মেয়েটা ছেলেটাকে ছাড়া বাঁচবে না … ছেলেটা মেয়েটাকে ছাড়া বাঁচবে না … ব্যাট-বল এর মতই তারা একদম জোড়া … ফেভিকল দিয়ে আটকানো তাদের বন্ধন … কেমিস্ট্রি যারা ভালোবাসে, তারা বলে ওরা আয়নিক বন্ধনে আবদ্ধ … বন্ধুরা বলেঃ “ওরা একদম পারফেক্ট কাপল” … ফেইসবুকের মানুষরা বড়ই ঈর্ষান্বিত ওদের প্রেম দেখে … টাইমলাইনে প্রেম, প্রোফাইল পিকচারে প্রেম, কমেন্টে প্রেম … অসহ্যকর … এত প্রেম কেন ??
৬ বছর গড়িয়ে ৭ বছরে গেলো তাদের সম্পর্ক … কত সুখী তারা … মেয়েটার হাত ভর্তি ছেলেটার দেয়া চুড়ি … ছেলেটার পরা নীল শার্টটা মেয়েটার দেয়া গিফট … ফেবুতে ৫০০০০ মেসেজ তাদের … মেমোরি কার্ডে দুজনের হাজারখানেক রঙ্গিন ছবি … গল্পের বইয়ের পাতার ভাঁজে ভাঁজে গোলাপ ফুলের পাপড়ি … টিএসসির মোড়ে একসাথে বসে থাকা অনেকগুলো মূহুর্ত … রিচার্জের দোকানের খাতায় হাজারবার দুজনের নাম্বারে ১০০ টাকা রিচার্জের গল্প … অনেক রাতের জেগে থাকা, অনেক ভোরের জেগে ওঠা … বালিশে শুকিয়ে যাওয়া চোখের পানিতে অনেক অভিমানের গল্প !!
… … …
আরো ৫ বছর পরের কথা…
মেয়েটা আর ছেলেটার বিয়ে হয় নি … কোন একটা কারণে তারা আলাদা পথে হেঁটে যায় … খুব সুন্দর ইংরেজিতে আমরা ওটাকে বলিঃ “ব্রেক আপ”
সবাই খুব অবাক হয়েছিলো … কেউ কেউ ভেবেছিল, ওদের কেউ সুইসাইড করবে … এত বছরের এত কিছু !!
জীবনটা রোমিও-জুলিয়েট এর গল্প না … তারা কেউই মরে নি … খুব অদ্ভূত সত্য হলো, তারা তাদের আলাদা পথেই বেশ ভালোভাবে বেঁচে আছে !!
মেয়েটা এখন সংসারী … রান্নাঘরে দরদর করে ঘামছে সে … তবুও হাসিমুখে পোলাও রান্না করছে … একটু পরেই অফিস থেকে আসবে তার স্বামী … পোলাও তার খুব খুব পছন্দ !!
ছেলেটা বিদেশ থেকে পিএইচডি কমপ্লিট করে এসেছে … এই বছরই বিয়ে করবে !!
গল্পটা শুনে সবাই অবাক হয় … বিশ্বাস করে না … তারপর নিজ চোখে দেখে আসে … মেয়েটা কি হাসিখুশি … ছেলেটা আগের চেয়েও বেশি চঞ্চল হয়ে গেছে … কী অদ্ভূত !! কী অদ্ভূত !!
… … …
আসলেই তারা ভালো আছে … অতীত তো অতীতই … অতীত নিয়ে কষ্ট পেয়ে লাভ নেই … পথ চলতে হয়, যত যাই হোক !!
মাঝে মাঝে পথ চলতে গিয়ে ড্রেসিং টেবিলের ড্রয়ার থেকে কিছু কাচের চুড়ি বেড়িয়ে আসে … মাঝে মাঝে পুরনো গল্পের বইটা হাতে নিলে, দুই একটা গোলাপের পাপড়ি বেরিয়ে আসে … মাঝে মাঝে ফেবুর পুরনো পোস্টে চোখে পড়ে Facebook User এর একটা কমেন্টঃ
“দুষ্টু ছেলে !! তুমি নীল শার্ট পরে না আসলে তোমাকে পিটায়ে ভর্তা বানাবো !!”
ফোনবুকে কারো নাম্বার খুজতে গিয়ে হুট করে সামনে চলে আসে তার নাম …টিএসসির মোড়ে চায়ের দোকানের সামনের জায়গাটা মাঝে মাঝে ধক করে এসে বুকে লাগে … প্রচন্ড রোদে রিকশার হুড তুলে দিতেই কীসব জানি মনে পড়ে যায় !!
তখন কয়েক সেকেন্ডের জন্য ভেতরটা শূন্য হয়ে আসে … পথ চলতে গিয়ে কেমন জানি একটা হোচট খেতে হয় … পিছন থেকে কেউ একজন ডাকে … নিশ্বাস বন্ধ করে ছেলেটা ভাবে, “তাকাবো ?? পেছনে তাকাবো ??”
একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে মেয়েটা চোখ বন্ধ করে ফেলে … তারপর হাতের উলটো পিঠ দিয়ে চোখটা মুছে আবার সব ভুলে গিয়ে পথ চলতে থাকে !!
এই পথ চলার মাঝের থমকে যাওয়া মূহুর্তগুলার কথা কেউ জানে না … কেউ টের পায় না … কেউ না !!
… … …
কেউ কাউকে ছাড়া বাঁচবে না – খুব বাজে রকমের মিথ্যা এইটা … সবাই বেঁচে থাকে … সবাই খুব ভালোভাবেই বেঁচে থাকে … মরে যায় শুধু স্বপ্নগুলো !!
মরে যাওয়া স্বপ্নগুলো মাঝে মাঝেই তাই অতীত নিয়ে এসে বিরক্ত করে মানুষের নতুন জীবনে … কয়েক মূহুর্তের জন্য ভেতরটা ওলট পালট করে দিয়ে যায় … তারপর ছেলেটা আর মেয়েটা আবার ওলট পালট হওয়া ভেতরটা গুছিয়ে নিয়ে হাসিমুখে বেঁচে থাকে !!
———————————-
অসাধারণ গল্পটি লিখেছেন প্রতিভাবান তরুণ লেখক “মুশফিকুর রহমান আশিক“, লেখকের অনুমতিক্রমে গল্পটি প্রকাশ করা হলো।
আমাদের কাছে পাঠাতে পারেন আপনার ছোট গল্প, এখানে।
This post was last modified on জুলাই ২২, ২০১৪ 8:35 অপরাহ্ন
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ ১১তম বারের মতো বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ ঢাকাই সিনেমার চিত্রনায়িকা অপু বিশ্বাস এবার নতুন এক পরিচয়ে হাজির…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ পাকিস্তানের উত্তর ওয়াজিরিস্তানের স্পিনওয়াম এলাকায় সন্ত্রাসীদের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে একজন লেফটেন্যান্ট…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ একদিকে ইরানের হামলা আর অন্যদিকে জীবন বাঁচাতে বাঙ্কারে আশ্রয়। তবে…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ শুভ সকাল। রবিবার, ৬ অক্টোবর ২০২৪ খৃস্টাব্দ, ২১ আশ্বিন ১৪৩১…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ আমরা জানি ঘুমের ঘোর কাটতে বেশ সময় লাড়ে। অনেকক্ষণ ঘুম…