সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ড ॥ সংবাদপত্র ও সংবাদ সংস্থায় ২৭ ফেব্রুয়ারি ১ ঘণ্টা কর্মবিরতি

ঢাকা টাইমস্‌ রিপোর্ট ॥ সাংবাদিক দম্পত্তি সাগর-রুনি হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে ২২ তারিখ সারাদেশে সাংবাদিকরা প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে। ওইদিন সাংবাদিকরা মিলিতভাবে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। এই কর্মসূচি অনুযায়ী দেশের সব সংবাদপত্র, সংবাদ সংস্থা, ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া ও অনলাইন সংবাদ সংস্থায় ২৭ ফেব্রুয়ারি দুপুর ১২টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত এক ঘণ্টার প্রতীক কর্মবিরতি পালন ও কালো ব্যাজ ধারণ এবং ১ মার্চ সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ঢাকাসহ সারাদেশে প্রতীক গণঅনশন পালন করবেন সাংবাদিকরা।

সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরোয়ার ও মেহেরুন রুনীর হত্যাকারীদের গ্রেফতার ও বিচারসহ সব হত্যার বিচারের দাবিতে দু’দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। এছাড়া জেলার সব প্রেস ক্লাবে একই সময়ে গণঅনশন কর্মসূচি পালনের অনুরোধ জানানো হয়েছে। কেন্দ্রীয়ভাবে জাতীয় প্রেস ক্লাব চত্বরে গণঅনশন কর্মসূচি পালন করা হবে।

উল্লেখ্য, ১১ ফেব্রুয়ারি ভোররাতে রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের বাসায় খুন হন মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সরোয়ার এবং তার স্ত্রী এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মেহেরুন রুনী। বিএফইউজে ও ডিইউজের উভয় অংশ, জাতীয় প্রেস ক্লাব এবং ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) যৌথ উদ্যোগে এ মহাসমাবেশের আয়োজন করে। জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অনুষ্ঠিত সাংবাদিক মহাসমাবেশে বিএফইউজে সভাপতি ইকবাল সোবহান চৌধুরী সভাপতিত্ব করেন। বক্তব্য রাখেন বিএফইউজে সভাপতি রুহুল আমিন গাজী, মহাসচিব আবদুল জলিল ভূঁইয়া ও ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব এম আবদুল্লাহ, ডিইউজে সভাপতি ওমর ফারুক ও আবদুস শহিদ, সাধারণ সম্পাদক শাবান মাহমুদ ও বাকের হোসাইন, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন বাদশা, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি কামাল উদ্দিন সবুজ ও সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমেদ। ডিআরইউর সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ আলম খান সমাবেশ পরিচালনা করেন। সমাবেশে প্রবীণ সাংবাদিক শাহজাহান মিয়া, আলতাফ মাহমুদ, মনজুরুল আহসান বুলবুল, কার্তিক চ্যাটার্জি, শাহ আলমগীর, সাইফুল আলম, জাকারিয়া কাজল, এমএ আজিজ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। সমাবেশ চলাকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনের সড়কে যান চলাচল বন্ধ ছিল। অসুস্থ অবস্থায় প্রবীণ সাংবাদিক নির্মল সেন হুইল চেয়ারে করে এসে সমাবেশের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে বক্তব্য দেন। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আরেক প্রবীণ সাংবাদিক এবিএম মূসা বার্তা পাঠিয়ে সাংবাদিক সমাজকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান।

ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, শুধু সাগর-রুনীই নয়, গত এক যুগে সব সাংবাদিক হত্যার বিচার করতে হবে। তিনি আইনশৃংখলা বাহিনীর উদ্দেশে বলেন, আর ধূম্রজাল সৃষ্টি না করে খুনিদের গ্রেফতার করে দায়িত্ব পালন করুন। তিনি বলেন, তদন্তকারী সংস্থার সদস্যরা একেক সময়ে একেক কথা বলে ধূম্রজাল সৃষ্টি করছেন। খুনি যদি গণমাধ্যমেরও কেউ হন তবে তাকেও গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় আনতে হবে। নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করে তিনি বলেন, এরপরও খুনিরা গ্রেফতার না হলে আরও বৃহত্তর কর্মসূচি দিতে সাংবাদিক সমাজ বাধ্য হবে। পাশাপাশি বিগত সময়ে সব সাংবাদিক হত্যার বিচারও দাবি করেন ইকবাল সোবহান চৌধুরী ।

