কংক্রিটের সড়ক দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থাকে পাল্টে দিতে পারে

দি ঢাকা টাইমস্‌ ডেস্ক ॥ দেশের যোগাযোগব্যবস্থাকে আমূল পাল্টে দিতে পারে কংক্রিট পেভমেন্টের সড়ক। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সিমেন্টশিল্প অভাবনীয় বিকাশ লাভ করায় এ ধরনের সড়ক নির্মাণই এখন প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে লাভজনক। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বেশি বৃষ্টিপাত ও জলবায়ু পরিবর্তনের নতুন পরিবেশে কয়েক গুণ বেশি টেকসই কংক্রিটের সড়ক দীর্ঘ মেয়াদে অর্থনৈতিকভাবেও হবে সাশ্রয়ী।



এ সড়কে রক্ষণাবেক্ষণ খরচ যেমন কম, তেমনি ভারী ও বেশি যানবাহন চলাচলের জন্যও উপযোগী। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক একাধিক গবষেণা প্রতিবেদনেও এমন সুপারিশ করে বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল দেশগুলোকে কংক্রিটের সড়ক নির্মাণের ওপর জোর দিতে বলা হয়েছে।

কেন কংক্রিটের সড়ক

পাকিস্তান আমলের মাত্র দেড় হাজার কিলোমিটার পাকা সড়ক বেড়ে এখন সড়ক ও জনপথের (সওজ) অধীনেই পাকা সড়ক দাঁড়িয়েছে প্রায় ২২ হাজার কিলোমিটারে। আর স্থানীয় সরকার বিভাগের ডাবল-সিঙ্গেল মিলিয়ে সড়ক প্রায় লাখ কিলোমিটার। চার দশকে বহু সড়ক পাকা হলেও দেশের যোগাযোগব্যবস্থা নিয়ে এখনো অনেক প্রশ্ন রয়ে গেছে। বেশির ভাগ সড়কই বালু, পাথর, খোয়া ও বিটুমিন-অ্যাসফল্টে তৈরি। সড়কটিকে পাকাপোক্ত করতে প্রথম ফেলা হয় বালুথ প্রয়োজন অনুযায়ী কোথাও ১৫, কোথাও ১২, আবার কোথাও আট ইঞ্চি। তার পর আট, নয় বা ১০ ইঞ্চি খোয়া, পরে কিছু বালু এবং উপরের স্তরে আবার ৮-১০ ইঞ্চি পাথর-খোয়ার মিশ্রণ; তার ওপর দেড় ইঞ্চি পাথরের কার্পেটিং ও আধা ইঞ্চি সিলকোট। এভাবেই দেশের সড়কগুলো নির্মিত হয়।

