দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ দেশের উত্তরাঞ্চলের সীমান্তবর্তী জেলাগুলোর বিস্তীর্ণ পতিত জমিতে চা চাষের আশাতীত সাফল্য এক নতুন দিগন্তের সূচনা করেছে। এখানে চা চাষ করে হাজার হাজার কোটি টাকা আয় করা সম্ভব।
উত্তরাঞ্চলে চা চাষের সম্ভাবনা দেশের জাতীয় অর্থনীতিতে যোগ করেছে নতুন মাত্রা। উত্তরাঞ্চলের এসব অঞ্চলকে বলা হচ্ছে দেশের তৃতীয় চা অঞ্চল। হাজার হাজার একর জমিতে চা গাছ রীতিমতো শিল্পে রূপান্তর করেছে উত্তরাঞ্চলকে। চা চাষ করে উত্তরাঞ্চল থেকে কয়েক হাজার কোটি টাকা আয় করা সম্ভব বলে মতামত ব্যক্ত করেছেন দেশের বিশিষ্ট্য অর্থনীতিবিদরাও। এ কারণে উত্তরাঞ্চলের চা চাষের জন্য উপযোগি স্থানসমূহে দিনদিন চা বাগানের সংখ্যা বাড়ছে। চাহিদা থাকার কারণে আগের চাইতে আবাদী জমির দামও বেড়েছে বহুগুণ।
সীমান্ত এলাকার চা চাষের জন্য উপযোগি জমিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভাল হচ্ছে পঞ্চগড়ের উঁচু ভূমি। এ কারণে শুধু পঞ্চগড় জেলায় প্রায় ২ হাজার একর জমিতে চা চাষ করা হয়েছে। সম্ভাবনাময় এ শিল্পকে অর্থনৈতিক সহায়তা ও সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান করলে এখান থেকে চায়ের উৎপাদন জাতীয় অর্থনীতিতে মাইল ফলক হয়ে থাকবে। পঞ্চগড় জেলায় ইতোমধেই ২৩৬টি বাগানে উৎপাদিত কাঁচা পাতা পঞ্চগড়ের দুইটি চা তৈরীর কারখানা টিটিসিএল ও করতোয়া চাষীদের কাছ থেকে কিনে নিয়ে প্রক্রিয়াকরণ ও বাজারজাতকরণ করছে। যদিও ক্ষুদ্র চা চাষীরা সরকারের নিকট তাদের উৎপাদিত কাঁচা পাতার মূল্য বাড়ানোর দাবি করে আসছে। তবে স্থানীয় ব্যবসায়িরা জানান, চাষীদের চা পাতার মূল্য বাড়ানোর দাবিটি এখনও উপেক্ষিত রয়ে গেছে। চা পাতার ন্যায্য মূল্য নির্ধারণ না করাসহ সহজ শর্তে ঋণ, সার-কীটনাশক ও চাহিদা মত উপকরণ পাওয়ার ক্ষেত্রে নানা জটিলতার কারণে এই অঞ্চলে চা চাষের পরিধি বৃদ্ধি পায়নি। পঞ্চগড়ে ৩৯ হাজার ৫শ’ ২০ একর জমিতে চা চাষ করা সম্ভব। এ জমিগুলোর মধ্যে বেশিরভাগ জমিতে উন্নত মানের চা উৎপাদিত মতে ১১টি মাঝারি ও ১ হাজার ৬শ’ ৮০ একর জমিতে ১৮টি বৃহৎ চা বাগান গড়ে উঠেছে। প্রতিবছর দেশের অভ্যন্তরীণ চায়ের চাহিদা ৩ দশমিক ৫ ভাগ হারে বাড়ছে। কিন্তু চা’র উৎপাদন তার অর্ধেকেও বাড়ছে না।
স্থানীয় সুত্রগুলো জানায়, প্রায় ৫ বছর হলো পঞ্চগড়ে চা চাষ শুরু হয়েছে। চা বোর্ডের সমীক্ষা মতে এ এলাকায় ১৬ হাজার হেক্টর জমিতে চা চাষের উপযুক্ততা রয়েছে। তবে চা বোর্ড কর্তৃক গৃহীত ২০০২ হতে ২০০৬ সাল পর্যন্ত সময়ব্যাপী ৫ বছর মেয়াদী কর্মসূচীতে প্রাথমিক পর্যায়ে ৩শ হেক্টর জমিতে চা চাষের পরিকল্পনা নেয়া হলেও বাস্তবে ইতোমধ্যেই এর চেয়ে বেশি পরিমাণ জমিতে ১২শ একর জমিতে চা চাষ হয়েছে বলে তথ্য পাওয়া গেছে। তবে সিলেট ও চট্টগ্রাম অঞ্চলের চা চাষের সা েপঞ্চগড় এলাকায় চা চাষে বিশেষ পার্থক্য হলো এ এলাকার জমির পুরোটাই ব্যক্তি মালিকানাধীন। যে কারণে এখানে চা চাষ হচ্ছে মূলত ক্ষুদ্রায়তন ভিত্তিতে। কাজী এন্ড কাজী টি এস্টেট নামক একটি বাগানে কিছুটা বড় পরিসরে চা চাষ হলেও অন্যান্য বাগানগুলোর আয়তন ১৫০ একরের নীচে। এমনকি ক্ষুদ্র কৃষকরা নিজেরাই তাদের জমিতে ছোট আকারে চা বাগান গড়ে তুলেছে। অন্যান্য ফসলের তুলনায় চা’এর উৎপাদন ভালো হবার কারণে কৃষকরা এখন আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছে বেশি। চা বোর্ডের সমীড়্গায় আরও প্রমাণিত হয় যে, শুধু পঞ্চগড় নয় পার্শ্ববর্তী জেলা ঠাকুরগাঁওসহ আরও কিছু কিছু এলাকায় চা আবাদের উপযুক্ততা রয়েছে।
