ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ পরমাণু শক্তির তেজস্ক্রিয়তার বিপর্যয় এড়াতে জাপানের ৫০তম ও সর্বশেষ সক্রিয় বিদ্যুৎচুল্লিটিও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। ফলে চার দশক ধরে পরমাণু বিদ্যুৎ ব্যবহারকারী দেশটি পরমাণু বিদ্যুৎ থেকে গুটিয়ে নিল নিজেদের।
উল্লেখ্য, এশিয়ার এই শিল্পোন্নত দেশটি ৭০ দশকে পরমাণু বিদ্যুৎ ব্যবহার করা শুরু করে। ইতিমধ্যেই বিশ্বের তৃতীয় শক্তিশালী নিউক্লিয়ার পাওয়ারসমৃদ্ধ দেশ হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করে। গত বছরও জাপান তার মোট উৎপাদিত বিদ্যুতের ৩০ শতাংশ জোগান দিয়েছে পরমাণু শক্তি থেকে। আজ সেই জাপান পরমাণু বিদ্যুৎ উৎপাদন থেকে নিজেদের গুটিয়ে নিল। এর পেছনের কারণটি মূলত ২০১১ সালের মার্চে ৮.৯ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প ও সুনামির আঘাতে ফুকুশিমা পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির মারাত্মক ক্ষতি এবং এর তেজস্ক্রিয়তা নিয়ে এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের উদ্বেগ। ওই দুর্ঘটনার পর জাপানের সাধারণ মানুষের মধ্যেও পরমাণু বিদ্যুৎ নিয়ে এক ধরনের ভীতি সঞ্চার হয়েছে। ফলে এর বিরুদ্ধে সাধারণ জনগণের আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে গোটা দেশে। জনগণের আন্দোলনের প্রতি শ্রদ্ধা দেখাতেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে পরমাণুু বোমার আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত দেশটি পরমাণু বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলো একে একে বন্ধ করতে শুরু করে। স্থানীয় হোক্কাইদা পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি দেশটির ৫০তম ও সর্বশেষ পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি ৫ মে মধ্যরাতে মাত্র ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বন্ধ করে দেয়। হোক্কাইদোর এ কেন্দ্রটি বন্ধের মধ্য দিয়ে জাপানের পুরো ৫০টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র একে একে বন্ধ হয়ে গেল। খবর দৈনিক যুগান্তরের।
পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র মুক্ত হওয়ার গৌরবে জাপানের বিভিন্ন শহরে হাজারো মানুষকে আনন্দ প্রকাশ করতে দেখা গেছে। ৫০টি নিউক্লিয়ার রিয়েক্টর থেকে জাপানের মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন ছিল ৪৪৩৯৬ মেগাওয়াট, যা মোট বিদ্যুৎ চাহিদার ৩১ শতাংশ।
জাপানের বিদ্যুৎ উৎপাদনের মাস্টার প্লানে ২০১২ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে আরও অন্তত ১৬-১৭টি পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা ছিল। পরিকল্পনা মোতাবেক এসব কেন্দ্র থেকে বিদ্যুতের পরিমাণ ধরা হয়েছিল ২০,০০০ মেগাওয়াট। এ অতিরিক্ত বিদ্যুৎ যদি পারমাণবিক কেন্দ্র থেকে যোগ হতো, তাহলে জাপানের মোট বিদ্যুতের ৪১ থেকে ৪৫ শতাংশ চাহিদা পূরণ হতো নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্ট থেকে। কিন্তু প্রাকৃতিক দুর্যোগপূর্ণ দেশটি সুনামির আঘাতে ফুকুশিমার নিউক্লিয়ার রিয়েক্টরগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ফলে এ সেক্টরের পুরো বিনিয়োগ স্থবির হয়ে পড়েছে। তেজস্ক্রিয়তার ভয়াবহতার আশংকা থেকে বিশাল বিনিয়োগের পারমাণবিক বিদ্যুৎচুল্লি বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয় জাপান। অথচ দেশটির প্রাকৃতিক সম্পদ বলতে তেমন কিছু নেই। না আছে পর্যাপ্ত প্রাকৃতিক গ্যাস, না আছে প্রাকৃতিক তেল ও অন্যান্য খনিজসম্পদ। জাপান পুরোমাত্রায় আমদানিনির্ভর একটি দেশ। বিশ্ব অর্থনীতিতে জাপানের অবস্থান পাহাড়সমান সুদৃঢ়। জাপানের অর্থনৈতিক মাত্রায় মোট বিদ্যুতের চাহিদা ৪৭.