Categories: সাধারণ

নিরিবিলি হোটেল ও এক তোতা মিয়ার কাহিনী

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ রাজধানী ঢাকার বাইরে এমন অনেক ব্যক্তি আছেন যাদের এমন প্রচার প্রপাগান্ডা না থাকায় আমরা জানতেও পারি না। নিরিবিলি হোটেল ও এমনই এক তোতা মিয়ার কাহিনী আজ আপনাদের সামনে তুলে ধরছি।

আমরা ঢাকায় বসে নান্না বাবুর্চি কিংবা ফখরুদ্দিন বাবুর্চির খানদানি রান্না খাওয়ার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়ি। কিন্তু এই রাজধানী ঢাকার বাইরেও এমন অনেক ব্যক্তি আছেন যাদের এমন প্রচার প্রপাগান্ডা না থাকায় আমরা জানতেও পারি না। নিরিবিলি হোটেল ও এমনই এক তোতা মিয়ার কাহিনী আজ আপনাদের সামনে তুলে ধরছি।

গাজীপুর জেলাধীন কাপাসিয়া উপজেলার টোক ইউনিয়নের টোক নয়ন বাজারে টোক বাজারের পূর্ব পাশে অবস্থিত বিখ্যাত এই নিরিবিলি হোটেল। গাজীপুরের কাপাসিয়া, কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া এবং ময়মনসিংহের গফরগাঁও-এর মিলন স্থলে এই টোক বাজার অবস্থিত হওয়ার কারণেই মূলত বিখ্যাত হয়েছে এটি। তবে শুধু যোগাযোগ ব্যবস্থায় নয়, বিখ্যাত হওয়ার আরও সবচেয়ে বড় কারণ তোতা মিয়ার নিরিবিলি হোটেলের ৭০ পদের ভাজি ভর্তা। সচরাচর এমনটি আপনি কোনো হোটেলে পাবেন কিনা সন্দেহ। মফস্বল শহরের মধ্যে শুধুমাত্র একটি হোটেল ছিল বগুড়ার আকবরীয়া হোটেলে। সেখানে শুধু স্পেশাল ভর্তা পাওয়া যেতো। এখন সেটি করা হয় কি না জানা নাই।

তোতা মিয়ার রান্নার কথা মানুষের মুখে মুখে। খাবার মান আর স্বাদ নিয়ে শুধু একটাই কথা মনে হবে এতো অমৃত। রেখে দেবার মতো কোন আইটেমই চোখে পড়বে না। মনে রাখার মতো কিছু আইটেম যেমন:

মাংস: হাসের মাংস, মুরগীর মাংস, কবুতরের মাংস, খাশির মাংস
মাছ: ইলিশ মাছ, শোল মাছ, রুই মাছ, চিংড়ি মাছ, বাতাসী মাছ, বাইন মাছ, গুড়া মাছ, শুটকি মাছ
শাক: লাল শাক, পুই শাক, সর্ষে শাক, পাট শাক, মুলা শাক
ভর্তা: আলু ভর্তা, সর্ষে ভর্তা, কালো জিরা ভর্তা, শুটকি ভর্তা, ডিম ভর্তা, মরিচ ভর্তা
আচার: বড়ই আচার, জলপাই আচার, অন্যান্য মিক্সড আচার
ডাল: মাসকালাই, মশুর ডাল, মুগ ডাল
সবজি: অন্তত ১২ রকমের মিক্সড সবজি, ঝিংগা, চিচিংগা, পটল, আলু, সীম, করলা ইত্যাদি।
তোতা মিয়ার নিরিবিলি হোটেলের ৭০ পদের ভাজি ভর্তা যে একবার খেয়েছে সে জীবনেও ভুলতে পারবে না।

তোতা মিয়ার হোটেলে ভাত, মাছ ছাড়াও রয়েছে স্পেশাল পান। খোঁজ নিয়ে জানা যায় পান ও তোতামিয়ার হোটেল হতে কোনো অংশে কম যায় না। ৪০ রকমের আইটেমের বেশি জিনিসের পান তৈরি হয় এখানে। বিখ্যাত সেই শাহী পানের জুড়ি নেই। আইটেম আর বানানো দেখে মাত্র ২০ টাকা মুল্যের পান, মূল্যের দিক দিয়ে খুব কমই মনে হলো। যে কেও এখানকার পান খেলে সারাজীবন মনে রাখবেন।

