দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ পৃথিবীতে কত রকমের প্রাণী রয়েছে তার কোন হিসাব নিকাশ নেই। সম্প্রতি এক নতুন প্রাণীর সন্ধ্যান মিলেছে। যার নাম ওলিংগুইটো। আজ চিত্র-বিচিত্র বিভাগে সেই প্রাণী সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো আমরা।
১৮৪৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় দ্য স্মিথসোনিয়ান ইনস্টিটিউশন। মূলত জ্ঞানের প্রচার ও প্রসারের জন্যই এটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানটির মাধ্যমে অনেকগুলো জাদুঘর ও গবেষণা কেন্দ্র পরিচালিত হয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকারের ব্যবস্থাপনায়। প্রকৃতপক্ষে এটি শুরু হয়েছিল ‘ইউনাইটেড স্টেটস ন্যাশনাল মিউজিয়াম’ নামে। ১৯৬৭ সালে এই প্রতিষ্ঠানটির নাম পরিবর্তন করে এটিকে সরকারি ব্যবস্থাপনায় আনা হয়।
এখানে রয়েছে বিভিন্ন প্রকারের ১৩৭ মিলিয়ন জিনিস। এর অধীনে রয়েছে ১৯টি মিউজিয়াম, ইনস্টিটিউশন অব ওয়াশিংটন ডিসি। রয়েছে ৯টি গবেষণাগার এবং বিশাল চিড়িয়াখানা। দ্য স্মিথসোনিয়ান ইনস্টিটিউশন- যা পৃথিবীর সবচেয়ে বৃহত্তম একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিগণিত। এই প্রতিষ্ঠানের আওতায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ছড়িয়ে রয়েছে অ্যারিজোনা, মেরিল্যান্ড, ভার্জিনিয়া, নিউইয়র্ক সিটি, পানামাসহ বিভিন্ন জায়গায়। এখানে রয়েছে আরো ১৬৮টি বিভিন্ন মিউজিয়াম। প্রতিবছর এখানে প্রায় ৩০ মিলিয়ন দর্শনার্থী আসেন। এই মিউজিয়ামে প্রবেশ করতে কোনো প্রবেশ মূল্যও লাগে না।
এই প্রতিষ্ঠানের অর্থায়ন আসে ব্যক্তিগত ও কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের দান, সরকারের সহযোগিতা, সদস্যদের অনুদান ও এর অধীনে ন্যস্ত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের আয় থেকে। এই প্রতিষ্ঠানের রয়েছে ‘স্মিথসোনিয়ান’ এবং ‘এয়ার অ্যান্ড স্পেস ম্যাগাজিন’ নামে দুটি নিজস্ব প্রকাশনাও।
এই প্রতিষ্ঠানের প্রাণিবিজ্ঞানী ক্রিস হেলজেন ওলিংগুইটো নামের একটি নতুন প্রাণী আবিষ্কার করেছেন। ক্রিস হেলজেন স্মিথসোনিয়ানের জাতীয় জাদুঘরের চিড়িয়াখানায় নানা প্রাণীর খোঁজখবর নেওয়ার সময় অনেক প্রাণীর মধ্যে তার নজরে আসে ছোট্ট একটি প্রাণী। যার ওজন প্রায় ২ পাউন্ড। দেখতে অনেকটা পোষা বিড়াল কিংবা টেডি বিয়ারের মতো। এমন অবস্থায় হেলজেনের কাছে মনে হল, এটি একটি নতুন প্রজাতির প্রাণী। তবে প্রকাশ্যে তা বলার আগে তাকে প্রমাণ করতে হবে কেন সেটি নতুন।
ক্রিস হেলজেন বলেন, ‘বছরের পর বছর আমি সেই প্রমাণের জন্য অপেক্ষাও করেছি। দিন রাত পরিশ্রম করেছি ওলিংগুইটো যে নতুন একটি প্রজাতি তার প্রমাণ বের করার জন্য। আমি এর বহু গবেষণা করেছি। ডিএনএ পরীক্ষা করে তা প্রমাণ করার চেষ্টাও করেছি। তিনি আরও বলেন, ‘আমার সব সময় ভয় হত- আমি ঘোষণা দিলাম ওলিংগুইটো একটি নতুন প্রজাতি, আর অন্য কোনো প্রাণিবিজ্ঞানী বললেন, এটি নতুন নয়, এটি আরো আগে তারই আবিষ্কৃত একটি প্রাণী। তিনি হয়তো তার প্রমাণের স্বপক্ষে যথেষ্ট যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করতে সক্ষম হবেন।’
অবশেষে বিশ্বের বিখ্যাত প্রাণিবিশেষজ্ঞ কায়েসের শরণাপন্ন হলেন ক্রিস হেলজেন। তার কাছে জানতে চাইলেন ওলিংগুইটোর স্বাভাবিক বাসস্থান সম্পর্কে কিভাবে তিনি জানবেন। তিনি ইকুয়েডরের প্রাণিবিজ্ঞানী মিগুয়েল পিন্টুকে সাথে নিয়ে ২০০৬ সালে আন্দিজ পর্বতমালার গভীর জঙ্গলে প্রবেশ করলেন এক সপ্তাহের এক বিশেষ অভিযানে। ঘটনাটি ঘটলো সত্যিই। ৩ জনের এই দলটি গভীর জঙ্গলে গাছের উঁচু ডালে দেখতে পেলেন ওলিংগুইটো প্রজাতির কিছু প্রাণী। জঙ্গলে ঘুরে ঘুরে এদের গতিবিধি লক্ষ করলেন তারা। তারপর একটি ম্যাপ তৈরি করে দেখালেন তাদের বিচরণ ক্ষেত্রসমূহ। এমনকি র্যাকুন পরিবারভুক্ত যে প্রাণীরা উঁচু গাছের ডালে বাস করে তাদের ডিএনএর সাথে এদের ডিএনএ মিলিয়ে দেখলেন। তারা তারা খুঁজে বের করার চেষ্টা করলেন, দুটি প্রাণীদেহের প্রত্যেকটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ এবং হাঁড়ের মধ্যেও কোনো সাদৃশ্য আছে কিনা।
