ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গীর সাহায্যে যেভাবে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জন করবেন! [পর্ব-১]

দি ঢাকা টাইমস্‌ ডেস্ক ॥ ইতিবাচক চিন্তাভাবনা বা দৃষ্টিভঙ্গী (Positive Thinking & Attitude) যে কোনো মানুষের জন্য একটি বিশেষ গুন হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। তাকে পৌঁছে দিতে পারে সাফল্যের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে। আসুন জেনে নেই কী করে আমরা সেই দ্বারপ্রান্তে পৌছাতে পারি।


জীবনে চলার পথে আমাদের প্রতিদিনই কিছু না কিছু সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। জীবিকার প্রয়োজনে কর্মক্ষেত্রে যেমন ঝাঁপিয়ে পড়তে হয় তেমনি তার বাইরেও আছে আমাদের ব্যক্তিগত একটা জীবন। সেই ব্যক্তিগত ক্ষেত্রেও আমাদের প্রয়োজন অনুযায়ী কিছু সিদ্ধান্ত যেমন গ্রহণ করতে হয় তেমনই বর্জনও করতে হয়। তবে আমাদের চলার পথটা সবসময় মসৃণ নাও হতে পারে।

জীবনে চলার ক্ষেত্রে অমসৃণ পথ দেখে আমরা অনেক সময় ঘাবড়ে যাই, হীনমন্যতায় ভুগি এবং কাজটা করার আগেই একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছে যাই, “ নাহ্‌, এই কাজটা আমাকে দিয়ে হবে না”, কিংবা “ আমি পারবো না”। অনেকেই কম বেশি এই ধরণের অবস্থার সম্মুখীন হয়েছি জীবনের কোনো না কোনো সময় এবং নেতিবাচক চিন্তা বা ইচ্ছাশক্তির অভাবে হয়তো হারিয়েও ফেলেছি কোনো সুবর্ণ সুযোগ। তাই সাহস না হারিয়ে কঠিন কোনো বিষয়ের সম্মুখীন হলেও সেটা সম্পূর্ণ করার মানসিকতা আমরা চাইলেই একটু চেষ্টা এবং অভ্যাসের মাধ্যমে গড়ে তুলতে পারি।

প্রথমেই আমাদের ঠিক করতে হবে আমরা আসলে কী করতে চাই, কোন পথে আগালে সেই কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌছাতে পারবো এবং সেটা যত কঠিনই হোক “ আমাকে সেটা পারতে হবে” অর্থাৎ একটা ইতিবাচক মনোভাব তৈরি করে নেয়া। চলুন এবার ইতিবাচক কিছু চিন্তাভাবনার ব্যাপারে আলোকপাত করা যাক।

  • নেতিবাচক ভাবনা এবং বাড়িয়ে ভাবার চিন্তা পরিহার করা

Related Post

আমাদের মাঝে এমন অনেকেই আছেন যারা যে কোনো কাজ করার আগে শুরুতেই ভাবেন এই কাজটা তাকে দিয়ে হবে না। আর সেই কাজ কেন তাকে দিয়ে হবে না এমন সম্ভাব্য অনেক কাল্পনিক কারণ খুঁজে বের করেন, যা আদৌ ঠিক নয়। তাকে চিন্তা করতে হবে যে সে পারবে কাজটা এবং তাকে দিয়েই হবে।

উদাহরণ হিসেবে বলা যায় – এক,  এক মানুষের পোশাক পরিচ্ছদ  বা শারীরিক ভঙ্গী এক নয়। কেউ হয়তো মোটা বা কেউ খুব চিকন বা মাঝারি স্বাস্থ্যের অধিকারী। কিন্তু কেউ যদি ভেবেই নেন আমি অনেক মোটা, আমি কখনো পারবো না সুন্দর এবং আকর্ষণীয় স্বাস্থ্যের অধিকারী হতে কিংবা আমি বেশি খাই, খাওয়াদাওয়া কমাতে পারবো না – এটা সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। এর বদলে আমরা এভাবে যদি চিন্তা করে দেখি, আমি আজ থেকেই নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে চলবো, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলবো , ডায়েট (Diet) কন্ট্রোল করবো, তাহলে সেটা হবে ইতিবাচক ধারণা। কেননা এতে ইতিবাচক চিন্তার নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি ইতিবাচক ভাবনারও বিকাশ হয়।

  • নেতিবাচক মনোভাব এবং চিন্তার রোধ

আগেও বলেছি মন থেকে নেতিবাচক বা নেগেটিভ চিন্তাভাবনার বিষয়টি বাদ দিয়ে দিতে হবে। নিজের মনে যদি এই চিন্তার শক্তিই না আসে তাহলে সে জগৎ জয় করবে কী করে কিংবা নিজের কাঙ্ক্ষিত বস্তুটি কী করে আয়ত্বে আনবে!

