Categories: জ্ঞান

জেনে নিন কিভাবে আপনার মস্তিস্ক নৈতিক সিদ্ধান্তগুলো নিয়ে থাকে

দি ঢাকা টাইমস্‌ ডেস্ক ॥ বিজ্ঞানীরা প্রতিনিয়ত চেষ্টা করে যাচ্ছে এটা জানতে যে মানুষ কিভাবে তাদের নৈতিক সিদ্ধান্তগুলো গ্রহণ করে থাকে। নৈতিক সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে কোন ধরনের সমস্যা তৈরি হলে মানুষ কিভাবে সে বিষয়টি ধারণ করে এই তথ্যটি নিয়ে মনোবিজ্ঞানীরা বিগত কয়েক বছর যাবত গবেষণা করছে।


ডিউক ইউনিভার্সিটির প্রায়োগিক নীতিশাস্ত্রের অধ্যাপক ওয়াল্টার আম্রস্টং এই গবেষণার অন্যতম গবেষক। তিনি বলেন, গবেষকরা জানতে চেষ্টা করছেন মানুষ নৈতিকতার ক্ষেত্রে নিউরোসাইন্স কিভাবে কাজ করে অর্থাৎ এই সকল বিষয়ে ব্রেইন নেটওয়ার্ক কিভাবে বিচার বিবেচনা করে পার্থক্য নির্দেশ করে এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে থাকে। এই বিষয়গুলো যদি আমরা বুঝতে পারি তবে বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে এটি হবে একটি বৈপ্লবিক পরিবর্তন।

মস্তিষ্কের নৈতিক নেটওয়ার্ক

বিজ্ঞানীরা দেখতে পেয়েছেন নৈতিক সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে মানুষের মস্তিষ্কের একটি নির্দিষ্ট অঞ্চল ঘিরে তৈরি হয়ে থাকে নৈতিক নেটওয়ার্ক। এই নৈতিক নেটওয়ার্কটি কাজ করে কতগুলো নীতিগত উপকরণের উপর ভিত্তি করে। সেগুলো হল আবেগ, কারণ এবং দুজনের ক্ষেত্রে পার্থক্য অর্থাৎ যে সকল দুই বা দুয়ের অধিক ব্যক্তির ক্ষেত্রে এই নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে তাদের মধ্যে চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যর পার্থক্য। গবেষকরা বলেন, কিছু কিছু পার্থক্য এই ধরনের পরিস্থিতির ক্ষেত্রে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিতে সহযোগিতা করে। যেমন ধরা যাক উভয়মুখী সংকটের ক্ষেত্রে মাঝ সাগরে একটি নৌকায় অনেকগুলো যাত্রী রয়েছে এবং নৌকাটি ক্রমাগত ডুবছে। একজন যাত্রী কম হলে নৌকাটি আর ডুববে না। সেক্ষেত্রে অনেকগুলো যাত্রী বাঁচাতে একজনকে বিসর্জন দিতে হবে কিন্তু কাকে বিসর্জন দেওয়া হবে। অথবা রাস্তায় একটি মানিব্যাগ কুড়িয়ে পেলেন এখন এই মানিব্যাগের ভেতরে থাকা টাকা কি করবেন ফেরত দিবেন নাকি নিজের পকেটে ঢুকিয়ে ফেলবেন। জোশুয়া ডি গ্রীন বলেন, ‘এই ধরনের পরিস্থিতিতে মস্তিষ্কের তিনটি অংশ সাধারণত একসাথে কাজ করে। মস্তিষ্কের ফ্রন্টাল কর্টেক্স, পোস্টটেরিয়র সিঙ্গুলেট আর মস্তিষ্কের অ্যাঙ্গুলার জাইরাস। অন্য একটি গবেষণায় দেখা যায়, এই ক্ষেত্রে মস্তিষ্কের প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্স সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে। কিন্তু গবেষকদের একটি বড় অংশই মনে করেন নীতিগত এই সিদ্ধান্তগুলো মস্তিষ্কের একটি একক অংশ গ্রহণ করতে পারে না। একটি সামগ্রিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এই ধরনের সিদ্ধান্তগুলো গৃহীত হয়ে থাকে। এরফলে আমরা মানুষরা মানবিকতার একটি অংশ লক্ষ্য করে থাকি। নৈতিক বিচার বিবেচনার ক্ষেত্রে মস্তিষ্কের নির্দিষ্ট সিদ্ধান্তের উপর মানবিক কিংবা বুদ্ধিমত্তার সিদ্ধান্তগুলো সমপাতিত হয়ে থাকে।

