দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ ইরাকের সাবেক প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেন সম্পর্কে সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে এসেছে। তাঁর মেয়ের দেওয়া তথ্যের পর এবার সিআইএ এজেন্ট দিলেন অজানা তথ্য!
স্বাধীন স্বার্বভৌমের জনপ্রিয় ও শক্তিশালী ইরাকের সাবেক প্রেসিডেন্ট ছিলেন সাদ্দাম হোসেন। ২০০৩ সালের ২০ মার্চ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে ইরাকে আগ্রাসন শুরু হলে ভাগ্য বিপর্যয় ঘটে এই লৌহমানব সাদ্দামের।
আগ্রাসনের শুরুতেই আত্মগোপন করেন সাদ্দাম হোসেন। এর ঠিক ৬ মাসের মাথায় ২০০৩ সালের সেপ্টেম্বরে ধরা পড়েন সাদ্দাম।
আটকের পর সাদ্দামকে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য এক বিশেষজ্ঞকে খোঁজ করে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ। এই বিশেষজ্ঞের কাজ হলো আটক ব্যক্তিই প্রকৃত সাদ্দাম কি না তা নিশ্চিত করার জন্য তাকে জিজ্ঞাসবাদ করে তথ্য বের করা।
ওই বিশেষজ্ঞটি ছিলেন জন নিক্সন। তিনি ১৯৯৮ সালে সিআইএতে যোগদানের পর হতেই সাদ্দামকে নিয়ে অধ্যয়ন শুরু করেন।
গোয়েন্দা সংস্থাটিতে নিক্সনের কাজই ছিলো বিশ্বনেতাদের ভেতরকার খবর সংগ্রহ করা।
বুধবার ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যম বিবিসির ভিক্টোরিয়া ডারবিশায়ার প্রোগ্রামে জন নিক্সনকে নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এতে প্রেসিডেন্ট সাদ্দামকে জিজ্ঞাসাবাদের ব্যাপারে তার অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরা হয়।
জন নিক্সন জানিয়েছেন, ২০০৩ সালে সাদ্দামকে যখন তার জন্মস্থান তিকরিত শহরের খামারবাড়ি সংলগ্ন ভূগর্ভস্থ গর্ত হতে মার্কিন সেনাদের একটি দল যখন আটক করে তখন তিনিও ইরাকেই ছিলেন।
আগেই গুজব ছিলো, নিরাপত্তার জন্য সাদ্দামের মতো দেখতে একাধিক দ্বৈত চেহারার ব্যক্তি রয়েছে। সে কারণে সাদ্দামকে আটকের খবর পাওয়ার তার পরিচয় নিশ্চিত করার জন্য নিক্সনকে নিয়োগ দেয় যুক্তরাষ্ট্র।
২০১১ সালে সিআইএ হতে চাকরি ছেড়ে দেওয়া নিক্সন দুই বছর পর সাদ্দামকে দেখেই সঙ্গে সঙ্গে চিনে ফেলেন। নিক্সন বলেন, আমি যখন তাকে দেখলাম তখন আমার মনে কোনো সন্দেহ ছিলো না যে তিনিই সাদ্দাম হোসেন।
নিক্সন বলেন, আমি যখন সাদ্দামের সঙ্গে কথা বলা শুরু করলাম, তখন তিনি আমার দিকে সেভাবে তাকালেন, আমার ডেস্কের ওপর থাকা একটি বইয়ে যেভাবে তিনি তাকিয়ে ছিলেন।
বন্দি সাদ্দাম হোসেনকে নিক্সন জিজ্ঞাসাবাদ করেন। তিনিই ছিলেন প্রথম ব্যক্তি যে অনেক দিন ধরে সাদ্দামকে বিস্তারিত প্রশ্ন করার সুযোগ পেয়েছিলেন।
এ বিষয়ে নিক্সন বলেন, বিশ্বের মোস্ট ওয়ান্টেড মানুষটিকে আমি জিজ্ঞাসাবাদ করছি- এটি বিশ্বাস করতে গিয়ে আমি নিজের গায়ে চিমটি কাটি। এখন ভাবি ব্যাপারটি কতো হাস্যকর ছিলো।
সিআইএ’র সাবেক এই এজেন্ট ইরাকের সাবেক প্রেসিডেন্টকে নিয়ে ‘ডিব্রিফিং দ্য প্রেসিডেন্ট: দি ইন্টারোগেশন অব সাদ্দাম হোসেন’ নামে একটি বই লিখেছেন। এতে সাদ্দামকে প্রচুর অসঙ্গতিতে ভরা একজন নেতা হিসেবে তুলে ধরেছেন তিনি।
মার্কিন সংবাদ মাধ্যম সাদ্দামকে যেভাবে বিকৃতভাবে তুলে ধরা হয়, নিক্সনের বইয়ের বর্ননা পুরোপুরিই পৃথক। তিনি বইটিতে সাদ্দামের মানবিক দিকগুলো তুলে ধরেন।
নিক্সন বলেন, আমি এ পর্যন্ত ক্যারিশমাটিক ব্যক্তিত্বের মুখোমুখি হয়েছি তাদের অন্যতম হলেন সাদ্দাম হোসেন। যখনই তার সঙ্গে দেখা হয়েছে তাকে কমনীয়, চমৎকার, মজার ও নম্র মনে হয়েছে আমার।