অনেক গবেষণার পর অবশেষে তারা এই সিদ্ধান্ত নিলেন, ওলিংগুইটো হল তাদেরই আবিষ্কৃত নতুন একটি প্রাণী। ঠিক সেদিনই তারা এর একটি বৈজ্ঞানিক নাম দিলেন। ব্যাজারিসিওন নেবলিনা (ইধংংধৎরপুড়হ হবনষরহধ)। এই নেবলিনা একটি স্প্যানিশ শব্দ, যার অর্থ ফগ বা কুয়াশা। আন্দিজ কুয়াশাচ্ছন্ন বনের গাছে গাছে বাস করে বলে এদের এমন নাম দেয়া হলো।
হেলজেন আরও বলেন, যেদিন উপযুক্ত প্রমাণসহ বলতে পেরেছেন ওলিংগুইটো তাদেরই আবিষ্কৃত নতুন একটি প্রাণী- সে দিনটি ছিল তাদের জন্য বড়ই আনন্দের। এতো আনন্দ মনে হয় তারা কোন দিন পাননি। সন্তান জন্ম দিয়ে মা যেমন খুশি হন, দিনটি ছিল তাদের কাছে ঠিক এমনই আনন্দের। কুয়াশা-জঙ্গল যাকে ইংরেজিতে বলা হয় ক্লাউড ফরেস্ট। পৃথিবীর মাত্র একভাগ এলাকায় এর বিস্তৃতি। দক্ষিণ আমেরিকার পশ্চিম দিকের উচ্চ বনভূমি ‘ক্লাউড ফরেস্ট’ নামে পরিচিত। সেই জঙ্গলেই বাস করে ওলিংগুইটো। সেখানকার আর একটি প্রাণী র্যাকুনের সাথে এদের মিল রয়েছে। র্যাকুনরা বর্তমানে কলম্বিয়া এবং ইকুয়েডরের কুয়াশাচ্ছন্ন ঘন বনে বাস করে থাকে। এরা মাংসাশী প্রাণী।
জানা যায়, ১৯৭০ খিস্টাব্দে পৃথিবীর পশ্চিম গোলার্ধে আবিষ্কৃত হয় এই র্যাকুন। গাছে গাছে এদের বসবাস। ধূসর বাদামি বর্ণের, লম্বা লেজবিশিষ্ট ছোট্ট প্রাণী এরা। এভাবেই মাঝে-মধ্যে নতুন নতুন প্রাণী আবিষ্কৃত হতে থাকল পশ্চিম গোলার্ধে, বিশেষ করে বনজঙ্গল এবং দক্ষিণ আমেরিকার প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে। ওলিংগুইটো এখানে বাস করছে প্রায় ৩৫ বছর ধরে। দাঁত দেখে বিজ্ঞানীরা মনে করেছেন ওলিংগুইটো মাংসাশী প্রাণী। যদিও র্যাকুন পরিবারভুক্ত অন্য প্রজাতির সদস্যরা সর্বভুক জাতীয় প্রাণী। এর বাইরে এদের দেখা যায় মধ্য এবং দক্ষিণ আমেরিকা, মধ্য এবং পূর্ব আফ্রিকা, দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার ফিলিপাইনে এবং পাপুয়া নিউগিনিতে। গবেষকরা বলেছেন, বর্তমানে বৃক্ষনিধন ও মানুষের অবাধ বিচরণের জন্য এদের বসবাসের পরিবেশ মারাত্মকভাবে বিপন্ন হয়ে পড়ছে। এরা হয়তো এক সময় হারিয়ে যাবে কালে গর্ভে। পৃথিবীতে নতুন নতুন সব প্রাণী জগতের সন্ধ্যান করতে বিজ্ঞানীরা যেমন হন্যে হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন- তেমনি আধুনিকতার কারণে এসব প্রাণীকূলও হারিয়ে যেতে বসেছে। মানুষের বাসযোগ্য করতে পৃথিবী যতটা ব্যস্ত- ততটা ব্যস্ত নয় এসব প্রাণীকূল রক্ষার জন্য। তবে এখন সময় এসেছে এসব প্রাণীকূল রক্ষার জন্য কার্যকর ভূমিকা রাখার-অন্তত এই ওলিংগুইটো নতুন প্রাণী আবিষ্কারের পর গবেষকরা তাই মনে করেন। তথ্যসূত্র: যুগান্তর/অনলাইন।
This post was last modified on জানুয়ারী ১৯, ২০২৩ 9:07 অপরাহ্ন
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ যুগ যুগ ধরে সব মহিলার ক্ষেত্রেই তো একই রকম ঘটনা…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবসের এবারের স্লোগান ‘পরিবর্তনশীল জলবায়ুতে নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ বেসিস নির্বাচনের শেষপ্রান্তে এসে এবারের বেসিস নির্বাচনে ওয়ান টিম তাদেরকে…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ বলিউড সুপারস্টার শাহরুখ খানের ছেলে আরিয়ান খান ‘স্টারডম’ নামে ওয়েব…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় দখলদার ইসরায়েলের গণহত্যা এবং আগ্রাসন পুরোপুরি বন্ধ…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ "রাখে আল্লাহ মারে কে' কথাটি আবারও প্রমাণ হলো। ঘটনাটি ঘটেছে…