ঢাকা টাইমস্ রিপোর্ট ॥ সামপ্রতিক সময়ে দেশে অব্যাহতভাবে বেড়ে যাওয়া মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কোন ভূমিকা রাখতে পারছে না সরকার। বাংলাদেশ ব্যাংক সংকোচনমুখী মুদ্রানীতির মাধ্যমে টাকার সরবরাহ কমালেও এর সুফল পাচ্ছে না মানুষ। প্রতিদিনই কোন না কোন জিনিসের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। সমস্যায় পড়ছে সাধারণ মানুষ।
অর্থনীতিবিদদের ভাষ্য অনুযায়ী দেশ বর্তমানে মূল্যস্ফীতির মহা বিপদ সংকেতকেও ছাড়িয়ে গেছে। অতিমাত্রায় আমদানিনির্ভর হওয়ায় আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যমূল্য ওঠানামার দায়ভার উল্টো এদেশের মানুষকে বহন করতে হচ্ছে। যে কারণে দিন যতই যাচ্ছে, আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের সামঞ্জস্য করা দুস্কর হয়ে পড়েছে প্রায় সব শ্রেণীর মানুষেরই। এতে করে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে গেছে। তারা বাধ্য হচ্ছে দৈনন্দিন ব্যয়ের বাজেট থেকে প্রয়োজনীয় পণ্যকেও কাটছাঁট করতে। এ বিষয়ে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, মূল্যস্ফীতির হার সামান্য কমলেও মূল্যস্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে, ফলে সীমিত আয়ের মানুষের কষ্ট বাড়ছে। তিনি বলেন, কয়েক বছর ধরে মূল্যস্তর উঠতে উঠতে অনেক উপরে উঠে গেছে। এজন্য সরকারকে কয়েকটি পদক্ষেপ নিতে হবে। এক. মূল্যস্ফীতির হার যাতে কম থাকে তা নিশ্চিত করতে হবে। দুই. মূল্যস্তর যেন আর বাড়তে না পারে। তিন. সীমিত আয়ের মানুষের আয় বাড়াতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে হবে। এক্ষেত্রে উৎপাদনশীল খাতে বেশি নজর দিতে হবে। ড. মুস্তাফিজুর রহমান জানিয়েছেন, ৭ মাত্রার নিচের মূল্যস্ফীতিকে স্বাভাবিক এবং সহনীয় এবং ৭ মাত্রার মূল্যস্ফীতিকে অর্থনীতির জন্য সতর্ক সংকেত এবং এর উপরের মাত্রার মূল্যস্ফীতিকে অস্বাভাবিক পরিস্থিতি ও ৯ মাত্রার মূল্যস্ফীতিকে মহা সতর্ক সংকেত বলে মন্তব্য করেছেন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারের বয়স তিন বছর পেরিয়েছে। সামনের দিনগুলোতে অপেক্ষা করছে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা। অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশ দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যকে আরও অস্থির করে তুলবে। এতে বিদেশী বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত হবে। দেশীয় বিনিয়োগকারীদের টাকা বাক্সবন্দি থাকবে। শিল্প-কারখানায় উৎপাদন বন্ধ থাকলে কিংবা উৎপাদন কম হলে কর্মসংস্থান হারাবে মানুষ। মূল্যস্ফীতির জাঁতাকলে মানুষের নাভিশ্বাস উঠলেও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আশানুরূপ পদক্ষেপ না থাকায় এর উত্তাপে ক্রমাগত পুড়ছে মানুষ। নিম্নবিত্তের কোটা ছাড়িয়ে তা মধ্যবিত্তেও আঘাত হানতে শুরু করেছে। তৈরি হচ্ছে শ্রেণীবৈষম্য। ক্ষোভ বাড়ছে মানুষের। এমনকি দ্রব্যমূল্যের ক্রমবর্ধমান ঊর্ধ্বগতির কারণে জীবনযাত্রার ব্যয় মেটাতে চাকরিজীবী ও মাঝারি ব্যবসায়ীরা এখন আর আগের মতো ব্যাংকে নিয়মিত সঞ্চয় করতে পারছেন না, বরং গচ্ছিত সঞ্চয় ভাঙতে শুরু করেছেন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, আমানতকারীরা বিভিন্ন ব্যাংকে গচ্ছিত প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা তুলে নিয়েছেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেছেন, গত এক বছরে দেশে কাঙ্ক্ষিত পরিমাণ বিনিয়োগ আসেনি। এটি প্রবৃদ্ধির ওপর নেতিবাচক প্রভাব রেখেছে। ফলে লক্ষ্যমাত্রা অনুসারে প্রবৃদ্ধি অর্জন হয়নি। এছাড়াও মূল্যস্ফীতির নিম্ন আয়ের মানুষ চরম ভোগান্তিতে ছিল। আগামী বাজেটে এই দুই খাতে নজর দেয়া উচিত। জানা গেছে, দেশে নিত্যপণ্যসহ অন্যান্য পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় জীবনযাত্রার ব্যয় অস্বাভাবিক বেড়ে গেছে। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস করেছে। বাস ভাড়া বৃদ্ধি হওয়ায় যাতায়াত খরচও বহন করতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।
অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, দফায় দফায় মুদ্রার মূল্যমান কমিয়ে আনায় রিজার্ভের পরিমাণ কমে গিয়ে ব্যক্তির সঞ্চয়ের ওপরও চাপ সৃষ্টি করেছে। এটি বাজার ব্যবস্থায় একটি অস্থিতিশীল অবস্থা তৈরি করেছে। দিন যতই যাচ্ছে, আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের সঙ্গতি মেলানো দুস্কর হয়ে পড়েছে প্রায় সব শ্রেণীর মানুষেরই। এতে করে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে গেছে। মানুষ বাধ্য হচ্ছে দৈনন্দিন ব্যয়ের বাজেট থেকে প্রয়োজনীয় পণ্যকেও কাটছাঁট করতে। এতে নিম্ন আয়ের মানুষদের পুষ্টিকর খাদ্য ঘাটতি হচ্ছে। যে কারণে নানা ধরনের অপুষ্টিজনিত রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ অবস্থায় সব শ্রেণীপেশার মানুষের আয়ের ওপর প্রভাব ফেলতে সক্ষম জ্বালানির মতো স্পর্শকাতর দ্রব্যের আরেক দফা মূল্যবৃদ্ধি মানুষকে চরম আশাহতই করেনি; এটি গণরোষেরও কারণ হতে পারে বলে অনেকে মন্তব্য করেছেন।
এদিকে অর্থনীতিবিদরা একটি দেশে বিদ্যমান ৭ মাত্রার উপরের মূল্যস্ফীতিকে অস্বাভাবিক পরিস্থিতি বলে মন্তব্য করেছেন। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী দীর্ঘ তের মাস পর সিঙ্গেল ডিজিটে ফিরেছে মূল্যস্ফীতির হার। যদিও গত এক বছরের একই সময়ের তুলনায় এ হার বেড়েছে প্রায় আড়াই শতাংশ। এপ্রিলে খাদ্য ও খাদ্যবহির্ভূত দুই খাতেই মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমেছে। এপ্রিল মাসে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে মূল্যস্ফীতির হার দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৯৩ শতাংশ। অন্যদিকে গত এক বছরের একই সময়ের তুলনায় মূল্যস্ফীতি বেড়েছে ২ দশমিক ৩২ শতাংশ। গত এক বছরের (মে ২০১১-এপ্রিল ১২) মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ১০.৮৬ শতাংশ। যা আগের বছরের একই সময়ে এর হার ছিল ৮.৫৪ শতাংশ। একই সঙ্গে এপ্রিলে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে মূল্যস্ফীতির হার দাঁড়িয়েছে ৯.৯৩ শতাংশ। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত নিজেও দেশে বিদ্যমান ভয়াবহ মূল্যস্ফীতির কথা স্বীকার করেছেন। তবে তিনি আত্মপক্ষ সমর্থন করে প্রায় সব সময়ই বলে আসছেন, মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতি পরিলক্ষিত হলেও বর্তমান বিশ্ব প্রেক্ষাপটে প্রায় সব দেশেই মূল্যস্ফীতি সক্রিয় রয়েছে। বাংলাদেশের বিদ্যমান মূল্যস্ফীতিকে তিনি বিশ্বের অনেক দেশ তো বটেই; দক্ষিণ এশিয়ারও অনেক দেশের তুলনায় কম বলে দাবি করেছেন। তিনি আরও দাবি করেছেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এক-দুই মাসে সম্ভব নয়। এটি একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) পরিসংখ্যানের উদ্ধৃতি দিয়ে দৈনিক যুগান্তর বলেছে, গত এক বছরে মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে প্রায় ২৩ শতাংশ। নিত্যপণের দাম বাড়ার ফলে মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয়ও বেড়ে গেছে। ইতিমধ্যে অনেকের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে নিত্যপণ্যের বাজার। বাজারে অধিকাংশ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম চড়া থাকায় দেশের গরিব ও খেটে খাওয়া মানুষের সঞ্চয় ফুরিয়ে ভেঙে খাওয়া শুরু করেছে। সীমিত আয়ের মানুষও কেনাকাটা কমিয়ে দিয়েছেন। পণ্যমূল্য হ্রাস না পাওয়ায় অনেকের অনাহার ও অর্ধাহারে দিন পার করতে হচ্ছে। শুধু তাই নয়, প্রয়োজনের তুলনায় ক্রয়ক্ষমতা কমে যাওয়ায় বাড়ছে ক্ষুধার্থ মানুষের সংখ্যা। পুষ্টিহীনতাসহ আরও নানা সমস্যায় জর্জরিত হচ্ছে মানুষ। এ অবস্থায় স্বল্প আয়ের মানুষও ক্রমান্বয়ে শংকিত হয়ে উঠছে। ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে গত এক বছরে ৩৪টিরও বেশি পণ্যের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। মূল্যস্ফীতির জাঁতাকলে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে যাওয়ায় নাভিশ্বাস উঠলেও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আশানুরূপ পদক্ষেপ না থাকায় এর উত্তাপে ক্রমাগত পুড়ছে মানুষ। নিম্নবিত্তের কোটা ছাড়িয়ে তা মধ্যবিত্তেও আঘাত হানতে শুরু করেছে। তৈরি হচ্ছে শ্রেণীবৈষম্য। ক্ষোভ বাড়ছে সব পেশাজীবী মানুষের। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় সরকারকে দুটো চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হচ্ছে। কারণ একদিকে বাড়ছে মূল্যস্ফীতি, অপরদিকে কমে যাচ্ছে জিডিপির প্রবৃদ্ধি। তিনি এর সমাধানে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও সরকারের বিভিন্নি সংস্থার মধ্যে সমন্বয় জরুরি বলে মত দেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জিনিসপত্রের দাম ঊর্ধ্বমুখী হওয়ায় সীমিত আয়ের অনেকে প্রয়োজনীয় পণ্য তালিকা থেকে কিছু কিছু পণ্য কেনা বাদ দিচ্ছেন। ইতিমধ্যে অনেকের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে বাজার। ক্রয়ক্ষমতা কমে যাওয়ায় বাড়ছে ক্ষুধার্ত মানুষের সংখ্যা। এ অবস্থায় স্বল্প আয়ের মানুষও ক্রমান্বয়ে শংকিত হয়ে পড়ছে। ক্যাবের তথ্য মতে, ২০১১ সালের বছরজুড়ে নিত্যপণ্যসহ সব ধরনের বাজার ছিল বেসামাল। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, মুদ্রানীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে মূল্যস্ফীতি কমানো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মূল কাজ হলেও সরকারের চাপে কেন্দ্রীয় ব্যাংক মুদ্রানীতি বাস্তবায়নের লক্ষ্য পূরণ করতে পারছে না। সরকারের অতিরিক্ত ব্যাংক ঋণ নেয়াসহ বিভিন্ন কাজে কেন্দ্রীয় ব্যাংক তার লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারছে না।
এ অবস্থা চলতে দেওয়া যায় না। সরকারের নীতি নির্ধারকদের মনে রাখতে হবে সরকারের সফলতা এবং বিফলতা নির্ভর করছে সাধারণ মানুষের সুখ-দুঃখের ওপর। কোন রাজনৈতিক ফায়দার তোয়াক্কা না করে অবশ্যই সরকারকে বাস্তবমুখি কর্মসূচি হাতে নিতে হবে। সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতা যাতে থাকে আগামী বাজেটে সে প্রতিফলন ঘটাতে হবে। তা না হলে জনগণ একদিন ফুসে উঠবে। তখন আর কোন সময় থাকবে না।
This post was last modified on জুন ৪, ২০১২ 10:41 পূর্বাহ্ন
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ কাজ করতে গেলে ভুলত্রুটি হবে সেটিই স্বাভাবিক। আর তাই কাজের…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ আইওএস অপারেটিং সিস্টেমে চলা আইফোনের বেশ কিছু সুবিধাদি মোটেও ব্যবহার…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ সিনেমা বা ওয়েব সিরিজ পছন্দ করেন না, এমন মানুষ খুঁজে…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ স্ত্রী চিতা ও তার চার শাবককে পানি খেতে দিচ্ছেন এক…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ শুভ সকাল। শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৫ খৃস্টাব্দ, ৫ বৈশাখ ১৪৩২…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ সাধারণত অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের কারণেই ফ্যাটি লিভারের সমস্যা বাড়তে পারে। সেইসঙ্গে…
View Comments
I do not even know how I stopped up right here, but I assumed this submit was once good. I don't recognize who you are but definitely you are going to a well-known blogger when you aren't already. Cheers! http://neverstophotspot.com/smart-phone/are-paper-thin-oled-screens-the-future-of-smartphone-displays/
Elizabeth Saxe-Coburg Gotha is a satanic peadofile Queen
nice site, so jealous right now
I really wanted to send a simple remark to express gratitude to you for those lovely guides you are giving on this site. My long internet lookup has at the end been recognized with useful knowledge to exchange with my partners. I would repeat that we readers actually are unequivocally lucky to live in a useful website with so many lovely people with useful techniques. I feel very much lucky to have used the webpage and look forward to plenty of more brilliant minutes reading here. Thanks once more for everything.
This is really a wonderful collection of sites. I've been looking for brewery web page inspiration and there certainly are a lot here I hadn't imagined of.
This webpage doesn't show up appropriately on my droid you may want to try and repair that
You made some first rate factors there. I looked on the web for the problem and located most individuals will go along with with your website.