ঈশ্বরদীর আবিষ্কৃত সুড়ঙ্গ: কিছুদূর এগিয়েই থেমে গেছে: এখানে গড়ে উঠতে পারতো পর্যটন কেন্দ্র!

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ ঈশ্বরদীর লক্ষ্মীকুন্ডার সেই আবিষ্কৃত সুড়ঙ্গ কিছুদূর এগিয়েই থেমে গেছে। প্রাচীন স্থাপত্যের এই নিদর্শন আবিষ্কৃত হওয়ার পর রাজশাহী বিভাগ প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের কর্মকর্তারা গবেষণা শুরু করেন। কিছুটা খোড়েন। সেখানে বেশ কিছু নিদর্শন দেখাও যায়। কিন্তু হঠাৎ করেই সেই খনন কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়। অথচ এখানে গড়ে উঠতে পারতো পর্যটন কেন্দ্র!

গত বছর ২২ ডিসেম্বর মাটির প্রায় ২৫ ফুট নীচে নীলকুঠির ধ্বংসাবশেষ এই সুড়ঙ্গটি আবিষ্কৃত হয়। লক্ষ্মীকুণ্ডা ইউনিয়নের নূরুল্লাপুর গ্রামের এক ব্যক্তি নিজ বাড়িতে পুকুর খোড়ার সময় এই প্রাচীন নিদর্শনের সন্ধ্যান পান। এ খবর অত্র এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে হাজার হাজার মানুষ ভিড় জমাতে থাকেন প্রাচীন এই নিদর্শন এক নজর দেখার জন্য। ওই দিনই ঈশ্বরদী উপজেলা নির্বাহী অফিসার খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে পুলিশ মোতেয়ন করেন। সরকারি প্রত্নতত্ত্ব আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন তিনি।

Related Post

সেই মোতাবেক গত ২৫ ডিসেম্বর রাজশাহী বিভাগ প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের আঞ্চলিক পরিচালক বদরুল আলমসহ ৩ সদস্যের একটি পরিদর্শন টীম ঈশ্বরদীর লক্ষ্মীকুণ্ডার ওই নিদর্শন এলাকা পরিদর্শন করেন। পরিদর্শন টীমের অন্য সদস্যরা হলেন প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের সার্ভেয়ার লোকমান হোসেন ও ফটোগ্রাফার আবুল কালাম আজাদ।

ঘটনাস্থাল পরিদর্শন শেষে বদিউল আলম সেসময় সাংবাদিকদের জানান, এখানে ব্রিটিশ আমলে নির্মিত একটি রাজবাড়ী ছিল। এই রাজবাড়ী এখন থেকে অন্তত ২শ’ বছর আগে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। ৫ ফুট চওড়া ও ৭০ ফুট লম্বা এই সুড়ঙ্গপথটি রাজবাড়ী থেকে পুকুরের সঙ্গে যুক্ত ছিল। তিনি এই বিষয়ে আরও বলেন, তারা রাজবাড়ীর মেঝে, বিভিন্ন সাইজের ইট, প্রাচীরের ধ্বংসাবশেষ ও সেই সময়ের একটি পারফিউমের বোতল থেকে আলামত সংগ্রহ করেছেন। তিনি বলেন, এই পুরাকীর্তি খননের পর গবেষণা করলে আরও বিস্তারিত জানা যাবে।

এরপর দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হয় কিন্তু বাস্তবে কোনো ফল আসেনি। প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের তত্ত্বাবধানে খোড়াখুড়ি করা হয়। কিন্তু তারা তেমন কোনো কিছু উদ্ধার করতে পারেননি। সুড়ঙ্গ এলাকা খুড়েতে খুড়তে মাঝপথে খোড়া বাদ দিয়ে বন্ধ করে দিয়েছেন খোড়ার কাজ। এলাকাবাসী প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের কর্মকর্তাদের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তারা বলেছেন, ‘এখানে আর কিছু নেই। এখানে শুধু একটি ড্রেন রয়েছে।’


শুরুর স্থান থেকে এখানে এসেই শেষ করা হয়েছে খোড়ার কাজ। অথচ এর পেছনেও রয়েছে আরও নিদর্শন!

যেটিকে ড্রেন বলা হচ্ছে সেটির মধ্যে দিয়ে মানুষ প্রবেশ করতে পারবে। ওই জমির সঙ্গে আত্মীয়তা সূত্রে আবদ্ধ পারভেজ নামে এক ব্যক্তি বলেন, যেটিকে ড্রেন বলা হচ্ছে সেটির মধ্যে দিয়ে মানুষ যেতে পারে। তাছাড়া সেটিও অসম্পূর্ণ রেখে মাটি চাপা দিয়ে কাজ বন্ধ করা হলো। এলাকাবাসী মনে করে ওই থেমে যাওয়া স্থানে খোড়া অব্যাহত রাখলে এই রহস্যের কুল-কিনারা হতো। পূর্ব দিকের পুরোটা খুড়লে বেরিয়ে আসতো আরও অনেক কিছু।


এই গেটটি দেখলে কি মনে হবে এটি একটি ড্রেন?