মানসিক ভারসাম্যহীনদের ক্ষেত্রে এটি কিভাবে কাজ করে

Related Post

সাইকোপ্যাথ কিংবা মানসিক ভারসাম্যহীন বলতে আমরা তাদের বুঝি যারা বিভিন্ন অপরাধে অপরাধী। গবেষকরা বলেন, নৈতিক এই বিষয়গুলোর ক্ষেত্রে তাদের মস্তিষ্কের আচরণ আরো অদ্ভুত। তারা তাদের অপরাধের শাস্তির ক্ষেত্রে কোন ধরনের ভয় পায় না। এছাড়াও তারা কাওকে মেরে ফেলার ক্ষেত্রেও কোন সহানুভূতি অনুভব করে না। এমনকি তারা অপরাধের শাস্তি অনুসারে সাজাভোগ করা অবস্থায় কর্তৃপক্ষের সাথেও বাজে আচরণ করতে মজা পায়। গ্রীনের অ্যান্টিসোশ্যাল গ্রুপের উপর গবেষণা থেকে দেখা যায়, নৈতিকতা বিষয়টি সম্পর্কে তারা জানে না অথবা তাদের এই বিষয়ে মানসিক ঘাটতি রয়েছে। নৈতিক অনুভূতি বলে যে বিষয়টি রয়েছে তা তাদের মস্তিষ্কের ভেতরে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ফলে মস্তিষ্কের একটি অংশে পুরোপুরিভাবে স্থান করে নেয় ভয়ভীতিহীন অনুভূতি। গবেষকরা ২২ জন সাইকোপ্যাথ এবং ২২ জন স্বাস্থ্যবান মানুষের মস্তিষ্কের উপর চুম্বকীয় তরঙ্গ প্রয়োগ করে থাকেন। তারা দেখেন বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই উভয়সংকটের বিষয়ে একই ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। যদিও তারা অনেকে সাইকোপ্যাথ আবার অনেকে সাইকোপ্যাথ নয়। কিন্তু সাইকোপ্যাথদের ক্ষেত্রে দেখা যায় তাদের ফ্রন্টাল কর্টেক্স কম কাজ করে থাকে এই ধরনের উভয়সংকটে নীতিগত সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে। তারা আরো দেখেন যে সাইকোপ্যাথদের ব্রেইন ফাংশনাল এবং অ্যানালিটিক্যাল নীতি নির্ধারণের মধ্যে একটি যোগসুত্র স্থাপন করে থাকে। যা সাধারণ মানুষের মস্তিষ্কের ক্ষেত্রে তেমন একটা সম্ভবপর হয়ে উঠে না। সাইকোপ্যাথদের এই যোগসূত্রতা তাদের নৈতিক সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে কোন ধরনের আবেগীয় প্রভাব বিস্তার করতে পারে না বলে তারা দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে এবং তাদের বুদ্ধিমত্তা বেশ ক্ষিপ্রগতির হয়ে থাকে।

ভালো অভিপ্রায়ে খারাপ ফলাফল

অটিজম নিউরোলজিক্যাল অবস্থার আরেকটি চরম পর্যায় যেখানে নৈতিক সিদ্ধান্তগুলো আরো বেশি বিস্তৃত অবস্থা ধারণ করে। অটিজম রোগীরা অনেক সময়ে ভালো অভিপ্রায়ে একটি কাজ করে থাকে কিন্তু এটি খারাপ ফলাফল বয়ে আনে। গবেষকরা চিন্তা করে দেখলেন এই ভালো অভিপ্রায় থেকে খারাপ ফলাফল আসার কারণ কি? বাস্তবিক চিন্তা চেতনায় এই ধরনের অভিপ্রায়ে খারাপ ফলাফল আসাটাই স্বাভাবিক কিন্তু অটিজম আক্রান্ত ব্যক্তির নিকট এটি কিভাবে ভালো অভিপ্রায় হিসেবে প্রকাশ পায়। মনে করা যাক একজন ব্যক্তি অপর আরেকজন ব্যক্তিকে (যে পূর্বের ব্যক্তিকে হত্যা করতে চায়) হত্যা করতে চাইলো কিন্তু পারলো না, এখন আপনি এটি কিভাবে বিচার করবেন? অর্থাৎ এখানে কে হন্তারক হিসেবে পরিচিত পাবে কিংবা কে খারাপ? এই ধরনের নৈতিক চেতনার ক্ষেত্রে কার্যকারণের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হয়। যা একজন অটিজম আক্রান্ত ব্যক্তির ক্ষেত্রে সম্ভবপর হয়ে উঠে না। নৈতিক অবক্ষয়ের মাপকাঠি কিংবা কোন একটি কাজের ফলাফল কি আসবে তার বিচার করতে পারাটাই নৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের পথ প্রদর্শক। অটিজম আক্রান্ত ব্যক্তির ক্ষেত্রে এই ধরণের নীতিনির্ধারনী সম্ভব হয়ে উঠে না। কিছু কিছু ক্ষেত্রে এই ধরণের বিচার বিবেচনা পার্থক্য নির্দেশ করে অটিজম থেকে। গবেষণা থেকে দেখা যায়, প্রায় সকলের ক্ষেত্রেই এই ধরণের বিচারের ক্ষেত্রে ফলাফল একই নির্দেশ করে। মানুষের বিভিন্নতার ক্ষেত্রে বিচারের পরিপ্রেক্ষিতে ফলাফলের তারতম্য হতে পারে। কিন্তু নীতিগত এই সকল উভয়মুখী সংকটজনিত পরিস্থিতিতে সকল সাধারণ মানুষ একই ধরণের সিদ্ধান্তের দিকেই ধাবিত হয়ে থাকে।