যেমন ধরা যাক, আমি রাস্তায় যদি কোনো লোককে দেখি আরেক জন দ্বারা নিগৃহীত হতে কিংবা কাউকে কটূক্তি করতে, আমি কী তাকে সংশোধন করবো না? তাকে জিজ্ঞেস করবো না কেন সে আরেক জনকে এভাবে অপমান করছে বা পুরো বিষয়টা বোঝার চেষ্টা করবো না?

আমরা সবাই এই কর্পোরেট যুগে এতোটাই ব্যস্ত, চোখের সামনে অনেক অন্যায় দেখেও অনেক সময় সময় বাঁচাতে কিংবা কী দরকার ঝামেলায় জড়িয়ে এমন মনোভাব করে এড়িয়ে যাই উদ্ভুত পরিস্থিতি থেকে। কিন্তু দুই মিনিট সময় নিয়ে হলেও যদি আমাদের চিন্তার পরিবর্তন করে একটু ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে আরেকজনের সাহায্যের জন্য এগিয়ে যাই, কী এমন ক্ষতি হবে! কেননা একজন পজিটিভ থিংকিং এর মানুষ তার চোখের সামনে আরেকজনের ত্রুটি খোঁজার আগে অন্যের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন।

  • নিজেকে ভালোবাসা

ইতিবাচক দৃষ্টি – এই শব্দকে শুধু কথার কথাই নয় বরং সেটাকে বিশ্বাস করা এবং ভাবতে শেখাটাও গুরুত্বপূর্ণ। তাই আগে নিজেকে ভালোবাসতে হবে। ভালোবাসা শব্দটি সংস্কৃত থেকে এসেছে যার অর্থ ভালোকে খুঁজে পাওয়া। নিজের ত্রুটির দিকে বা কমতির দিকে আলোকপাত না করে নিজের ভালো গুণটির দিকে মনোযোগী হতে হবে। চিন্তার প্রসারতা বাড়াতে হবে। হয়তো কোনো কাজ আমি পারি না কিন্তু অধ্যবসায়ের ফলে সেটি আমি ঠিকই পারবো নিজের মুঠোয় আনতে এমন মানসিকতা ধরে রাখতে হবে।

  • অহেতুক চিন্তা পরিহার করা

মাঝে মাঝে এমন হয় যে আমরা ধরেই নেই এটা আমি পারবো না বা যা করেছি সেটা বোধ হয় সবচেয়ে খারাপ হয়েছে। অর্থাৎ নিজের কাজ নিয়ে আপনি সন্তুষ্ট হতে পারছেন না। এটা সবারই হয় বা এমনটা হওয়া দোষনীয় কিছু নয়। আপনার পরিচিত জন থেকে শুরু করে আপনার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, নামীদামী অভিনেতাদেরও এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয় প্রতিনিয়ত।

তারা যদি চিন্তা করতেন আমি আমার কাজে ব্যর্থ হয়েছি তাই কাজটা করবো না, তাহলে তারা আজকের এই পজিশনে আসতে পারতেন না। তাই আপনিও দমে যাবেন না। নিজে ব্যর্থ হলেও তাকে শক্তিতে রূপান্তর করুন। নিজের সর্বোচ্চ শ্রমটুকু দিন। প্রয়োজনে চোখ বন্ধ করে একবার ভাবুন যে ব্যক্তিটি আপনার হাসি আনন্দ ছিনিয়ে নিয়েছ, যার জন্য আপনার জীবনের দৌড়ে পেছনে পড়ে গিয়েছেন তার কথা ভাবুন। সেখান থেকে শিক্ষা  নিন এবং নিজেকে সফল করে তুলুন। ভালো বা খারাপ কাজ বা কাজের ফলাফল যাই-ই হোক না কেন আগে শুরু করুন। মনে রাখতে হবে আপনাকে পারতেই হবে।

  • দোষারোপ পরিহারকরা

পৃথিবীতে এমন কোনো মানুষ নেই যে সে সবকিছুতেই সফল বা (Parfect)। নিজেকে সসবসময় অন্যের সাথে তুলনা দেয়ার বদ অভ্যাস টা ত্যাগ করতে হবে। কেউ যদি কোনো কাজ একবারেই করতে পারে, আপনি সেটা তৃতীয় বা চতুর্থ বারের চেস্তায় করে সফল হতে পারবেন। তার মানে এই না যে আপনি কাজটির অযোগ্য। তাই হতাশায় ভোগা যাবে না এই ভেবে যে আপনিও কেন অন্য ব্যক্তির মতো প্রথম চেষ্টাতেই কাজটি পারলেন না। অনুশীলনের অভ্যাস বাড়াতে হবে এবং নিজেকে দোষারোপ করার প্রবনতা বন্ধ করতে হবে। সুতরাং আজ থেকেই ভাবতে শুরু করে দিন, আপনিও পারবেন । দেশ ও দশের পরিবর্তন আনতে, কঠিন কাজগুলো নিজের মুঠোয় আনতে।

