দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ মানুষের সঙ্গে মানুষের বন্ধুত্ব হয়। কিন্তু তাই বলে ভয়ংকর প্রাণী কুমিরের সঙ্গে বন্ধুত্ব! ভাবাই যায় না। কিন্তু বাস্তবে তাই ঘটেছে। মানুষ ও কুমিরের অদ্ভুত বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছে এমন এক গ্রামের গল্প রয়েছে আজ।
বাঘ সিংহের মতো জন্তুর সঙ্গে মানুষের বন্ধুত্বের কাহিনী আমরা দেখেছি। কিন্তু কুমিরের মতো একটি প্রাণীর সঙ্গে মানুষের বন্ধুত্ব বড়ই কঠিন একটি ব্যাপার। তারপরও ঘটেছে। প্রাণিবিজ্ঞানীদের মতে, বুদ্ধিবৃত্তিতে খুবই আদিম প্রকৃতির হওয়ায় কুমির কেবল বেঁচে থাকার প্রয়োজনে, আক্রমণ বা আত্মরক্ষার জন্য সহজাত প্রতিক্রিয়া দেখায়। অন্য কোনো প্রজাতির সঙ্গে বন্ধুত্ব বা সম্পর্ক গড়ে তোলা কুমিরের স্বাভাবিক প্রবৃত্তির মধ্যে পড়ে না। তবে এমন একটি গ্রাম রয়েছে যেখানে মানুষ এবং কুমিরে বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছে। ভুল করেও কোনোদিন কোনো কুমির মানুষকে আক্রমণ করেনি। আবার মানুষও কোনোদিন কুমিরকে হত্যা করেনি।
সংবাদ মাধ্যমের খবরে এই অবিশ্বাস্য ঘটনার খবর পাওয়া গেছে। আফ্রিকা মহাদেশের ঘানার ছোট্ট একটি গ্রামে ঘটে চলেছে বিরল এই ঘটনাটি। ওই গ্রামটির নাম ‘পাগার’। সেখানকার অধিবাসীরা বছরের পর বছর ধরে কুমিরের সঙ্গে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করে চলেছেন। মানুষের পাশাপাশি গ্রামটিতে রয়েছে প্রায় একশ’ কুমির।
প্রাণিবিজ্ঞানীরাও মানুষ ও কুমিরের মধ্যে বিরল এই বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক দেখে রীতিমতো হতবাক। যা তাদের কাছে খুবই রহস্যের একটি বিষয় হিসেবেও বিবেচিত। স্থানীয়দের মতে, তারা বিশ্বাস করেন প্রতিটি গ্রামবাসীর আত্মার সঙ্গেই এক একটি কুমিরের সম্পর্ক। গ্রামবাসী এও বিশ্বাস করে যে, কুমিরগুলো তাদের গ্রামের মৃত আত্মীয়স্বজনেরই আত্মা।
চারিদিকে স্থলপথ বেষ্টিত গ্রাম। ওই গ্রামটি নদী-নালা বেষ্টিত নয়। এখানকার একটি পুকুরেই বসবাস কুমিরগুলোর। ঘটনার শুরুর দিকে তাকালে আরও অবাক হতে হয়। তবে আশ্চর্যের বিষয় হলো আজ হতে কত বছর আগে কুমিরগুলো এই গ্রামে এসেছে সে বিষয়েও তাদের সঠিক কোনো তথ্য জানা নেই।
এলাকার স্থানীয় কিংবদন্তি অনুসারে এই অঞ্চলে প্রথম যে মানুষটি বসবাস করতে এসেছিল সেই মানুষটির দীর্ঘ ভ্রমণে ক্লান্ত এবং তৃষ্ণার্ত হয়ে প্রাণ প্রায় যায় যায় অবস্থা হয়েছিল। এমন সময় একটি কুমিরকে অনুসরণ করে ওই লোকটি পুকুরের সন্ধান পায় ও প্রাণে বেঁচে যায়।
এরপর প্রতিদানে তিনি এই অঞ্চলের কুমিরগুলোকে পবিত্র ঘোষণা করেছিলেন। নিজের লোকজনের কাছে এই প্রাণীকে তিনি একটি বিশেষ সম্মানে অধিষ্ঠিত করেছিলেন। এখনও পাগারে গ্রামে কুমির হত্যা করা বা তাদের আঘাত করা ধর্মীয়ভাবে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় পাগারের কুমিরের গল্প জানতে পেরে দেশ বিদেশের অসংখ্য পর্যটক প্রতিবছর এই গ্রামে আসেন। এ কারণে এটি এখন ঘানার অন্যতম একটি পর্যটন অঞ্চল।
বিশ্বের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রতিদিনই বেশ কিছু পর্যটক এখানে আসেন। তাদের জন্য প্রতিদিন কুমিরের পুকুরে কুমির প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা হয়ে থাকে। কুমিরের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য একজন প্রদর্শক বাঁশি বাজান। তারপর তিনি জীবন্ত মুরগি ছানা দোলাতে থাকেন, যাতে কুমির পানির ওপরে বেরিয়ে আসে। প্রদর্শক কুমিরকে মুরগি ছানা খাওয়ান। তারপর শুরু হয় সবচেয়ে অবিশ্বাস্য ব্যাপার। ইচ্ছুক পর্যটকরা এই সময় কুমিরের শরীর ছুঁতে পারেন। কুমিরকে আদর করতে পারেন। এমনকি অনেকে আবার কুমিরের পিঠে চড়েও বসেন!
তবে কুমিরের এই অদ্ভুত আচরণ প্রাণিবিজ্ঞানীদের বুড়ো আঙুল দেখালেও, প্রাণিবিজ্ঞানীরা কিন্তু হাত পা গুটিয়ে বসে নেই। তারাও এই রহস্যময় এবং অদ্ভুত আচরণের কারণ বের করার জন্য প্রাণান্তর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
চিরকাল যে কুমির মানুষের রক্তের গন্ধ পেলেই ছুটে আসে, মুহূর্তের মধ্যেই ছিন্নভিন্ন করে ফেলে মানব শরীর। সেই কুমির কিনা মানুষকে এতো কাছে পেয়েও নিরব-নিশ্চুপ। ভাবুন তো একবার!
ভিডিওতে দেখুন সেই অবিশ্বাস্য কুমিরদের
This post was last modified on জুলাই ৯, ২০২১ 10:23 অপরাহ্ন
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ এই শীতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে চাইলে এই ভেষজগুলো প্রতিদিনের…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় ভিডিও স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম হলো ইউটিউব। অনলাইনে আয়…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ আর্থ্রাইটিস, অর্থাৎ বাত যে শিশুদেরও হয়, সে কথা অনেকেই হয়তো…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ ঢাকাই চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় নায়ক শাকিব খানের সঙ্গে প্রথমবারের মতো 'প্রিয়তমা'…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের লুইজিয়ানার নিউ অরলিন্স শহরের ফ্রেঞ্চ কোয়ার্টারে বর্ষবরণের উদ্যাপনে…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ আমরা অনেক প্রতিযোগিতা দেখে থাকি। তবে আজ এমন এক বিচিত্র…