রুহুল আমিন গাজী বলেন, কোন চোরাবালি দিয়ে রুনী-সাগর হত্যাকাণ্ড ধামাচাপা দেয়া যাবে না। এর রহস্য উদঘাটন করে দ্রুত খুনিদের গ্রেফতার করতে হবে। তিনি বলেন, সাংবাদিক সমাজ আজ ঐক্যবদ্ধ। এ কর্মসূচি প্রতীক মাত্র। খুনিরা গ্রেফতার না হলে ভবিষ্যতে ঘেরাওসহ কঠোর আন্দোলনে যেতে সাংবাদিক সমাজ বাধ্য হবে। আবদুল জলিল ভূঁইয়া বলেন, খুনিদের গ্রেফতারের ব্যাপারে তদন্তকারী সংস্থা চালাকি শুরু করেছে। যত চালাকিই করা হোক না কেন খুনিদের গ্রেফতার করতেই হবে। তিনি বলেন, আইনশৃংখলা বাহিনীর বক্তব্য শুনে মনে হয়ে তারা খুনিদের বাঁচিয়ে দেয়ার জন্য সময়ক্ষেপণ করছে। ওমর ফারুক বলেন, সাগর-রুনী হত্যাকাণ্ডের খুনিকে ধরতে সাংবাদিকরা কোন সময় বেঁধে দেয়নি, আবার কেয়ামত পর্যন্তও অপেক্ষা করা যাবে না। প্রয়োজনে এফবিআইকে এনে এই হত্যাকাণ্ডের তদন্ত করে খুনিদের ধরার ব্যবস্থা নিতে হবে। নইলে সাংবাদিক সমাজ কঠিন কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবে। আবদুস শহিদ বলেন, সরকার আসে সরকার যায় কিন্তু কোন খুনেরই বিচার হয় না। তিনি বলেন, তদন্তের নামে তামাশা দেখতে চাই না। শাবান মাহমুদ বলেন, সাগর-রুনীর সন্তান মেঘের কান্না শুনে সাংবাদিক সমাজ যেমন ব্যথিত তেমনি ক্ষুব্ধ। ১১ দিন পেরিয়ে গেলেও খুনিদের গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। সরকার যে কেন ব্যর্থতার দায়িত্ব নিজেদের কাঁধে নিচ্ছে সেটাও বোধগম্য নয়। খুনি মিডিয়া বা মিডিয়া পরিবারের কোন সদস্য হলেও তাকে গ্রেফতার করে প্রকাশ্যে নিয়ে আসুন। কামাল উদ্দিন সবুজ বলেন, সাংবাদিক সমাজ আর অকাল মৃত্যু দেখতে চায় না। রাস্তা বন্ধ করে সাংবাদিক দম্পতি হত্যাকারীদের গ্রেফতারে দাবি জানানো দেখেই প্রমাণ হয় দেশের আইনশৃংখলা পরিস্থিতি কতটা ভয়াবহ। তিনি বলেন, যে দেশে পুলিশ ১১ দিনেও একটি খুনের রহস্য উদঘাটন করতে পারে না, সে দেশে আইনের শাসন আছে বলে মনে হয় না। সাখাওয়াত হোসেন বাদশা বলেন, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে খুনিদের গ্রেফতার করতে হবে। সমাবেশ শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল জাতীয় প্রেসক্লাব থেকে কদম ফোয়ারা হয়ে তোপখানা সড়ক প্রদক্ষিণ করে।
খবর দৈনিক যুগান্তরের।

This post was last modified on ফেব্রুয়ারী ২৩, ২০১২ 9:42 পূর্বাহ্ন

স্টাফ রিপোর্টার

Recent Posts

৬ মাসে ইসরায়েলি বর্বরতায় গাজায় নিহত ১৩ হাজার শিশু

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ গাজা উপত্যকায় গত ৬ মাসে নিহত শিশুদের সংখ্যা আঁতকে উঠার…

% দিন আগে

আপনার চরিত্র কেমন তা আপনার আঙুলের আকৃতিই বলে দেবে!

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ আপনার ব্যক্তিত্ব কীরকম তা বলে দিতে পারে আপনার আঙুলের আকৃতি!…

% দিন আগে

সিলেটের মালিনিছড়া চা বাগানের দৃশ্য

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ শুভ সকাল। রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪ খৃস্টাব্দ, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১…

% দিন আগে

খালি পেটে পাকা পেঁপে খাওয়া কী আদৌ শরীরের জন্য ভালো?

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ পেঁপেতে উপস্থিত ‘পেপসিন’ ও ‘প্যাপাইন’ নামক উৎসেচকগুলো পরিপাকে বিশেষ সহায়ক।…

% দিন আগে

আইফোনের নতুন গেম ইমুলেটর ডেলটা

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ সম্প্রতি ডেলটা নামে আইফোনের একটি নতুন ইমুলেটর অ্যাপ তৈরি হয়েছে।…

% দিন আগে

চমক দেখাতে আসছে ‘পুষ্পা-২’

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ দক্ষিণী সিনেমা ‘পুষ্পা’র তুমুল জনপ্রিয়তার পর মুক্তি পেতে চলেছে ‘পুষ্পা-২’।…

% দিন আগে