কোথায় থেকে উঠে এলেন এই তোতা মিয়া

আট ভাইয়ের সংসারে তোতামিয়ার পঞ্চম। তোতামিয়ার জন্ম এই টোক নয়ন এলাকাতেই। তিনি প্রায় ২০ বছর আগে কক্সবাজের এক হোটেলে বয় হিসেবে কাজ শুরু করেন। আর সেখান হতে চট্টগ্রামের একটি হোটেলে দীর্ঘদিন ধরে বাবুর্চি হিসেবে কাজ করেন। রান্নার হাত ভালো থাকায় চট্টগ্রামের ওই হোটেলের সুনাম চারিদিকে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। সেইসঙ্গে হোটেলের বেচা-বিক্রিও বেড়ে যায়। তোতামিয়ার রান্নার খ্যাতি এক সময় এই টোকের লোকজনের কানেও পৌঁছে যায়। এক পর্যায়ে তারা তোতামিয়াকে অনুরোধ করেন, টোক নয়ন বাজারে একটি খাবারের হোটেল দেওয়ার জন্য।

আর সে অনুরোধে সাড়া দিয়ে ৮ বছর আগে তোতা মিয়া টোক নয়ন বাজারে নিরিবিলি পরিবেশে চালু করেন নাম দেন ‘নিরিবিলি হোটেল’। তোতা মিয়া ও তার ছেলে মিলে চালান হোটেলটি। সব রান্নার তত্বাবধানে থাকেন তোতামিয়ার স্ত্রী সালেহা বেগম। দুজনে মিলে বাড়িতে রান্না করে হোটেলে নিয়ে আসেন। প্রতিদিন সব মিলিয়ে অন্তত ৭০টি আইটেম তৈরি করা হয়। সকাল ৮টা হতে একটানা রাত ২টা পর্যন্ত খোলা থাকে তোতা মিয়ার নিরিবিলি হোটেল।

কিভাবে যাবেন

তোতা মিয়ার নিরিবিলি হোটেলে যাওয়ার জন্য ঢাকার গুলিস্তান হতে ঢাকা পরিবহন, প্রভাতী বনশ্রী পরিবহন কিংবা ঢাকার মহাখালী হতে ভাওয়াল পরিবহন, জলসিড়ি পরিবহন, সম্রাট পরিবহন, এগারসিন্দুর পরিবহন, অনন্যা পরিবহন, অনন্যা ক্লাসিক পরিবহন, বন্যা পরিবহন, উজান ভাটি পরিবহনের গাড়ি, কিংবা বিআরটিসির গাড়ি দিয়ে কাপাসিয়া হয়ে টোক নয়ন বাজারে যাওয়া যাবে। আবার গাজীপুর চৌরাস্তা হতে সরাসরি রাজদূত বা পথের সাথী পরিবহনের গাড়িতে করেও টোক নয়ন বাজারে যাওয়া যাবে। মহাখালি হতে টোক বাজারের ভাড়া লাগবে ১১০-১৩০ টাকা। মহাখালি হতে যে কোনো পরিবহনে টোকবাজার পৌঁছাতে প্রায় ৪ ঘন্টা সময় লাগবে। টোক বাজার নেমে বামে ২০০ গজ দুরেই নিরিবিলি পরিবেশে দেখা মিলবে হোটেল নিরিবিলির।

