দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ চলে গেছেন বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তী অভিনেতা নায়করাজ রাজ্জাক। বাংলাদেশের চলচ্চিত্র জগতের ইতিহাসে তিনি ছিলেন এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। তাঁর চলে যাওয়াতে এক বেদনাদায়ক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে চলচ্চিত্রাঙ্গনে।
খ্যাতি, যশ, অর্থ—কোনো কিছুরই অভাব না। তিনি তাঁর জীবদ্দশায় বহু সিনেমায় অভিনয় করে প্রশংসা কুড়িয়েছেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য ছবির মধ্যে রয়েছে ‘রংবাজ’, ‘নীল আকাশের নিচে’, অবুঝ মন’, ‘জীবন থেকে নেয়া’, ‘পিচ ঢালা পথ’, ‘কি যে করি’, ‘অশিক্ষিত’, ‘ছুটির ঘণ্টা’, ‘বড় ভালো লোক ছিল’, ‘আলোর মিছিল’, ‘স্বরলিপি’ ‘বাবা কেন চাকর’সহ অসংখ্য ছবি।
অভিনেতা উত্তরায় অভিজাত সুবিশাল পরিসরে ‘রাজলক্ষ্মী কমপ্লেক্স’ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। গুলশানে নিজের বাড়িতে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে বেশ ভালোই ছিলেন এই কিংবদন্তী অভিনেতা। সাফল্য ও পরিপূর্ণ জীবনে নিজেকে নিয়ে এসেছেন নিজ কর্মগুণে।
তাঁর প্রথম জীবনটা মোটেও মসৃণ ছিল না। কোলকাতায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন রাজ্জাক। কৈশোরেই হঠাৎ মারা গেলেন তাঁর বাবা আকবর হোসেন। বাবার মৃত্যুর ৮ মাস পর মাকেও হারান তিনি। তবে সব শোক-সংকট কাটিয়ে ভালোভাবেই বেড়ে উঠছিলেন রাজ্জাক। কোলকাতায় মঞ্চ ও চলচ্চিত্রে টুকটাক অভিনয় করতে থাকেন।
তাঁর অভিনয় দেখে নাট্যকার পীযূষ বসু কিশোর রাজ্জাককে উৎসাহ দেন নানাভাবে। যদিও খুব একটা সুবিধা করতে পারছিলেন না তিনি। ইতিমধ্যেই ঢাকায় চলচ্চিত্রশিল্প প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। অনেকেই রাজ্জাককে উপদেশ দিলেন ঢাকায় আসার। পীযূষ বসু রাজ্জাক সম্পর্কে একটি প্রশংসাপত্র লিখে দিলেন। রাজ্জাক ওই প্রশংসাপত্র নিয়ে জন্মস্থান কোলকাতা ছেড়ে ঢাকায় আসার সিদ্ধান্ত নিলেন।
সে সময় চলছিল উপমহাদেশের বিভিন্ন স্থানে হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা। পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, আসাম এবং ত্রিপুরা হতে দলে দলে মুসলমানরা পাড়ি দিচ্ছিলেন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে (বর্তমান বাংলাদেশে)। রাজ্জাকও স্ত্রী লক্ষ্মী ও শিশুপুত্র বাপ্পাকে নিয়ে ওই দাঙ্গার সময় ঢাকায় চলে এলেন।
১৯৬৪ সালের কথা। ২৬ এপ্রিল ঢাকা পৌঁছান তিনি। এক কপর্দকহীন অবস্থায়। ঢাকায় তাঁর চেনাজানাও কেও ছিলো না। শুধু সঙ্গে নিয়ে এসেছেন পীযূষ বসুর একটি চিঠি ও পরিচালক আবদুল জব্বার খান এবং শব্দযন্ত্রী মনি বোসের একটি ঠিকানা।
