সম্ভাবনাময় খাত চামড়া শিল্প টিকিয়ে রাখতে করণীয়

দি ঢাকা টাইমস্‌ ডেস্ক ॥ বিপুল সম্ভাবনাময় খাত হলো চামড়া শিল্প। এই চামড়া শিল্প চলছে ঢিমেতালে। নানা সমস্যায় জর্জরিত হয়ে এই খাতটি আজ ডুবতে বসেছে।

গত কোরবানীর ঈদের আশা করা হয়েছিল যেভাবে সেভাবে লক্ষ্য অর্জন হয়নি। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে সারাবছরে যে পরিমাণ চামড়া আহরণ হয় তার অর্ধেকই আসে এই কোরবানীর ঈদ থেকে। প্রচুর পরিমাণে গরু, ছাগল, ভেড়া ও অন্যান্য পশু কোরবানী হয়ে থাকে। তবে পাশ্ববর্তী দেশ ভারতে প্রচুর চামড়া চোরাচালানীর মাধ্যমে পাচার হয়ে যায়।

চামড়া এবং চামড়াজাত পণ্য রফতানি করে আমাদের যে পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করার কথা তা আসছে না। এর কারণ এই শিল্পটিকে এখনও সেভাবে গুছিয়ে তোলা সম্ভব হয়নি। পুরাতন ঢাকা থেকে ট্যানারিগুলো সরিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ আগে থেকেই নেওয়া হয়েছে। কিন্তু সেগুলো এখনও পুরোপুরিভাবে কাজে আসেনি। ট্যানারি ব্যবসায়ীরা এখনও আর্থিক সংকটের কারণে ব্যবসা করতে পারছেন না এমন অভিযোগ করেন। সব মিলিয়ে এই শিল্প যতখানি এগিয়ে যাওয়ার কথা তা আগাচ্ছে না।

বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে এই শিল্পে। কিন্তু নানা সমস্যায় চামড়া শিল্পের যথাযথ বিকাশ হচ্ছে না। এক তথ্যে জানা যায়, শুধু পশুর শরীর থেকে সঠিক পদ্ধতিতে চামড়া ছাড়ানো এবং রক্ষণাবেক্ষণের অভাবেই প্রতিবছর মোট চামড়ার ১৮ হতে ২০ শতাংশই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। প্রতিবছরের মতো এবারও কোরবানী ঈদে বিপুল পরিমাণ চামড়া পাচার হয়ে গেছে বলে ট্যানারি মালিকরা মনে করছেন। যে কারণে ক্ষতি হচ্ছে হাজার হাজার কোটি টাকা। কারণ পশু জবাইয়ের ২৪ হতে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে লবণ না লাগানো হলে ওইসব চামড়ার ১৫ শতাংশও কাজে আসে না।

সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, রফতানি খাতে ৯ শতাংশেরও বেশি অবদান রাখা এই চামড়া খাতকে শক্তিশালী করতে ট্যানারি কারখানার আধুনিকায়ন, আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতার সক্ষমতা বাড়ানো, চামড়া শিল্পে ব্যবহৃত উপকরণের উতৎপাদন বৃদ্ধি, সঠিক পদ্ধতিতে পশুর শরীর হতে চামড়া ছাড়ানোর জন্য প্রশিক্ষণ, সংরক্ষণ, পাচাররোধে কার্যকরি ব্যবস্থা গ্রহণসহ ইত্যাদি বিষয়ে প্রচারণা এবং সচেতনতা বৃদ্ধিতে উদ্যোগ নেওয়া জরুরি।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী দেখা যায়, দেশে সংগ্রহকৃত চামড়ার ৪৮ শতাংশ পাওয়া যায় কোরবানির ঈদের সময়। বাকিটা পাওয়া যায় সারাবছরের জবাইকৃত পশু হতে।

ট্যানারি মালিকরা জানিয়েছেন, গ্রীষ্মকালে কোরবানী ঈদ হলে চামড়া সংরক্ষণ করা বেশ কঠিন হয়ে পড়ে। এক্ষেত্রে চামড়া ছাড়ানোর ১০ হতে ১২ ঘণ্টার মধ্যেই লবণ দিয়ে তা সংরক্ষণ করতে হয়। কিন্তু পরিবহনে দীর্ঘসূত্রিতা, অতিমুনাফা প্রবণতার কারণে অনেক সময় চামড়ায় যথাসময়ে এবং পরিমাণ মতো লবণ দেওয়া হয় না। আবার সঠিক তাপমাত্রায় (৪ হতে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস) সংরক্ষণ না করার কারণে বহু চামড়া নষ্ট হয়ে যায়।