গবেষণায় দেখা গেছে, বিগত তিন দশকে বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল দেশগুলোতে ব্যাপকহারে বিটুমিন-অ্যাসফল্ট বা পিচের সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। একদিকে অপরিকল্পিতভাবে সড়ক নির্মাণ, অন্যদিকে বেশি মাত্রায় ভারী যানবাহন চলাচলের কারণে এ সড়কগুলো কাক্সিক্ষত স্থায়িত্ব পায়নি। কয়েক বছর পেরোতে না পেরোতেই সংস্কার কিংবা পুনর্র্নিমাণের প্রয়োজন হয়ে পড়ে। ঘন বৃষ্টিপাত ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে অসংখ্য সড়ক বেহাল দশা ধারণ করে। এ অবস্থায় অনেক দেশই কংক্রিটের সড়কের দিকে ঝুঁকছে। যুক্তরাষ্ট্র-কানাডাসহ উন্নত দেশগুলোও গুরুত্বপূর্ণ সড়ক-মহাসড়ক নির্মাণে কংক্রিট বেছে নিয়েছে। সড়কের ওপরের স্তরকে পেভমেন্ট বলা হয়। এটি সাধারণত দুই ধরনের- ফ্লেক্সিবল ও রিজিড। ফ্লেক্সিবল পেভমেন্ট নির্মাণে বিটুমিন-অ্যাসফল্ট আর রিজিড পেভমেন্টের ক্ষেত্রে সিমেন্টের সঙ্গে ইট বা পাথর ও বালু ব্যবহার করা হয়। সঙ্গে লাগে রডও। কংক্রিটের এমন সড়কের নির্মাণ ব্যয় বিটুমিন-অ্যাসফল্টের চেয়ে কিছুটা বেশি। কিন্তু দীর্ঘ মেয়াদে অনেক বেশি লাভজনক। ক্রমাগতভাবে জ্বালানির দাম বেড়ে যাওয়ায় কংক্রিটের সড়কের প্রয়োজনীয়তা আরও বেড়েছে। কারণ গবেষণায় দেখা গেছে, কংক্রিটের সড়কে গাড়ির জ্বালানি খরচ হয় কম। কংক্রিটের সড়কের স্থায়িত্ব বিটুমিন-অ্যাসফল্টের সড়কের চেয়ে প্রায় চার গুণ বেশি। ন্যূনতম ৩০ থেকে ৪০ বছর পর্যন্ত স্থায়িত্ব পায় এ সড়ক। নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ করলে আরও বহু বছর নির্বিঘ্‌েন ব্যবহার করা যায়। অন্যদিকে, পুঙ্খানুপুঙ্খ মান রেখে নির্মাণ করলেও বিটুমিন-অ্যাসফল্টের সড়ক টেকে সর্বোচ্চ ১০ বছর। অনেক বিশেষজ্ঞ অবশ্য, পাঁচ-ছয় বছরের বেশি স্থায়িত্বের কথা বলেন না। আর ঘন ঘন সংস্কারের ঝক্কি তো আছেই। এ অবস্থায় প্রতিবেশী ভারতসহ বহু উন্নয়শীল ও উন্নত দেশ কংক্রিটের দিকে ঝুঁকছে। ভারত ও শ্রীলঙ্কা মহাসড়কের পাশাপাশি এলিভেটেড এক্সেপ্রসওয়ে নির্মাণেও সময় সাশ্রয় ও স্থায়িত্বের কথা বিবেচনা করে রিজিড পেভমেন্ট পদ্ধতি বেছে নিয়েছে।

দেশের বিশেষজ্ঞরাও বলছেন, বালু, ইট, পাথর আর বিটুমিন-অ্যাসফল্টের পরিবর্তে কংক্রিটের সড়ক করলেই এখন বেশি সুবিধা। গ্রামাঞ্চলে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের (এলজিইডি) সড়কগুলোর কোনো কোনোটি ছয় টন, কোনোটি আবার সর্বোচ্চ ১০ টনের সহ্যক্ষমতার। কিন্তু এগুলোর ওপর দিয়ে ১০-১৫ টনের গাড়িও চলে। সড়ক ও জনপথের সড়কের ক্ষমতাও সব মিলিয়ে ১৫-২০ টন। সেখানে দেড় টনের গাড়ি থেকে ৫০ টন বা তারও বেশি ভারী গাড়ি চলে। এ অবস্থায় বেশি মজবুত কংক্রিটের সড়ক নির্মাণই হবে যুক্তিযুক্ত। কংক্রিটের সড়কের উলেস্নখযোগ্য একটি সুবিধা হলো, এটি সম্পূর্ণ পরিবেশবান্ধব এবং প্রক্রিয়াজাত করে পুনরায় ব্যবহার করা যায়।