সেদিন স্ত্রী-শিশুপুত্রকে স্টেডিয়ামে শত শত উদ্বাস্তুর ভিড়ে রেখে রাজ্জাক গিয়ে দেখা করেছিলেন পরিচালক আবদুল জব্বার খানের সঙ্গে। তিনি রাজ্জাককে আশ্বাস দিয়েছিলেন। রাজ্জাক পরে কমলাপুর এলাকায় মাসিক ৮০ টাকা ভাড়ায় একটি বাসা ঠিক করে স্ত্রী-পুত্র নিয়ে ওঠেন। উদ্বাস্তু রাজ্জাকের আশ্রয় মিললো ঠিকই, তবে জীবিকা অর্জনের কোনো পথ তাঁর ছিলো না। তিনি ঘুরে বেড়ান ছবিপাড়ায়। দেখা করেন সুভাষ দত্ত, সৈয়দ আওয়াল, এহতেশামসহ বেশ কয়েকজন পরিচালকের সঙ্গে। তবে কিছুতেই কোনো কাজ হচ্ছিল না।
তবে মানুষের জীবন কখনও থেমে থাকে না। এরপর পরিচালক আবদুল জব্বার খান তাঁকে কাজের সুযোগ করে দেন ‘ইকবাল ফিল্মস’ প্রতিষ্ঠানে। এই প্রতিষ্ঠানের ছবি ‘উজালা’য় পরিচালক কামাল আহমেদের সহকারী হিসেবে কাজ করেন তিনি। সহকারী হিসেবে রাজ্জাকের দ্বিতীয় ছবি ছিল ‘পরওয়ানা’। তবে ছবির কাজ শতকরা ৮০ ভাগ হওয়ার পরই সহকারীর কাজটি তিনি ছেড়ে দেন। কারণ হলো রাজ্জাক এসেছিলেন নায়ক হতে। ক্যামেরার সামনেই দাঁড়াতে চেয়েছিলেন তিনি, পেছনের লোক হিসেবে নয়। পর্দায় নাম ভেসে ওঠার শুরুতেই তিনি নিজের নাম খুঁজে পেতে চেয়েছিলেন।
জীবদ্দশায় এক সাক্ষাৎকারে রাজ্জাক বলেছিলেন, ‘আমি আমার জীবনের অতীত কখনও ভুলি না। আমি এই শহরে শরণার্থী হয়ে এসেছিলাম। আমি জীবনসংগ্রাম করেছি। না খেয়েও থেকেছি। সেজন্য পয়সার প্রতি আমার কোনো লোভ আসেনি। ওটা আসেনি বলেই এক কথায় এতো দূর শান্তিতে এসেছি।’
তাঁর জীবনে উচ্চাশাতো সব সময়ই ছিল। রূপালি পর্দার জগতেও ছিল টাকার ঝনঝনানি। তবে টাকার মোহে অন্ধ হয়ে যাননি কখনও। আর সে কারণেই রাজ্জাক হতে তিনি নায়করাজ হয়ে উঠতে পেরেছিলেন। সে কারণে তিনি এই জগতের সকলের কাছেই হয়ে উঠেছিলো অনুকরণীয় একজন কিংবদন্তী অভিনেতা। আজ তিনি আমাদের মাঝে নেই, কিন্তু তাঁর কাজ ও জীবনের অনেক চাওয়া-পাওয়া আমাদের মাঝে এখনও রয়ে গেছে। তিনি মানুষের হৃদয়ে থাকবেন অনাদি অন্ততকাল।
This post was last modified on আগস্ট ২৩, ২০১৭ 10:24 অপরাহ্ন
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ দু’টি কচ্ছপ নিয়ে রাস্তা দিয়ে হেঁটে চলেছেন এক তরুণী। কচ্ছপ…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ শুভ সকাল। রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪ খৃস্টাব্দ, ৭ পৌষ ১৪৩১…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ ফিটনেস প্রশিক্ষকরা বলেছেন, হাঁটাহাঁটি, দৌড়ানো, জগিং, সাইকেল চালানো কিংবা সাঁতার…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ প্রায় একযুগেরও বেশি সময় পর মৌলিক গান নিয়ে মিউজিক ডোমেইনে…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ ১৯৫১ সালের নভেম্বর মাসে বিয়ে হয় ফে ও রবার্টের। বিয়ের…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ শুভ সকাল। শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪ খৃস্টাব্দ, ৬ পৌষ ১৪৩১…