দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ আজ সেই ভয়াল ১২ নভেম্বর। ১৯৭০ সালের এ দিনে ভোলা, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী ও বোরহানউদ্দিনসহ উপকূলীয় অঞ্চলে ঝড়ের তাণ্ডবে প্রাণ হারায় কয়েক লাখ মানুষ। উত্তাল ঢেউয়ের তোড়ে ভেসে যায় মানুষ, গবাদি পশু, ঘরবাড়ি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ সহায়-সম্পদ। ৪২ বছর আগের সেই দুর্বিষহ স্মৃতি আজও ভোলেনি উপকূলবাসী।
ভোলা
লালমোহন উপজেলার মেঘনাপাড়ের মঙ্গল সিকদার গ্রামের মেঘনাথ চন্দ্র শীল ১২ নভেম্বরের ঘূর্ণিঝড়ে স্বজনহারা একজন। তিনি জানান, ওই সময় তার বয়স ছিল মাত্র ১২ বছর। অনেক স্মৃতিই এখনো তাকে তাড়িয়ে বেড়ায়। তার পরিবারের ৬ সদস্যের মধ্যে একমাত্র তিনিই বেঁচে যান। ওই রাতের ভয়াল থাবায় মারা যায়, তার বাবা, মা, ২ বোন, ১ ভাইসহ ৫ জন। তাদের বাড়িতে বেড়াতে আসা ২ খালাতো ভাই-বোনও ভেসে যায় স্রোতের তোড়ে। কামেশ্বরের বাড়ির ২টি ঘরের অন্যটিতে বাস করত তার মামার পরিবার। সেই রাতে তার মামি, মামাতো বোনকেও হারাতে হয়েছে। দৌলতখান উপজেলার মেদুয়া আফিলউদ্দিন মহাজন বাড়ির সালেমা বিবি (৬৯) বলেন, ‘নামাজ পইর্যা হুইছি। রাইত্যা পানির স্রোতে গর (ঘর) হুদ্দা ভাইস্যা গেছি। বুহে ১১ মাসের পুত (ছেলে), আরেক পুত ৩-৪ বছরের। দুই পুতেরই ভাসাইয়্যা দিলাম!’ এই বলেই সালেমা কেঁদে ফেলেন। কান্না থামিয়ে আবার বলেন, ‘নিজেও ভাইস্যা গেছি। সকালে চোক (চোখ) মেইল্যা দেহি গাছের মাতায় আটকাইয়্যা আছি।’
লক্ষ্মীপুর
১৯৭০ সালের ১২ নভেম্বর পরবর্তী উদ্ধার ও ত্রাণ তৎপরতায় নিয়োজিত কর্মী স্থানীয় চরআলেকজান্ডারের বাসিন্দা এএইচএম নোমান জানান, ওই ধ্বংসলীলায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা হচ্ছে রামগতির চরআবদুলস্নাহ ইউনিয়ন। তিনি জানান, জলোচ্ছ্বাসে এ ইউনিয়নটি নারী-শিশুশূন্য হয়ে পড়ে। চরআবদুলস্নাহর ইয়াসিন ভূঁইয়ার বাবা-দাদিসহ বাড়ির প্রায় সবাইকে এবং সিএসপি আবদুর রব চৌধুরীর ১১৩ আত্মীয়স্বজনকে জলোচ্ছ্বাসে ভাসিয়ে নিয়ে যায়। এ ধরনের হাজারো করুণ কাহিনীর নির্মম গাঁথা ঘটনার কথা স্মরণ করে আজও উপকূলের মানুষ।
নোয়াখালী
প্রলয়ঙ্করি ঘূর্ণিঝড়ে নোয়াখালী উপকূলে কবরের নিস্তব্ধতা নেমে এসেছিল। বর্তমানে জনবসতি গড়ে ওঠা নতুন চরগুলোতে বেড়িবাঁধ, কিলস্না কিংবা আশ্রয়কেন্দ্র না থাকায় এখনও দুর্যোগ ঝুঁকিতে রয়েছে ২০টি চরের তিন লক্ষাধিক মানুষ। বন উজাড় করে গড়ে ওঠা মেঘনাপাড়ে এবং বঙ্গোপসাগরের কাছাকাছি এই অরক্ষিত জনপদের নিঝুম দ্বীপ, ঢালচর, দমারচর, সাহেবানিরচর, চরনুরইসলাম, চরইসলাম, নঙ্গলিয়ারচর, কেরিংচর, নলেরচর, নামারচর ও পাতারচর, চরলক্ষ্মী, পশ্চিম উরিরচর, উরিরচর, চরবায়জীদ, চরনোমান, চরকনক, চরমকসুমুল, চরবালুয়া ও দিয়ারা বালুয়ায় ৬০ হাজারেরও বেশি পরিবারের ৩ লক্ষাধিক মানুষ ঝুঁকিতে রয়েছে।