পঞ্চগড়ে মূলত দু’পদ্ধতিতে চা চাষ হয়েছে। প্রথমত অর্গানিক, দ্বিতীয়ত ক্ষুদ্রায়তন ভিত্তিতে। ২০০০ সালে সর্বপ্রথম কাজী এন্ড কাজী টি এস্টেট-এর কর্ণধার কাজী শাহেদ আহম্মেদ মাত্র ৩৩ একর জমিতে চা চাষ আরম্ভ করেন। এখন এই চাষ ১ হাজার একরে পৌঁছেছে। কাজী টি এস্টেট-এর লক্ষ্য মূলত পঞ্চগড়ের পতিত বিস্তৃর্ণ জমিকে আবাদের আওতায় আনা। এখন শুধু কাজী টি এস্টেটই নয়, পঞ্চগড়ে কয়েক শতাধিক চা বাগান গড়ে উঠেছে। দেশের সিলেট, শ্রীমঙ্গল, চট্টগ্রাম অঞ্চলে বহু আগে থেকেই বৃহদায়তনে চা চাষ হয়ে আসছে। এই সকল বাগানে নিজেদের প্রসেসিং ফ্যাক্টরী আছে। বাংলাদেশে চা চাষ শুরু হয়েছে প্রায় দেড়শ’ বছর পূর্বে। দেশে উৎপাদিত চা দ্বারা অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও চা রফতানী করা হয়ে থাকে এবং বছরে প্রায় ২৫ মিলিয়ন কেজি চা রফতানী করে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আয় হয়ে আসছে। তবে এ অবস্থা দিনদিন ক্রমাবনতির দিকে যাচ্ছে। কেননা চায়ের অভ্যন্তরীণ চাহিদা যে হারে বাড়ছে চায়ের উৎপাদন সে হারে বাড়ছে না। আর এসব নানা কারণে দেশের চায়ের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে চা বোর্ড কর্তৃক চা চাষের উপযোগী নতুন এলাকা চিহ্নিত করা ও চা আবাদ সম্প্রসারিতকরণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
এতদিন দেশের বৃহত্তর সিলেট ও চট্টগ্রাম জেলার পাহাড়ী এলাকায় বৃহৎ বৃহৎ বাগানে চা চাষ হয়ে আসছিল। চা বোর্ড সমীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হয় যে, পঞ্চগড় জেলার বিভিন্ন এলাকাতেও চা চাষের উপযুক্ততা রয়েছে। এখানকার মাটি ও আবহাওয়া চা চাষের অত্যন্ত উপযোগী। তার বাস্তব প্রমাণ যে, সীমান্তবর্তী ভারতীয় এলাকায় ব্যাপকভাবে চা চাষ হচ্ছে। প্রয়োজনীয় সাহায্য-সহযোগিতা পেলে উত্তরাঞ্চলের সীমান্তবর্তী এসব এলাকা চা’চাষের জন্য মাইলফলক হতে পারে বলে মনে করেন সে অঞ্চলের চাষীরা।
তথ্যসূত্র: মাসিক উন্নয়ন অর্থনীতি
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ অনেকই সুজি খেতে খুবই ভালোবাসেন। তাই তারা প্রতিদিন সুজির পায়েস,…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ প্রথমবারের মতো প্যান ইন্ডিয়ান চলচ্চিত্র বানিয়েছেন নির্মাতা অনন্য মামুন। ঢালিউড…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ আপনার যদি প্রতিদিন চিকেন খাওয়ার অভ্যাস থাকে, তাহলে জেনে রাখুন,…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ কোটা সংস্কার আন্দোলনের সংগঠন ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’- এর অন্যতম সমন্বয়ক…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নবনিযুক্ত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচনী প্রচারণায় প্রতিশ্রুতি দেন…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ অবশেষে গত ৩১ বছর ধরে চলা ‘গোল্ডেন আউল’ বিতর্কের অবসান…