বিবেচনার প্রয়োগ

নৈতিক বিচার বিবেচনা মানুষের মস্তিষ্কের সিদ্ধান্ত গ্রহণে প্রভাবিত করে থাকে। নৈতিক সিদ্ধান্তের এই বিষয়টি পরীক্ষা করার জন্য গবেষকরা ৮ জনকে সনাক্ত করে দুইভাগে ভাগ করা হয়। তারপর তাদের মস্তিষ্কে দুইধাপে টিএমএস বা ট্রান্সক্রিয়াল ম্যাগনেটিক স্টিমুলেশন প্রয়োগ করা হয়। টিএমএস মস্তিষ্কের বিচার বিবেচনার অংশটি সাময়িক বন্ধ করে দেয়। প্রথম ধাপে মস্তিষ্কের ফ্রন্টাল কর্টেক্সে ২৫ মিনিট টিএমএস প্রয়োগ করা হয়। এই সময়ে দেখা যায়, তারা নীতিগত সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে বেশ বাধাপ্রাপ্ত হয়ে থাকে। অপরদিকে বাকিদের ৫০০ মিলিসেকেন্ড পর্যন্ত টিএমএস প্রয়োগের ফলে প্রথমভাগের মতো নীতিগত সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে সমস্যায় পড়তে হয়নি। এই থেকে দেখা যায়, নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে মস্তিষ্কের ফ্রন্টাল কর্টেক্সের প্রভাব রয়েছে।

এর বাইরেও মনোবিজ্ঞানীরা আরো জানতে চেষ্টা করছেন যৌনতার ক্ষেত্রে কিভাবে আমাদের নৈতিক চিন্তা চেতনা কাজ করে। কিভাবে আমাদের এই তাড়না মস্তিষ্ককে প্রভাবিত করে। তাছাড়া কেন আমরা সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে দোটানায় পড়ে থাকি। অদূর ভবিষ্যতে এই গবেষণাগুলো মানুষের সাইকোলজি বুঝতে আরো সাহায্য করবে।

তথ্যসূত্রঃ সিএনএন

This post was last modified on মে ৪, ২০১৪ 4:39 অপরাহ্ন

K. A. B Tohin

Recent Posts

যুদ্ধ বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত কোনো চুক্তিতেই যাবে না হামাস

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় দখলদার ইসরায়েলের গণহত্যা এবং আগ্রাসন পুরোপুরি বন্ধ…

% দিন আগে

চার তলা থেকে পড়ে দোতলার কার্নিশে আটকে বেঁচে গেলো এক শিশু! [ভিডিও]

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ ‌‌"রাখে আল্লাহ মারে কে' কথাটি আবারও প্রমাণ হলো। ঘটনাটি ঘটেছে…

% দিন আগে

হৃদয় কাড়া এক অসম্ভব সুন্দর বাংলাদেশ

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ শুভ সকাল। সোমবার, ৬ মে ২০২৪ খৃস্টাব্দ, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১…

% দিন আগে

নখ দেখেই বোঝা যাবে রোগ হয়েছে কি না!

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ বয়স বৃদ্ধির পর নখ কিছুটা হলেও ভঙ্গুর হতেই পারে। আবার…

% দিন আগে

তরুণ প্রজন্মকে কৃষি উদ্যোক্তা হিসেবে এগিয়ে আসতে হবে- মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী সিমিন হোসেন

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ “কৃষি-উদ্যোক্তাদের সর্বাত্মক সহায়তা প্রদান করার পাশাপাশি সরকার তাদের বিকাশে সকল…

% দিন আগে

বিস্ময়কর এক রোবট অ্যাটলাসের গল্প

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ মানুষের চেয়ে ভালোভাবে তো একটি রোবট শরীরকে কখনই নিয়ন্ত্রণ করতে…

% দিন আগে