ডিএমপি কমিশনার বেনজীর আহমেদ বললেন-এত ‘নিহত’ হলে স্বজনরা কোথায়

দি ঢাকা টাইমস্‌ ডেস্ক ॥ ৫ মে রাতে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে অবস্থানকারী হেফাজতের কর্মীদের সরাতে অভিযানের সময় ‘হাজার হাজার’ মানুষের মৃত্যুর অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। মৃতের সংখ্যা নিয়ে গুজব ছড়ানো হচ্ছে। এত নিহত হলে স্বজনরা খোঁজ করতেন।

গতকাল ৮ মে এক সাংবাদিক সম্মেলনে অভিযানের নেতৃত্বে থাকা পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, ওই অভিযানে কোনো প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করা হয়নি। তাই কারও নিহত হওয়ার সুযোগও ছিল না। পুলিশ বলেছে, যৌথ বাহিনীর দলটি শাপলা চত্বরে অবস্থান নেওয়া নাশকতাকারীদের সরিয়ে দেওয়ার জন্যই ‘অপারেশন শাপলা’ নামে এ অভিযান চালায়। তবে ওই দিন সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত সংঘর্ষে এক পুলিশ সদস্যসহ মোট ১১ জন নিহত হন বলে পুলিশ স্বীকার করেছে। তাদের মধ্যে অভিযানের সময় চারজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয় শাপলা চত্ত্বরে হেফাজতের মঞ্চের কাছ থেকে, যারা কাফনের কাপড়ে মোড়ানো ছিল। এ ছাড়া ওই এলাকা থেকে আরও তিনজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়, যাদের কেওই অভিযানে মারা যায়নি বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে। ৫ মে রাতের অভিযান নিয়ে শুরু হয় নানা গুজব। ঘটনার দু’দিন পর গতকাল ৮ মে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার বেনজীর আহমেদ।

রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে দুপুরে ওই সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপি কমিশনার ছাড়াও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ঢাকা সেক্টর কমান্ডার কর্নেল এহিয়া আজম ও র‌্যাবের গোয়েন্দা প্রধান লে. কর্নেল জিয়াউল আহসান উপস্থিত ছিলেন। এ দুটি সংস্থার সদস্যরা ওই রাতের অভিযানে অংশ নেন। সংবাদ সম্মেলনে বড় দুটি পর্দায় হেফাজতের ধ্বংসযজ্ঞের বিভিন্ন ফুটেজ দেখানো হয় গণমাধ্যম কর্মীদের।

ডিএমপি কমিশনার আরও বলেন, দিনভর ধ্বংসযজ্ঞের পর রাতে হেফাজতের সমাবেশ থেকে মতিঝিলের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে হামলা, লুট ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। সকালে সচিবালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংকে হামলার পরিকল্পনা ছিল তাদের। তিনি বলেন, হেফাজতের এ অবস্থানকে ঘিরে কোনো কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে নাশকতার ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল। কোনো একটি দলের পক্ষ থেকে ঢাকা ও বিভিন্ন জেলায় নাশকতা চালানোর জন্য নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেওয়া হয়। সেই নাশকতা ও ব্যাপক মাত্রায় ধ্বংসযজ্ঞ থেকে জনগণকে রক্ষা করতেই রাতে পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবি একসঙ্গে অভিযান চালায়।

বেনজীর বলেন, অভিযানের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ছিল ‘জিরো ক্যাজুয়ালিটি’ ভিত্তিতে অবস্থানকারীদের সরিয়ে দেওয়া। এতে জলকামান, সাউন্ড গ্রেনেড, গ্যাস গ্রেনেড এবং রাবার বুলেট ব্যবহার করা হয়। এসব অস্ত্র প্রাণঘাতী না হওয়ায় কোনো প্রাণনাশেরও সুযোগ ছিল না। পুরো অভিযানে পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবির ঊর্ধ্বতন বিপুল সংখ্যক কর্মকর্তা অংশ নেন।

