তারানকোর দিকে তাকিয়ে আছে ১৬ কোটি মানুষ: ব্যর্থ হলে দীর্ঘস্থায়ি সহিংসতার দিকে যাবে দেশ

দি ঢাকা টাইমস্‌ ডেস্ক ॥ জাতিসংঘের বিশেষ দূত হিসেবে আজ চতুর্থ দিন বাংলাদেশে অবস্থান করছেন জাতিসংঘের সহকারি সেক্রেটারী জেনারেল অস্কার ফার্নানদেজ তারানকো। দেশের রাজনৈতিক অচলাবস্থা নিরসনের শেষ চেষ্টা হিসেবে তিনি দূতিয়ালি করছেন। এখন দেশের ১৬ কোটি মানুষ তাকিয়ে আছেন তারানকের দিকে। তিনি কি পারবেন বাংলাদেশকে এক নিশ্চিত অনিশ্চয়তা থেকে বাঁচাতে?

Oscar pharnandej taranko-1Oscar pharnandej taranko-1

এমন প্রশ্ন রয়েছে দেশের ১৬ কোটি মানুষের মধ্যে। অনেকেই বলেছেন, আমরা একটা স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে বিদেশি বন্ধুদের মধ্যস্থতা গ্রহণ করতে হচ্ছে। যদি তাই হয় তাহলে এরজন্য দায়ি আমাদের দেশের বড় দুটি দলের রাজনৈতিক নেতৃত্ব। তাঁদের একগুয়েমি মনোভাবের কারণে ব্যবসায়ী মহল ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা ব্যর্থ হয়েছেন। নিশ্চিত এক সহিংস পরিস্থিতি থেকে দেশকে বাঁচানোর আর কোন পথ নেই।

আর এজন্য জাতিসংঘকে ধন্যবাদ না দিয়ে পারছিনা। কারণ তারা উপযাচক হয়ে বাংলাদেশের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। আর তাই জাতিসংঘের মহাসচিবের এই বিশেষ দূত গত ৩ দিন সকাল থেকে রাত অবধি শুধুই দৌড়ে যাচ্ছেন। একবার এ দল, আরেকবার ওদল। এমনভাবে গত ৩ দিন তিনি চেষ্টা চালাচ্ছেন দু’পক্ষকে সমঝোতায় আনার। সমঝোতা হলে সকল দল নির্বাচনে এলে একটি শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের মাধ্যমে দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠা হবে।

তত্ত্বাবধায়ক ইস্যু নিয়ে বিরোধী দল বিগত প্রায় দুই বছর যাবত আন্দোলন করে আসছে। কিন্তু ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ সংবিধানে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে অসাংবিধানিক পদ্ধতিতে যেতে চাইছেন না। যে কারণে বড় দুটি দলের মধ্যে ব্যাপক দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে। শেষ পর্যন্ত আওয়ামীলীগ তাদের মহাজোটের শরীকদের নিয়েই নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। আর যেহেতু সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে সে কারণে নির্বাচন কমিশনও নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করে। কিন্তু বড় সমস্যা হয়ে দেখা দেয় মহাজোটের বড় শরীক দল জাতীয় পার্টির নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর কারণে। বিশ্বের সব বন্ধু দেশ বিষয়টি ভালো চোখে দেখেনি। জাতীয় পার্টিও না থাকলে নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন ওঠে।

Related Post

এমন এক পরিস্থিতিতে প্রথমে ফোনালাপ ও পরে চিঠি দিয়ে দুই নেত্রীকে সংকট সমাধানের আহ্বান জানান জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন। কিন্তু তাতেও কোন ফল হয়নি। দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিআই নেতৃবৃন্দও চেষ্টা চালান সংকট সমাধানের। তারা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন এবং বিরোধী দলকেও বোঝানোর চেষ্টা করেন কিন্তু ফলাফল হয় শূন্য। এরপর সুশীল সমাজের একটি প্রতিনিধি দল ড. কামাল হোসেন, সুলতানা কামাল, বিশিষ্ট আইনজ্ঞ শাহ-দীন মালিকসহ সুশীল সমাজের বেশ কয়েকজন প্রতিনিধি মহামান্য রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করে সংকট সমাধানে তাঁর হস্তক্ষেপ কামনা করেন। কিন্তু এতোসব দেন-দরবার হলেও কোন ফল হয়নি। সেই এক অনিশ্চয়তা এবং সহিংসতার মধ্যে চলছে দেশ। হরতাল-অবরোধে পুরোদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে। ট্রেন লাইন উপড়ে ফেলা হচ্ছে, গাড়িতে আগুন দেওয়া হচ্ছে, নিরাপরাধ মানুষ পুড়ছে। দেশের হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পদ নষ্ট হচ্ছে। ব্যবসা-বাণিজ্য স্থবির হয়ে পড়ছে-সব মিলিয়ে এক গভীর সংকটের মধ্যে চলছে দেশ।

