ঢাকা টাইমস্ রিপোর্ট ॥ অগ্নিঝরা সেই মার্চ মাস শুরু হয়েছে। বাঙালি জাতির জন্য এই মাসটি একটি গুরুত্বপূর্ণ মাস। ১৯৭১ সালের এই মার্চ মাসে শুরু হয় আন্দোলন। জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক জনসভা এবং এর পরবর্তী পর্যায়ে ২৫ মার্চের কালরাত্রী এবং ২৬শে মার্চ স্বাধীনতা ঘোষণা বাঙালি জাতিকে একটি নিজস্ব সত্তা ফিরিয়ে দিতে সাহায্য করেছিলো। সেই মার্চের দিনগুলোর কথা তাইতো এই বাঙালি জাতি কোনদিন ভুলতে পারবে না। মার্চের সেই আন্দোলনের সূত্র ধরে এদেশ ১৬ই ডিসেম্বর স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। আজ আমাদের একটি পতাকা আছে, একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আমরা বাঙালি জাতি বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারছি, এটি আমাদের কাছে কম পাওনা নয়। বিশ্বের প্রতিটি মানুষ আজ যানে বাঙালিরা লড়তে পারে, দেশ-মা-মাটির জন্য নিজের রক্ত দিতেও পিছপা হয় না।
্আমাদের ইতিহাসের অসংখ্য ঘটনার উজ্জ্বল সাক্ষী একাত্তরের অগ্নিঝরা মার্চ। এই মার্চ মাসের রক্তের স্রোতে ভেসেই এসেছে বাঙালির কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা। আন্দোলন-সংগ্রামের দীর্ঘ পথ বেয়ে মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে এক সাগর রক্তের বিনিময়ে এই অর্জন। ইতিহাস সৃষ্টিকারী এই মাস বাঙালির হূদয়ে চিরজাগরূক- চিরভাস্বর। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর থেকে দীর্ঘ ২৪ বছরের আন্দোলন-সংগ্রাম, শোষণ-বঞ্চনা, জেল-জুলুম-অত্যাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিল বাঙালি। ওই সময়ের রাজনৈতিক টানাপোড়েনের ধারাবাহিকতার মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলার অবিসংবাদিত নেতা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে একক নেতৃত্ব গ্রহণ করেছিলেন। তৎকালীন পাকিস্তান জাতীয় সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠ দল আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের নেতা এবং পূর্ববাংলার গণমানুষের মুকুটহীন সম্রাট হিসেবে বঙ্গবন্ধু ঘোষণা করেন- ‘এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানের জনসমুদ্রে ওই ঐতিহাসিক ঘোষণার আলোকে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বঙ্গবন্ধু তার সাংবিধানিক অধিকার থেকেই ২৬ মার্চ মধ্যরাতে বিডিআরের ওয়্যারলেসের মাধ্যমে দেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন।
বাঙালির শৌর্য-বীর্যের ইতিহাস হাজার বছরের। ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন পলাশীর আম্রকাননে মীরজাফর গংয়ের ষড়যন্ত্র আর বিশ্বাসঘাতকতায় বাংলার স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত হয়েছিল। পরাজয়ের গ্লানির ২১৪ বছর পর সেই সূর্যের রক্তিম আভা পুনরায় উদ্ভাসিত হয়েছিল বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার মধ্য দিয়েই। ভাষা, সংস্কৃতি, কৃষ্টি, সভ্যতা, শিক্ষা, সামাজিকতা এবং মন-মানসিকতায় বাঙালি তথা পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ ছিল পশ্চিম পাকিস্তানিদের চেয়ে সম্পূর্ণ আলাদা। সেই ১৪শ’ মাইল দূরের ভিন্ন সংস্কৃতির মানুষদের কর্তৃত্ব বাঙালি কোনদিনই মেনে নিতে পারেনি। তাই মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর হিন্দু-মুসলমান দ্বিজাতিতত্ত্বের উদ্ভট সংজ্ঞায় প্রতিষ্ঠিত পাকিস্তান নামক দেশের যাত্রালগ্ন থেকেই শুরু হয় বাংলা ভাষার মর্যাদার লড়াই এবং বাঙালির স্বাধিকারের সংগ্রাম। মাতৃভাষা বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দেয়ার দাবিতে ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ বাংলা ভাষা দিবস উদযাপনের মধ্য দিয়ে বাঙালির অধিকার আদায়ের যে আন্দোলন