মরছে শিশু বাজছে দামামা: ফিলিস্তিন-ইসরাইল সমস্যা নিয়ে কিছু কথা

দি ঢাকা টাইমস্‌ ডেস্ক ॥ প্রতিদিন অসংখ্য শিশু প্রাণ হারাচ্ছে, ভয়ংকর সব বোমা এসে ঘুমের মাঝেই কেড়ে নিচ্ছে শিশুদের প্রাণ। এমন অবস্থায় বিশ্ব বিবেক অনেকটাই নিরব। বিশেষ করে এই চরম সঙ্কটে ফিলিস্তিনি জনগণ আরব বন্ধু রাষ্ট্রদের কাউকেই পাশে পাচ্ছেনা।


ফিলিস্তিনি সাবেক নেতা ইয়াসির আরাফাতের সময়ে অনেক আরব দেশ ফিলিস্তিনির পাশে থাকলেও বর্তমানে বেশিরভাগ আরব দেশ এ সমস্যায় যুক্ত না এবং যারা যুক্ত ছিলেন তাদের অধিকাংশ সমস্যা থেকে সরে এসে ফিলিস্তিনকে অনেকটা একঘরে করে দিয়েছে। আরব দেশসমূহের মধ্যে বর্তমানে শুধু সিরিয়া ও লেবানন এতে যুক্ত আছে।

আজকের ফিলিস্তিন এবং ইসরাইল সমস্যা আগে থেকে কখনোই ছিলোনা। ১৯১৭ সালের আগে মধ্যপ্রাচ্যে কোন ইসরাইল নামের রাট্রও ছিলোনা। তবে ১৯১৭ সালের ২ নভেম্বর বৃটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী আর্থার জেমস বালফোর ইহুদীবাদীদেরকে লেখা এক পত্রে ফিলিস্তিনী ভূখন্ডে একটি ইহুদী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি ঘোষণা করেন। বেলফোর ঘোষণার মাধমে প্যালেস্টাইন এলাকায় ইহুদিদের আলাদা রাস্ট্রের সম্ভাবনা উজ্জল হয় এবং বিপুলসংখ্যক ইহুদি ইউরোপ থেকে প্যালেস্টাইনে এসে বসতি স্থাপন করতে থাকে।

সেই থেকে শুরু, হাজার হাজার ইহুদি পাড়ি জমাতে থাকে ইসলামের পবিত্র ভুমি ফিলিস্তিনে! যদিও শুরুতে ইহুদিদের সংখ্যা ছিলো হাতে গোনা, এরা অনেকটা উদ্বাস্তু গৃহহীন হিসেবে একটি রাষ্ট্রে এসে বসতী গড়ে। ধীরে ধীরে পশ্চিমা মদদে এবং প্রশ্রয়ে ইহুদিরা বেশি সংখ্যক হারে ফিলিস্তিনে আসতে শুরু করে। ১৯০৫ থেকে ১৯১৪ সাল পর্যন্ত ফিলিস্তিনে ইহুদীদের সংখ্যা ছিল মাত্র কয়েক হাজার। কিন্তু ১৯১৪ সাল থেকে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ১৯১৮ সাল পর্যন্ত ব্রিটিশদের সহযোগিতায় ফিলিস্তিনে ইহুদীদের সংখ্যা ২০ হাজারে উন্নীত হয়। এরপর প্রকাশ্যে ফিলিস্তিনে ইহুদী অভিবাসীদের ধরে এনে জড়ো করা শুরু হলে ১৯১৯ থেকে ১৯২৩ সাল নাগাদ ফিলিস্তিনে ইহুদীদের সংখ্যা ৩৫ হাজারে পৌঁছে যায়। ১৯৩১ সালে ইহুদীদের এই সংখ্যা প্রায় ৫ গুণ বৃদ্ধি পেয়ে ১ লাখ ৮০ হাজারে পৌঁছায়। এভাবে ফিলিস্তিনে ইহুদী অভিবাসীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বাড়তে থাকে এবং ১৯৪৮ সালে সেখানে ইহুদীদের সংখ্যা ৬ লাখে উন্নীত হয়।

Related Post

১৯১৮ সালে বৃটেনের সহযোগিতায় গুপ্ত ইহুদী বাহিনী “হাগানাহ” গঠিত হয়। এই বাহিনীর মূল কাজ ছিলো সন্ত্রাসবাদ করা, ফিলিস্তিনি জনগণের বাড়িঘর ও ক্ষেতখামার দখল করে তাদেরকে ফিলিস্তিন থেকে বিতাড়িত করা এবং বাজার ও রাস্তাঘাটসহ জনসমাবেশ স্থলে বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ফিলিস্তিনিদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করে তাদের বিতাড়নের কাজ ত্বরান্বিত করা। এভাবেই শুরু ইহুদীদের আগ্রাসন। ছোট একটি উদ্বাস্তু থেকে ধীরে ধীরে এরা গ্রাস করতে থাকে ফিলিস্তিনের ভূখণ্ড