এমন এক পরিস্থিতিতে সংকট সমাধানের জন্য আসেন জাতিসংঘের এই বিশেষ দূত। তিনি গত তিনদিন ধরে বড় প্রায় সবকটি দলের সঙ্গে কথা বলেছেন একাধিকবার। আজ শেষ চেষ্টা করবেন তিনি। বাংলাদেশের হাতে এখন তিন বিকল্প। কোনটি বেছে নেবে বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ? জাতিসংঘের দূত অস্কার ফার্নানদেজ-তারানকোর দূতিয়ালির ‘রাজধানী এক্সপ্রেস’ গতরাত পর্যন্ত পৌঁছায়নি গন্তব্যে। সিইসি’র সঙ্গে শেষ দফা বৈঠকের পরে ৪টি ‘যদি’র ওপর বাংলাদেশের রাজনীতির ভাগ্য নির্দেশ করেছেন তিনি- প্রথমত: রাজনৈতিক সদিচ্ছা। দ্বিতীয়ত: নেতৃত্ব। তৃতীয়ত: ছাড় দেয়ার মানসিকতা এবং সবশেষ শান্তিপূর্ণ সংলাপ করে সমাধানে আসা। ‘রাজধানী এক্সপ্রেস’ যদি গন্তব্যে পৌঁছার আগেই লাইনচ্যুত হয় তাহলে দেশের পরিস্থিতি কি হবে সে কল্পনা করতে গেলে গায়ের লোম খাড়া হয়ে যাবে যে কারও।

এমন এক জটিল পরিস্থিতিতে জাতিসংঘের দূত আমাদের দেশে এসেছেন এক ‘দেবদূত’ হিসেবেই। যদি আমাদের দেশের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ জাতিসংঘের এই দূতকে মূল্যায়ন করে সংকট সমাধানে এগিয়ে আসেন তাহলে ১৬ কোটি জনগণের মধ্যে আবার শান্তি ফিরে আসতে পারে। আর যদি এই সুযোগও কাজে লাগানো না হয়, তাহলে বিরোধীদল বিহীন নির্বাচনের মাধ্যমে এদেশে আবার সেই সহিংস পরিস্থিতির দিকে ধাবিত হবে- যা কারই কামনা নয়। শুভবুদ্ধির উদয় হোক- এটাই সকলের প্রত্যাশা।

This post was last modified on ডিসেম্বর ১০, ২০১৩ 11:14 পূর্বাহ্ন

স্টাফ রিপোর্টার

View Comments

Recent Posts

মানসিক শান্তি বজায় রাখতে যেসব মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক না রাখাই ভালো

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ আপনার চারপাশে এমন অনেকেই রয়েছে, যাদের ভাবনাও অত্যন্ত নেতিবাচক। তাদের…

% দিন আগে

র‌্যাংগস ইমার্টের আয়োজন: ওএলইডি ফেয়ার

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ পছন্দের ওএলইডি টিভি কেনার মাধ্যমে ক্রেতাদের ঈদ আনন্দ দ্বিগুণ করতে…

% দিন আগে

জোভান-তটিনীর ঈদের বিশেষ নাটক ‘প্রিয় প্রিয়সীনি’

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ জোভান-তটিনী অনস্ক্রিনে এবার ভালোই রসায়ন জমিয়ে তুলেছেন। তবে এবারের ঈদে…

% দিন আগে

গাজায় ইসরায়েলি হামলায় দুই সাংবাদিক নিহত

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে ইসরায়েলি হামলায় আল…

% দিন আগে

আজ ঐতিহাসিক ২৬ শে মার্চ : মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ আজ ২৬ মার্চ, মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস । ১৯৭১…

% দিন আগে

সমুদ্রের জলরাশির উত্থান

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ শুভ সকাল। বুধবার, ২৬ মার্চ ২০২৫ খৃস্টাব্দ, ১২ চৈত্র ১৪৩১…

% দিন আগে