ও সংগ্রাম শুরু হয়, তার সফল পরিসমাপ্তি ঘটে ১৯৫২ সালের ভাষা শহীদদের বুকের তাজা রক্তস্রোতের পথ ধরে একাত্তরের ২৬ মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণার মধ্য দিয়ে। সেই বায়ান্নর একুশে ফেব্রুয়ারিতে সর্বোচ্চ আত্মত্যাগের বিনিময়ে মাতৃভাষা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করেই বাঙালি জাতি খুঁজে পায় তাদের হারানো হাজার বছরের স্বপ্নসাধ স্বাধীনতা উদ্ধারের মূলমন্ত্র। চুয়ান্নর নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের কাছে মুসলিম লীগের ভরাডুবি, ছাপ্পান্নতে এসে সংবিধানে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতিদান, বাষট্টিতে শিক্ষা কমিশন আন্দোলন, ছিষট্টিতে লাহোরে ৬ দফার স্বাধিকার আদায়ের প্রস্তাব, আটষট্টিতে বঙ্গবন্ধুসহ তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে ঐতিহাসিক আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা, ঊনসত্তরে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান- এসব কিছুই অবদান রাখে বাঙালির স্বাধীনতা অর্জনের ধারাবাহিক সংগ্রামে।
নানা বিতর্ক এবং বিভ্রান্তি শেষে দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিমকোর্ট স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে বঙ্গবন্ধুর ২৬ মার্চের ঐতিহাসিক ঘোষণাকেই সঠিক ও প্রমাণিত সত্য বলে যে রায় দিয়েছেন, সেটিই এখন আইন। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ গভীর রাতে পাক হানাদার বাহিনী ঘুমন্ত ও নিরস্ত্র বাঙালি জাতির ওপর হায়েনার মতো ঝাঁপিয়ে পড়ে মানব ইতিহাসের যে জঘন্যতম হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিল, সেই পৈশাচিকতার ওপর ভর করেই ঘুরে দাঁড়ায় বাংলার অকুতোভয় দামাল সন্তানরা। অবস্থা টের পেয়ে বঙ্গবন্ধু মধ্যরাতে গ্রেফতারের আগেই সুকৌশলে ঘোষণা করেন ‘বাংলাদেশের আনুষ্ঠানিক স্বাধীনতা’। পরবর্তী সময়ে ২৭ মার্চ তৎকালীন মেজর জিয়াউর রহমান স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতার সেই ঘোষণা পাঠ করেন।
আমাদের জাতীয় ইতিহাসে তাইতো এই মার্চ মাসটি স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে চিরদিন। বাঙালি ও বাঙালি সত্ত্বা যতদিন রবে, ততদিন এই মার্চ মাস বাঙালিরা শ্রদ্ধা ভরে স্মরণ করবে। কারণ এই মাসটি বাঙালিদের জন্য অহংকারের মাস, এই মাস বাঙালি জাতির গর্বের মাস। আমরা আজীবন এই মাসকে শ্রদ্ধাভারে স্মরণ করবো।
This post was last modified on মার্চ ১, ২০১২ 10:47 পূর্বাহ্ন
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ জীবন-যাপনে কিছু নিয়ম করে চলা উচিত। কারণ নিয়ম করে না…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ অনলাইনে যে কোনো অ্যাকাউন্ট সুরক্ষিত রাখার জন্য প্রয়োজন হয় পাসওয়ার্ড।…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ ৪৪তম মস্কো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের প্রতিযোগিতা বিভাগে জায়গা নিয়ে আলোচনায়…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ আটলান্টিক মহাসাগরে ডুবে ধ্বংস হয়ে যাওয়া ঐতিহাসিক টাইটানিক জাহাজ ট্রাজেডির…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ আজ ১লা মে, মহান মে দিবস। বঞ্চনা, নির্যাতন ও বৈষম্যের…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ শুভ সকাল। বুধবার, ১ মে ২০২৪ খৃস্টাব্দ, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১…
View Comments
I'm extremely impressed with your writing skills as well as with the layout on your weblog. Is this a paid theme or did you modify it yourself? Anyway keep up the excellent quality writing, it is rare to see a great blog like this one these days..