Categories: সাধারণ

সাভার ট্র্যাজেডি ॥ রেশমার গ্রামে আনন্দ উল্লাস

দি ঢাকা টাইমস্‌ ডেস্ক ॥ সাভার ট্রাজেডির ১৭তম দিনে জীবিত উদ্ধার হওয়া রেশমার বাড়ি দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলার ছোট একটি গ্রাম কশিগাড়ীতে চলছে আনন্দ উল্লাস। মৃত্যুকূপ থেকে বেঁচে ফেরার কারণে এলাকাবাসী তাদের মেয়েটিকে ফিরে পাওয়ার পর থেকে এই আনন্দ উল্লাস করছেন।

শুক্রবার দুপুরে টেলিভিশনে প্রথম রেশমার ভিডিও ফুটেজ দেখতে পান রেশমার বড় বোন ফাতেমা বেগম। এরপর তিনি বিষয়টি তার স্বামী হাফিজুর রহমানকে জানান। আকস্মিকভাবে রেশমাকে পাওয়ার পর আনন্দে আপ্লুত ওই এলাকার লোকজন। খবর পাওয়ার পর থেকেই সিংড়া ইউনিয়ন পরিষদে ভিড় জমতে থাকে হাজার হাজার জনতার।

সিংড়া ইউপি চেয়ারম্যান মজিবর রহমান প্রধান বলেন, “প্রথমে আমি বিশ্বাসই করতে পারিনি রেশমা বেঁচে আছে। ১৭তম দিনে একজন বেঁচে থাকতে পারে এটি সত্যিই অবিশ্বাস্য। তবে, আমি আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জানাই মেয়েটি যেন ফিরে আসে এ এলাকায়।”

১৭ বছর পূর্বে রেশমার বাবা আনসার আলী মারা গেছেন। পরে একই এলাকার আরজান আলী নামে এক ব্যক্তি রেশমার মা জবেরাকে বিয়ে করেন। জবেরার পূর্বের স্বামী আনসার আলীর ২ ছেলে সাদেক আলী ও জাহিদুল ইসলাম এবং তিন মেয়ে আসমা, ফাতেমা ও রেশমা। রেশমা ভাই-বোনদের মধ্যে সকলের ছোট।

খবর পেয়ে রেশমার মেজো বোন আসমা সাভারের ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। তাকে সেনাবাহিনীর গাড়িতে করে সিএমএইচ-এ নিয়ে যাওয়া হয়।

গত ৪ বছর আগে রেশমার পূর্ব পরিচিত আব্দুর রাজ্জাকের সঙ্গে রেশমার বিয়ে হয়। কিন্তু রাজ্জাক কখনও তাকে দিনাজপুরের বাসিন্দা আবার কখনও বিরামপুরের বাসিন্দা বলে পরিচয় দেন। ছয় মাস আগে আব্দুর রাজ্জাক রেশমাকে ছেড়ে পালিয়ে যান।

Related Post

অনেকদিন ধরে রেশমা রানা প্লাজার তিন তলায় একটি গার্মেন্টসে চাকরি করতো। রেশমার এক ভাই ও এক বোন ঢাকায় গার্মেন্টসে চাকরি করে।

রেশমার বড় বোন ফাতেমা বেগম বলেন, “সাভার ট্রাজেডির পর থেকেই আমি সব সময় টিভি দেখতাম আর আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতাম বোনকে ফিরে পাওয়ার জন্য। আজকে যখন টিভিতে রেশমাকে দেখতে পাই তখন আর চোখের জল ধরে রাখতে পারিনি।” তিনি আরও বলেন, “আল্লাহ আমার কথা শুনেছেন। তিনি ফিরিয়ে দিয়েছেন আমার বোনকে আমার কাছে।”

ফাতেমার স্বামী হাফিজুর রহমান বলেন, “সাভার ট্রাজেডির ঘটনার পর আমরা ১৭ দিন ধরে রেশমার লাশের জন্য অপেক্ষা করেছি। আল্লাহকে অশেষ ধন্যবাদ।”

স্বামী পরিত্যাক্তা হলেও রেশমা জীবন-যুদ্ধে ছিলেন অদম্য। এবার সাভারের এই মর্মান্তিক ঘটনায় তার মনোবল আরও এক ধাপ এগিয়ে যায়। ১৭ দিন মৃত্যুকূপের মধ্যে যুদ্ধ করেছেন রেশমা। শেষে জয়ীও হয়েছেন। বিশ্বের খ্যাতনামা সব মিডিয়াই রেশমা উদ্ধারের কাহিনী গুরুত্বসহকারে প্রকাশ করেছে। রেশমা এখন আর শুধু একজন সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ নয়। রেশমা এখন একজন অদম্য নারীর নাম। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল উদ্ধারের পর সাভার ছুটে গেছেন। রেশমাকে আশ্বাস দিয়েছেন, তার জীবনের বাকি দিনগুলোর দায়িত্বও নিয়েছেন। পৃথিবীতে ইতিহাস সৃষ্টিকারী রেশমা এখন শুধুই এগিয়ে যাবেন এক দুর্বার ভবিষ্যতের দিকে।

This post was last modified on মে ১১, ২০১৩ 12:41 অপরাহ্ন

স্টাফ রিপোর্টার

Recent Posts

ওটিটিতে আসছে মস্কোজয়ী সিনেমা ‘আদিম’

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ ৪৪তম মস্কো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের প্রতিযোগিতা বিভাগে জায়গা নিয়ে আলোচনায়…

% দিন আগে

টাইটানিকের সবচেয়ে ধনী যাত্রীর সেই স্বর্ণের পকেট ঘড়িটি রেকর্ড দাম ১৬ কোটি টাকায় বিক্রি!

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ আটলান্টিক মহাসাগরে ডুবে ধ্বংস হয়ে যাওয়া ঐতিহাসিক টাইটানিক জাহাজ ট্রাজেডির…

% দিন আগে

আজ মহান মে দিবস: শ্রমিকদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার দিন

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ আজ ১লা মে, মহান মে দিবস। বঞ্চনা, নির্যাতন ও বৈষম্যের…

% দিন আগে

নদীমাতৃক বাংলাদেশের এক চিরাচরিত দৃশ্য

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ শুভ সকাল। বুধবার, ১ মে ২০২৪ খৃস্টাব্দ, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১…

% দিন আগে

অফিসে এসি না থাকলে গরমে সারাদিন পরিশ্রম করে সুস্থ থাকবেন কীভাবে?

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ অনেক অফিসেই এসির ব্যবস্থা থাকে না। এসি না থাকলেও কাজ…

% দিন আগে

জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সমস্যা: এক মহা দুর্যোগের শিকার এশিয়া

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ পুরো বিশ্বের জলবায়ুর সঙ্গে তুলনা করলে প্রথমেই উঠে আসে এশিয়ার…

% দিন আগে