অভিযানে বহু হেফাজত কর্মী হতাহতের যে প্রচারণা চালানো হচ্ছে তা ‘মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন’ উল্লেখ করে পুলিশ কমিশনার বলেন, ওইদিন মোট ১১টি মৃতদেহের তথ্য রয়েছে পুলিশের কাছে। এর বাইরে হতাহতের কোনো তথ্য থাকলে তার সুনির্দিষ্ট তালিকা দেওয়ারও আহ্‌বান জানান তিনি। তিনি বলেন, গণমাধ্যমের উপস্থিতিতে অভিযান চালানো হয়েছে। দুটি টেলিভিশন চ্যানেল তা সরাসরি সম্প্রচার করেছে। ফলে এতে লুকোচুরি বা বিভ্রান্তির কিছু নেই। সমাবেশ আয়োজনকারীদের পক্ষ থেকেও নিখোঁজ হয়েছে এমন কোনো দাবি নেই জানিয়ে কমিশনার বলেন, কয়েকটি রাজনৈতিক দলের পক্ষে এমন গুজব ছড়ানো হচ্ছে। কেউ নিহত হয়ে থাকলে অন্তত তাদের স্বজনরা খোঁজ নিতেন। যেমনটা সাভার ট্র্যাজেডির পর তাদের স্বজনরা প্রিয়জনের সন্ধানে সেখানে গেছেন। মতিঝিলে অভিযানের পর এমন কোনো স্বজন তো পাওয়া যাচ্ছে না।

নাশকতার তথ্য থাকার পরও হেফাজতে ইসলামকে কেন সমাবেশ করতে দেওয়া হলোথ সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে বেনজীর আহমেদ বলেন, হেফাজতে ইসলাম প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তারা দোয়া করে চলে যাবে। দেশের ধর্মীয় সংস্কৃতি অনুযায়ী সে প্রতিশ্রুতিতে আমরা আশ্বস্ত হয়েছিলাম। তবে তারা প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম চালিয়েছে, যা কোনোভাবেই কাম্য ছিল না। ধ্বংসযজ্ঞের পর দায়ের করা মামলাগুলোতে হেফাজতের প্রধান আল্লামা আহমদ শফীকে আসামি না করার বিষয়ে কমিশনার বলেন, তদন্তাধীন বিষয়ে কথা বলব না। তবে তদন্তে কারও সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে আসামি করা হবে।

বেনজীর আহমেদ বলেন, ‘রোববার হেফাজতের সমাবেশ চলাকালে যে ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয় তাতে মানুষ আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ে। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আতঙ্ক বাড়তে থাকে।’

তিনি বলেন, ‘এই সমাবেশকে ঘিরে কোনো কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে নাশকতার ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল। কোনো একটি দলের পক্ষ থেকে ঢাকা ও বিভিন্ন জেলায় নাশকতা চালানোর জন্য নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেওয়া হয়।’ সেই নাশকতা ও ব্যাপক মাত্রায় ধ্বংসযজ্ঞ থেকে জনগণকে রক্ষা করতেই রাতে অভিযান চালানো হয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।

পুলিশ কমিশনার জানান, হেফাজতের কর্মীদের দক্ষিণ আর পূর্ব দিক দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ রেখে কেবল উত্তর ও পশ্চিম দিক দিয়ে অভিযান চালানো হয়।

This post was last modified on মে ৯, ২০১৩ 9:34 পূর্বাহ্ন

স্টাফ রিপোর্টার

Recent Posts

সংগীতশিল্পী টেইলর সুইফট বিশ্বের সবচেয়ে ধনী নারী

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ আমেরিকান পপশিল্পী গায়িকা টেইলর সুইফটের খ্যাতি রয়েছে সর্বত্র। বহু আগে…

% দিন আগে

২০২৫ সালের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষাপদ্ধতি যা হবে

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ ২০২৫ সালের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা হবে এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি…

% দিন আগে

চালক বাস না থামানোয় দরজা ধরে এক কিমি ঝুললেন তরুণ!

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ বাসের ভিতর থাকা মহিলা কন্ডাক্টরের সঙ্গে কথা বলছেন ঝুলে থাকা…

% দিন আগে

সুইজারল্যান্ডের মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক দৃশ্য

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ শুভ সকাল। শনিবার, ২ নভেম্বর ২০২৪ খৃস্টাব্দ, ১৭ কার্তিক ১৪৩১…

% দিন আগে

চাপের মধ্যেও মনের লাগাম ধরে রাখতে যা করবেন

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ যেমন এক দিকে রয়েছে সংসারের দায়িত্ব, অপরদিকে পেশাগত জায়গায় কাজের…

% দিন আগে

‘ইনফিনিক্স’ নিয়ে এলো নতুন গেমিং ফোন

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ প্রযুক্তি ব্র্যান্ড ইনফিনিক্স বাংলাদেশে হট ৫০ সিরিজের নতুন ফোন ‘ইনফিনিক্স…

% দিন আগে