এই স্থানটি বিখ্যাত হওয়ার বেশকিছু কারণ রয়েছে। ব্রহ্মপুত্র নদ আর তার পাশেই ঈসা খাঁর বিখ্যাত দুর্গ এগারসিন্দু আর ইতিহাসের বিখ্যাত ঈশা খাঁ-মানসিংহের যুদ্ধ। এই যুদ্ধ নিয়ে ইতিহাস থেকে যা জানা যায়, ১৫৯৬ সালে বার ভূঁইয়াদের অন্যতম ঈসা খাঁর সঙ্গে মোগল সেনাপতি রাজা মানসিংহের দ্বন্দ্ব-যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এই যুদ্ধ হয় ব্রহ্মপুত্র এবং শীতলক্ষ্যা নদীর সঙ্গমস্থলে বর্তমান ময়মনসিংহ জেলার গফরগাঁও উপজেলার সর্ব দক্ষিণ প্রান্তের টাঙ্গার গ্রামে।

ইতিহাস থেকে জানা যায়, সে সময় শীতলক্ষ্যা নদীর পূর্ব তীরে ছিল রাজা মানসিংহের রাজধানী টোক নগরী। এটির অবস্থান গাজীপুর জেলার কাপাসিয়া উপজেলার উত্তর-পূর্বাংশে অর্থাৎ যেখানে তোতা মিয়ার নিরিবিলি হোটেল অবস্থিত। রাজা মানসিংহ ১৫৯৫ সালে রাজস্থান হতে তার রাজধানী টোক নগরীতে সরিয়ে আনেন। ব্রহ্মপুত্র এবং শীতলক্ষ্যার সঙ্গমস্থলে ব্রহ্মপুত্রের দক্ষিণ তীরে ছিল টাঙ্গাব গ্রাম বা এই টোক নগর। ব্রহ্মপুত্র নদের অপর পাড়ে ছিল ঈসা খাঁর বিখ্যাত দুর্গ এগারসিন্দু। রয়েছে হযরত শেখ সাদী মসজিদ। ইতিহাসখ্যাত এই স্থানটিতে মানুষ আসেন দূর-দূরান্ত থেকে। এখানে ইতিহাসের স্বাক্ষী রয়েছে বহু কিছু। পর্যটকরা তাই আসেন এখানে। মুগ্ধ হন ইতিহাসের সব কৃষ্টি-কালচার দেখে। আর এসব কৃষ্টি-কালচার দেখতে এসে ঢোকেন তোতা মিয়ার নিরিবিলি হোটেলে। অভিভূত হন তোতা মিয়ার খাবার খেয়ে। এতো হাতের যার জস সে কেনো এমন একটি গাঁও গেরামে পড়ে আছেন? তবে এ প্রশ্নের জবাব কারো জানা নেই। তথ্য ও ছবি: somewhereinblog.net এর সৌজন্যে।

This post was last modified on এপ্রিল ৩, ২০১৫ 9:38 অপরাহ্ন

স্টাফ রিপোর্টার

Recent Posts

আইফোনের নতুন গেম ইমুলেটর ডেলটা

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ সম্প্রতি ডেলটা নামে আইফোনের একটি নতুন ইমুলেটর অ্যাপ তৈরি হয়েছে।…

% দিন আগে

চমক দেখাতে আসছে ‘পুষ্পা-২’

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ দক্ষিণী সিনেমা ‘পুষ্পা’র তুমুল জনপ্রিয়তার পর মুক্তি পেতে চলেছে ‘পুষ্পা-২’।…

% দিন আগে

পাহাড়ি রাস্তায় লাফিয়ে চলা মেয়েটির ছবিতে কী কী পরিবর্তন আছে তা বলতে পারবেন?

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ ছোট বেলায় কিশোর পত্রিকার পাতায় আমরা অনেকেই এমন খেলা খেলেছি।…

% দিন আগে

সিলেটের সাদা পাথর: এক অপার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ শুভ সকাল। শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪ খৃস্টাব্দ, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১…

% দিন আগে

গরমে করলার সঙ্গে কয়েকটি খাবার খেলে উপকার পাবেন না: কোন সেই খাবার?

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ আমরা জানি করলা খেলে সুস্থ থাকে শরীর। তবে সঙ্গে বা…

% দিন আগে

হুমকির মুখে সফটওয়্যার এবং স্টার্টআপ খাতের উদ্যোগ

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ এই বছরের জুন মাসে শেষ হচ্ছে সফটওয়্যার ও তথ্যপ্রযুক্তি সার্ভিস…

% দিন আগে