নিক্সন আরও বলেন, কোনো কোনো সময় সাদ্দামের চরিত্রের অন্ধকার দিকও ফুটে উঠতো। যখন তিনি মেজাজ হারাতেন তখন তাকে ক্রুদ্ধ, রাগী, বাজে, নীচু মনের ও অনেকটা ভীতিকর মনে হতো।
জিজ্ঞাসবাদের সময় দুই হতে তিনবার সাদ্দামের খারাপ দিকের মুখোমুখি হয়েছেন বলে জানান নিক্সন।
একটি ছোট্ট নোংরা অপরিচ্ছন্ন কক্ষে লোহার তৈরি ভাঁজ করা যায় এমন চেয়ারে বসিয়ে ইরাকের প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিলো।
ওই সময় কক্ষটিতে নিক্সন, জিজ্ঞাসাবাদকালে লাই ডিটেক্টর এবং রক্তচাপ-শ্বাস ওঠানামার তথ্য সংগ্রহকারী তথা পলিগ্রাফার ও একজন দোভাষী উপস্থিত থাকতেন।
সাদ্দাম একজন নার্সিসিস্ট বা আত্মমগ্ন ছিলেন উল্লেখ করে নিক্সন বলেন, সাবেক প্রেসিডেন্ট আমার সঙ্গে কথা বলতে খুব পছন্দ করতেন।
নিক্সন আরও জানান, সাদ্দাম হোসেন বেশ কয়েক মাস আত্মগোপন করে ছিলেন। এ সময় তিনি কারও সঙ্গে খুব একটা কথাবার্তা বলেননি।
সে কারণে প্রথম অধিবেশনে নিক্সন সাদ্দামের সঙ্গে এই সমঝোতায় আসার চেষ্টা করেন যেনো তিনি সহযোগিতা করতে রাজি হন। সাদ্দাম বলেন, তিনি আলাপ পছন্দ করেছেন।
শুরুটা ইতিবাচক হলেও পরের দিন সাদ্দাম অনেকটা সন্দিগ্ধ হয়ে পড়েছিলেন। নিক্সন বলেন, আমার দেখা মানুষদের মধ্যে সাদ্দামই সবচেয়ে সন্দেহপ্রবণ মানুষ ছিলেন। তাকে করা প্রতিটি প্রশ্নের জবাবে তিনি আমাকে পাল্টা প্রশ্ন করতেন।
নিক্সন জানান, সাদ্দামকে কথা বলতে উৎসাহিত করার ব্যাপারে সিআইএর দিক হতে অবশ্য আগ্রহভরে তেমন কিছু বলা হয়নি।
তবে ঐতিহাসিক গুরুত্বের কথা বিবেচনা করে সাদ্দামের নিজের বক্তব্য রেকর্ড করেছিলেন নিক্সন। নিক্সন জানান, সিআইএর ফরমায়েশ অনুযায়ী নির্দিষ্ট কিছু বিষয়ে সাদ্দামকে তিনি জিজ্ঞেস করেন। তবে তিনি নিজের থেকেও সাদ্দামকে অনেক প্রশ্ন করে তা নিজের ডিভাইসে রেকর্ড করেছিলেন।
সাদ্দামকে জিজ্ঞাসাবাদ করার পক্ষে সবচেয়ে গুরুত্বপূণ বিষয় ছিলো ‘গণবিধ্বংসী অস্ত্র’।
নিক্সন জানান, হোয়াইট হাউজের প্রধান আগ্রহ ছিলো গণবিধ্বংসী অস্ত্রের বিষয়। তবে সাদ্দামের সঙ্গে কথা বলে, তার উপদেষ্টাদের সঙ্গে আলোচনা করে ও বিভিন্ন গবেষণা হতে জানা যায়, সাদ্দাম কয়েক বছর পূর্বেই দেশটির পরমাণু অস্ত্র কর্মসূচি বন্ধ করে দেন। এটি নতুন করে শুরুর কোনো মতলবও ছিলো না তার।
This post was last modified on জানুয়ারী ৩১, ২০১৭ 10:26 অপরাহ্ন
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ অনেকের বেশ বদভ্যাস রয়েছে। রাতের খাবার শেষ করা মাত্রই তারা…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ দেশের বৃহত্তম মেরিটাইম এবং অফশোর প্রদর্শনী ‘বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল মেরিন অ্যান্ড…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ বর্তমান ডিজিটাল যুগে সংবাদ মাধ্যমের গুরুত্ব ও প্রসার আগের যেকোনো…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ ভারতের মুম্বাইয়ে ‘বরবাদ’ সিনেমার শুটিং এর সময় আহত হয়েছেন ঢাকাই…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ আইরিশ আইনপ্রণেতারা দেশটির পার্লামেন্টে একটি প্রস্তাব অনুমোদন করেছেন। যেখানে ইহুদিবাদী…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ রান্না করতে গিয়ে গরম তেলে মোবাইল ফোন পড়তেই ঘটে গেল…