৬ গিগাওয়াট। পারমাণবিক সেক্টর থেকে মোট চাহিদার বিপরীতে বর্তমানে ৩০ শতাংশ, যা ২০১৭ সালে ৪১ শতাংশে ও ২০৩০ সালে ৫০ শতাংশে উন্নীত করার প্রয়াস ও পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছিল। ২০০৮ সালে গৃহীত পরিকল্পনানুযায়ী জাপান ২০৫০ সালের মধ্যে ৫০ শতাংশ এবং ২১০০ সালের মধ্যে ৯০ শতাংশ কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে। আণবিক শক্তির ব্যবহার বৃদ্ধির ছক অনুযায়ী পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ৬০ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়। ফসিল ফুয়েলের ব্যবহার ৩০ শতাংশে হ্রাস করার কর্মপন্থা স্থির করা হয়। উল্লেখ্য, জাপানে বর্তমান ফসিল ফুয়েলের ব্যবহার মোট চাহিদার বিপরীতে প্রায় ৭০ শতাংশ। অক্টোবর ২০১১ ফুকুশিমা দুর্ঘটনার পর জাপান সরকার পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র ব্যবহার ও ভবিষ্যৎ নিয়ে শ্বেতপত্র প্রকাশ করে। তাতে বলা হয় জাপান দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে যে, আগামী কয়েক মাসের মধ্যে মধ্যমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা মোতাবেক পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র ব্যবহার পুরোপুরি কমিয়ে আনা হবে। ২০১২ সালে গৃহীত নতুন জ্বালানিতে নিউক্লিয়ার রিয়েক্টর থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনকে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। আর সেই কমিটমেন্ট থেকে জাপান সর্বশেষ হোক্কাইদো পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রটিও বন্ধ করে দিয়েছে বলে প্রতীয়মান। ২০১১ ফুকুশিমা দুর্ঘটনার পর জাপানের ৭০ শতাংশেরও বেশি মানুষ নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্ট ব্যবহারের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়।
অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ও কাজাখস্তান থেকে আমদানিকৃত ইউরেনিয়াম দিয়েই জাপানের নিউক্লিয়ার প্লান্টগুলো সচল ছিল। জাপানে বার্ষিক ইউরেনিয়ামের মোট চাহিদা ১৯৮০০ মেট্রিক টন। এর মধ্যে এক-তৃতীয়াংশই আমদানি করা হতো অস্ট্রেলিয়া থেকে। জাপানি বিনিয়োগে অস্ট্রেলিয়াতে তিনটি ইউরেনিয়াম মাইন বা খনি রয়েছে। ২০০৯ সালে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ইউরেনিয়াম ক্রয় করে জাপান। বিশ্বের মোট উৎপাদিত ইউরেনিয়ামের ৩৫ শতাংশই জাপানে ব্যবহার হতো বলে জানিয়েছে আইইএ। যখনই জাপান ধীরে ধীরে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ইউরেনিয়াম ব্যবহারকারী দেশে পরিণত হচ্ছিল, ঠিক সেই সময় প্রবল ভূমিকম্পে সমুদ্রসৃষ্ট সুনামির আঘাতের কারণে জাপান ইউরেনিয়াম ব্যবহার থেকে নিজেদের গুটিয়ে নিল। ফ্রান্স ও ইউকেতে পুনঃব্যবহারের লক্ষ্যে ৬৪০০ টন ব্যবহূত ইউরেনিয়ামের মজুদ রেখেছে জাপান। প্রযুক্তির আপগ্রেডেশনের জন্য ২০০৭ সালে জাপান ও রাশিয়ার এনার্জিপ্রোমের সঙ্গে প্রায় ১১ বিলিয়ন ডলারের পারস্পরিক সমঝোতা চুক্তিও স্বাক্ষরিত হয়। জাপান আণবিক শক্তি সংস্থার দাবি অনুযায়ী, পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় ইউরেনিয়াম সংগ্রহ ও সংরক্ষণের জন্য প্রায় ৫৫ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ রয়েছে জাপানের। এখন ইউরেনিয়াম ব্যবহার থেকে বের হয়ে আসার ফলে জাপানের বিদ্যুতের চিত্র হতাশাজনক পর্যায়ে রয়েছে। তাছাড়া মাল্টিবিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগও রয়েছে হুমকির মুখে।
এখন সকলের প্রশ্ন, সত্যিই কি জাপান আণবিক শক্তি ব্যবহার থেকে নিজেদের গুটিয়ে নেবে?, নাকি আবারও পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র ব্যবহারে ফিরে আসবে! এর উত্তর হয়তো সময়ই বলে দেবে।
