছে। এখনো দেশের অনেক জায়গায় শিক্ষককে সর্বোচ্চ সম্মান দেওয়া হয়। বিশেষ করে গ্রামীণ সমাজে শিক্ষকেরা সামাজিক নেতৃত্ব দেন এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। সরকারও শিক্ষকদের মর্যাদা রক্ষায় নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে- যেমন বেতন কাঠামোর উন্নয়ন, প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা ও ডিজিটাল সুযোগসুবিধা প্রদান।

সম্মান হারানোর এই প্রবণতা রোধ করতে হলে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। পরিবার থেকে সন্তানদের শেখাতে হবে যে শিক্ষক শুধু পাঠ্যপুস্তক নয়, জীবনের বাস্তব পাঠও দেন। স্কুল-কলেজে নৈতিক শিক্ষা জোরদার করতে হবে। পাশাপাশি শিক্ষকদেরও নিজেদের পেশাগত সততা, নিষ্ঠা ও মানবিকতা বজায় রাখতে হবে যাতে শিক্ষার্থীরা অনুপ্রাণিত হয়।

তাই বলা যায়, শিক্ষকদের সম্মান হারানোর প্রবণতা বাংলাদেশের সমাজে আংশিকভাবে দেখা দিলেও এটি পুরোপুরি উঠে যায়নি। বরং সচেতন উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে শিক্ষককে আবারও সর্বোচ্চ মর্যাদার স্থানে প্রতিষ্ঠিত করা সম্ভব। কারণ জাতি গঠনের মূল কারিগর শিক্ষক, তাঁদের সম্মান না থাকলে শিক্ষা এবং সমাজ উন্নয়ন কোনোটিই টেকসই হবে না।

>>>>>>>>>>>>>>

ডেঙ্গু প্রতিরোধ করবেন যেভাবে

মশা বাহিত একপ্রকার ভাইরাস জ্বর হলো ডেঙ্গু। এই জ্বর অন্যান্য ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়াজনিত জ্বর থেকে ভিন্ন। অবশ্য এই জ্বর কোনোভাবেই ছোঁয়াচে নয়। এই ভাইরাস জ্বর এককভাবে বা অন্যান্য ভাইরাস (চিকুনগুনিয়া, ইয়েলো ফিভার, বার্মা ফরেস্ট, ফ্লু, রেসপাইরেটরি সিনসাইটিয়াল) এবং ব্যাকটেরিয়া (নিউমোক্কাস)-এর সঙ্গেও হতে পারে।

লক্ষণ ও জ্বরের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে ডেঙ্গুজ্বরকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে-

১. সাধারণ ডেঙ্গুজ্বর

২. রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বর।

সাধারণ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে চোখে পড়ে মূলত নিচের এই লক্ষণগুলো-

১. হঠাৎ করে তীব্র জ্বর ও তা ২ থেকে ৭ দিন স্থায়ী হওয়া।

২. তীব্র মাথাব্যথা হওয়া।

৩. চোখের পেছনের অংশে ব্যথা হওয়া।

৪. জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে সারা শরীরে লালচে ফুসকুড়ি চোখে পড়া।

৫. সম্পূর্ণ শরীরে তীব্র ব্যথা ও সেইসঙ্গে কোমরে ব্যথা।

৬. বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।

৭. ত্বকে র‌্যাশ বা লাল দানা দানা দেখা দেওয়া।

রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে :

১. ২ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তীব্র জ্বর সঙ্গে নাক, মুখ বা বমির সঙ্গে রক্ত যাওয়া।

২. জ্বরের পাশাপাশি বুকে বা পেটে পানি জমে যাওয়া।

এইসব লক্ষণের যে কোনো একটি লক্ষণ দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।

অপরদিকে

জ্বরের প্রথম ৩ দিন বাড়িতে অপেক্ষা করুন। অপরদিকে সারা শরীর পানি দিয়ে স্পঞ্জ করুন কিছুক্ষণ পরপর। এতে করে জ্বরের মাত্রা কমে আসবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান ও বিশ্রাম নিতে হবে। এরপরেও জ্বর না কমলে বা কিছু সময় পরপর বাড়তে থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।

ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় বিষয়:

১. বাড়ির আশপাশ যতোটা সম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে চেষ্টা করুন।

২. ঘরের ভেতরে থাকা ফুলের টব বা ভাঙা প্লাস্টিকের বোতল, ডাবের খোসা, টায়ার অথবা পলিথিন থাকলে তা দ্রুত পরিষ্কার করে ফেলুন ও ফুলের টব থেকে জমে থাকা পানি নিষ্কাশন করুন।

৩. মশা নিধনের জন্য সপ্তাহে অন্তত ৩ বার স্প্রে বা ফগিং করুন।

৪. বাড়ির বাইরে যাওয়ার সময় মশা নিধনে ব্যবহৃত ক্রিম সঙ্গে রাখতে পারেন।

৫. সন্ধ্যার পর বাড়ির ছোট থেকে বড় সদস্যরা মশারি ব্যবহার করুন।

৬. যেখানে-সেখানে জমে থাকা বৃষ্টির পানি পরিষ্কার করে ফেলুন, কারণ এতে এডিস মশা ডিম পেড়ে থাকে এই সময়।

৭. অপরদিকে মশার প্রকোপ থেকে বাঁচতে মশারির সঙ্গে সঙ্গে ম্যাট ব্যবহার করতে পারেন।

৮. এডিস মশা যেহেতু দিনের বেলা কামড়ায় তাই দিনের বেলায় ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি টানিয়ে ঘুমানোর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সূত্র: https://dmpnews.org

This post was last modified on সেপ্টেম্বর ২৩, ২০২৫ 12:29 অপরাহ্ন

স্টাফ রিপোর্টার

View Comments

Recent Posts

প্রাপ্তবয়স্কদের সিনেমাটি নিয়ে পায়েল যা বললেন

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ ১৪ নভেম্বর মুক্তি পায় কলকাতার ‘দ্য একাডেমি অব ফাইন আর্টস’…

% দিন আগে

“ভারতীয় নাগরিকদের বাংলাদেশে ঠেলে পাঠানো হচ্ছে’: মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ ভারতীয় নাগরিকদের বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়ার কঠোর নিন্দা জানিয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী…

% দিন আগে

তুরস্কে বিড়াল পেল নাগরিকত্বের স্বীকৃতি!

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ তুরস্কের রাজধানী আঙ্কারায় “তোমক” নামে এক জনপ্রিয় বিড়ালকে শহরের ‘সম্মানিত…

% দিন আগে

এক অসাধারণ প্রাকৃতিক দৃশ্য

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ শুভ সকাল। বুধবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২৫ খৃস্টাব্দ, ২৫ অগ্রাহায়ণ ১৪৩২…

% দিন আগে

শসার পুষ্টিগুণ জেনে নিন

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ শসা আমাদের দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় অন্যতম পরিচিত এবং সহজলভ্য একটি সবজি।…

% দিন আগে

অ্যাপল ও গুগল সাইবার হামলার বিষয়ে ব্যবহারকারীদের সতর্ক করেছে

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ অ্যাপল ও গুগল বিশ্বজুড়ে তাদের ব্যবহারকারীদের আবারও নতুন করে সাইবার…

% দিন আগে