Related Post

বিটুমিন-অ্যাসফল্টে যত অসুবিধা : সওজের ২২ হাজার কিলোমিটার সড়কের মধ্যে ১৮ হাজার কিলোমিটারের একটা বড় অংশই এখন ঝুঁকির মুখে। সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ না করে নির্মাণ, অর্থ সংকট ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাব, অতিরিক্ত ওজন বহনসহ নানা কারণে সড়কগুলো বেহাল আকার ধারণ করেছে। সর্বোচ্চ ১০ বছর স্থায়িত্বের আশা করা হলেও অতিরিক্ত যান চলাচল আর পর্যাপ্ত রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে এক-দুই বছর যেতে না যেতেই বিটুমিন-অ্যাসফল্টের পেভমেন্ট ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। বিটুমিন পানিতে ক্ষয় হলেও কংক্রিট হয় আরও শক্ত। কয়েক বছর আগে দেশের একাধিক মহাসড়কের কিছু অংশের পেভমেন্ট কংক্রিট দিয়ে নির্মাণ করা হয়। সেগুলো এখনো প্রায় অবিকল রয়েছে। ফ্লেক্সিবল পেভমেন্টের চারটি স্তর থাকে। তদারকি ব্যবস্থা না থাকা ও বার বার রক্ষণাবেক্ষণের কারণে দীর্ঘ মেয়াদে এতে খরচ হয় বেশি। দুর্নীতি এবং অপচয়েরও মাত্রা ছাড়িয়ে যায়। ফলে নির্মাণের কিছুদিনের মধ্যেই বিভিন্ন স্থানে দেবে যায়, সামান্য বৃষ্টিতেই সৃষ্টি হয় ছোট-বড় গর্তসহ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থার। আর এর মাশুল দিতে হয় সড়ক দুর্ঘটনায়।

বিশেষজ্ঞদের মতে, তিন দশক আগে বিটুমিন-অ্যাসফল্টের পেভমেন্ট নির্মাণ সঠিক বলে মনে করা হয়েছিল। এখন কংক্রিটের সড়কের দিকে নজর দিতে হবে। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ইতিমধ্যে এই কংক্রিটের সড়ক নির্মাণ শুরু হয়েছে। ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট এলাকার মাটিকাটা চেকপোস্ট হতে ভাষাণটেক সড়কটি সমপ্রতি কংক্রিটের সিমেন্ট ঢালাই দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে। অপরদিকে মিরপুর-১ এর নিকটে জনতা হাউজিং এর প্রবেশ পথটিও নির্মাণ করা হয়েছে এই কংক্রিট ঢালায় করে। এখন সময় এসেছে দেশের সর্বত্র এই কংক্রিটের সড়ক তৈরি করার। আমরা আশা করি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিষয়টি বিবেচনায় আনবেন এবং দেশের সর্বত্র কংক্রিট সড়কের প্রবর্তন করবেন।

This post was last modified on ডিসেম্বর ১৯, ২০১৪ 5:49 অপরাহ্ন

স্টাফ রিপোর্টার

Recent Posts

বিস্ময়কর এক রোবট অ্যাটলাসের গল্প

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ মানুষের চেয়ে ভালোভাবে তো একটি রোবট শরীরকে কখনই নিয়ন্ত্রণ করতে…

% দিন আগে

প্রথম পারিশ্রমিক ছিলো ৫০ রুপি: বর্তমানে প্রতি ছবিতে নেন ২০ কোটি!

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ বর্তমান সময়ে দক্ষিণী চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় একজন অভিনেতা যশ। যিনি সবার…

% দিন আগে

গাজার যুদ্ধ বন্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কথা শুনছে না ইসরায়েল!

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ ফিলিস্তিনের সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি এবং জিম্মি চুক্তি করতে…

% দিন আগে

ভারতে গাধার দুধ বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ৬ হাজার টাকা লিটার!

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ আমাদের সমাজে গাধা নামক প্রাণীটি কঠোর পরিশ্রমের রূপক হিসেবে প্রচলিত।…

% দিন আগে

চট্টগ্রামের একটি নৈসর্গিক প্রাকৃতিক দৃশ্য

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ শুভ সকাল। রবিবার, ৫ মে ২০২৪ খৃস্টাব্দ, ২২ বৈশাখ ১৪৩১…

% দিন আগে

সঠিক নিয়ম মানলে আম খেয়ে পেটের কোনো সমস্যা হবে না

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ পরিমাণে একটু বেশি আম খেলেই গ্যাসের মতো সমস্যা হয় অনেকের।…

% দিন আগে