This post was last modified on মে ৩০, ২০১২ 1:59 অপরাহ্ন
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ বাজারে এলো বাংলা ভাষার স্মার্টওয়াচ। দেশীয় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান আজওয়া টেকের…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ বলিউডের বহুল আলোচিত সিনেমা ‘পিংক’ এর নির্মাতা অনিরুদ্ধ রায় চৌধুরীর…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ জিম্মি চুক্তিতে রাজি হতে ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসকে মাত্র সাত…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ এবারের ছবিটি একটু ভিন্ন ধরনের এই ছবির ভিতরে লুকিয়ে চুরিয়ে…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ শুভ সকাল। শনিবার, ৪ মে ২০২৪ খৃস্টাব্দ, ২১ বৈশাখ ১৪৩১…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ এই গরমে রোদে বেরোলে মাইগ্রেনের সমস্যায় ভোগেন অনেকেই। এক বার…
View Comments
Wow ! terrific job! i would like to read your post oftentimes.Its make me to grasp more information. Thank You !
I’ve read through a few good stuff right here. Most certainly worth bookmarking for revisiting. I surprise simply how much concentration you place to make like an amazing informative web page.
Thanks a bunch for sharing this with all folks you really know what you're talking about! Bookmarked. Please also discuss with my site =). We will have a hyperlink change contract between us!
I've delved into this piece and if I may just I want to suggest to you few interesting things or tips. Maybe you and I could discuss them.
Wasn't it determined at the last that it was suicide and if so maybe the talk by Mr. Groves should be adjusted.
Great write-up, I¡¦m normal visitor of one¡¦s blog, maintain up the excellent operate, and It's going to be a regular visitor for a lengthy time.
First, reporting raceas opposed to culture (I don't know how you'd get any meaningful estimate from "culture")is required by the Voting Rights Act to prevent redistricting efforts based on race.
Second, "scientifically" speaking, race doesn't really exist in concrete terms. Most African Americans have some European ancestors. Most of us are multiracial, even if we don't know it. But race doesn't stop being a real cultural thing.
The Census Bureau spends an enormous amount of time and resources figuring out what race is, why it's important, and how to ask it. But there's no right way to ask it, and people get pissed off no matter what question is on the form. Race in America is a pretty sensitive issue, obviously, and people feel very strongly about it.
Even if we try to ignore it (heck, *especially* if we try to ignore it), race doesn't go away.
I always was interested in this topic and stock still am, thankyou for posting .
Excellent post. I will be continuously checking this site and I'm impressed! Very helpful information specifically the remaining phase
We are a bunch of volunteers and starting a brand new scheme in our community. Your website provided us with valuable information to paintings on. You have performed a formidable job and our whole neighborhood might be thankful to you.