এরপর আসে জাতিসংঘের নির্লজ্জ হস্তক্ষেপ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ১৯৪৭ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ফিলিস্তিনি ভূখন্ডকে দ্বিখন্ডিত করা সংক্রান্ত ১৮১ নম্বর প্রস্তাব গৃহিত হয়। জাতিসংঘ ফিলিস্তিনকে দ্বিখন্ডিত করার প্রস্তাব পাশ করে নিজেদের মাতৃভূমির মাত্র ৪৫ শতাংশ ফিলিস্তিনিদের এবং বাকি ৫৫ শতাংশ ভূমি ইহুদীবাদীদের হাতে ছেড়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। এভাবে ১৯৪৮ সালের ১৪ মে ইসরায়েল স্বাধীনতা ঘোষণা করে

১৯৪৮ সালের ১৫ মে সম্মিলিত আরব বাহিনীর সাথে ইসরাইলের যুদ্ধ হয়, এই যুদ্ধে আরব বাহিনী পরাজিত হয় এবং ইসরাইলের বাহিনীরা জাতিসংঘের মাধ্যমে যে ভূমি পেয়েছিল, তার চেয়েও অনেক বেশী ভূখন্ডের ওপর জবরদখল প্রতিষ্ঠা করে

এরপর ১৯৭৩ সালের দিকে জর্ডান ও মিশর কাপুরুষের মত ইসরাইলের সাথে শান্তিচুক্তি করে সমস্যা থেকে বিদায় নিয়েছে।

ইতিহাসে ব্রিটেনের সহায়তায় ইসরাইল এর সৃষ্টি হলেও আমেরিকার সহায়তায় বর্তমানে সামরিক ও অর্থনৈতিকভাবে অত্যন্ত শক্তিশালি রাস্ট্র হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। মুসলিম রাষ্ট্রসমূহ বাস্তবিক পক্ষে নিজেদের মাঝে ঐক্য না হওয়ায় ইসরায়েল ফিলিস্তিনের উপর জেকে বসেছে। বর্তমানে সন্ত্রাসের অজুহাতে অসংখ্য সাধারণ ফিলিস্তিনি নিহত হচ্ছে ইহুদীদের গোলার আঘাতে। বিশ্ব বিবেক এখানে নিরব। একটু ভালভাবে দেখলেই বুঝা যাবে বিশ্ব নেতৃত্বের পরোক্ষ মদদেই ইসরাইল আজকে এই পর্যায়ে এসেছে এবং একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের দখলে নিয়ে হত্যা করে চলেছে অসংখ্য মানুষ ও শিশু। মুসলিম রাষ্ট্রসমূহ ফিলিস্তিন ইস্যুতে অনেকটাই দায় সারা, তারা ফিলিস্তিন সমস্যা সমাধান থেকে পশ্চিমা এবং ইহুদীদের সাথে নিজেদের নেতৃত্বদের সম্পর্ক সমুন্নত রাখতেই বেশি আগ্রহী।

This post was last modified on জুলাই ১২, ২০১৪ 9:05 অপরাহ্ন

Zia

"বাপের টাকার হিসেবে বড়লোক, নিজের টাকার হিসেবে গরীব। আল্টিমেট আমি নিজেকে গরীব ভাবি। কারণ বাবার টাকায় ফুটানি মারিনা।"

Recent Posts

কুয়াশাচ্ছন্ন শীতের সকাল

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ শুভ সকাল। রবিবার, ৫ জানুয়ারী ২০২৫ খৃস্টাব্দ, ২১ পৌষ ১৪৩১…

% দিন আগে

বেশি উপকার হলেও শরীরে পেঁপে খাওয়ার বিরুপ প্রভাবও পড়তে পারে

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ পুষ্টিবিদরা বলেন, খালি পেটে পেঁপে খাওয়া মোটেও ভালো নয়। এতে…

% দিন আগে

২০২৫ সালে পানির নিচে থাকা যে আগ্নেয়গিরিতে অগ্ন্যুৎপাত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ ২০২৫ সালের মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিম উপকূলের পানির নিচে থাকা…

% দিন আগে

বলিউডের কয়েকটি চলচ্চিত্র নতুন বছর আলোচনার বিষয় হবে

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ নতুন বছরের শুরুতেই সিনেমাপ্রেমীরা হিসাব কষতে বসেন, নতুন বছরে প্রিয়…

% দিন আগে

২৪ ঘণ্টা বরফের হ্রদে আটকে থাকা কুকুরছানাকে ড্রোন উড়িয়ে উদ্ধার!

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ বরফের হ্রদে আটকে পড়ে অজানা কারণে কিংবা ভয় পেয়ে কুকুরটি…

% দিন আগে

শীত এলেই অতিথি পাখির দেখা মেলে

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ শুভ সকাল। শনিবার, ৪ জানুয়ারী ২০২৫ খৃস্টাব্দ, ২০ পৌষ ১৪৩১…

% দিন আগে