বিষয়গুলো নিয়ে আলাপের জন্য রাজশাহী বিভাগ প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের আঞ্চলিক পরিচালক বদরুল আলমের সঙ্গে সেলফোনে বার বার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার সেলফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।

কি ইতিহাস রয়েছে এই প্রাচীন নিদর্শনের?

এ বিষয়ে জমির একজন মালিক খন্দকার খায়রুজ্জামানের সঙ্গে সেল ফোনে আলাপ করে জানা যায় এখানকার ইতিহাস সম্পর্কে। তিনি জানান, কথিত আছে বৃটিশ আমলে এই বাড়িটি নীলকর শাসকদের অধিনচ্ছ ছিল। পরবর্তীতে বৃটিশরা চলে যাওয়ার সময় জমিদারদের কাছে এই জায়গা হস্তান্তর করেন। খায়রুজ্জামান জানান, যে জমিদারের কাছে এটি হস্তান্তর করা হয় তার নাম অন্তিম কুমার মজুমদার ওরফে অনন্ত কুমার মজুমদার। ১৯৪৭ সালের হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গার সময় ওই জমিদারের ৩ ভাইকে মেরে ফেলা হয়। এরপর তার বাবা খন্দকার হামিদ মওলানাকে হস্তান্তর করা হয় এই বসতভিটাসহ জমিগুলো। তারই ৩ ছেলে খন্দকার খায়রুল বাসার, খন্দকার খায়রুল ইসলাম ও খন্দকার খায়রুজ্জামান বর্তমানে এই জমির মালিক।

বর্তমানে এই জমির মালিকরা যে জায়গায় বসবাস করছেন এর নীচেও রয়েছে জমিদার বাড়ির অংশ। উপরে ঘর-বাড়ি করা হলেও নীচে আদি নিদর্শন নাকি বিদ্যমান।

এখানে গড়ে উঠতে পারে একটি পর্যটন কেন্দ্র

ঈশ্বরদীবাসী মনে করে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ সঠিকভাবে গবেষণা করলে এটি হতে পারতো একটি পর্যটনের উপযুক্ত স্থান। দেশ-বিদেশ থেকে বহু পর্যটক ঈশ্বরদী আসতেন। শত শত বছর আগের এই নিদর্শন দেখে মানুষ অভিভূত হতেন। কিন্তু কি কারণে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ এই স্থানের খোড়াখুড়ির কাজ বন্ধ করলেন তা বোধগম্য নয়। এখন ঈশ্বরদীবাসীর একমাত্র দাবি, ঈশ্বরদী উপজেলার লক্ষ্মীকুণ্ডার ওই প্রাচীন নিদর্শন স্থানটি সঠিকভাবে পর্যবেক্ষণ করে পর্যটনের স্থান হিসেবে চিহ্নিত করা হোক। এখানে গড়ে উঠুক পর্যটনের স্থান। যার মধ্যদিয়ে পুরো বাঙালি জাতির কৃষ্টি-কালচার মানুষের জানা সম্ভব হবে।

# ছবি ও তথ্য সংগ্রহে সহযোগিতা করেছেন পারভেজ প্রামানিক

দি ঢাকা টাইমসে প্রকাশিত পূর্ব সংবাদগুলো:

‘ঈশ্বরদীতে প্রাচীন সুড়ঙ্গ সন্ধানে চাঞ্চল্য: প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ ভিড় করছেন’
‘ঈশ্বরদীর প্রাচীন সুড়ঙ্গে প্রত্নতত্ত্ব টীম : ব্রিটিশ আমলে নির্মিত একটি রাজবাড়ী ছিল এখানে’

This post was last modified on অক্টোবর ২২, ২০১৪ 8:52 পূর্বাহ্ন

স্টাফ রিপোর্টার

Recent Posts

গাজার যুদ্ধ বন্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কথা শুনছে না ইসরায়েল!

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ ফিলিস্তিনের সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি এবং জিম্মি চুক্তি করতে…

% দিন আগে

ভারতে গাধার দুধ বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ৬ হাজার টাকা লিটার!

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ আমাদের সমাজে গাধা নামক প্রাণীটি কঠোর পরিশ্রমের রূপক হিসেবে প্রচলিত।…

% দিন আগে

চট্টগ্রামের একটি নৈসর্গিক প্রাকৃতিক দৃশ্য

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ শুভ সকাল। রবিবার, ৫ মে ২০২৪ খৃস্টাব্দ, ২২ বৈশাখ ১৪৩১…

% দিন আগে

সঠিক নিয়ম মানলে আম খেয়ে পেটের কোনো সমস্যা হবে না

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ পরিমাণে একটু বেশি আম খেলেই গ্যাসের মতো সমস্যা হয় অনেকের।…

% দিন আগে

বাংলা ভাষার প্রথম স্মার্টওয়াচ এবার বাজারে এলো

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ বাজারে এলো বাংলা ভাষার স্মার্টওয়াচ। দেশীয় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান আজওয়া টেকের…

% দিন আগে

আবারও অনিরুদ্ধর সিনেমায় অভিনয় করবেন জয়া

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ বলিউডের বহুল আলোচিত সিনেমা ‘পিংক’ এর নির্মাতা অনিরুদ্ধ রায় চৌধুরীর…

% দিন আগে