বোরহানউদ্দিন (ভোলা)
বোরহানউদ্দিন উপজেলার গঙ্গাপুর গ্রামের সাইফুল স্বজন হারানোদের একজন। ওই সময় ১২ বছরের সাইফুল পরিবারের ৫ সদস্যকে হারিয়েছেন। তৎকালীন পূর্বকোণ পত্রিকার সাংবাদিক এম হাবিবুর রহমান স্মৃতিচারণ করে জানান, তার পাঠানো সংবাদ ও ছবি ‘ভোলার মানুষ কাঁদো, গাছে গাছে ঝুলছে মানুষের লাশ’ শিরোনামে প্রকাশ হয়।
পটুয়াখালী
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানায়, সেদিন বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের সকাল থেকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছিল। রমজানের রোজার ইফতারির পর রোজাদাররা আর বিশ্রাম নিতে পারেননি। সৃষ্ট নিম্নচাপটি কয়েকবার গতি পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে হারিকেনে রূপ নেয়। শুরু হয় প্রচণ্ড ঝড়। রাত ১০টার পর ঘূর্ণিঝড়টি আঘাত হানে পটুয়াখালীসহ দক্ষিণ উপকূলে। প্রচণ্ড ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে মুহূর্তের মধ্যে লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় দক্ষিণ উপকূলের জনপদ। শুরু হয় গগণবিদারী চিৎকার আর স্বজন হারানো মানুষের আহাজারি। সেদিনের দুঃসহ স্মৃতি আজও জেগে আছে স্বজনহারাদের মধ্যে। দুঃস্বপ্নের মতো আজও তাড়া করে তাদের।
আজও ভুলতে পারেনি সেই ভয়াল রাতের স্মৃতি। স্বজন হারানোর বেদনায় আজও তারা কাঁদে। সে স্মৃতি ভোলারও নয়। মানুষের জীবনে এমন বিপর্যয় আসতে পারে তা সেদিনের প্রত্যাক্ষদর্শীদের ভাষায় প্রকাশ পেয়েছে। সেদিনের পরে পত্র-পত্রিকায় যে বিভৎস ছবি এসেছিল তা দেখলে একজন সাধারণ মানুষও চমকে উঠবে।
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ বলিউডের বহুল আলোচিত সিনেমা ‘পিংক’ এর নির্মাতা অনিরুদ্ধ রায় চৌধুরীর…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ জিম্মি চুক্তিতে রাজি হতে ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসকে মাত্র সাত…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ এবারের ছবিটি একটু ভিন্ন ধরনের এই ছবির ভিতরে লুকিয়ে চুরিয়ে…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ শুভ সকাল। শনিবার, ৪ মে ২০২৪ খৃস্টাব্দ, ২১ বৈশাখ ১৪৩১…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ এই গরমে রোদে বেরোলে মাইগ্রেনের সমস্যায় ভোগেন অনেকেই। এক বার…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ নতুন এআই মডেল মাত্র ১৫ সেকেন্ডের অডিও থেকে ভয়েস ক্লোনিং…