  • আত্মবিশ্বাস বাড়াতে হবে

নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস থাকলে যে কোনো কাজেই সফলতা সম্ভব। নিজেকে ভালোবাসার সাথে সাথে নিজের প্রতি বিশ্বাসটাও থাকতে হবে। তাই অন্যের উপর ভরসা করার চেয়ে নিজেকে ভরসা করে কাজ সম্পন্ন করাই ভালো। মনে রাখতে হবে Self help is the best help.আমি পারবো এবং ভবিষ্যতেই যে কোনো কাজ নিজের চেষ্টাতেই পারবো এমন মনোভাব নিয়ে চলতে হবে।

  • দায়িত্বশীলতা বাড়ানো

অনেক সময় এমন হয় আমরা নিজেদের উপর অর্পিত দায়িত্বটা আরেকজনের উপর চাপিয়ে দেই। অলসতা এর একটা কারণ হতে পারে যেমন করে শ্রমবিমুখতাও একটা কারণ। তাই নিজের কাজটা নিজেরই করা উচিত। হেলাফেলা না করে সেটা সুষ্ঠু মনোযোগের সাথেই করা উচিত। শুধু নিজের কাজ বলেই নয় , অন্য কেউ যদি আপনাকে ভরসা করে কোনো দায়িত্ব দেয় সেটাও নিজের কাজ ভেবেই করে নেয়া উচিত। এতে আপনার উপর অন্যের বিশ্বাস বাড়বে।

  • নিজস্বতা বজায় রাখার মাধ্যমে

সবাই চায় জীবনে সুখী হতে। কিন্তু সেটা সবসময় সম্ভব না বা কারো একার পক্ষে পরিপূর্ণ সুখী হওয়াও সম্ভব না। আপনি অন্যের প্রতি অবশ্যই সহানুভব হবেন তাই বলে অন্যের সুখ শান্তির নিশ্চয়তা দেয়াও যে আপনার পক্ষে সম্ভব না সেটাও আপনাকে মনে রাখতে হবে। তাই নিজস্বতা ধরে রাখুন। অন্যের সিদ্ধান্তে চলার অভ্যাস ত্যাগ করতে হবে। অন্যের পরামর্শ কাজে লাগাবার আগে নিজে ভেবে ঠিক করুন সেটা আপনার জন্য কতখানি উপযোগী। তাই নিজের কর্মপন্থা নিজে ঠিক করার মাধ্যমে নিজের কাজের এবং চিন্তার গতি ঠিক রাখুন যাতে আপনার সাথে সাথে অন্যদেরও উপকার হয়।

প্রিয় পাঠক এই বিষয়ে আরো টিপস আসছে আমাদের পরবর্তী পর্বে “ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গীর সাহায্যে যেভাবে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জন করবেন![পর্ব-২]

তথ্য সূত্রঃ life.gaiam.com

This post was last modified on ফেব্রুয়ারী ২৫, ২০১৪ 2:27 পূর্বাহ্ন

Aporna Mommoy

View Comments

Recent Posts

শীতের কারণে ব্যায়াম করতে না চাইলে চাঙ্গা থাকতে চুমুক দিন কয়েকটি পানীয়তে

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ নিজেকে চাঙ্গা রাখার কোনও চেষ্টাই করা হয় না। শীতে ঠাণ্ডার…

% দিন আগে

হোসাইন নূরের কথায় নতুন গজল ‘মিছে দুনিয়া’ এখন ইউটিউবে [ভিডিও]

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ ইসলামিক সঙ্গীত জগতে এক নয়াদিগন্তের সূচনা করলেন হোসাইন নূর। তার…

% দিন আগে

দড়িতে পোষা কচ্ছপ বেঁধে বেড়াতে বেরোলেন এক তরুণী!

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ দু’টি কচ্ছপ নিয়ে রাস্তা দিয়ে হেঁটে চলেছেন এক তরুণী। কচ্ছপ…

% দিন আগে

সুন্দর এক শীতের সকাল

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ শুভ সকাল। রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪ খৃস্টাব্দ, ৭ পৌষ ১৪৩১…

% দিন আগে

ওজন কমাতে কোনটি বেশি উপকারী জগিং নাকি সাইকেল চালানো?

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ ফিটনেস প্রশিক্ষকরা বলেছেন, হাঁটাহাঁটি, দৌড়ানো, জগিং, সাইকেল চালানো কিংবা সাঁতার…

% দিন আগে

মৌলিক গান নিয়ে আবার গানে ফিরলেন তানভীর তমাল [ভিডিও]

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ প্রায় একযুগেরও বেশি সময় পর মৌলিক গান নিয়ে মিউজিক ডোমেইনে…

% দিন আগে