২০১৩-১৪ অর্থবছরে চামড়া এবং চামড়াজাত পণ্য রফতানি হতে আয় হয় ১১২ কোটি ৪১ লাখ ৭০ হাজার মার্কিন ডলার। তার আগের বছর ২০১২-১৩ অর্থবছরে এর পরিমাণ ছিল, ৯৮ কোটি ৬ লাখ ৭০ হাজার মার্কিন ডলার। আবার তার আগের বছর ২০১১-১২ অর্থবছরে রপ্তানি হয় মাত্র ৭৬ কোটি ৫০ লাখ ৩০ হাজার মার্কিন ডলারের পণ্য।

বর্তমানে বাংলাদেশের চামড়া রফতানি হয় ইটালি, নিউজিল্যান্ড, পোল্যান্ড, ফ্রান্স, জার্মানি, বেলজিয়াম, কানাডা, যুক্তরাজ্য এবং যুক্তরাষ্ট্রে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রফতানি করা হয়ে থাকে। এসব চামড়াজাত পণ্যের মধ্যে রয়েছে জুতা, ব্যাগ, বেল্টসহ প্রতিদিনের ব্যবহার্য নানা পণ্য। বিশ্বব্যাপী চামড়া শিল্পের রফতানি বাজার রয়েছে ২৩ হাজার কোটি ডলারের মতো। সেখানে বাংলাদেশ রফতানি করে মাত্র ১শ’ কোটির কিছু বেশি ডলারের পণ্য। আগামী ১০ বছরে এই রপ্তানি ৭শ’ কোটি ডলারে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

এক তথ্যে জানা যায়, ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের আগে পর্যন্ত বর্তমান বাংলাদেশ অঞ্চলের প্রায় সকল কাঁচা চামড়াই কোলকাতায় প্রক্রিয়াজাতকরণের জন্য প্রেরণ করা হতো। পাকিস্তান আমলে স্বাধীনতার আগে ১৯৬৫ সালে এদেশে মোট ৩০টি ট্যানারি কারখানা ছিল। তবে বাংলাদেশ একাত্তরে স্বাধীন হলেও মূলত নব্বই-এর দশকের শুরু হতে এই চামড়া শিল্প বিশেষ গুরুত্ব পেতে শুরু করে। যদিও এ শিল্পে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে কর্মরত প্রায় ৮ লাখ শ্রমিকের অবস্থা এখনও শোচনীয়। কাজের সময় কোনওরকম মাস্ক ব্যবহার না করা এবং চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণ কাজে ব্যবহৃত রাসায়নিক সম্পর্কে তাদের কোন সচেতনতা না থাকার কারণে প্রতিবছর বহু শ্রমিক আক্রান্ত হচ্ছে নানা কঠিন রোগ ব্যধিতে।

নানা সমস্যা সত্ত্বেও এদেশের চামড়া শিল্পের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। ভালো মানের কাঁচামালের প্রাপ্যতা এবং সস্তা শ্রমিকই এগিয়ে নিয়ে গেছেন এ খাতটিকে। চলতি ২০১৪-১৫ অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে গত অর্থবছরের তুলনায় চামড়া এবং চামড়াজাত পণ্য রফতানি কমলেও গত কয়েক বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে এই খাতের রফতানি আয়। এটিকে টিকিয়ে রাখলে দেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক গতি আসবে বলে মনে করা হচ্ছে।

This post was last modified on অক্টোবর ২০, ২০১৪ 10:28 পূর্বাহ্ন

স্টাফ রিপোর্টার

Recent Posts

চমক দেখাতে আসছে ‘পুষ্পা-২’

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ দক্ষিণী সিনেমা ‘পুষ্পা’র তুমুল জনপ্রিয়তার পর মুক্তি পেতে চলেছে ‘পুষ্পা-২’।…

% দিন আগে

পাহাড়ি রাস্তায় লাফিয়ে চলা মেয়েটির ছবিতে কী কী পরিবর্তন আছে তা বলতে পারবেন?

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ ছোট বেলায় কিশোর পত্রিকার পাতায় আমরা অনেকেই এমন খেলা খেলেছি।…

% দিন আগে

সিলেটের সাদা পাথর: এক অপার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ শুভ সকাল। শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪ খৃস্টাব্দ, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১…

% দিন আগে

গরমে করলার সঙ্গে কয়েকটি খাবার খেলে উপকার পাবেন না: কোন সেই খাবার?

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ আমরা জানি করলা খেলে সুস্থ থাকে শরীর। তবে সঙ্গে বা…

% দিন আগে

হুমকির মুখে সফটওয়্যার এবং স্টার্টআপ খাতের উদ্যোগ

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ এই বছরের জুন মাসে শেষ হচ্ছে সফটওয়্যার ও তথ্যপ্রযুক্তি সার্ভিস…

% দিন আগে

এবার মিউজিক ভিডিওতে তোরসা

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ শাহ আবদুল করিম এবং হাসন রাজার ভাটির দেশ থেকে ইট-পাথরের…

% দিন আগে